বেহুলা বাংলা
তানভীর মোকাম্মেল
সনেট এক
হিজলদীঘা ধানের ক্ষেতে যখন দেখি তোমার স্মিত হাসি
বাতাসে শুনি ভেসে আসে এক অচিন সুরের বাঁশি
বুঝতে পারি বেহুলা তখন রয়েছে এই বিলময় বাংলায়
লক্ষ্মীর পদচিহ্নে যে মেয়ে গাঙুরপারে আজো হেঁটে যায়
যে তারে চিনতে পারে সে পায় ছোঁয়া স্নিগ্ধ অমরার
করে সে সৃষ্টি ঝর্ণাধারায় পায় দৃষ্টি জগতকে স্বচ্ছ দেখবার
আর যারা তারে দেখেও দেখে না বৃথাই দূরে চেয়ে রয়
অভিশপ্ত জীবন তাদের বিষন্ন থেকে আরো বিষন্নতর হয়;
পিতৃপুরুষের অনেক ঋণ পাইনি তো কোনো পার্থিব ধন
পেয়েছি কেবলই চিরবিচলিত অস্থির এক অভিমন্যু মন
আজন্ম তা তাড়িত করে শান্ত কোনো শিউলী উঠান সন্ধানে
রয়েছে যেখানে শাপলা শান্তি অবচেতন আর চেতন মনে
কোনো সাতনরী হার যাওনি রেখে কোনো বৈভব ধন মান
তবু যা দিয়েছ এ বাংলায় সবই তো তোমার অন্নপূর্ণা দান॥
সনেট দুই
বাল্যে গড়ে মাটির পুতুল খেলেছিলাম তোমার শরীর নিয়ে
দুরন্ত কৈশোরে মুছেছি কত ঘাম ওই শুভ্র আঁচল দিয়ে
রাইফেল কাঁধে ঘুরেছি যৌবনে বাংলার পথে আর প্রান্তরে
ছুঁড়েছি গ্রেনেড তোমার জন্যে বিজাতীয় শত্রুর বাঙ্কারে
স্বজন নিয়ে গড়েছি প্রৌঢ়ে পুতুলের একান্ত সংসার
বার্ধক্যে তুমি হয়েছ বেহুলা আরো একান্ত আমার
তোমাকে ছাড়া আর তো কোনো নিশিস্বপ্ন দেখিনি
পেয়েছি তোমাতেই আমার আত্মপরিচয় বাংলা জগৎজননী;
যখন ওরা বলেছে তোমার দারিদ্র্যের মলিনতার কথা
করেছে উপহাস পরনের ছেঁড়া শাড়ীর বিষন্নতার ব্যথা
তবু তোমাতেই ছিল লক্ষ্য আমার অর্জুনের মাছচক্ষুর মতো
নীল ধ্রুবতারায় রাখে নাবিক যেমন তার স্বপ্নসাধ যতো
একদিন ওই ব্যথাতুর মুখে দেখেছিলাম বেহুলা তোমার রূপ
সেই থেকে আর চাইনি স্বর্গ দিইনি কোনো অপার্থিবে ডুব॥
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন