micro-story-paschimi

পশমী ওম
জয়তী অধিকারী


আজ ডাঃ পিয়ালী বাচ্চাদের চেক আপে এসে বলে গেল, “বাচ্চারা একটা হাতে বোনা তুলতুলে সোয়েটারের মত৷ একটা সোয়েটার বোনা মানে একটা গোটা রহস্য গল্প”।
সত্যিই বড় অদ্ভুত! একটা একটা করে ঘর বুনতে বুনতে কখনও সোজা, কখনও উল্টো। মাঝে মাঝেই আবার টুপ টুপ করে দুটো পানকৌড়ি ডুব। রহস্য ঘনীভূত হতে হতে একটা সময় অবয়ব ধারণ করে ফেলে।
অবয়ব তো পল্টনদাও ধারণ করেছিল! প্রেমিক পুরুষের অবয়ব। বাবলি তখন ক্লাস এইট। জ্যেঠুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে দিদির মাসতুতো ভাই, পল্টন বাবলিদের বাড়িতে এসে গিয়েছিল এক সপ্তাহ আগেই। ক্লাস এইট তখন বি.এসসি ফার্স্ট ইয়ারের মুগ্ধ দৃষ্টি গায়ে মেখে প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াচ্ছে৷ স্কুলে বন্ধুদের সাথে ফিসফিসানি যত বাড়ছে, প্রেম আকার নিচ্ছে পল্টনদার চিবুকের কালো তিলে।
বাসরঘরে ক্লাস এইটের ঢোকার অনুমতি ছিল না। তাই পল্টনদাও “আমার ঘুম পাচ্ছে” বলে তিনতলার হলঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। হলঘরের মেঝেতে ভাড়া করা ঢালাও বিছানায় বাবলী তখন পিসতুতো, জ্যাঠতুতো দিদিদের সাথে গা ঠেলাঠেলি করে বাসরের জ্ঞান সঞ্চয় করছে। পল্টনদা কিছুটা দূরে এসে শুতেই অমন রসালো আড্ডাটার ইতি টানতে হল। মাঝরাতে পল্টনদার হাত বেহিসেবী হল যখন, বাবলী ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই বড় হয়ে গিয়েছিল। তারপর, ছাদের ঘরে এক ফাগুন রাতে পল্টনদার দু’হাতে গলে যেতে যেতে আর একটা আবদারও মেটাবে কথা দিয়েছিল। একটা হাতে বোনা সোয়েটার বৈ তো না!
না, সোয়েটারটা পল্টনদাকে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। বাবলি মাঝে মাঝেই বায়না করে ছুটিছাটায় দিদির মেজমাসির বাড়ি চলে যেত। পল্টনদাও আসত অবর সবর। জ্যাঠাইমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে কখনও বা আদর মাখামাখি। তারপর? পল্টনদার জন্য বোনা সোয়েটারের উলগুলো একদিন অবুঝ অভিমানে ছিঁড়ে জট পাকিয়ে গেল। ল্যান্ডলাইনের ফোন বেজে বেজে থেমে গেল। চিঠিগুলোর কোন উত্তর এল না।
এর মধ্যে কেটে গেছে দশটা বছর। চোখের সামনে কত কিছুই হারিয়ে গেল, কত কিছু আবার সেজে উঠল নতুন সাজে। বাবলী এখন একটা ক্রেশ চালায়। বাচ্চাগুলোর কলকলানির মধ্যে একটা অধরা কচিগলার মা ডাক খুঁজে বেড়ায়। চিলেকোঠার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার সময় একটাই কথা মনে হয়েছিল তার। কালো তিল বোধহয় শুধু কলঙ্কই উপহার দিতে জানে!
“দিদি, বেলা তো অনেক হল। তোমার খাবার এনে দিই?” শীলামাসীর গলা শুনে বাস্তবে ফিরে আসে বাবলি।
“বাচ্চাগুলো খেয়েছে?”
শীলামাসী হুইলচেয়ারটা ঘুরিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের ঘরের দিকে এগিয়ে চলল। এখন ওদের নরম হাতের ছোঁয়া আর নির্মল হাসিটুকুই বাবলির জীবনীশক্তি। শুধু একটাই আফসোস রয়ে গেল। হাতদুটো যদি থাকত, সে একটা বাচ্চাদের সোয়েটার বুনত ঠিক।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *