Micro Story – Moner Ghor

মনের ঘর
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
“জানো আজ সেই আশিক আমার সঙ্গে কথা বলেছে অবশেষে! সকালে আমার অটোতেই উঠেছিল।”
“হুঁ।“
সংক্ষিপ্ত, নির্লিপ্ত জবাব অভির। শ্রীতমার এইজন্যই রাগ হয়। বিয়ে হয়েছে মাত্র ছ’মাস। সম্বন্ধ দেখে বিয়ে। অভি নিপাট ভালোমানুষ। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নেশা বলতে শুধু নানারকম বই পড়া। খুব শান্ত, নির্বিবাদী। কোনও কিছুতেই কি রাগ হয় না মানুষটার? শ্রীতমা অনেকবার কপট ঝগড়া করার চেষ্টা করেছে, নির্দ্বিধায় বাগযুদ্ধে হেরে গিয়ে তাকে আরও হতাশ করেছে অভি। ধ্যুৎ!

পাশের ফ্ল্যাটের একটা অবিবাহিত ছেলে আছে। শ্রীতমা ছাদে হয়তো কাপড় মেলতে উঠেছে, বা পায়চারি করতে। অমনি সেই মক্কেলও ওদিকে হাজির। ওত পেতে থাকে নির্ঘাত। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই বেদম হাত পা ছুঁড়ে এক্সারসাইজ করতে শুরু করে দেয়। শ্রীতমা হাসি চেপে নিচে নেমে আসে। ঐ তার আশিক। অভিকে খ্যাপাতে চায় এসব বলে। কিন্তু সে খ্যাপার বান্দাই নয়!
“জানো, ছেলেটাকে ক্যাবলা ভাবতাম, কিন্তু বেশ সুযোগসন্ধানী। আজ চান্স পেতেই আমার অটোটায় উঠে বসল একদম পাশে।”

অভি তাও নিরুত্তর। ল্যাপটপে এক মনে অফিসের কাজ করে চলেছে। পাশে রাখা ওর ডায়রি আর পেন। এই একটা অভ্যাসও তার প্রবল। নিয়মিত ডায়রি লেখা। শ্রীতমা সেটা নিয়ে কখনও কৌতূহলী হয়নি অবশ্য।

সে গড়গড়িয়ে বলতে থাকে, “আমি অটোতে উঠেই ড্রাইভারকে বলেছি শপিংমলে নামব। পাশে বসে ছেলেটা গায়ে পড়ে  জিজ্ঞেস করে, “ওহ আপনি শপিংমলে নামবেন? আমি নামব স্টেশনে।” আমি শুধু হুঁ বলেছি ভদ্রতার খাতিরে। সমানে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। অস্বস্তি হচ্ছিল। ওমা! স্টপেজে নামার সময় কী বলে জানো? “এখানেই নেমে যাবেন ম্যাডাম? আরেকটু পথ একসঙ্গে গেলে ভালো হত না?”

অভি এবার একটু ফিরে তাকায় শুধু। তাকে নিরুত্তর দেখে স্ত্রী মুখটা কপট রাগে বেঁকিয়ে চলে যায়। অভি ডায়রিটা হাতে তুলে নেয়।

“একটা ইঁট দিয়ে মাথাটা একেবারে থেঁতলে দেব ওর? যে চোখ দিয়ে শ্রীতমাকে কুনজরে দেখেছে সেটায় হাতের এই পেনটা গেঁথে দেব? আচ্ছা একটা ফাঁকা সিরিঞ্জ ছেলেটার হাতের শিরায় আমূল বিঁধিয়ে দিলে কেমন হয়? ভেইনাস এয়ার এমবলিজম! হা হা! কেউ টেরও পাবে না। একটা বিদেশি গল্পে পড়েছিলাম। সিরিঞ্জ থেকে বাতাসের বুদবুদ ঢুকে রক্তবাহে চাপ দিলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। আহা, এটা করতে পারলে সেটা শ্রী’র জন্য সারপ্রাইজ গিফট হবে! কিন্তু পারব তো? নাকি বরাবরের মতো এবারেও…।”

এটুকু লেখা হতেই শ্রীতমা ডাইনিং থেকে হাঁক পাড়ে, “কই গো, এসো, খাবার বেড়েছি।” “হ্যাঁ, এই যাচ্ছি।” ডায়রি বন্ধ করে অভি ঘরের আলো নিভিয়ে এগিয়ে যায় ডাইনিং রুমের দিকে। ঘরের ঐ অন্ধকারেই চাপা পড়ে থাকে তার মনের সব রহস্যময় আঁধার!

1 thought on “Micro Story – Moner Ghor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *