রাতুল
কল্পনা ব্যানার্জী

রাতুল একটি আঠারো বছর বয়সের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন মেধাবী তরুণ। স্বপ্ন দেখে লেখক হবে। লেখার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় ধরবে। বিভিন্ন চরিত্ররা তার স্বপ্ন থেকেই বাস্তবে নেমে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, ইয়েস বস আজ্ঞা করুন। আমি কোন গল্পে ফিট করবো। আকাশ দেখে আপ্লুত হয় সে। আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে ভাবে গল্পের প্লট তৈরী করাই আছে। তাকে শুধু ধরে পৃষ্ঠায় রূপ দিতে হবে।
রাতুল গল্প লিখতে ভালো বাসে কিন্তু শোনাবার মতো কেউ নেই। মনের ভিতর অস্থিরতা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেখার কেউ নেই। মুখ মনের ছবি দেখায় না। একদিন মা বিনীতা দেবী পড়ার টেবিলের নিচে গোছাগোছা কাগজ গোলা পাকানো পরে থাকতে দেখে অবাক হলেন এতো রাতুলের হাতের লেখা! পড়লেন মা বিনীতা দেবী অবাক হলেন। রাতুল কত সুন্দর সুন্দর গল্প লিখেছে জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কবিতা লিখছে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও অপার রহস্যময়তা নিয়ে। কোনো কবিতায় শুধুই আক্ষেপ সীমাহীন বিষাদ। কোথাও লেখা আমি লিখতে পারছি না আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। আমার স্বপ্ন দেখা বারণ। ফিজিক্স কেমেষ্ট্রির বইয়ের পাতায় আমি যে শুধুই আমার কবিতা দেখি, আমার গল্পের চরিত্রদের নিঃশব্দ পদচারণা দেখি ওরা আমায় নিয়ে যেতে চায় এক রহস্যলোকে যাদের আবিষ্কার করবো আমি। কিন্তু হায় কি করে বোঝাবো মা বাবাকে ওরা যে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো, এই তাদের আশা এরপর শুধুই জিজ্ঞাসার চিহ্ন? মা বিনীতা দেবীর চোখে জল। ভাবেন আমরা আমাদের ছেলেকে জীবিত মেরে ফেলছি। তিনি সব লেখা জড়ো করে সাজালেন কবিতা গল্প আলাদা করলেন তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এক সপ্তাহ বাদে রাতুলের ঘরে ঢুকলেন রাতুলের বাবা অমিয়বাবুর সাথে দেখলেন রাতুল কিছু লিখছে ওদের দেখে ও তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলে লেখাগুলি। মা বিনীতা দেবী স্মিত হাসলেন। ধীরে রাতুলের কাছে গিয়ে রাতুলকে জড়িয়ে ধরে বলেন তুমি আমাদের সম্পদ যা ঈশ্বরের দান, আর তোমার সম্পদ তোমার এই লেখা তাও ঈশ্বরের দান সবাই লিখতে পারে না তুমি পেরেছো। এই নাও তোমার লেখা প্রথম কবিতার বই। এর পরের লেখা তুমি তোমার যোগ্যতায় ছাপাবে। রাতুল মাকে জড়িয়ে ধরে পরম নির্ভরতায় ও নিশ্চিন্তে। বাবার দিকে তাকায় রাতুল ভয়ে। বাবা ইশারায় বলেন, ক্যারি ওন।