poem-nodi-o-meyeti

নদী ও মেয়েটি

অনিতা অগ্নিহোত্রী

বর্ষার নদীর ধারে কলমীশাক, উচ্ছের লতানি।
কিছুদূরে ধান‍্যময় প্রান্তরের গীতি। সূর্যাস্ত পর্যন্ত গেছে।
মেয়েটি কচুর ফুল চেনে, পথ ছেড়ে নেমে গিয়ে
নিয়ে আসে লজ্জাবতী, গোলাপি কুসুম। সবুজের মধ‍্যে জেগে
তাহাদের  নির্জন বাড়িটি। চাতালে সিদ্ধ হয় আয়ুষ্মান ধান।
মাটির উনান ঘিরে সোঁদা গন্ধ পার হয় পথ।
বাতিল খোসা ও পাতা তাপ দেয়। জ্বলে ওঠে জীয়ন্ত শস‍্যের পরমায়ু।
নদী টি গম্ভীর, ক্রমাগত জল তাকে মন্থর, ভাবুক করেছে।
নীল আকাশের পটে বালির খাদান জেগে আছে।
হাড়ের পাহাড়। দেখে রক্ত হিম হয়ে আসে। বুকের পাঁজর থেকে, 
অন্ত্র থেকে বালু তোলে নিয়ন্ত্রক, মহা সিন্ডিকেট।
যারা এ নদীতে নিত‍্য স্নান করে, নৌকা বায়, মাছ ধরে
হাতে -ছোঁড়া জালে, তারা শোনে জলের নিশ্বাস।
নিরন্তর ভয়ে থাকে নদী, কতদিন, আর কতদিন ?
গ্রামের গৃহস্থালি ঘিরে জলের কাঁকন, কত দিন আয়ু তার?
মেয়েটি সমস্ত শাক চেনে, কচুর লতিও, পটলের ফুল।
গোরুকে আনতে যায় চরে এলে নদীতীর থেকে।
সে যেন ভাদ্রলক্ষ্মী, হৃদয়ে ধরণীকাব‍্যগীতি।
অভিমানী নদী যদি পথ বদলায়, মেয়েটি ভাঙনশব্দ
শুনতে পাবে সবার প্রথমে। তাই তার হাতে দিই নদীর
চলন আর ঐ হাড়ের পাহাড়, তার সর্বস্বত্ব।
আমাদের একটিই পৃথিবী, একখানি নদী। ওই এক মেয়ে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *