(১) প্রাণের কোনও দাম ছিল না নাম ছিল না কোনও ঘাম-রক্ত উপছে এল কাঁদল পথের তৃণ পথ ওদের ক্ষমা করেনি বুক পাতে নি গৃহ রেললাইনে আকাশ পেল রুটি এবং দেহ ! (২) শবনম বানু, ছেলে কোলে হাঁটছিলো শবনম বানু, বোরখা পরেনি পথে শবনম বানু, সুটকেস নিয়ে একা শবনম বানু, ঘুমায়নি বহু রাতে শবনম বানু, হেঁটে চলেছিল শুধু ব্যাগে ছিল তার পনেরোটি টাকা মোটে দেড় বছরের ছেলে দুধ চায় বলে, শবনম বানু দ্রুত, আরও দ্রুত ছোটে বাড়ির কথায় মনে পড়ে ছোট কুয়ো উঠোনে তাদের ছায়া মহানিমগাছ শবনম বানু চোখ মুছে নিয়ে ভাবে নিকাহ রাতের মেহেন্দি, ফুলসাজ! এখন হায়না, শকুন উড়ছে কত পঁচিশে-পা যৈবনবতী মেয়ে মিঞাজান তার রায়বেরিলি-র থেকে রওনা দিয়েছে দলবেঁধে, খালি পায়ে তারা মায়ে-পোয়ে দিল্লিতে ছিল আগে উনুন জ্বলে না, শেষমেশ ঘরছাড়া শবনম বানু হেঁটে বাড়ি যাবে বলে মার্চের শেষে পথে নেমে, দিশেহারা – শবনম নাকি এখনও হাঁটছে, একা? ছেলে খুব কাঁদে? বাপজান বলে ডাকে? শবনম নাকি আলপনা ওর নাম ? মসনদ জেনো, খবরে রাখেনি তাকে। তার চেয়ে এসো, এই ভেবে ভাল থাকি শবনম বানু ছেলে কোলে বাড়ি ফিরে ভাত বসিয়েছে, কাপড় মেলেছে ছাতে ফোন এসেছিল, মিঞাজান তার, আসছে দু’দিন বাদে। (৩) তারা জানতো না ভাইরাস কাকে বলে তারা জানতো না কোথায় দ্রাবিড় – চিন তারা জেনেছিল ‘বাঁচা’ মানে বাড়ি ফেরা তারা জেনেছিল ভুখা পেট, রুটিহীন। মাইলের পর মাইল হেঁটেছে লোক দোস্তের কোলে কেউ ঘুমিয়েছে শেষে ঘুমের পূর্বে ভাত চেয়েছিল বলে রাষ্ট্র ওদের মেরেছে পাথরে, বিষে ছবি ভাইর্যাল, আসে সব পরপর পায়ে জোর নেই, হাতে ভর দিয়ে হাঁটা মায়ের পিঠেই বাঁধা অভুক্ত শিশু কোথায় ফিরবে? মড়ক খুলেছে খাতা – ক্ষমতার চোখ চাবুক চিনেছে শুধু শাসকের হাতে রক্ত লেগেই থাকে ক্লান্ত দু’চোখে ঘুম নেমেছিল তাই আদালত বলে, ‘দোষী বলবোটা কাকে?’ তারা মরে যায় ষোলজন একসাথে আরও কুড়িজন কাকভোরে বাসচাপা পাথর মারছে সীমানা পেরতে গেলে কারও ঘরে নেই উহাদের চাল মাপা। রাজা বলে চলে, ‘সেনাপতি দেখো সব’ সেনাপতি কারও স্বীকার করে না ঋণ আজীবন শুধু মজদুর মরে, পোড়ে ইতিহাস লেখে বেইমানি ক্ষমাহীন। (৪) মেয়েটির বাড়ি শোনা গেছে জয়পুরে পুরো দশ মাস, পূর্ণ-গর্ভ তার খালিপেটে তবু ঠাঁইছাড়া হতে হল পায়ে জুতো নেই, দেহে সন্তান-ভার বর – বউ হেঁটে মুলুকের পথ ধরে মে-মাস-সূর্য অকরুণ, ঘোর তাপ নিরন্ন দিন, জল নেই একফোঁটা শ্রম বেচে খাওয়া আসলেই অভিশাপ! মুম্বাই থেকে জয়পুর কত দূর? অসহায় স্বামী ভয় পায়, মাথা কোটে মেয়েটি বালিতে ছটফট, চিৎকার তার সন্তান জন্মালো রাজপথে। রাজপথ আজ ধারণ করেছে দেশ জননী-জন্ম-হাহাকার-দরবার রাজা-রানি সব কুলুপ এঁটেছে কানে কারণ লিস্ট-এ ওরা শুধু নাম্বার নাম্বার জেনো, ভোটার লিস্ট-এ লাগে এছাড়া ওদের আর কী বা দরকার? ভারতবর্ষ ‘মন কি বাত’মে জাগে দেশ মরে গেছে। বেঁচে থাক সরকার। (৫) ইয়াকুব আলি। উরাতিয়া গাঁ-এ ঘর ইয়াকুব আলি, ইঁট ভাঙে রাস্তায় ইয়াকুব আলি বহুদূর পাড়ি দিয়ে দুবেলা দুখানা রুটি আর জল পায়। ইয়াকুব আলি রুটি ভাগ দিত যাকে সে তার বন্ধু, নাম পরমেশ্বর জুম্মাবারের নামাজ আদায়ে গেলে জাকাতের চাল মেপে দিত সহচর। এই রমজানে চাঁদ ক্ষীণ হয়ে থাকে চাঁদের শরীরে কান্না ও বহু ক্ষত ইয়াকুব আলি বন্ধুর হাতে- হাত পথে নামা হবে –দুজনেই সম্মত। ঘরে যাওয়া মানে হাজার যোজন পথ ভারতবর্ষ মঙ্গলে পাড়ি দেয় কাঁধে ব্যাকপ্যাক, পা ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে ইয়াকুব আলি অভুক্ত, অসহায়। পুরো তিনদিন অনাহারে ছিল ওরা মাথায় শকুন, সড়কে চাবুক, তাপ বন্ধুকে নিয়ে ইয়াকুব হেঁটে যায় বন্ধুর জ্বর, বুক জ্বলেপুড়ে খাক! এইসব দেখে মহাকাল থু থু দেয় ইয়াকুব আলি, কোলে বন্ধুর শব – আমরা দুপুরে ভাত খেয়ে উঠে করি, ফেসবুক খুলে, ডিজিট্যাল বিপ্লব।