একটি মৃত্যু ও মাধবীলতা
অরুণিমা
এত কান্না জমা ছিল তোমার মাধবীলতা! আমায় দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লে!
একটু হাত বাড়াতেই জড়িয়ে ধরলে, আর চোখের জলে ভিজিয়ে দিলে।
আমি তো কোনও প্রস্তুতি নিয়ে যাইনি তোমার কাছে
তোমার বিবর্ণ শরীর যখন আঁকড়ে ধরল আমাকে, কিছুই দেবার ছিল না আমার,
এক মুহূর্ত ভাষাও ছিল না বলার।
তোমার কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন আমারও হৃদস্পন্দন,
আমিও জড়িয়ে ধরেছিলাম তোমায় কান্নায়। চাইছিলাম বুলিয়ে দিতে স্নেহ,
দূর করতে চাইছিলাম তোমার বিবর্ণতা।
তোমার বুড়িয়ে যাওয়া মুখ আর জড়িয়ে যাওয়া আঙুল,
আমি অনুভব করছিলাম আমার আপনজন।
আমি চাইছিলাম সেই ছোটবেলার মতো চঞ্চলতা নেমে আসুক তোমার জন্য
গ্রাম্য বালিকার মতো বেজে উঠুক তোমার হাতে রঙিন কাঁচের চুড়ি,
গ্রামের মেলায় নাগরদোলা চাপতে যাওয়ার আগে কিনেছিলে যেমনটি।
তোমার মায়ের লুকানো ঝাঁপি থেকে আবদার করে নিয়েছিলে জমানো পয়সা।
আমি চাইছিলাম তোমার পায়ে বেজে উঠুক গোল বল লাগানো নূপুর
যা তোমার পায়ের তালে বেজে উঠত, নেচে উঠত কাশের বন,
আমি চাইছিলাম তেমনি ছন্দ আর তাল বাজুক তোমার পায়ে।
চাইছিলাম তোমার রুক্ষ পায়ের স্পর্শ হয়ে উঠুক সেই সময়কার মতই নরম,
যাতে ঘাসেরাও লজ্জা পায়।
তুমি মাথা রেখেছিলে আমার কাঁধে।
তোমার শরীরের তাপে জ্বর আসছিল তখন আমার,
আমি চাইছিলাম জ্বরের ঘোরে ডুবে যেতে, চাইছিলাম এত তাপ
জড়িয়ে ধরুক আমায় যাতে তার ঘোরে কথা শুরু করি আমি।
অচেতন না হলে আজও যদি না যোগায় ভাষা? আশ্চর্য্য হচ্ছিলাম ভেবে,
এতদিন পরেও কাজ করে অনুভূতি, ভালবাসা!
যেন সময়ের রথ পিছনপানে চলে আবার নিয়ে যাচ্ছে আমায় ছোটবেলায়।
সেখানে সাজানো আছে আমার কালবৈশাখী বিকেল, পাতা ঝরা উঠোন, বুনো ফুল,
কচুরিপানা, নতুন পাখা, মহালয়ার লাল আকাশ, নববর্ষের স্নান আর নতুন জামা।
সেখানে আরও আছে আমার আমের আঁটির অধিকার, লক্ষ্মীপুজো, নাড়কেল নাড়ু,
ঝুলনের রাধাকৃষ্ণ, মাটির পুতুল, মানুষ পুতুল।
শীতকালের লেপকাঁথা, গায়ে মাখা রোদ, আর কুল মাখা আচার।
ডাক পাড়ছে একে একে সব ফুল, ন, রাঙা, সোনা, ছোট, কী ভাল!
কোলাহল হইচই রব। জন্মদিনের পায়েস, দোলের রঙ।
দুদিন পরে গায়ে হলুদ, বিয়ে বউ বর।
তোমার বিয়ে মাধবীলতা,
যে তোমার বর কী সুন্দর কথা বলে, হাসে, আপন হোক বা পর।
তার জন্যই তুমি আজ কাঁদছ মাধবীলতা,
সে চলে গেছে বলে তুমি ভিজেছ এক বুক জলে নেমে,
পাথর রেখেছিলে বুকে আর চেপে রেখেছিলে কান্না, আমি আসব বলে?
তাঁকে আমিও হারিয়েছি মাধবীলতা, বিদায় দিয়েছি কান্নায়।
সে যে আমারও বড় প্রিয়। কিন্তু সে তো অভিমানী, ভোলেনি বিছিন্নতা।
আমিও দেখেছি দূর থেকে, ছুঁতে চাইনি তার শীতলতা।
চলো, উঠে এসো মাধবীলতা। স্নান সেরে নাও আজ নতুন করে কান্নার পরে।
সন্ধ্যায় জ্বেলে দিও ধূপ, আর ছড়িয়ে দিও প্রিয় গন্ধ।
আমি কাল চলে যাব, তার আগে আর একবার আসব ফিরে।
মলিনতা নিয়ে যাব, তোমায় যেন রাখে স্নিগ্ধতা ঘিরে।
আজ থেকে তোমার নতুন নাম দেব- ‘রজনিগন্ধা’।
অরুণিমা
এত কান্না জমা ছিল তোমার মাধবীলতা! আমায় দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লে!
একটু হাত বাড়াতেই জড়িয়ে ধরলে, আর চোখের জলে ভিজিয়ে দিলে।
আমি তো কোনও প্রস্তুতি নিয়ে যাইনি তোমার কাছে
তোমার বিবর্ণ শরীর যখন আঁকড়ে ধরল আমাকে, কিছুই দেবার ছিল না আমার,
এক মুহূর্ত ভাষাও ছিল না বলার।
তোমার কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন আমারও হৃদস্পন্দন,
আমিও জড়িয়ে ধরেছিলাম তোমায় কান্নায়। চাইছিলাম বুলিয়ে দিতে স্নেহ,
দূর করতে চাইছিলাম তোমার বিবর্ণতা।
তোমার বুড়িয়ে যাওয়া মুখ আর জড়িয়ে যাওয়া আঙুল,
আমি অনুভব করছিলাম আমার আপনজন।
আমি চাইছিলাম সেই ছোটবেলার মতো চঞ্চলতা নেমে আসুক তোমার জন্য
গ্রাম্য বালিকার মতো বেজে উঠুক তোমার হাতে রঙিন কাঁচের চুড়ি,
গ্রামের মেলায় নাগরদোলা চাপতে যাওয়ার আগে কিনেছিলে যেমনটি।
তোমার মায়ের লুকানো ঝাঁপি থেকে আবদার করে নিয়েছিলে জমানো পয়সা।
আমি চাইছিলাম তোমার পায়ে বেজে উঠুক গোল বল লাগানো নূপুর
যা তোমার পায়ের তালে বেজে উঠত, নেচে উঠত কাশের বন,
আমি চাইছিলাম তেমনি ছন্দ আর তাল বাজুক তোমার পায়ে।
চাইছিলাম তোমার রুক্ষ পায়ের স্পর্শ হয়ে উঠুক সেই সময়কার মতই নরম,
যাতে ঘাসেরাও লজ্জা পায়।
তুমি মাথা রেখেছিলে আমার কাঁধে।
তোমার শরীরের তাপে জ্বর আসছিল তখন আমার,
আমি চাইছিলাম জ্বরের ঘোরে ডুবে যেতে, চাইছিলাম এত তাপ
জড়িয়ে ধরুক আমায় যাতে তার ঘোরে কথা শুরু করি আমি।
অচেতন না হলে আজও যদি না যোগায় ভাষা? আশ্চর্য্য হচ্ছিলাম ভেবে,
এতদিন পরেও কাজ করে অনুভূতি, ভালবাসা!
যেন সময়ের রথ পিছনপানে চলে আবার নিয়ে যাচ্ছে আমায় ছোটবেলায়।
সেখানে সাজানো আছে আমার কালবৈশাখী বিকেল, পাতা ঝরা উঠোন, বুনো ফুল,
কচুরিপানা, নতুন পাখা, মহালয়ার লাল আকাশ, নববর্ষের স্নান আর নতুন জামা।
সেখানে আরও আছে আমার আমের আঁটির অধিকার, লক্ষ্মীপুজো, নাড়কেল নাড়ু,
ঝুলনের রাধাকৃষ্ণ, মাটির পুতুল, মানুষ পুতুল।
শীতকালের লেপকাঁথা, গায়ে মাখা রোদ, আর কুল মাখা আচার।
ডাক পাড়ছে একে একে সব ফুল, ন, রাঙা, সোনা, ছোট, কী ভাল!
কোলাহল হইচই রব। জন্মদিনের পায়েস, দোলের রঙ।
দুদিন পরে গায়ে হলুদ, বিয়ে বউ বর।
তোমার বিয়ে মাধবীলতা,
যে তোমার বর কী সুন্দর কথা বলে, হাসে, আপন হোক বা পর।
তার জন্যই তুমি আজ কাঁদছ মাধবীলতা,
সে চলে গেছে বলে তুমি ভিজেছ এক বুক জলে নেমে,
পাথর রেখেছিলে বুকে আর চেপে রেখেছিলে কান্না, আমি আসব বলে?
তাঁকে আমিও হারিয়েছি মাধবীলতা, বিদায় দিয়েছি কান্নায়।
সে যে আমারও বড় প্রিয়। কিন্তু সে তো অভিমানী, ভোলেনি বিছিন্নতা।
আমিও দেখেছি দূর থেকে, ছুঁতে চাইনি তার শীতলতা।
চলো, উঠে এসো মাধবীলতা। স্নান সেরে নাও আজ নতুন করে কান্নার পরে।
সন্ধ্যায় জ্বেলে দিও ধূপ, আর ছড়িয়ে দিও প্রিয় গন্ধ।
আমি কাল চলে যাব, তার আগে আর একবার আসব ফিরে।
মলিনতা নিয়ে যাব, তোমায় যেন রাখে স্নিগ্ধতা ঘিরে।
আজ থেকে তোমার নতুন নাম দেব- ‘রজনিগন্ধা’।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন