দেবব্রত দাশ
বউবাজার-অঞ্চলের গলি — তস্য গলি ঢুঁড়ে ফেলে যখন নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে ডোর-বেল টিপল অবিন, তখন ধৈর্যের শেষসীমা অতিক্রান্ত। দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে দেখে সে দ্বিতীয়বার বেল টিপল।
আসলে, করোনা-আবহে ২০২০ সালের ২৪-মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়ে টানা দু’মাস চলার পর যখন জুন মাসের ৮-তারিখ থেকে আনলক-পদ্ধতি চালু হল কলকাতা শহরে, তখন অবিন আবার ডাক পেল হোম ডেলিভারি-সংস্থার মালিকের কাছ থেকে এবং পুরোনো চাকরিতে ফিরে যারপরনাই খুশি সে। সংসার তো প্রায় অচল হয়েই গিয়েছিল, জমানো পুঁজিতে আর কতদিনই বা চলত বসে খেলে! কিন্তু গোল বাধল অন্য দিক দিয়ে। মাত্র এক বছর আগে বিয়ে করা বউ এষা লকডাউনের কঠিন সময়ে মাঝেমধ্যে কাছে ঘেঁষতে দিলেও এখন নিজেকে পুরোপুরি লকডাউনের আওতায় নিয়ে এসেছে, “তুমি যেভাবে দিনরাত্তির বাইরে বাইরে ঘুরছ, তাতে যতই স্যানিটাইজ করো নিজেকে আর সাবান দিয়ে হাত ধোও না কেন, রাতে আমার ত্রিসীমানায় ঘেঁষবে না — বলে দিচ্ছি তোমায়।”
এই তো পরশু রাত্তিরে খাট থেকে নেমে মেঝেয় বিছানা পেতে শোওয়া এষার কাছে যেতেই সে যেভাবে চিল্লামেল্লি শুরু করে দিয়েছিল, তাতে যে পাড়াপড়শি ছুটে আসেনি, সেটাই রক্ষে। না — তিরিশ বছরের যুবকের পক্ষে এভাবে চলতে পারে না দিনের পর দিন, চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তার।
দরজা খুলতেই অবিনের চোখ ছানাবড়া! অসামান্য রূপবতী রূপকথার রাজকন্যে মদির মদালসা চাহনি মেলে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখেই বুকের মধ্যে ছলাৎ করে ওঠে অবিনের, থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে সে বলে, “আসতে একটু দেরি হয়ে গেল ম্যাডাম, আপনার…”
“না না — ঠিক আছে, কোনো অসুবিধে হয়নি, তুমি বোসো এই চেয়ারে, আমি আসছি এখুনি।” বলতে বলতে খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে মেয়েটি ডাইনিং টেবিলে রাখতে গেল ।
একটু পরেই ফিরে এল সে, “আরে— বাইরে দাঁড়িয়ে কেন তুমি! ভেতরে এসে বোসো।”
“আমি চেয়ারে বসলে, চেয়ার স্যানিটাইজ করতে হবে তো আপনাকে ম্যাম! তবু যখন বলছেন…”
কিন্তু কিন্তু করে ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসল অবিন অগত্যা।
“কী বলছিলে যেন তুমি?— স্যানিটাইজ করতে হবে। না — হবে না,” দরজার পাল্লা বন্ধ করে ছিটকিনি তুলতে তুলতে বিলোল কটাক্ষ হেনে মেয়েটি বলল, “স্যানিটাইজ করার দরকারই হবে না…”
“মানে!” চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় অবিন, “কী হল?— কী ব্যাপার ! দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
“সিম্পল…ভেরি সিম্পল। যা দুঃসময় গেল না ক’মাস…আজ রাত্তিরে তুমি আমার প্রথম খরিদ্দার, বুঝেছ?”
রূপবতী রাজকন্যে তার কোমল দু’হাতের বেষ্টনীতে অবিনকে বন্দি করে নিতে একটুও দেরি করল না।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
বেশ, খাবার এবং
কোভিড ১৯ শুধুমাত্র একটা মহামারী নয়,মানুষের মনের গভীরে চাড়িয়ে যাওয়া এক ভীষণ অ-সুখের নামও বটে।আপনি অণুগল্পের সীমিত পরিসরে যেভাবে জীবনের এক একটা দিক তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।
শেষের চমকটা খুবই অপ্রত্যাশিত। অণুগল্পের নিরিখে এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়।
Anuva Nath তোমার বিশ্লেষণ আমাকে অবাক করেছে এজন্যেই যে, আমি বিশ্লেষণ করলেও তা প্রায় অভিন্ন হত! আমার মনে হয়, তুমি সৃষ্টিশীল সাহিত্য উপহার দেওয়ার পাশাপাশি একজন দুর্ধর্ষ ক্রিটিক মানে সাহিত্য সমালোচকও বটে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে অনুভা।
You have unlocked an unique angle to unlockdown.
In these tough times of pandemic, many relationships have got infected, not only we humans physically.
The ending was quite interesting. Commendable writing!!
স্বল্প পরিসরের , বেশ ঠাসা বুনোটের , অনুগল্প 👌👌👍👍
আমি বিরূপ সমালোচনা করি বললে সমালোচনা করা যায় না। আমি x-ray eye দিয়ে দেখতে চেষ্টা করি গল্পের কাঠামো কে এবং একই সঙ্গে দেখতে চেষ্টা করি গল্পের কুশীলবেরা যেন গল্পের সৃষ্টি কর্তার কল্পনায় ঘাটতি থাকার জন্য হীনমন্যতায় না ভোগে। প্রথমেই বলি অনুগল্পের কাঠামোটা একদম ঠিক আছে। কিন্তু, গল্পের নায়িকার যেরূপ বর্ণিত হয়েছে-এইরকম একজন বারবণিতা রূপে বর্ণন একটু বেমানান হয়ে গেল।আর যে
পরিস্থিতিতে বর্তমান নায়ক চলছে যদি সে খদ্দেরই হয় তবে সেই রাজকন্যে(!) তার কাছ থেকে কি ই বা পাবে ? যেখান তারও ভাড়ে মা ভবানী। অর্থাৎ এই অনু গল্পে কঠিন বাস্তব দরজা খুলে দিলেও দরজা দিয়ে ঢুকতে দ্বিধা বোধ করবে।
শিশির, তোর মন্তব্যের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ । গঠনমূলক সুন্দর সমালোচনা! জবাব দেওয়ার কিছু দায়িত্ব লেখকের আছে। তাই বলছি, মেয়েটিকে দেখে উপোষী অবিনের বুকের মধ্যে ছলাৎ করে ওঠে আর তাই তার চোখে মেয়েটি ( সত্যকারের রূপবতী হওয়া আটকাচ্ছে কেমন করে? তাহলে তো গরিব ঘরে রূপসী কন্যা জন্মাতই না !) রূপকথার রাজকন্যে হয়ে উঠতেই পারে । আনলক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর অবিনের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’-অবস্থা , এটা তোর নিজস্ব আরোপিত ভাবনা… একশোটা টাকাও কি অবিন দিতে পারবে না মেয়েটিকে… এই জায়গাটায় তুই সমালোচনা করবি বলেই সমালোচনা করলি ! যাইহোক, লেখকের অবশ্যই ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ।
যারা hand to mouth তাদের কাছে ১০টাকার মূল্য টাই অনেক।এবং যারা ক্যুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করে তারা সারাদিন ঘুরে যে কমিশন পায় তাতে আর যাই হোক ভোগ , বিলাসিতা করার মানসিকতাই আর থাকে না। আর,ঐ মেয়েটি যে গরীবের ঘরের সেই আভাস কিন্তু গল্পে নেই। আর, গরীবের ঘরের মেয়েদের মধ্যে সৌন্দর্য থাকে না সে কথা আমি উল্লেখ করিনি। আমার কথা যে খদ্দেরের অভাবে উপোসী তার মধ্যে আর যাই হোক মদির মদালসা চাহনি থাকতে পারে না।কারণ, পদার্থবিজ্ঞানের শক্তির সংরক্ষণ সূত্র অনুযায়ী শক্তির পরিবর্তন সম্ভব। এখানেও আমি মনে করি যে এরূপ দূরাবস্থায় আছে তার চোখে ফুটে উঠবে এক ক্লান্ত সৌন্দর্য – তার মধ্যে ফুটে উঠবে না এরূপ আগ্রাসী সৌন্দর্য। আরেকটা বড় কথা মনে হয় যে ছেলেটি অভাবী, কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্ত্রীর দ্বারা sex starved সেইজন্য যে তাকে ডাকবে তার দ্বারা আকর্ষিত হয়ে sex করার জন্য প্রলুব্ধ হবে এরূপ কল্পনা করে ঐ ছেলেটির মানবিক মূল্যবোধের অবমাননা ঘটনা হয়েছে বলে আমি মনে করি। শুধু তাই নয় এধরনের চিন্তাভাবনা সমাজের অবক্ষয়কে ত্বরাণ্বিত করে।
শিশির, তোর সঙ্গে কথা চলে না। সমাজের অবক্ষয় ঘটাবে এই গল্প! তাহলে যুগেযগে সমাজে রেডলাইট এরিয়া থাকে কেন! অনেক গল্প-উপন্যাস রচিত হয় ত্রিকোণ প্রেম অবলম্বন করে। তাতে সমাজের অবক্ষয় হয় না??? আমি অনুরোধ করছি, আমার গল্পের মূল্যায়ন তুই আর করিস না! “দূরাবস্থা” নয়। সঠিক শব্দ হল “দুরবস্থা”। সাহিত্যে তোর দুরবস্থা আমাকে ব্যথিত করল। খোলাখুলি বললাম।
চমৎকার লেখা। শেষের টুইস্টটা অভাবনীয়। সার্থক অণুগল্পের সবগুলো শর্তই এই লেখাটি পূরণ করেছে।
প্রিয় মৃগাঙ্ক, আপনার এমন সুন্দর বিশ্লেষণের জন্যে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই ফর্ম্যাটে উঁচু মানের অণুগল্প লেখা বেশ কঠিন ব্যাপার । আপনি আমাকে প্রাণিত করলেন ।
Frankly speaking, still I have reservations about the literary value of flash fiction. However, I must say that the plot of your story “Unlock” has been carefully chosen and thoughtfully organized with a dramatic twist and surprise at the end. Like any other literary work, the micro-story also demands creativity and showcase talent, which, I think you have confidently fulfilled within seemingly arbitrary word limits. But what I observe that the story has sublimely highlighted hedonism, particularly, when the protagonist jumped into wild action without any regard for passionate honesty and vigorous protest. Thanks.
Sunil Basu Sunil, your analysis in details is undoubtedly superb! Hats off to you! However, you might have choice of your own, I mean you may not like this format of micro story. I must admit, your threadbare analysis has always enriched me. Thanks a lot.
সার্থক অণুগল্প। শেষের টুইস্ট দারুণ। মানুষের সব রকম খিদের ওপর আলোকপাত করেছেন।
ধন্যবাদ বৈশাখী। যে দৃৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করেছ, তা অনন্য!
গল্পটা পড়ে খুব ভাল লাগল। সার্থক অণু গল্প।আপনার লেখার ভক্ত আমি। তবে শেষে অবিন যদি শারীরিক খিদের কাছে সমর্পিত না হত তাহলেই মনে হয় স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতা থাকত।কারণ স্ত্রীর এই আচরণটা তো সাময়িক। সাধারণ গৃহবধূ হয়ে ব্যাপারটা ভাবায় বই কী !