poem-nurserir-boi

নার্সারির বইতেও এখন যা লেখা থাকে
১৭ ফেব্রুয়ারী ১৬০০।,রোমের কেন্দ্রীয় বাজারে এক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাঁকে পুড়িয়ে মেরে, ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হয় টিবের নদীর জলে ।
কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘোরে। তিনি ইতালিয় দার্শনিক…জিওর্দানো ব্রুনো

তন্ময় চক্রবর্তী


মৃত্যুশয্যায় শুয়ে এক বুড়ো।
ছাপাখানা থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে একটি লোক
হুড়মুড় করে এসে ঢুকে পড়ল সেই ঘরে।
কাঁপা কাঁপা হাত। ঘোলাটে চোখ
সেই বৃদ্ধ অপলক তাকিয়ে রইলেন নতুন বইটির দিকে …

পাতায় পাতায় কেমন যেন নিষিদ্ধ বস্তুর গন্ধ।
অথচ উৎসর্গপত্রে লেখা আছে …
লুকিয়ে, ঘরের দরজা বন্ধ করে
এক নিঃশ্বাসে বইটাকে শেষ করেই , সেই যুবক
এঁকে তাকে ডেকে শোনাতে লাগল সেই বইয়ের গল্প।
সারাদিন মোটামোটা বই পড়া এক বেঁটে গম্ভীর লোক তাকে বলল,
‘তুমি কি বইপত্র কিছুই পড়নি? এসব কথা অবাস্তব’
শীর্ণকায় এক বুড়ো তাঁকে ভয় দেখাল।
সূর্য ডুবছে পশ্চিমে … ভয় পাওয়া বন্ধুদের মত।
বাইরে ঝোড়ো বাতাস।
ঘরের ভিতর কালি পড়া লন্ঠন। উদাসীন আলো ।
আর একবার ধীরে ধীরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে
বারান্দায় এসে বসল সেই যুবক।
গভীর রাতে জোর হয় উত্তুরে হাওয়া
উড়িয়ে দিতে চায় এইসব ভাবনা।
এতদিনের পরিচিত সত্য, তাহলে কী ভেঙে যাবে?
লিখতে হবে নতুন বই?

গোঁড়া মানুষেরা, নতুন যুক্তি মানতে চায় না।
‘সত্যকে খুঁজে বার করতে ,অনেক অজানা পরীক্ষা করতে হয়,’।
শেষ পর্যন্ত এই যুবকের অবাধ্যতার কথা পৌঁছল ওদের কানে।
গ্রেফতারি এড়াতে,কোনও এক বসন্তের রাতে
যখন তারারাও একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার তোড়জোর করছে
ঠিক তখনই আল্পসের বিপজ্জনক গিরিপথ
আরও কত অজানা ভয়ংকর রাস্তা পেরিয়ে
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেই যুবক।

ইতিহাস বলে,ষড়যন্ত্র মাঝেমধ্যে জয়ী হয় ।
সবসময় সব ভালো কাজের বোধহয় ভালো ফল হয় না।
একদিন গভীর রাতে ধরা পড়ল সেই যুবক।
বন্দী করে রাখা হল এমন একটা ঘরে,
যার ছাদ শিসে দিয়ে তৈরি ।
গরমকালে অসহ্য, শীতে মৃতদেহের মত ঠাণ্ডা।

শহরের বাজারে মৃত্যুমঞ্চ। উপচে পড়েছে ভিড়।
কবরের গান গাইতে গাইতে কারা যেন শোভাযাত্রায়।
বন্দীর পোশাক ভয়ানক।হলুদ রঙের। মাথায় টুপি।
মৃত্যুর ভয়ংকর দৃশ্য নিয়ে আলোচনা করছে কিছু জনতা।
আশ্চর্য এই বিচারে ,শাস্তি অবশ্য পুর্বনির্ধারিত।
ভীড়ের মধ্যে চিৎকার করছে কেউ
‘ রক্ত পড়বে না, কিন্তু মৃত্যু হবে’।
বন্দী স্থির। ভীষণ রসিক, নির্ভীক।
মৃত্যুর ঠিক আগের মুহুর্তে
মনে হয় কেউ তাঁকে কানে কানে
শেষবারের মত ভুল স্বীকার করতে বলেছিল।
সেসব তোয়াক্কা না করে, বন্দী সোজা দাঁড়াল মৃত্যুর মুখোমুখি ।
দপ করে জ্বলে উঠল আগুন।
কিছুদিন বাদে নতুন বইয়ের পাতায় স্থির হয়ে গেল সূর্য
আর তাঁকে প্রদক্ষিণ করল পৃথিবী।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *