জীবনের অর্থ যখন হারিয়ে যায়

জীবনের অর্থ যখন হারিয়ে যায়
শামস সাইদ

সন্ধ্যার আকাশটা মাথায় নিয়ে হাঁটছি পথের পাশ দিয়ে। ক্লান্ত না চিন্তিত বুঝতে পারছি না। তবে বিষণ্ণ। বাবা হাসপাতালে। বুকে ব্যথা। বাড়ছে বয়স। মায়ের ক্যান্সার। ধরা পড়েছে বছর তিনেক আগে। বেঁচে আছে জীবন মৃত্যুর সেতু হয়ে। সপ্তাহ শেষে ছুটতে হয় ডাক্তারের চেম্বারে। এ অধ্যায়ের শেষ কেউ জানে না।
বিয়ের কথা চলছে ছোট বোনের। পাত্রপক্ষের চাহিদা আছে। সেটা পরিমাণে কম নয়। কৃষ্ণবর্ণের মুখ ওর। সমস্যা সেখানে। ছোট ভাইটা মাস্টার্স পাশ করেছে বছর দুই আগে। বেকারের তকমা ঢাকতে পারেনি আজও। ইন্টারভিউর টেবিলে বসে বসে ক্লান্ত সে। দুটা টিউশনি আছে। দিনশেষে কলবেল টিপে রক্ষা হচ্ছে জীবন। গত মাসে ছুটি দিয়েছে তারা। নির্দিষ্ট সীমা নেই সে ছুটির। মেসের ভাড়া না দিয়ে চলে গেছে ও বাড়িতে। সার্টিফিকেটের সেই কাগজখানা ছিঁড়ে ফেলেছেন বাড়ির মালিক। ওসব ছিল তার কাছে মূল্যহীন। ফোন করে কেঁদেছিল ও খুব। আমি চুপ ছিলাম। কথা বলার মতো ভাষা ছিল না।
চাকরি আমার বেসরকারি। কোনো এক কোম্পানির। সকাল সাতটায় ছাড়তে হয় বাসা। ফেরতে রাত এগারটা পেরিয়ে যায়। বড্ড তাড়া থাকে ফেরার। বারোটায় বন্ধ হয়ে যাবে গেট। বেতন কুড়ি হাজার। অঙ্কটা ছোট নয়। পেতে পেতে কুড়ি তারিখ। ধরে নিয়েছি কুড়ি তারিখ শুরু হয় মাস।
গত দুমাস বেতন নেই। অফিসের অবস্থা নাকি ভালো না। চাকরিটাও চলে যেতে পারে। বেতনের চিন্তা রেখে চাকরির চিন্তায় বিভোর। সংসার পেতেছি মাস সাতেক আগে। বয়স পয়ত্রিশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। বিয়েটা খুব দরকার ছিল। সেসব ভুলেই গিয়েছিলাম যখন ধরা পড়ল মায়ের ক্যান্সার। তারপর বাবার বুকে ব্যথা। তা সামলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এক বিকেলে বেলা এসে দাঁড়াল সামনে। সম্পর্কটা সাত বছরের। বিয়ের চাপটা ছিল বেলার। বয়স বসে নেই ওর। পরিবারে চাপ আছে বিয়ের। সমাজের সমালোচনা আছে। নিতে পারছিল না আর। সে বিকেলে ওর চোখে জল ছিল। সংসার আমার কাছে তখন সমুদ্র। বেলাকে কিছু বলতে পারছিলাম না। আমার হাত ধরল বেলা। চলো বিয়ে করব। আমি আর পারছি না।
আমি তাকিয়ে ছিলাম। পকেটে দুইশ পয়ত্রিশ টাকার রাজত্ব। মনে পড়ল ভালোবাসার ভেলায় নাকি সমুদ্র পার হওয়া যায়। সেই ভরসায় উঠে পড়লাম রিকশায়। সাত মাস আগে কাজী অফিসে গিয়ে সাত বছরের সম্পর্কের দলীলে স্বাক্ষর করলাম। দিন চার পরে বেলা এসে উঠল আমার বাসায়। এক রুমের ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে থাকছি। মাস তিনেক আগে এক গাল হেসে বেলা জানাল মা হতে যাচ্ছে সে। আমার মন খারাপ ছিল।
চাকরিটা চলে গেছে আজ। আমি হাঁটছি। জীবন পড়ে গেছে মহাসমুদ্রে। কোন ভেলায় পাড় হব জানি না। মোবাইলটা ডেকে যাচ্ছে। বেলার ফোন। ধরছি না। হাঁটছি পথ ভুলে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *