শিকারী
রেহানা বীথি
একজন পুরুষকে আলিঙ্গন করে কয়েক মুহূর্ত থমকে গিয়েছিলো টুইটি। পুরুষটি শ্যামবর্ণ এবং দীর্ঘাঙ্গী। সে কারণে নয়, সেটা কোনো কারণ হতেও পারে না। একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে থমকে গিয়েছিলো সে। কিন্তু কেন? সে প্রশ্নটিই তাকে ভাবনায় ডুবিয়ে রেখেছে গত তিনদিন ধরে। কারণটা সে নিজেই উদ্ধার করতে পারেনি, তবে অনুভব করতে পারছে। ওই পুরুষের আলিঙ্গনের মধ্যে কিছু একটা আছে। একটা এমন কিছু, যা সে অনুভব করতে পারছে কিন্তু সেই অনুভবটা ধরা দিচ্ছে না তার কাছে। ধরা না দেয়ায়, আচমকা সে পুরুষটিকে ছেড়ে দিয়ে, এক ঝটকায় বেরিয়ে এসেছিল মৃদুআলোর সুসজ্জিত ঘরটি থেকে।কাউকে নিয়ে আগে কখনও এত দীর্ঘসময় ধরে ভাবেনি সে। এখন ভাবছে, শুধু একজনই দখল করে আছে তার পুরো ভাবনার রাজ্য, এটা ভীষণই আশ্চর্যজনক। নির্দিষ্ট কোনো একজনকে এতটা গুরুত্ব দেয়ার মত কারণও খুঁজে পেলো না সে। তিনটে দিন…. পুরো তিনটে দিন সে এক ভাবনাতেই কাটিয়ে দিলো? এই ভাবনার কারণে সময়ও নষ্ট হলো অনেকটা। এই তিনদিনে অন্তত আর একজনের সাথে মোলাকাত হতো। হয়ে যেতো বোঝাপড়া আরও একজন পুরুষের সাথে। ধুর!নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো টুইটি। বিরক্ত হয়ে নিজের বিশাল বেডরুমের বিশাল খাটটায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো একসময়।মিশমিশে কালো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে দু’টো চোখ। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হলো জ্বলজ্বলে চোখের অধিকারীর মুখমণ্ডল, গলা, তারপর পুরো অবয়ব। দুধসাদা এক শিকারী বেড়াল। আঁধারে চোখে আলো জ্বালিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সে তার শিকার। কিন্তু কোথায়? পাচ্ছে না কেন? একটু আগেই তো গন্ধ পেয়েছিল সে! খুঁজতে থাকে…. খুঁজতেই থাকে সে। হঠাৎই জ্বলতে থাকা চোখের তারা নেচে ওঠে তার। এই তো, খুঁজে পেয়েছে!আচমকা জেগে ওঠে টুইটি। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকে একটু আগে দেখা দুধসাদা শিকারী বেড়ালটাকে। ওটাকে ধরতে হবে। ধরে শেষ করে দিতে হবে এক্ষুণি। নইলে যে সামনে ভয়াবহ বিপদ। গত তিনদিন ধরে যে ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে একরকম, যে আলিঙ্গনে একটা কিছু অনুভব করে থমকে গিয়েছিল টুইটি, কেন যেন মনে হচ্ছে তার সমাধান সে পেয়ে গেছে। স্বপ্নের বেড়াল আর ওই আলিঙ্গনে অদ্ভুত অনুভূতি হওয়া পুরুষটিকে একই মনে হল। উভয়ই শিকারী। পুরুষটিও বেড়ালের মতোই তার শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছে। খুঁজে পেয়েও গেছে সে। শুধু তাকে ফাঁদে ফেলার অপেক্ষা। কিন্তু টুইটিও তো কম নয়! আলিঙ্গনেই টের পেয়েছে বিপদের উপস্থিতি। আর তার অবচেতন মন তাকে জানিয়ে দিয়েছে তা।হাহ্, এত সহজ ভেবেছো হে পুরুষ! একে একে শেষ করবো সবকটাকে। আমাকে যেমন একই সাথে ছয়জন পুরুষের ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, তেমনই যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করবো তাদেরকে একে একে। তারপর ধরা দেবো স্বেচ্ছায়। তার একদিন আগেও নয়। যতই প্রেমের ফাঁদ পাতো আর আলিঙ্গনে বিগলিত করার চেষ্টা করো না কেন!