মনজিৎ গাইন
সমীরের খুব ছোটোবেলার বন্ধু রাজু। একসঙ্গে পড়াশুনো, খেলাধুলো করে দুজনে বড়ো হয়েছে। আবার তাদের বাবারাও ছিল খুব বন্ধু। তবে বড়ো হয়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছে। সমীর চলে গিয়েছিল কলকাতায় পড়াশুনোর জন্যে আর রাজীব গ্রামেই থেকে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে একেবারেই যোগাযোগ ছিল না। এই অবস্থায় বেশ অনেকদিন পরে সমীর নিজের গ্রামে ফিরেছে। সমীর ইতিমধ্যে একটা চাকরিও পেয়ে গিয়েছে।
এরমধ্যে একদিন হঠাৎ করেই দুই বন্ধুর দেখা। দুজনেই দেখা হয়ে খুবই আনন্দিত। সেই অবস্থায় অনেক কথা হল দুজনের মধ্যে। সমীর খুব আনন্দ পেয়েছে তার ছোটোবেলার বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে। সমীর রাজীবকে বলছে, “বল রাজীব, কী খবর, এখন কী করছিস?”
“কী আর করব বল, বাবার যা ব্যবসা ছিল সেদিকেই একটু নজর দিচ্ছি। তবে কী জানিস সমীর, এই ধান-চালের ব্যবসাতে এখন তেমন কোনো ভালো সম্ভাবনা নেই। এদিকে আমি নিজেও সেরকম কোনো কাজ-কর্ম জোগড় করতে পারিনি তাই বলা যায় একটু চিন্তার মধ্যেই আছি।“
“কিন্তু আগে তো তোর বাবার ব্যবসা খুব ভালো চলত আর খুব নাম ছিল ব্যবসাতে। এখন এরকম হল কী করে?”
“আর বলিস না, এই করোনা লকডাউনে যেভাবে ফ্রিতে চাল দেওয়া শুরু হয়েছে রেশনে তাতেই যারা ধান-চালের ব্যবসা করত সবারই খুব লোকসান হয়ে যাচ্ছে। ফ্রিতে সরকারি চাল পেলে কেউ কি আর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল কেনে?”
সমীরও বুঝতে পারে রাজীবের বাবার ব্যবসা এখন সেইভাবে না চলার আসল কারণ। সত্যি সরকারি ভাবে ফ্রিতে চাল দেওয়া শুরু হওয়ায় এই লকডাউনে অনেকের উপকার হচ্ছে কারণ অনেকেরই কোনো কাজকর্ম নেই এই করোনার সময়ে। কিন্তু এই সময়ে যারা ওইসব ব্যবসা করত তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে রাজীবের বাবার মতো। সমীর রাজীবকে বলল, “দেখ, আস্তে আস্তে করোনার সময়টা কেটে গেলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।“
আরও কিছু টুকটাক কথাবার্তার পরে সমীর রাজীবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অন্য একটা দরকারে চলে এসেছে। তারপর অনেকদিনই আর দুজনের দেখা নেই। সেদিন আবার অনেকদিন পরে সমীরের সঙ্গে রাজীবের দেখা। রাজীব সমীরকে দেখেই ডাকল,”অ্যাই সমীর, শোন-শোন তোকে একটা খবর দেওয়ার ছিল।“
রাজীবের কথাতে খুবই আগ্রহ। সেই আগ্রহ দেখে সমীর তার কাছে জানতে চাইল, “কী খবর রে রাজীব?”
“আরে, আমি না একটা মুদিখানার দোকান খুলেছি। সব কিছু রাখছি।“
“বাঃ, খুব ভালো খবর কিন্তু কোথায় করলি তোর মুদিখানার দোকান?”
“ওই যেখানে আমাদের ধান-চালের দোকান ছিল ওখানেই করা হয়েছে। আসলে তোকে বলছিলাম না ধান-চালের ব্যবসা একদমই চলছে না। নিজেদের সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল তাই এই চিন্তা-ভাবনা। তারপর বাবার শরীর খারাপ। মাসে মাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগছে, তাই না পেরে এই দোকান খুললাম।“
“বাঃ, খুব ভালো হয়েছে।“
“শোন, আমি আমার সব বন্ধুদেরই বলেছি। তোদের যা মুদিখানার মাল লাগে সব কিন্তু আমার কাছ থেকে নিতে হবে। প্রথম প্রথম একটু সবাই তোরা পাশে থাকিস।“
রাজীবও বলল, “হ্যাঁ, সবসময় না হলেও মাঝেমাঝে নেব।“
এরপর রাজীবকে আরেক বার সমীর ফোন করে তার দোকান থেকে জিনিস নেওয়ার কথা বলে। সমীর তারপরে কিছু জিনিস নেয়। কিন্তু রাজীবের দোকানটা তাদের গ্রাম থেকে একটু দূরে হওয়ায় জিনিস নিতে একটু অসুবিধা হয়। যারফলে রাজীব আর ওখান থেকে জিনিস নিতে পারে না। এই অবস্থায় বারবার সমীরের কাছে রাজীবের ফোন। রাজীব বুঝতে পারে সমীর তার দোকান থেকে জিনিস নেওয়ার জন্যেই তাকে ফোন করছে। ও যেন ইচ্ছে করেই সেই ফোন ধরে না।
বেশ কয়েকদিন বাদে সমীরের সঙ্গে তার আরেক ছোটোবেলার বন্ধু আনন্দের দেখা। সে সমীরকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, “অ্যাই সমীর, রাজীবের বাবা মারা গিয়েছে, শুনেছিস?”
“না তো, কবে?”
“ওই তো দিন দশেক আগে।“
রাজীবের মনে পড়ে যায় দিন দশেক আগে তাকে বেশ অনেকবারই রাজীব ফোন করেছিল। সমীর এবার বুঝতে পারে সেই ফোনকলগুলো ঠিক কীজন্যে ছিল!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন