রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়
স্বশিক্ষিত লোকদার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর বাংলাদেশের বিস্ময়কর ও বিরল প্রতিভার অধিকারী। তাঁর পান্ডিত্য অগাধ ও অসাধারণ। জ্ঞান বিজ্ঞানের বহু শাখায় তাঁর পান্ডিত্য ছিল ঈর্ষণীয়। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন, জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং তাঁর অর্জিত জ্ঞান তিনি সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াসী হয়েছেন। আরজ আলীর জীবনে নানাবিধ বাধা সংকট সমস্যা এসেছে কিন্তু তিনি হতোদ্যম হননি কোন কিছুতে। অতি দরিদ্র পরিবারে আরজ আলীর জন্ম। অল্প বয়সে পিতৃবিয়োগ। সর্বস্বান্ত হন দেনার দায়ের থেকে বেশী ষড়যন্ত্র চক্রান্তের শিকারে। পাওনাদাররা বসতবাড়ির ঘরখানিও ভেঙ্গে নিয়ে যায়। কসাই সাইলকের মতো নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে পাওনাদার কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি প্রতিবাদ করতে। এরপর প্রায় অপরিণত বয়সেই মাতৃবিয়োগ। এসময় এসেছিল আরো বেশী, আরো বড়ো জীবনের বিড়ম্বনা। মাকে বড়ো বেশী ভালোবাসতেন আরজ আলী। স্মরণে রাখার জন্য মায়ের ছবি তোলার অপরাধে হুজুরেরা জানাজা পড়াতে রাজি না হলে নিদারুণ সংকটে পড়ে কোনভাবে মাকে সমাহিত করেন। আরজ আলীর ব্যথিত হৃদয় ক্ষুব্ধ হয়, ফুসে ওঠে, বিদ্রোহ করে। ছবি তুললে কেন ধর্মহানি হবে? ছবি তুললে কেন গোনাহ হবে? ছবি তুললে কেন তাকে জানাজা দেয়া যাবে না ইত্যাকায় নানা প্রশ্ন তাঁর মাথায় সেদিন উদয় হয়। সেই থেকে শুরু। অসংখ্য প্রশ্ন আসে তার মনে এবং তার জবাব খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। প্রথম তাকে ধর্মের কাছে পেতে হয়। ধর্মতত্ত্ব নিয়ে, ধর্মের গ্রন্থগুলি নিয়ে তিনি প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। ধর্ম পড়তে গিয়ে তাকে পড়তে হয় ইতিহাস এবং দর্শন। তারপর বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের ৩ টি শাখা (পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান) নিয়েই তাকে পড়তে হয়। ইতিপূর্বে ইতিহাস, দর্শন পড়তে যখন বিজ্ঞানের জ্ঞানে আলোকিত হলেন তখন তাঁর চোখ খুলে গেল। তিনি বিশ্বজগতের সারসত্য বুঝতে পারলেন। বিশ্বজগতের সকল বিষয়-বস্তু-ঘটনার উৎপত্তি, বিকাশ ও বিলয় সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট ধারণা লাভ করলেন। ধর্মাধর্মের বিধিবিধানগুলি তিনি তখন বিজ্ঞানের অধীনে জ্ঞানের আলোকে যাচাই বাছাই করতে চাইলেন।
এতদিন পর্যন্ত অধ্যয়ন গবেষণা করে করে তাঁর মনে অসংখ্য প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। সেইসব প্রশ্নাবলি সংকলিত হয়ে সৃষ্টি হয় আরজ আলী মাতুব্বরের অনবদ্য রচনা ‘সত্যের সন্ধান’। সুধী সমাজে আরজ আলী আলোকিত হতে শুরু করলেন। সাথে সাথে ধার্মিকদের কাছ থেকে প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে লাগলেন। অদম্য সাহসী আরজ আলীকে দমানো গেল না কোনমতেই। তিনি এগিয়ে চললেন এবং একে একে আরো কিছু গ্রন্থের পান্ডুলিপি তৈরী হলো। বর্তমান আলোচ্য ‘সৃষ্টি রহস্য’ আরজ আলীর অসাধারণ এক সৃষ্টিকর্ম।
মূলত ধর্মতত্ত্ব থেকে প্রশ্ন জেগেছে মনে, কেমন করে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হলো তবে। পৃথিবীর বহু ধর্মগ্রন্থ বহু মতবাদের কথা বলেছে এই সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে। সৃষ্টিকর্তা নিয়েও বহু মতবাদ ও মতভেদ রয়েছে। তারপরও ‘সৃষ্টিকর্তা এক এবং অদ্বিতীয়’ এই বক্তব্যানুসারে বিবেচনা করলে সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কিত তত্ত্বাবলি এক না হয়েই পারে না। কিন্তু বাস্তবে আরজ আলী তা দেখতে পেলেন না। ধর্মগ্রন্থে সৃষ্টিরহস্য নিয়ে নানা মতবাদ দেখতে পেলেন তিনি। এক একটা ধর্মগ্রন্থে এক এক রকমের বক্তব্য দেখতে পেলেন ওই একই সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে। এমনকি একই ধর্মে নানা মতও লক্ষ্য করলেন আরজ আলী। তিনি এসব কিছুর সমাধান খুঁজতে গিয়ে তাকে সেই বিজ্ঞানের কাছেই ফিরে যেতে হলো।
আরজ আলীর রচনাবলীর মধ্যে এই ‘সৃষ্টি রহস্য’ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। আগেই বলেছি ‘সত্যের সন্ধান’ তাঁর অনবদ্য রচনা। বস্তুতপক্ষে এই দু’খানা গ্রন্থই তাঁকে চিরদিন অমর করে রাখবে। ‘সত্যের সন্ধান’ গ্রন্থে আরজ আলী নানাবিধ প্রশ্নের উত্থাপন করেছেন। তাঁর প্রশ্নগুলি তীর্যক। প্রশ্নগুলির মধ্যে মানবজাতির সনাতনী চিন্তা ধ্যানধারণা লোকজ প্রজ্ঞা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে। প্রশ্ন করেছেন পরকাল, ধর্ম, প্রকৃতি প্রভৃতি নানাবিধ বিষয় নিয়ে। এইসব প্রশ্নের মধ্যে তার সঠিক এবং যথাযথ উত্তরও নিহিত আছে। প্রশ্ন এবং ওই প্রশ্নের ভিতরেই যে উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তার মধ্য দিয়ে আরজ আলী সকল রকমের ধর্মীয় গোঁড়ামী, কুসংস্কার, অন্ধ আনুগত্য, সামাজিক ভ্রান্ত ধারণা, এমনকি স্রষ্টা ও তার সৃষ্টি সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক মতবাদ ও চিন্তা চেতনাকে নাকচ করেছেন। সুস্পষ্টভাবে এসকল বিষয়াাদির উপর যে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা, তত্ত্ব ও মতবাদ রয়েছে তাকেই তিনি তুলে ধরছেন। সকল অবৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনা মতবাদ ও দার্শনিক তত্ত্বাবলিকে অস্বীকার করে বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারনা এবং বস্তুবাদী দর্শনতত্ত্বের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন আরজ আলী।
এসবকিছুর মধ্যে আরজ আলীর শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর দার্শনিকতায়। প্রথম তিনি দার্শনিক। স্বশিক্ষিত, সত্য সন্ধানী, নির্ভীক বস্তুবাদী দার্শনিক আরজ আলী সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রেও যথার্থ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। আরজ আলী স্পষ্ট করে বলতে পেরেছেন, তাই সমাজতন্ত্র তথা সাম্যবাদ হচ্ছে বিশ্বমানবের মঙ্গল বিধানের একমাত্র মাধ্যম। সংগ্রামী জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আরজ আলী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই নির্ভুল সিদ্ধান্ত টানতে সক্ষম হয়েছেন।
আমাদের আলোচ্য গ্রন্থ “সৃষ্টি রহস্য” এর ক্ষেত্রে আরজ আলী সেই নির্ভুল দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। “সত্যের সন্ধানে” তিনি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে নানা কথা বলার পরেও আলাদাভাবে এই বড়ো কলেবরের বই এই শিরোনামে লেখা প্রয়োজন বোধ করেছেন। আরজ আলী তার সৃষ্টিতত্ত্বের উপর নানা মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। একেবারে আদিম সাম্যবাদী সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনাগুলিও তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর এই গ্রন্থে। তিনি যেসব বিষয়গুলো নিয়ে এই গ্রন্থে অতীব মূল্যবান আলোচনা করেছেন সেগুলো হল,
১. আদিম মানবদের সৃষ্টিতত্ত্ব
২. ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্ব
৩. দার্শনিক মতে সৃষ্টিতত্ত্ব
৪. সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ
৫. বিজ্ঞানের মতে সৃষ্টিতত্ত্ব: পদার্থ বিষয়ক ও জীব বিষয়ক
৬. প্রলয় ও সৃষ্টি
এছাড়া এই গ্রন্থে তিনি আরো যেমন অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উত্থাপন করেছেন তার মধ্যে সূর্য ও গ্রহমন্ডলীর সৃষ্টি, সংস্কার ও কুসংস্কারের সৃষ্টি, কতিপয় ধর্মগ্রন্থের সৃষ্টি প্রভৃতি প্রধান।
সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আদিম মানবদের মতবাদ ও মনোভাব তুলে ধরেছেন গ্রন্থের শুরুতেই। এখানে তিনি চৈনিক মতবাদ, মিশরীয় মতবাদ, ফিনিশীয় মতবাদ, ব্যাবিলনীয় মতবাদ, আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর মতবাদ, অস্ট্রেলিয়ার আদিম জাতির মতবাদ এবং আমেরিকার ও পলিনেশিয়ার প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে আরজ আলী বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত বক্তব্যাদির গুরুতর প্রভেদ ও পার্থক্য তুলে ধরেছেন।
এরপর ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন অতীব গুরুত্ব সহকারে। তিনি শুরু করেছেন পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ধর্মীয় মতবাদ বৈদিক তত্ত্ব দিয়ে। বেদের বক্তব্যাদি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরজ আলী সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, মনুসংহিতা প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র গ্রন্থাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর একে একে আরজ আলী পার্সি ধর্ম, ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলাম ধর্ম প্রভৃতিতে সৃষ্টি সম্পর্কিত যত মতবাদ আছে সবগুলিকেই স্পর্শ করে গেছেন। এসব ধর্মের মূল গ্রন্থ যেমন ঋকবেদ, সামবেদ, জেন্দ-অভেস্তা, বাইবেল ত্রিপিটক ও পবিত্র কোরান শরীফ প্রভৃতিতে সৃষ্টিতত্ত্বের যেসব মৌলিক বক্তব্যাদি রয়েছে তার তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
এরপর আরজ আলী দার্শনিকদের কাছে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের মতবাদ অধ্যয়ন করেছেন, গবেষণা করেছেন এবং তার সারকথা তিনি এই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। সর্বপ্রাচীন দার্শনিক, মহাজ্ঞানী থ্যালিস থেকে শুরু করে তিনি আধুনিক দার্শনিক ফয়েরবাখ-হেগেল পর্যন্ত পৌঁছেছেন। এঁদের মধ্যে এনাক্সিমান্দর, পিথাগোরাস, জেনফেন, আনাক্সিগোরাস, ডেমোক্রিটাস, হেরাক্লিটাস, লিউকিপ্লাস, সক্রেটিস ও প্লেটো, অ্যারিস্টটল, লেবানিস প্রমুখ দার্শনিকদের মতবাদাদি পর্যালোচনা করে দার্শনিকদের সম্পর্কে যে সারকথা টেনেছেন তা নিম্নরূপ:
“সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে পাশ্চাত্যে মাত্র কয়েকজন দার্শনিকের মতবাদসমূহ আলোচনা করা হইল। ইহা ভিন্ন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে শত শত দার্শনিকের শত শত মতবাদ দৃষ্ট হয়। উহাতে কোথাও আছে একাধিক দার্শনিকের মতের মিল, আবার কোথাও গরমিল, হয়তোবা বৈপরিত্যও। তথাপি অধিকাংশ দার্শনিকের একটি শেষ সিদ্ধান্ত আছে। ইহা এই— ‘এক অনাদি, অনন্ত, গরিয়ান, ‘সৎ’ নিজকে নানাভাবে ব্যক্ত করিতেছে– মানুষের দেহে, মনে, সমাজে তার দীর্ঘ ইতিহাসে, জলে স্থলে অন্তরীক্ষে, বৃক্ষে, লতায়, পুষ্পে; সুন্দর-অসুন্দর, সৎ-অসৎ ব্যাপিয়া সে আত্মপ্রকাশ করিতেছে; আর মানুষের মনেও সেই প্রকারের মহিমা ধ্যান করিবার মতো শক্তিরূপে বিরাজ করিতেছে। এই সৎ এক এবং অদ্বিতীয়; বহুধা ব্যক্ত, কতক ব্যক্ত কতক অব্যক্ত।” (আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র-২, পাঠক সমাবেশ, পৃ: ৪৩)। দার্শনিকদের এই সিদ্ধান্তের সাথে বড় ছোট অধিকাংশ ধর্মতত্ত্ব যা তাঁর অধীত তার সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে।
তারপর আরজ আলী সৃষ্টিবাদ নিয়ে কথা বলার পর বৈজ্ঞানিক মতবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ করেছেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার নানান দৃষ্টিভঙ্গি একস্থানে গিয়ে মিলিত হয়ে সৃষ্টি সম্পর্কে পরিস্কার ও যথার্থ ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। আরজ আলী সেগুলি নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। সঙ্গত কারণেই তিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন। একে একে সকল সৃষ্টিতত্ত্বকে তিনি নাকচ করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। অকাট্য যুক্তিযোগে তিনি তা প্রতিষ্ঠাও করেছেন। এসব ক্ষেত্রে আরজ আলীর জ্ঞানের গভীরতা ও পান্ডিত্যের প্রখরতা প্রশংসনীয় ও ঈর্ষনীয়।
বিজ্ঞানের আলোচনা করতে গিয়ে, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরজ আলী বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। বিশ্বজগৎ সম্পর্কে, বিশ্বের আকৃতি সম্পর্কে, বিশ্বের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে, বিশ্বের উপাদানসমূহ, পদার্থের মৌলিকতা ও মৌলিক বস্তু ইত্যাকার প্রচুর বিষয়াদি নিয়ে সকল ধর্মগ্রন্থগুলোকে আরজ আলী নাকচ করেছেন এই পদার্থ বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে। এক্ষেত্রে তিনি যে ক্ষুরধার যুক্তিবল নিক্ষেপ করেছেন তা সত্যিই প্রণিধানযোগ্য। আর এসব ক্ষেত্রে পদে পদে আরজ আলী মানুষের অন্ধ ধর্মানুভূতিগুলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সাথে সাথে ধর্মবেত্তা ও ধর্মব্যবসায়ীদের নির্দয়ভাবে ধরাশায়ী করেছেন। বোধ করি সেই কারণে আরজ আলীর প্রতি তাদের প্রচুর ক্রোধ। ধর্মব্যবসায়ীরা তাঁকে হেনস্তা করেছেন, হত্যার প্রচেষ্টা পর্যন্ত নিয়েছেন। নির্ভীক আরজ আলীর কলম তাতে থেমে থাকেনি।
সৃষ্টি রহস্যের আর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলো জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিষয়টি নিয়ে আরজ আলী পুংখানুপুংখ ব্যাখ্যা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি জীবের উদ্ভব, প্রাণের উদ্ভবের প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেছেন। তাছাড়া প্রাণ কী, জৈব-অজৈব পদার্থ কী, এদের পার্থক্যই বা কী, প্রোটোপ্লাজম, প্রাণের বিবর্তন, উদ্ভিদ ও জীব, জীব জগতের বিবর্তন— এসব বিষয়াদি নিয়ে বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে স্পষ্ট দেখিয়েছেন যে পৃথিবীর তাবৎ ধর্মগ্রন্থগুলির বক্তব্য এ প্রসঙ্গে কত অবাস্তব, আজগোবী এবং হাস্যকর। কোনরকমের দুর্বলতা প্রকাশ পায়নি তাঁর এসব ক্ষেত্রে। এইভাবে বিজ্ঞানের প্রধান দুটি শাখা– পদার্থ বিদ্যা ও জীববিদ্যার এপর্যন্ত সকল আবিস্কার ও গবেষণা, তার ফলাফল ব্যাখ্যা করে ভাববাদী ধর্মবেত্তা ও সংশয়বাদী বা দুর্বলচিত্তের মানুষদের মগ্ন চৈতন্যে করাঘাত করেছেন অত্যন্ত সজোরে। তিনি তাঁর ‘সত্যের সন্ধান’ গ্রন্থে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলি উত্থাপন করে সমগ্র মানবজাতিকে বিস্মিত করেছেন ঠিক তেমনি ‘সৃষ্টি রহস্য’ গ্রন্থে তিনি অকাট্য যুক্তি, প্রমাণ, গবেষণা, আবিস্কার প্রভৃতির উল্লেখ করে তেমনি মানব সমাজের কাছে পরিষ্কার করে দিয়েছেন সৃষ্টির আসল রহস্য কী! এক্ষেত্রে ‘সব শিয়ালের এক রা’ তা তিনি সব পবিত্র গ্রন্থ-কেতাবের শ্লোক আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে বিজ্ঞানের কথা কত সঠিক, কত বাস্তব এবং কত অকাট্য ও কত যথাযথ ও সত্য। একটি উদ্ধৃতি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য।
“মানুষের আদি পুরুষ আদম। আদমের সৃষ্টি সম্বন্ধে কথিত হয় যে, আদমকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহ ফেরেশতাদের মতামত জানিতে চাহিলে, ফেরেশতাদের ন্যায় আদমের বংশীয়গণ আল্লার অনুগত থাকিবে না– এই বলিয়া তাহারা আদম সৃষ্টিতে অমত জানায়। তথাপি আল্লাহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু মাটি লইবার জন্য এস্রাফিলাদি ফেরেশতাগণকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তাহারা আদম সৃষ্টির জন্য মাটি চাহিলে মাটি এই বলিয়া দোহাই দেয় যে, আদম জাতি আল্লার অবাধ্য হইবে এবং তাহাদের দ্বারা দোজখ পূর্ণ করা হইবে। সুতরাং মাটি আদমের দেহের উপকরণ হইয়া দোজখের শাস্তি ভোগ করিতে রাজি নহে। ইহা শুনিয়া একে একে তিন ফেরেশতা খালি হাতে ফিরিয়া যায় এবং শেষে আজরাইল ফেরেশতা পৃথিবীতে এসে মাটির দোহাই অগ্রাহ্য করিয়া জোরপূর্বক কিছু মাটি লইয়া যায়। আজরাইল ফেরেশতার প্রভুর আদেশ পালন, কর্তব্য নিষ্ঠা, অনমনীয় মনোবল ইত্যাদি গুণের জন্য আল্লাহ তাহাকে মানুষের জীবন হরণ (জান কবজ) করিবার কাজে নিয়োগ করেন। অতঃপর বিশ্বসৃষ্টির ষষ্ঠদিনের বিকেল বেলায় বৈকালিক উপাসনার পর পবিত্র মক্কার মাটি দ্বারা আল্লাহ আদমের শরীর তৈয়ার ও ইহাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর আদমের দেহস্থ খানিকটা অংশ লইয়া হাওয়া নাম্নী একটি নারী তৈয়ার করিয়া উভয়কে থাকিবার জন্য আল্লাহ বেহেশতে স্থান দান করেন। সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে এই ধরনের বক্তব্য প্রায় সকল পবিত্র গ্রন্থগুলিতে বিদ্যমান।
বিশ্ব ব্রহ্মা-ের সৃষ্টি, জীব জগতের সৃষ্টি, মানব জাতির সৃষ্টি— এসব কিছু নিয়ে বিস্তারিত কাজ করার পর আরজ আলী সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন। সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ এবং আজ পর্যন্ত সভ্যতার যে অগ্রগতি তা নিয়ে তিনি পর্যালোচনা করেছেন। আগুনের আবিস্কার হল সভ্যতার সূচনা। তারপর কৃষি ও পশুপালন, ধাতুর আবিস্কার, তাঁত ও বুনন পদ্ধতি, চাকার আবিস্কার, লিপি ও কাগজ প্রভৃতি মানব সভ্যতার নানান ধাপগুলি তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর সৃষ্টি রহস্যে। অতঃপর বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিস্কার, বিদ্যুৎ ও পারমাণবিক শক্তি প্রভৃতি আবিস্কারের মধ্য দিয়ে মানব জাতি আজকের এই আধুনিক সভ্যতার স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আরজ আলী কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের বিষয়ে ব্যবহার দেখে যেতে পারেননি। তাহলে তিনি আরো বেশী সূক্ষ্মভাবে তাঁর বক্তব্যের যথার্থতা প্রকাশ করতে পারতেন। সে কাজ হাতে নিতে হবে বর্তমানের যুগনায়কদের। মানব সভ্যতার এই অসীম অগ্রগতি ও উন্নতির পিছনে আরজ আলী বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অপরিসীম অবদানের কথা তুলে ধরেছেন যথার্থভাবেই। তিনি উল্লেখ করেছেন আগামী দিনের যুগনায়ক হবেন বিজ্ঞানীরা তথাকথিত মহামানব বা কোন ধর্মবেত্তা নন। যেসব ধাপগুলি পার হয়ে মানব সভ্যতা আজ এখানে এসেছে সেইসব ধাপগুলি নিয়ে তিনি বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন। আধুনিক এই যুগের তিনি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন নিম্নোক্তরূপে:
“এই যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হইল– ১. গতানুগতিকতা বর্জন করা; অর্থাৎ স্বয়ং কিছুই না বুঝিয়া অন্যের দেখাদেখি কোন কাজ না করা। ২. কোনরূপ আপ্ত বাক্য গ্রহণ না করা অর্থাৎ কোন কথা সত্য কি মিথ্যা তাহা যাচাই না করিয়া শুধু গুরুবাক্য বলিয়া বা বক্তার নামের জোরেই বিশ্বাস না করা ইত্যাদি।” (রচনা সমগ্র পৃ:১২৬)। আগেই বলেছি আরজ আলী বিজ্ঞানের তত্ত্বকে প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বত্র। বিজ্ঞানীদের তিনি নিরলস কর্মী, সত্যের সাধক এবং জ্ঞানতাপস বলে মনে করেছেন। বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্য— “এই সময়টিকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান হইল মানবীয় জ্ঞানের পরিপক্ক অবস্থা এবং মানব সভ্যতার যৌবনাবস্থাও বটে। এই যুগে যুগমানবের আসনে সমাসীন বিজ্ঞানীরা, সমাজপতিরা নহেন। বিজ্ঞানীরা হইলেন নীরব সাধক। কোন মতবাদ অটুট রাখিবার বা প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য বিজ্ঞানীরা কোনরূপ হৈচৈ করেন না। বিশেষত কোন মতবাদকে সামান্য আঘাতে ভাঙ্গিয়া যাওয়ার ভয়ে মুরগীর ডিমের মতো পাখার নিচে গুজিয়া রাখেন না, উহা ছড়াইয়া দেন বিশ্বের দরবারে, সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের জন্যে। (রচনা সমগ্র পৃ: ১২৬)।
বিজ্ঞানের এই অভূতপূর্ব বিকাশের যুগেও মানুষ অনেক সংস্কারাচ্ছন্ন আছে। সংস্কার প্রধানত দুই প্রকার। সংস্কার প্রচলিত আর কুসংস্কার। মানব জাতির শৈশবকালে খাদ্যাখাদ্য, আচার বিচার প্রভৃতি বিষয়ে মানুষ এবং মানবেতর জীবের মধ্যে তেমন কোন প্রভেদ ছিল না। সভ্যতার ঊষালগ্নে পার্থক্য প্রকট হতে থাকে। তাই পশুপ্রবৃত্তি দূরীকরণের সাথে সাথে প্রচলিত হতে থাকে নানা কুসংস্কার। ওই কালের নিছক কল্পিত বিষয় বা কাহিনী পরবর্তীতে মানবমনে এমন গভীর রেখাপাত করে যে হাজার হাজার বছর পরেও সেগুলি ধ্রুবসত্য বলে ধরে থাকে, বিশ্বাস করে। সভ্যতার মধ্য যুগে গ্রীস, মিশর, ব্যাবিলন, চীন, ভারত প্রভৃতি দেশে কল্পনাপ্রসূত নানাবিধ জপ-তপ, হোম-বলি আচার-অনুষ্ঠানাদি পরবর্তীতে ধর্মে রূপ লাভ করে। আরো পরে এসব কিছু নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে প্রচন্ড কুসংস্কারে পরিণত হয়। ধর্ম তখনো নির্দিষ্ট রূপ নেয়নি। পরবর্তীতে এই কুসংস্কারগুলি ধর্মের অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম দিকে এগুলি ছিল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কিন্তু পরবর্তীতে তা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। সমাজপতি ও ধর্মব্যবসায়ীরা এগুলি চাপিয়ে দেয় সমাজের উপর। আরজ আলী মাতুব্বর এইসব কুসংস্কারগুলির উৎস এবং এর অসারতা প্রমাণ করেছেন অকুতোভয়ে এবং মানব জাতিকে তা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এরপর ধর্মের উৎপত্তি ও ধর্মগ্রন্থগুলির সৃষ্টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। আজীবন সত্যের সাধক আরজ আলী পারেননি ধর্মের সত্যতা এবং যথার্থতাকে গ্রহণ করতে। ধর্মের উপর, ধর্মতত্ত্বের উপর, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর তাঁর অগাধ পা-িত্য। সকল ধর্মগ্রন্থগুলি তিনি এতো অধিক মনোযোগ দিয়ে, গুরুত্বসহকারে এবং পুংখানুপুংখরূপে অধ্যয়ন করেছেন যা পৃথিবীর যেকোন ধার্মিক বা আলেম-ওলামা, পন্ডিত-পুরোহিত, পাদ্রি-সেন্টকে বিস্মিত করবে। এতৎসত্বেও প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে তিনি যেমন বৈপরিত্য লক্ষ্য করেছেন তাতে ওগুলির প্রতি সামান্যতম আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। তাই তিনি ছোট বড়ো অনেক ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে ওগুলির অসারতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্দ্বিধায়, নির্বিকারচিত্তে। তাই ধার্মিকদের এতো রাগ সত্য সন্ধানী নির্ভীক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের ওপরে।
ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, শাস্ত্রাদি প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে আরজ আলী এতো জোরালো, অকাট্য, ক্ষুরধার যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যার প্রতিবাদ করা বা উত্তর দেয়া একেবারেই অসম্ভব। কেউ এখনো সেভাবে ধর্ম সম্পর্কিত আরজ আলীর প্রশ্নাবলির উত্তর দিতে এগিয়ে আসেনি। অন্তত আমরা এপর্যন্ত কাউকে এক কলম এ ব্যাপারে লিখতে দেখিনি বা শুনিনি।
আগাগোড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ প্রতিক্রিয়াশীল ধনী শ্রেণীর সকল রকমের চোখ রাঙানি এবং সকল ধরনের ধর্মবেত্তাদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে নিরামিষাশী আরজ আলী তাঁর সত্যানুসন্ধান চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। রেখে গেছেন আমাদের জন্য, মানব জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ তাঁর এই ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সত্যের সন্ধান’ প্রভৃতি অমূল্য গ্রন্থগুলি।
আরজ আলী সর্বাধুনিক দর্শন বস্তুবাদী এবং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শনের সমর্থক ছিলেন। তিনি স্পষ্ট করে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এমন কোন বিষয় পাওয়া যায় না যে বিষয়ে বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের কোনরূপ অবদান নাই। বিজ্ঞানীদের সাধনার মৌলিক উদ্দেশ্য– আত্মস্বার্থ বিসর্জনপূর্বক সত্যোদঘাটন ও মানুষের কল্যাণ সাধন করা। তাই স্বভাবতই তাঁহারা ত্যাগী ও মানবপ্রেমিক। অধুনা বস্তুবাদের সহিত ত্যাগ ও প্রেমযোগে মানব জগতে গড়িয়া উঠিয়াছে এক নতুন মতবাদ, যাহার নাম মানবতাবাদ। ইহা বৈজ্ঞানিক সমাজে সমাদৃত, অনেকটা বাহিরেও। বিজ্ঞানের দুর্বার অগ্রগতি দেখিয়া মনে হয় একদা মানব জগতের আন্তর্জাতিক ধর্মই হইবে মানবতাবাদ (ঐঁসধহরঃধৎরধহ) (রচনা সমগ্র পৃ: ২০০)।
মানব জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে, সনাতনী ধ্যানবিধানগুলি পর্যালোচনা করে, সকল ধর্মগ্রন্থগুলি পর্যালোচনা করে, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আরজ আলী মাতুব্বর জীবন ও সমাজ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করেছিলেন। আর তা তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন, “তাই সমাজতন্ত্র তথা সাম্যবাদ হচ্ছে বিশ্ব মানবের মঙ্গল বিধানের একমাত্র মাধ্যম”। এভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আরজ আলী সঠিক চিন্তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলা ১৩২১ সনে পাঠশালায় ২য় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষিত (এটি আরজ আলীর নিজস্ব স্বীকারোক্তি– রচনা সমগ্র পৃ: ২২৯) আরজ আলী দর্শনের ক্ষেত্রে, লোকদর্শনের ক্ষেত্রে মহামূল্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সকল রকমের ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা নিপাত যাক, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার দূরীভূত হোক, মানব জাতির শোষণ-নিপীড়ন বন্ধ হোক, সত্য উদ্ভাসিত হোক, ন্যায়-সাম্য প্রতিষ্ঠিত হোক, আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শন চিন্তার বিজয় হোক এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন