নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী

রাত গভীর হলেই রোজ আমার অভিসার শুরু হয়! আমি মানে আমার মতো মেয়েদের অভিসার। কী আর করব আমরা! ‘পাপী পেট কা সওয়াল হ্যায়!’ সামনে একটা কালো বনেটের বেশ বড়সড় গাড়ি আসছে। অত কোম্পানীর নাম আমার আবার মনে টনে থাকে না। পেট্রোল পাম্পের কাছেই আমি তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। চোখে পড়ে গেল গাড়িতে বেশ বাজখাই চেহারার কয়েকজন পুরুষ বসে আছে। আমার সমস্ত শরীর টানটান হয়ে উঠল। এরা সবাই আমার শিকার! গাড়ির গতি কম হতেই আমি প্রবেশাধিকার পেয়ে গেলাম। এতজন কি একসঙ্গেই — আমার বুক দুর দুর করছে। প্রথমদিকে আমি বেশ নার্ভাস থাকি, অবশ্য তারপর — কিন্তু অভিজ্ঞতা এখানে বোধহয় আজ খুব একটা ভাল হবে না। মনটা কেমন যেন কু গাইছে। গাড়ির ভেতর কেমন পাশুটে গন্ধ। এই রকম গন্ধ আমার একদম ভালো লাগে না! মাথা ঝিমঝিম করে। আমি ক্ষীণ কন্ঠে আমার আপত্তি জানালাম। কেউ একেবারে পাত্তাই দিল না। সবাই কী একটা আদিরসাত্মক কথায় একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠল। আমি খানিকটা দুলতে দুলতে টলতে টলতে বললাম, “এই তোমরা গাড়ি থামাও, আমি নেমে যাব, এক্ষুণি, প্লিইজ—” কিন্তু কেউ আমার এই কথাটাও শুনলো না। আমি জানি আমার গলার স্বর বেশ সরু, মানে খুবই সরু। আমার কথা কি এরা কেউ শুনতেই পাচ্ছে না? নাকি আমাকে গ্রাহ্য করছে না? আমি তীব্র জোরে চিৎকার করলাম। উফ! কী বিরাট শরীর এক একজনের হাত পাগুলো যেন গদার মতো! এবার আমার ভয় করছে খুব। আমি চারদিক দেখতে লাগলাম। মোটা ও মসৃণ গ্লাসে এতটুকুও ফাঁক নেই। ওরা আমাকে মেরে ফেললেও কেউ বাঁচাতে আসবে না। গাড়িতে তারস্বরে একটা ইংরাজি গান বাজছে। লোকগুলোর হাতে মদের বোতল ঘুরছে। আমার মতো বেহায়া একটা মেয়ে যার ভেতর এতটা বেপরোয়া ভাব, যে দিবারাত্রি রক্তের নেশায় পাগল তারও ভয় করছে আজ। আসলে আমার খুব গন্ধের বাতিক আছে। ফলের গন্ধ আমার একদম ভালো লাগে না। যেখানে যখনই ফ্রুটি আর চকোলেটি স্মেল পাই আমি প্রায় বমি করে ফেলি। যেচে গাড়িতে উঠতে চেয়েছি বলে আমাকে কি খুব সস্তা মেয়ে ভেবেছে এরা? আমার পাশে যে ছেলেটা বসেছে শুনলাম ওর নাম প্রণব। ওর গায়ের পারফিউমের গন্ধ উপচে একটু নিকোটিন আর ঘামের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমি ওর দিকে একটু সরে বসলাম। এখন আমার একটু শরীরটা ভালো লাগছে। আর বমি পাচ্ছে না। আমি প্রণবের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম “আই লাভ ইউ।” উত্তরে প্রণব বলল, “ধুত্তেরিকা! সব গ্লাস ওপেন করে দে। মাইরি! একটা মশা সারাক্ষণ পিনপিন করে করে আমার কানটা একেবারে খেয়ে ফেলছে!”
এবারে সামনে হঠাৎই খোলা জানলা পেয়েই আমি তাড়াতাড়ি চম্পট দিলাম। উফ! এরপর থেকে গাড়ির ভেতরের গন্ধ পছন্দ হলে তবেই আমি সেই গাড়িতে উঠব!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
অন্যরকম