চুনিলাল বিশ্বাস যে এমন কাজ করতে পারেন, ভাবতেই পারিনি আমি। কোথায় নিজে গিয়ে লম্পটটার হাত থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন ঝুপড়ি-বাসী তরুণীটিকে, তা নয়, উনি পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও তুলতে শুরু করে দিয়েছেন পথের মাঝে ঘটতে থাকা দৃশ্যের!
রোজকার মতো সেদিনও আমি ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম আমার গড়পাড়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ধরে। হাঁটা শেষ করে যখন ফিরছি, তখনই ঘটল ঘটনাটা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমার গলা দিয়ে বেরিয়ে এল চিৎকার এবং আমি পড়িমরি ছুটতে শুরু করলাম রাস্তার পাশে সেই স্পটের দিকে, যেখানে মনুষ্যরূপী এক জানোয়ার ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণ শুরু করে দিয়েছে ।
আমার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে দু’চারজন পথচারীও অনুসরণ করল আমাকে এবং পৌঁছেই আধদামড়া এক মাঝবয়সিকে টেনে তুলে যখন চড়থাপ্পড় সহযোগে আপ্যায়ন শুরু করেছি, তখনই আমার নজর গিয়েছিল চুনিলালবাবুর দিকে।
পাড়ার মুখচেনা এক যুবককে অনুরোধ করলাম “থানায় ফোন করে খবর দাও, আমি আছি।” বলেই এগিয়ে গেলাম চুনিলাল বিশ্বাসের দিকে, “ব্যাপার কী আপনার ? ভিডিও তুলছিলেন!”
“হ্যাঁ, অবাক হওয়ার কী আছে?” উষ্মাভরা কণ্ঠস্বরে জবাব দিলেন তিনি, “তুলতেই পারি!”
“ফেসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন নিশ্চয়ই?”
“কী যে বলেন আপনি মিস্টার দাশ, এতটা বোকা নই আমি!” মুখে বিজ্ঞ হাসি চুনিলালের, “এই তো―মাসতিনেক আগে, টি.ভি-সিরিয়ালের এক সেলেব্রিটি অভিনেত্রীকে কয়েকজন মত্ত যুবক যখন হেনস্তা করছিল, তখনও আমি ভিডিও করেছিলাম, কিন্তু ফেসবুকে আপলোড? না মশাই, সে ভুল আমি করিনি…ব্রেকিং নিউজ তো…তাই, মিডিয়ার লোকজন নিজেদের গরজে এসে নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল সে ভিডিও আমার কাছ থেকে।”
“ছিঃ মিস্টার বিশ্বাস…ছিঃ! আপনাকে প্রতিবেশী ভাবতে লজ্জা হয় আমার!”
এই ঘটনার পর এক সপ্তাহও কাটেনি, এক সকালে খবরের কাগজের পাতা উল্টে চোখ আটকে গেল একটা সংবাদে : গতকাল রাত দশটা নাগাদ খোদ কলকাতার বুকে মানিকতলা অঞ্চলের এক গলি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে বিবস্ত্র সংজ্ঞাহীন এক কিশোরীকে। পুলিশের অনুমান টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে ফেলে রেখে গিয়েছিল এক দল দুষ্কৃতি।
সঙ্গে দেওয়া ছবির দিকে চেয়ে চমকে উঠলাম…এ কী ! চুনিলাল বিশ্বাসের মেয়ে রুনা! বিষাদে ভরে গেল মন। করব না করব না করেও শেষমেশ মোবাইলটা হাতে নিয়ে চুনিলালবাবুর ফোন নাম্বার পুট করলাম আমি। রিং হতে হতে ফোন থেমে গেল একসময়।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
ভীষণ কষ্ট হল পড়ে। কিন্তু চুনিলালের মতো মানুষ এই সমাজে বিদ্যমান। নিখুঁত ফুটিয়ে তুলেছেন এই চরিত্রটি।
দারুন লাগলো গল্পটা। আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতি আমাদের নিস্পৃহতা অথবা সুযোগ সন্ধানী লোলুপতার খেসারত এভাবেই দিতে হয়।
প্রাসঙ্গিক৷ব্যূমেরাং হয়ে ফিরে এলে তখন মানুষ বুঝতে পারে৷ভাল লেগেছে৷
Khubi realistic story chunilal babur moto hypocrite to ache golpoti jeno kono sotti ghotona hoye utheche