মূল রচনা – তিশানি দোশি
(Everything Begins Elsewhere গ্রন্থ থেকে উৎকলিত)
অনুবাদ: আলম খোরশেদ
কবি পরিচিতি:
তিশানি দোশি (জ. ১৯৭৫) সমকালীন ভারতের ইংরেজিভাষী সাহিত্যিকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত সুপরিচিত ও স্বীকৃত একজন। তিনি প্রধানত কবি হলেও কথাসাহিত্য ও সাংবাদিক গদ্য রচনাতেও সমান সিদ্ধহস্ত। তিনি পৃথিবীর বহু সাহিত্য উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নানাবিধ মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্যপুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ Countries of the Body র জন্য তিনি ব্রিটেনের বিখ্যাত ফরোয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর অপর দুটো উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: Everything Begins Elsewhere (2012) , Girls are Coming out of the Woods (2017)| এছাড়া, The Pleasure Seekers (2010), Fountainville (2013), Small Days and Nights (2019) নামে তিন খানি নন্দিত উপন্যাসেরও রচয়িতা তিনি।
সেই দিনগুলোর কথা না বলাই ভালো
যখন কফির দানাগুলো সকালকে আশায় ভরে তুলত,
যখন আমাদের মায়েদের মাথার কাপড়গুলো
উঠানের তারে ঝুলে থাকত শাদা পতাকার মতো।
আকাশের দীর্ঘ বাহুর কথাও না-হয় না-ইবা বলি
যারা আমাদেরকে সন্ধ্যায় ঘুম পাড়িয়ে দিত।
আর সেই বাওবাব— তাদের পাতার আকৃতিকে
যেন আমরা আমাদের স্বপ্নে খুঁজতে না যাই, অথবা নামহীন সেই
পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের জন্য উতলা না হই
যারা গির্জার কার্নিশে বসে গান গাইত, এবং মরে পড়ে থাকত।
রাতের বেলায় বিছানা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া
পুরুষদের কথাও আমরা না বলি।
আমরা যেন সেই শব্দটি উচ্চারণ না করি
গুম।
বৃষ্টির প্রথম ঘ্রাণকেও আমরা যেন মনে না করি।
তার বদলে, চলো আমরা আমাদের জীবনের কথা বলি—
তোরণ, সেতু, দোকানপাটের কথা।
এবং যখন আমরা ক্যাফেতে কিংবা রান্নাঘরের টেবিলে
আমাদের নতুন ভাই বন্ধুদের সঙ্গে বসে
রুটি ছিঁড়ে খাই, তখন যেন তাদেরকে
যুদ্ধ কিংবা হারানোর গল্প বলে
অযথা বিরক্ত না করি।
আমরা আমাদের পুরনো বন্ধুদের নামও না নিই
যারা মৃতদের অরণ্যে
ক্রমে রূপকথার মতো খুলে যাচ্ছে।
তাদের নাম বললেই তো আর তারা ফিরে আসবে না।
আমরা বরং এখানেই থাকি, আর অপেক্ষা করি
ভবিষ্যতের জন্য; আমরা একদা যে দেশ থেকে এসেছি
আমাদের বংশধরদের জিহ্বার দ্বিখণ্ডিত উচ্চারণে
সেদেশের কথা শুনতে চাওয়ার আকুতিটুকুর জন্য।
সেখানকার কথা বলো, তারা হয়তো জানতে চাইবে।
আর তুমি হয়তো তাদেরকে আকাশ, কফির দানা
ছোট্ট শাদা বাড়িগুলো কিংবা ধূলিধূসরিত পথের কথা
বলার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠবে।
তুমি হয়তো তোমার স্মৃতিগুলোকে নদীতে
কাগজের নৌকোর মতো ভাসিয়ে দিতে চাইবে।
তুমি মনে মনে প্রার্থনা করবে নৌকোটি
নদীর জলকে তোমার গল্প বলুক,
জল গাছকে তা গেয়ে শোনাক,
আর গাছেরা তা চিৎকার করে
বলুক পাতাদের কাছে। তুমি যদি স্থির বসে থাকো
কোনো কথা না বলে, তাহলে হয়তো শুনতে পাবে
তোমার সারা জীবনের গল্পেরা পৃথিবীকে ভরিয়ে দিচ্ছে,
যতক্ষণ না বাতাসই হয়ে উঠবে জগতের একমাত্র শব্দ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন