স্রোত

স্রোত
দেব বন্দ্যোপাধ্যায়

সেদিন উত্তর গোলার্ধের উত্তরে সূর্য নেমে গেলে
আমার বারান্দা ঘেসে দাঁড়াল এক তুষারকন্যে
শ্বেতশুভ্র কেশসম্ভার তার। ওষ্ঠযুগল কৃষ্ণগভীর। পুরু।
আমার ভয় ভয় করে ওকে
আমি দরজা জানালা বন্ধ করে দি। নিভিয়ে দি আলো।
তবু চামড়ার গভীরে এসে সে থামাতে চায় স্রোত
আমার পীঠ জুরে আঁকে কালশিটে কোনো সন্ধ্যের অস্তরাগ।

আমি ধীর পায়ে হেঁটে যাই ড্রয়িং রুমে
নীলচে গালিচার ওপারে ঠাণ্ডা পাটাতন।
সেখানে আসবাবের মতো পরে আছে
চিনি-মেপলের বল্ক, কাণ্ড, ও কোঠর
ওদের স্মৃতি সহজদাহ্য, এমন বোধ হয়।
দুরন্ত খিদের মতো জ্বলে ওঠে চকমকি পাথর ।

মনে পরে আমারই বাড়ির ঈশান কোনে যেন
পিতামহের শীতল ছায়ায়, শিকড় গ্রন্থি জুড়ে জুড়ে
ওরা গড়েছিল একটা গ্রাম। তিন বর্ষার ফসল তখনও অবুঝ।
তেরছা বিকেলের আলোয় খুঁজে খুঁজে নাম দিলাম, সোনাশাখী।
খামে খামে ভরে রাখলাম চিঠি। হলুদ লাল সবুজ ।

এই ভর সন্ধ্যে বেলায় একে একে চিমনী দিয়ে উড়ে গেল সবাই
হলদে, লালচে, সবজে উষ্ণতায় আবার ভরে এলো ঘর।
তুষারকন্যেকে কে মজ্জা থেকে বিদায় জানিয়ে
পর্দায় এক দ্বীপান্তরি শ্বেতভল্লুক
আর তার অভুক্ত শাবককে দেখতে দেখতে
তরল স্রোতে আবার ভিজে এলো চোখ।

চোখের নিচে ভেসে গেলো চরাচর আর দু একটা গলন্ত হিমশৈল
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *