মহুয়া ব্যানার্জী
এক-দুই-তিন, এইভাবে একশো পর্যন্ত টানা গুনে যায় পিউ।এই জানালা দিয়ে ওই ঘরের ভেতর স্পষ্ট দেখা যায়। বছর তিরিশের সুঠাম ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত পেশীবহুল দেহটা রোজকার শরীরচর্চায় ঘামে ভেজা। এখনও আরো আধঘন্টা বাকি। পিউ মনে মনে হিসেব করে। আরো কিছুক্ষণ সে তার স্বপ্নের পুরুষের সাথে থাকতে পারবে ভেবে পিউ জানালার গ্রীলে নিজের মুখটা ঠেকিয়ে এক অলীক স্বপ্নে ডুবে যেতে থাকে। ঠোঁটের কোনে এক মধুর হাসি লেগে থাকে তার। টেবিলে রাখা ওষুধের নতুন স্ট্রিপটা আজ একসপ্তাহ ধরে নতুনই আছে।
পাশের বাড়ির দোতলার এই ঘরে একজনের শরীরচর্চার প্রথম দিন থেকে পিউয়ের অবসাদের বর্ণহীন সময়ে রামধনুর রঙ লেগেছে। কুড়ি বসন্ত পার করা পিউ তার দোতলার ঘরের জানালা দিয়ে রোজ সকালে এই শরীরচর্চা দেখাকে প্রায় নেশায় পর্যবসিত করে ফেলেছে। পাশাপাশি দুটো বাড়ির এই ঘরের মধ্যেই আজকাল পিউয়ের মন আর দৃষ্টি বাঁধা পড়েছে। নতুন এই ভাড়াটেটি জানেও না তার এই কিছুক্ষণের শরীরচর্চা পাশের বাড়ির এক তরুনীর অবসাদের ওষুধ।
‘উফফ দাদা বাবু, তোমাকে না পুরো ঋত্বিক রোশনের মত লাগে’ বলে উঠল টুম্পা। ষোল বছরের কিশোরী মনে বিতানের সবকিছুই কেমন অন্যরকম লাগে। ঠিক যেন সিনেমার হিরো। ‘এই, বড় পাকা হয়েছিস তো। তোকে বলেছি না পড়াশোনায় মন দিতে।’ ‘ না না আমি দিদিমনি হবোই তুমি দেখে নিও।’ বিতান বেরিয়ে যায়। আজ আবার অফিস শেষে ‘উড়ান’ সংস্থার মিটিং আছে।
টুম্পা তাড়াতাড়ি হাতের ন্যাতাটা বালতির জলে ডুবিয়ে আবার ঘর মোছায় মন দেয়। নাইট স্কুলে যেতে তার ভালোই লাগে। কতকিছু শিখতে পারে। মা তো গলায় দড়ি দিয়ে বেঁচেছে। মাতাল বাপটার হাত থেকে ক ঘরের কাজটাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিতানের উড়ান সংস্থার জন্য আজকাল সে এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ঘর মুছতে মুছতে সে পড়াগুলো মনে মনে আউড়ে নেয়।
আজ আবার তার ওষুধ না খাওয়া নিয়ে মা আর বাপির মধ্যে একচোট ঝামেলা হয়ে গেল। সেই ছোট থেকে নানান ছুতোয় অশান্তি আর ভালো লাগে না পিউয়ের। তার মা বাবা দুজনেই দু মেরুর বাসিন্দা। পিউ যেন তাদের বোঝা। সে কক্ষনো এই রকম সংসার করবে না। তার সন্তানকে সে আর তার স্বপ্নের পুরুষটি মা বাবার স্নেহে ঘিরে রাখবে। ভাবতে ভাবতেই বিতানের ঘরে চোখ চলে যায় পিউয়ের। মুহূর্ত থমকে যায়। পিউয়ের দৃষ্টি রাগে, হতাশায় ক্রমশ বিস্ফারিত হতে হতে এক অস্বাভাবিক গোঙানি বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। এক, দুই, তিন…
কাঁপা কাঁপা হাতে সবগুলো ওষুধ খেয় নেয় পিউ।
দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা রিতার সাথে বিতান তখন শরীরী খেলায় মগ্ন। ‘আহ, বিতান, জানলাটা বন্ধ করে দাও।‘ জানলাটা বন্ধ করে তারা সংসার গড়ার স্বপ্নে মাতে।
গভীর রাতে মাটির উঠোনে শোয়া টুম্পার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একটা হাত তার বুকে চাপ দিচ্ছে। চিৎকার করার আগেই একটা নেশাগ্রস্থ গলা বলে ওঠে, ’ চুপ, তোর বাপ তোকে মোর কাছে বেচে দিছে। আজ থেকে তুই মোর।‘ যন্ত্রনায় ছিন্ন ভিন্ন টুম্পার ইন্দ্রিয় জুড়ে তখন বই খাতা ছেঁড়ার অনুভূতি।
হাসপাতালের দামী কেবিনে কোমায় চলে যাওয়া পিউয়ের মুখে একটা হাসি লেগে আছে। বিতান আর তাদের ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে এই সুখের স্বপ্ন- সংসার ছেড়ে সে কিছুতেই জাগতে চায় না।
বেনারসীতে সেজে আজ রেজিস্ট্রি অফিসে রিতা সবাইকে নিয়ে অপেক্ষা করছে। বিতান বাইকে স্পীড তোলে। এক লহমায় তার নতুন সংসারের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় অপর দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায়। রক্তাক্ত বিতান রিতার বধুবেশের কল্পনাতে চিরনিদ্রায় তলিয়ে যায়।
পাশের বাড়ির দোতলার এই ঘরে একজনের শরীরচর্চার প্রথম দিন থেকে পিউয়ের অবসাদের বর্ণহীন সময়ে রামধনুর রঙ লেগেছে। কুড়ি বসন্ত পার করা পিউ তার দোতলার ঘরের জানালা দিয়ে রোজ সকালে এই শরীরচর্চা দেখাকে প্রায় নেশায় পর্যবসিত করে ফেলেছে। পাশাপাশি দুটো বাড়ির এই ঘরের মধ্যেই আজকাল পিউয়ের মন আর দৃষ্টি বাঁধা পড়েছে। নতুন এই ভাড়াটেটি জানেও না তার এই কিছুক্ষণের শরীরচর্চা পাশের বাড়ির এক তরুনীর অবসাদের ওষুধ।
‘উফফ দাদা বাবু, তোমাকে না পুরো ঋত্বিক রোশনের মত লাগে’ বলে উঠল টুম্পা। ষোল বছরের কিশোরী মনে বিতানের সবকিছুই কেমন অন্যরকম লাগে। ঠিক যেন সিনেমার হিরো। ‘এই, বড় পাকা হয়েছিস তো। তোকে বলেছি না পড়াশোনায় মন দিতে।’ ‘ না না আমি দিদিমনি হবোই তুমি দেখে নিও।’ বিতান বেরিয়ে যায়। আজ আবার অফিস শেষে ‘উড়ান’ সংস্থার মিটিং আছে।
টুম্পা তাড়াতাড়ি হাতের ন্যাতাটা বালতির জলে ডুবিয়ে আবার ঘর মোছায় মন দেয়। নাইট স্কুলে যেতে তার ভালোই লাগে। কতকিছু শিখতে পারে। মা তো গলায় দড়ি দিয়ে বেঁচেছে। মাতাল বাপটার হাত থেকে ক ঘরের কাজটাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিতানের উড়ান সংস্থার জন্য আজকাল সে এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ঘর মুছতে মুছতে সে পড়াগুলো মনে মনে আউড়ে নেয়।
আজ আবার তার ওষুধ না খাওয়া নিয়ে মা আর বাপির মধ্যে একচোট ঝামেলা হয়ে গেল। সেই ছোট থেকে নানান ছুতোয় অশান্তি আর ভালো লাগে না পিউয়ের। তার মা বাবা দুজনেই দু মেরুর বাসিন্দা। পিউ যেন তাদের বোঝা। সে কক্ষনো এই রকম সংসার করবে না। তার সন্তানকে সে আর তার স্বপ্নের পুরুষটি মা বাবার স্নেহে ঘিরে রাখবে। ভাবতে ভাবতেই বিতানের ঘরে চোখ চলে যায় পিউয়ের। মুহূর্ত থমকে যায়। পিউয়ের দৃষ্টি রাগে, হতাশায় ক্রমশ বিস্ফারিত হতে হতে এক অস্বাভাবিক গোঙানি বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। এক, দুই, তিন…
কাঁপা কাঁপা হাতে সবগুলো ওষুধ খেয় নেয় পিউ।
দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা রিতার সাথে বিতান তখন শরীরী খেলায় মগ্ন। ‘আহ, বিতান, জানলাটা বন্ধ করে দাও।‘ জানলাটা বন্ধ করে তারা সংসার গড়ার স্বপ্নে মাতে।
গভীর রাতে মাটির উঠোনে শোয়া টুম্পার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একটা হাত তার বুকে চাপ দিচ্ছে। চিৎকার করার আগেই একটা নেশাগ্রস্থ গলা বলে ওঠে, ’ চুপ, তোর বাপ তোকে মোর কাছে বেচে দিছে। আজ থেকে তুই মোর।‘ যন্ত্রনায় ছিন্ন ভিন্ন টুম্পার ইন্দ্রিয় জুড়ে তখন বই খাতা ছেঁড়ার অনুভূতি।
হাসপাতালের দামী কেবিনে কোমায় চলে যাওয়া পিউয়ের মুখে একটা হাসি লেগে আছে। বিতান আর তাদের ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে এই সুখের স্বপ্ন- সংসার ছেড়ে সে কিছুতেই জাগতে চায় না।
বেনারসীতে সেজে আজ রেজিস্ট্রি অফিসে রিতা সবাইকে নিয়ে অপেক্ষা করছে। বিতান বাইকে স্পীড তোলে। এক লহমায় তার নতুন সংসারের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় অপর দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায়। রক্তাক্ত বিতান রিতার বধুবেশের কল্পনাতে চিরনিদ্রায় তলিয়ে যায়।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
Very nice….aro bhalo bhalo golpo chai…..specially mysterious and horror
টুকরো টুকরো চিত্রকল্পের বাস্তব। বড়ো ভালো লেখা।
ধন্যবাদ।
দারুণ বাস্তববাদী গল্প, দিদি, শেষে কারোরই মিল হলো না।
জোর করে cinematic effect দেওয়া নয়, পুরো সমাজজীবন থেকেই তুলে আনা কোলাজ এই গল্প। সেরা।
অনেক ধন্যবাদ। পাঠকের মতামত আমার সেরা প্রাপ্তি।
ভালো লাগলো,,অন্যরকম একদম লেখা
অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভাল লাগল। অপূর্ব।
ধন্যবাদ। আমার কাছে এই মতামত বড় মূল্যবান
ভালো লিখেছ মহুয়া, বেশ ভালো অণুগল্প! আমার ভালো লেগেছে। তবে, মনে হয়েছে — ঘটনার ঘনঘটা কিছু কম হতে পারত। মানছি, এই ফর্ম্যাটেও তুমি বিতান কী চরিত্রের মানুষ সেটা দেখিয়েছ এবং সেজন্যেই টুমপার ওই অবস্থা! মোচড় (twist) এত বেশি এলে আমার মতে শিল্প ব্যাহত হয়। রবীন্দ্রনাথের কবিতার এই লাইনে দ্যাখো অনুপ্রাস অলঙ্কার কীভাবে এসেছে। ” চল চপলার চকিত চমকে করিছে চরণ বিচরণ, / কোথা চম্পক আভরণ!” অতি প্রয়োগ হয়েছে। অথচ, এটা শোনো — নন্দপুর চন্দ্রবিনা বৃন্দাবন অন্ধকার! অনুপ্রাস অলঙ্কার — ইংরেজিতে alliteration।