micro-story-swad

স্বাদ
অদিতি ঘোষদস্তিদার


“মাসি ও মাসি, আমাকে একটু শিকিয়ে দাও না গ, কাল বৌদিমণি যা দিয়েচিল বাবুসোনাকে, ওর বড্ড ভালো নেগেচে,” সরির কথা শুনেই গা পিত্তি জ্বলে গেল সন্ধ্যার। শখ কত!
“পারবি না সরি! বাবুদের বাড়ির শউরে কত্ত জিনিস – ওসব কোত্থেকে পাবি?”
“সোজা করে শিইখ্যে দাও, অত কিচু নয় দিবুনি! ছেলেটার জন্মদিন আসচে, করতুম একটু! অ মাসি!”

ভাল জ্বালায় পড়া গেল তো! এই জন্যেই লোকে বলে খেতে পেলে শুতে চায়!

সরি থাকে লক্ষ্মীকান্তপুরে – সন্ধ্যার দেশের বাড়ি যেখানে। কয়েকমাস আগে সরির বরটা মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে আচমকা মরে গেল।
সন্ধ্যা এ বাড়ির পুরোনো রাঁধুনি। বাড়ির সবাই ভালবাসে।
সন্ধ্যার দয়ার শরীর। বলল এ বাড়ির দাদা বৌদিকে সরির দুঃখের কথা।
মাস দু’তিন হলো সরি এ বাড়িতে ঝাড়পোঁছের কাজে লেগেছে।
এ বাড়ির বৌদি ভাল মানুষ। বাড়িতে ভালমন্দ রান্না যা হয়, সবই সন্ধ্যা আর সরির জন্যে আলাদা করে রাখেন। সন্ধ্যার ছেলেপুলেরা বড় বড়, বিয়ে থা হয়ে গেছে। সরির ছেলেটা ছোট, বৌদি আবার আলাদা করে গুছিয়ে দিয়ে দেন। বলেন, “ছেলেটাকে দিস!”

কাল জলখাবারে স্যান্ডউইচ করেছিল সন্ধ্যা। সেই নিয়েই কথাবার্তা।

“দু’পিস্ পাউরুটির মধ্যে যা খুশি দিয়ে পুর করতে পারিস। আমি যেমনি মুরগির করেছিলুম। সব কিছু দিয়ে মেকার মেশিনে ঢুকিয়ে চাপি। দারুণ হয়! তবে বৌদিরা তো কত কিছু দেয়, সালামি, চিজ..”
সন্ধ্যার কথা শেষে না হতেই সরি ফরফরিয়ে বলে ওঠে, “কি সব বলতেছ গ মাসি, কিচুই তো বুজি না। শালা, চিজ, এসব গালাগাল থাকে সেন্ডুইচির মধ্যি!”
উফফ, এ গেঁয়োর সঙ্গে কথা বলা কি পোষায়? সন্ধ্যা বিরক্ত হয়ে উঠে যায়।

দু’তিনদিন পরে দাদা বৌদি বেরিয়ে যাবার পর সরি কোণে লুকোনো একটা প্লাস্টিকের কৌটো সন্ধ্যার হাতে ধরাল।
“মাসি, করেছিলুম গ, এনিচি দুটো তোমার জন্যি, খাও!”
চা নিয়ে বসেছে দুজনে। সন্ধ্যা বাক্স খুলে কামড় দেয় স্যান্ডউইচে।
“কী সুন্দর করিচিস রে! আমার চে’ ঢের গুণে ভাল! এমনতর করলি কী করে রে মেশিন ছাড়া!”
লজ্জা লজ্জা মুখ সরির।
“চাটুতে একখান কাঁসি চাপা দে ওপরে নোড়া চাইপ্যে দিছিনু গ, একন তো ঠান্ডা হয়ে গেচে, বাবুসোনা যখন খেল, কী নরম আর মচমচে!”
“ভেতরে কী দিইছিস রে? মুরগি?”
“হ্যাঁ, আড়াইশো গেরাম কিনে নিয়ে গেচিনু।”
“জম্পেস হয়েছে পুরটা। এ খেলে বৌদির আর তেনাদের সেন্ডুইচ রুচত না রে! কী সোয়াদ! বড় সরেস তো তোর হাতের রান্না সরি!”
সরির মুখের হাসিটা হঠাৎ কেমন মিলিয়ে যায়।
“মোদো মাতাল ছেলো তো লোকটা! জিবের খুব তার ছেলো! কষা কষা ছাড়া মুকে রুচতুনি গ! অর পাল্লায় পড়িই আমার এমন রান্না শেকা..”
গলা ধরে বাকি কথা বুজে যায়।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “micro-story-swad

  1. লাভলি…একদম দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কথ‍্য ভাষা তুলে এনেছ…👌👌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *