micro-story-safe-drive-save-life

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ
সুরশ্রী ঘোষ সাহা


‘If you think I am slow, then why I am infront of you’

সামনে যেতে থাকা গাড়ির পিছনের কাচে লেখাটা পড়ে মিটিমিটি হাসল স্পন্দন। রোজই ওর বেরুতে লেট হয়। পথে স্পিডে গাড়ি চালিয়ে মেকআপ করার চেষ্টা করে। আজ অফিসে যথেষ্ট লেটে পৌঁছবে বলে খুব টেনশনে ছিল। হর্ণ বাজাচ্ছিল জোরে জোরে। গাড়ির পিছনে অনেক লেখাই পড়েছে জীবনভর, কিন্তু এটা সত্যিই দারুণ বুদ্ধিমানের মতো কথা বলে মনে হল। হাসি থামিয়ে সুযোগ পেয়ে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। মনে পড়ে গেল, কিছুদিন আগেই সে দেখেছে, এক ট্রাফিক পুলিশ তার নিজের বাইকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ লিখে রেখে নিজেই হেলমেট ছাড়া চালাচ্ছিলেন। একটা চ্যাংড়া ছেলেকে ধরে চালান কাটতে যাবেন, ছেলেটিও পুলিশের ভুল ধরে তখন গলা তুলেছে। সেটাও আরেক রঙ্গ ছিল বটে, ভাবতে ভাবতে অফিসের গেটে ঢুকে পড়ল সে। বস কালকেই একটা আভাস দিয়েছেন। মনে হয় এরমধ্যেই ওকে আবার বাইরে পাঠাবে। লিফ্টে উঠে ৫ টিপলো স্পন্দন। এখনো কত উঁচুতে ওঠা ওর বাকি।

এক বছর আগে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ার দু’হাতের উপর ঝুলন্ত ব্রিজের ছবিটা যখন স্ট্যাটাসে দিয়েছিল, শর্মিতা লিখেছিল, “তোমার চোখ দিয়েই দেখি, আমার তো আর যাওয়া হবে না!”

সোফায় গা এলিয়ে বসে আধখাওয়া আপেল ফোনটায় শিল্পীর তুলি বোলানোর কায়দায় সরু সরু আঙুল বুলিয়ে স্পন্দন লিখেছিল, “কেন যাওয়া হবে না! ইন্দোনেশিয়া আর কতদূর। বিয়ের পর ঠিক নিয়ে যাব তোমায়।”

দু’জনেই জানে, এসব আসলে কথার উপর কথা, নিস্ফল ব্যাকুলতা। কারণ, স্পন্দন তো ঘুরতে নয়, পরিযায়ী হয়ে ডানায় কাজ চাপিয়ে ওড়ে। তাও আবার কোম্পানির পয়সায়। ঐ যে ছেলেবেলায় শিখেছিল আনন্দ শেয়ার করলে বাড়ে, দুঃখ শেয়ার করলে কমে, তাই সে প্রেমিকা – আত্মীয় – বন্ধুদের গন্তব্যস্থান হিসেবে সানফ্রান্সিসকো, উজবেকিস্তান, ফিলাডেলফিয়া নামগুলো বারবার শুনিয়ে আনন্দ বাড়ায়। কিন্তু ফ্যামিলি নিয়ে কি কখনো…

লিফ্ট থেকে নেমে সোজা গিয়ে ঢোকে নিজের কাচঢাকা রুমে। টেবিল- ক্যালেন্ডারে জুলাই মাসের আইফেল টাওয়ারের ছবিটা চোখে পড়তেই মনে পড়ে যায়, দেড় বছর আগেই আইফেল টাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে তোলা ওর হাসিমুখ ছবিটা দেখে শর্মিতা লিখেছিল— “তোমার চোখ দিয়েই দেখে নিই, আর কী…”

অমন বলে না শর্মিতা। নিশ্চয়ই নিজের চোখে একদিন সব দেখা হবে। তোমার বাবা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তবেই — ফাঁকা ঘরে মনের ভিতরেই কথা বলে স্পন্দন।

***

স্পন্দন আর শর্মিতার লাস্ট ব্যাচেলর ডিনার পার্টির আয়োজন করেছিল কমন ফ্রেন্ডরা। রেস্তোরাঁ থেকে বেরুতে বেশ রাত হয়ে গেল। তার উপর হবু স্ত্রী বায়না জুড়ল, “চলো, একটু লং ড্রাইভে ঘুরে আসি। নিশুতি রাতে হাইওয়ে ধরে যেতে শুনেছি দারুণ লাগে।”

ড্রিঙ্কটা একটু বেশিই হয়ে গেছিল স্পন্দনের। হঠাৎ কোথা থেকে কী হল বুঝে উঠতে পারল না। খানিক ভূমিকম্প, ল্যান্ডস্লাইডের মতন। তারপর সব নিস্তব্ধ, চুপচাপ।

***

ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে শর্মিতার বাবাকে জানালেন, “অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। আপনার মেয়ের দৃষ্টি নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। বাকি আঘাতগুলো সেরে উঠলে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।”

শর্মিতাকে যদিও তখনো কেউ বলেনি, যে, অ্যাক্সিডেন্টে সে শুধু তার চোখদুটোই হারায়নি, চোখের ধনকেও হারিয়েছে। এবার থেকে তো বাকি গোটা জীবনটা সে স্পন্দনের চোখ দিয়েই দেখবে…



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *