পূরবী বসু
ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে পূর্ববঙ্গে সমাজসংস্কার আন্দোলণ বেগবান হয়ে ওঠে। মুনতাসীর মামুন তাঁর “ঊনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের সমাজ” গ্রন্থে মন্তব্য করেন, “বিধবা বিবাহ প্রথা ও কুলীণ বিবাহ রহিত কথাটিকে শুধু তত্ত্বকথায় না রেখে তা কার্য্যে পরিণত করতে অগ্রসর হয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্মরা।“
এই পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্মদের নেতৃত্ব দিতেন মূলত বিক্রমপুরবাসী একদল শিক্ষিত ও বিপ্লবী ব্রাহ্ম যুবক, যাঁদের অনেকেই ইতিহাসে নাম রেখে গেছেন। এই দলের নেতা ছিলেন বিক্রমপুরের তেলিরবাগের দাশ বংশের কাশীশ্বর দাশের পুত্র দুর্গামোহন দাশ (১৮৪১-১৮৯৭)। দুর্গামোহনের পেশা ওকালতি। কাশীশ্বরের তিন পুত্র। কালীমোহন দাশ, দুর্গামোহন দাশ ও ভুরনমোহন দাশ। কালীমোহন দাশের কোন সন্তান নেই। দূর্গামোহনের ৬ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন তাঁর কন্যা অবলা দাশ, যিনি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী। আরেক কন্যা সরলা দাশ (রায়) নারী শিক্ষার প্রসারে সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। ভুবনমোহন দাশের আট সন্তানের মধ্যে ৪ জন হয়ে উঠলেন জাতীয় সম্পদ। বেঙ্গল প্যাক্টের প্রস্তাবক বিখ্যাত জননেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, যাঁর স্ত্রী বাসন্তীদেবী কংগ্রেসের এবং স্বদেশী আন্দোলনের একজন অগ্রগামী নেত্রী ছিলেন। ভুবনমোহন দাশের আরেক সন্তান স্বদেশ মুক্তি আন্দোলণের স্বনামধন্যা নেত্রী, মেয়েদের মধ্যে চরকাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যে যিনি নারী কর্ম মন্দির (১৯২১) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই ঊর্মিলা দাশ। আরেক আজীবন কুমারী কন্যা প্রখ্যাত গায়িকা ও সংগীতজ্ঞ অমলা দাশ (রবীন্দ্রনাথ যাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং নিজে তাঁর সঙ্গে গান গেয়েছেন)। ভুবন দাশের অন্য এক কন্যা সংগীত-রসিক তরলা দাশ, যাঁর কন্যা সাহানা দেবী উপমহাদেশের অতি বিখ্যাত গায়িকা, রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ, রবীন্দ্রনাথের সরাসরি ও প্রিয় ছাত্রী। সাহানা দেবী বেশ কিছু রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপিও তৈরি করেছেন। তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ “স্মৃতির খেয়া” গুণীজনের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ওদিকে সাহানা দেবীর পিতা (তরলা দাশের স্বামী) হলেন প্যারিমোহন গুপ্ত, যিনি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ অতুল প্রসাদ সেনের আপন মামা (অতুলপ্রসাদের মাতা হেমন্তশশীর আপন ভাই; বিধবা হেমন্তশশী আবার পরবর্তিকালে হয়েছিলেন বিপত্নীক দুর্গামোহন দাশের দ্বিতীয় স্ত্রী)। তাঁর মানে অতুলপ্রসাদ ও সাহানা দেবী মামাতো-পিশতুতো ভাইবোন। আর অতুল প্রসাদ আর অবলা দাশ (বসু) সৎ ভাইবোন। বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়াকালীন অতুলপ্রসাদ তাঁর আরেক মামা (স্যার কে.জি. গুপ্ত)-র কন্যা শশীকুসুমকে বিয়ে করে তো পুরো হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজে নিন্দার ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন। কেননা কাজিনের সঙ্গে বিয়ে সমাজে ও শাস্ত্রে অনুমোদিত নয়।
আগেই বলেছি, স্যার কে জি গুপ্তের বোন হেমন্ত শশী গুপ্তা ছিলেন কবি অতুলপ্রসাদ সেনের মা। অন্য বোন সৌদামিনী গুপ্তার বিয়ে হয়েছিল বরিশালের জগৎ দাশের সঙ্গে। তাঁদের পুত্র ছিলেন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের শ্বশুর ও বিজয়া রায়ের পিতা। কে. জি. গুপ্তের আরেক বোন সরলা গুপ্তা ছিলেন দুর্গামোহন দাশের বিমাতা যাঁকে পিতার মৃত্যুর পরে, বিমাতার সম্মতিতে দুর্গামোহন নিজে বরিশালের জগৎ দাসের (তখন সরলার বড় বোন সৌদামিণীকে হারিয়ে জগৎ দাশ নিজে-ও বিপত্নীক) সঙ্গে বিবাহ দিয়ে সমাজে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। সরলা দাশ ও জগৎ দাশের কন্যা সুপ্রভা রায় ছিলেন সুকমার রায়ের স্ত্রী এবং সত্যজিৎ রায়ের মা। সুহৃদ সুকুমার রায়ের বিয়েতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন। বাংলায় কোরানের প্রথম অনুবাদকারী ভাই গিরিশচন্দ্র সেন কে. জি. গুপ্তের মামা ছিলেন। জন প্রশাসক, সমাজ সংস্কারক কে জি গুপ্ত পূর্ব বাংলার প্রথম আইসিএস পাশ করা মেজিস্ট্রেট এবং, প্রথম ব্যরিস্টার এট ল।
ভুবনমোহন দাশ, চিত্তরঞ্জন দাশের বাবা, কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি ছিলেন। বহু টাকা রোজগার করলেও তাঁর অফুরন্ত দানের প্রবণতা ও সারল্যের সুযোগ নিয়ে কিছু লোকের বাটপাড়ি তাঁকে স্বর্বসান্ত করে দেউলিয়া ঘোষনা করতে বাধ্য করে। পরবর্তিকালে চিত্তরঞ্জন ওকালতি করে কলকাতার তাঁর নিজের বসতবাড়িসহ অকুন্ঠচিত্তে অজস্র দান করেও পিতৃঋণ শোধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
আগেই বলেছি, বিক্রমপুরের সেই সময়ের বুদ্ধিমান, প্রগতিশীল, শিক্ষিত যুবকের মধ্যে সবচাইতে সাহসী, সবচাইতে বিপ্লবী ছিলেন দুর্গামোহন দাশ, অবলা বসুর পিতা, আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুর শ্বশুর, বিংশ শতকের সবচেয়ে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ও কন্ঠশিল্পী অমলা দাশের জ্যাঠা। অন্যদিকে বিপত্নীক দুর্গামোহন তাঁর দ্বিতীয় বিবাহের বিধবা বিবাহ) মাধ্যমে অতুল প্রসাদ সেনের বিপিতা ও স্বনামধন্য কেজি গুপ্তের ভগ্নিপতি হন।
অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিয়ার লিখিত সম্প্রতি প্রকাশিত “অবলা বসুর খোঁজে বিক্রমপুর” গ্রন্থে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। বিধবা বিবাহের সমর্থক দুর্গামোহন তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তাঁর অল্পবয়সী বিমাতাকে নিজের হাতে বরিশালের ডাক্তার, তাঁর নিজের বন্ধু , জগৎ দাশের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে রক্ষণশীল হিন্দুসমাজে প্রচন্ড হৈচৈ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশী বেশ রস করেই লিখেছিলেন, “নারীর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সূত্রে অতঃপর দুর্গামোহন যে কাজটি করিলেন, তাহাতে যেমন বুকের পাটার আবশ্যক, তেমনি আবশ্যক সংকল্পের দৃঢ়তার এবং সঙ্গে কিছু পরিমাণ কুইকসট –বৃত্তিও অত্যাবশ্যক। দুর্গামোহন দাশ তাঁহার বিধবা বিমাতার বিবাহ দিয়া ফেলিলেন। কাজটি করা বড় সহজ হয় নাই। একদল কন্যাকে চুরি করিয়া কাশীতে স্থানান্তর করিল, দুর্গামোহন আবার চোরের উপর বাটপাড়ি করিয়া তাঁহাকে কলিকাতায় ফিরাইয়া আনিলেন এবং অবশেষে বিদ্যাসাগরের সাহায্যে বাংলাদেশ তোলপাড় করিয়া বিবাহকার্য্য সম্পন্ন হইল। সমস্ত কাহিনিটিকে ডন কুইকসট গ্রন্থের একটি অধ্যায় বলিয়া মনে হয়।“
দুর্গামোহনকে এই অতি সাহসী ও যুগান্তকারী কাজের জন্যে সমাজ থেকে বহু প্রকার লাঞ্ছনা ও নিন্দা সইতে হয়। তিনি রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রীতিমতো তাঁর গারে থুথু ছিটিয়ে লোকেরা ছড়া কাটতে শুরু করে,
“ব্রাহ্ম সমাজের কথা কি বলিব আর
দুর্গামহন দিল বিয়া নিজ বিমাতার।“
দুর্গামোহন তাঁর এই ধরণের বিপ্লবী কাজে সবসময় সাহস ও মানসিক বল পেয়েছেন স্ত্রী ব্রহ্মময়ীর কাছে। নয় বৎসর বয়সে দুর্গামোহন তিন বৎসরের আরেক বিক্রমপুরের সন্তান ব্রহ্মময়ীকে বিয়ে করেছিলেন অভিভাবকদের ইচ্ছায়। স্ত্রী শিক্ষার ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসাহী দুর্গামোহন বিয়ের অনেক পরে স্ত্রীকে কিছুটা পড়ালেখা শেখাতে সমর্থ হন – তার আগে নয়। নিজের বিমাতাকে বিয়ে দেবার পর দুর্গামোহন আরো দুটো অনুরূপ বিয়ে দেন। শুধু বিধবা বিবাহ নয়। কৌলিন্য প্রথায় জলাঞ্জলী দিতে উদ্যত মামাদের হাত থেকে বিধবা নিঃসম্বল মায়ের সন্তান কিশোরী স্বর্ণময়ীকে রক্ষা করেন তিনি। অতি বৃদ্ধ এক কুলিনের সঙ্গে স্বর্ণময়ীর স্থির করা বিয়ে পন্ড করে বিয়ের আসর থেকে স্বর্ণময়ীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গামোহন দাশের বাড়িতে। অন্যদিকে হাওলদার পরিবারের অতি সুন্দরী ষোড়শী বিধুমুখীকে তাঁর আত্মীয়রা কৌলিন্যের কারণে ১৩ স্ত্রী বর্তমান থাকতে এক বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে। ঘটনাটির কথা জানতে পেরে বিধুমুখীর দূর সম্পর্কের মামা বরদা হাওলাদার ও সারদা হাওলাদার দুর্গামোহন ও তাঁর বন্ধুদের সহায়তায় বিধুমুখীকে সমূহ বিয়ের আয়োজনের মধ্য থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্গামোহনের বাড়িতে। এইসব অভিযানে দুর্গামোহনের দুই সহযোগী ছিলেন বিক্রমপুরের দুই প্রধান কৃতি সন্তান -অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ইংল্যান্ড থেকে করা উপমহাদেশের প্রথম ডিএস সি। পরবর্তিকালে হায়দরাবাদের নিজাম তাঁকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান হায়দরাবাদে। সেখানে অঘোরনাথ নিজামের নির্দেশে একখানি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রাথমিক কার্যভার গ্রহণ করেন। অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আরেক পরিচয় তিনি বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক, গায়ক এবং পরে স্বাধীন ভারতে প্রথম নারী রাজ্যপাল সরোজিনী নাইডুর পিতা। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় একজন সে সময়ের অগ্রগামী অত্যন্ত প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারক। স্ত্রী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী; বাংলার প্রথম নারী গ্রেজুয়েট ও প্রথম ডাক্তার কাদম্বিনী বসুর স্বামী। বৃদ্ধের সঙ্গে বিধুমখীর বিয়ে দিতে প্রস্তুত বিধুমুখীর আত্মীয়রা বরদা ও সারদা হাওলাদারদের বিরুদ্ধে নারী অপহরণের মামলা দিলে দুর্গামোহন বিক্রমপুরের বিলাত ফেরত বিখ্যাত ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষের শরণাপন্ন হন। মনোমোহন ঘোষ বিলাতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রবীন্দ্রনাথের মেজ ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠি ছিলেন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন মনমোহনের সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। দুর্গামোহনের যাবতীয় মামলামোকদ্দমা এই বিক্রমপুরের ব্যারিস্টার মনোমোহন হাসিমুখে নিজ ঘাড়ে তুলে নিতেন। বিধুমুখীর এই মামলায়-ও বাদী পক্ষ হেরে যায়। কিন্তু কোর্টে মামলায় জিতলেও ভাড়াটে গুন্ডার হাতে প্রহৃত হতে হয় বরদা হাওলাদারকে। পরে বরদা হাওলাদারের কন্যা বাসন্তীর সঙ্গে দুর্গামোহনের ভ্রাতুস্পুত্র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বিয়ে হয়। দুর্গামোহন এর পরেও একটার পর একটা ক্রমাগত এই ধরণের নারীমুক্তিকামী কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন, যার ফলে তাঁর পক্ষে আর বরিশালে ওকালতি করা বা বিক্রমপুরের বাড়িতে এসে বসবাস করা সম্ভব হয় না। অসহায় বিধবা নারী থেকে শুরু করে বহুবিবাহ বা কৌলিন্যপ্রথায় বলি নারীদের বিয়ে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে তাদের নিজ বাড়িতে রেখে লেখাপড়া শেখাতেন দুর্গামোহন। তাঁর এই সকল সাহসী কর্মকান্ডে সবসময় সায় দিয়েছেন তার স্ত্রী ব্রহ্মময়ী যার সঙ্গে শিশুকালে তাঁকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। বিয়ের অনেক পরে গৃহে নিজ হাতে স্ত্রীকে বর্ণমালা থেকে শুরু করে অন্যান্য বাংলা বই পড়তে ও লিখতে শেখান দুর্গামোহন। ক্রমে গ্রামের অশিক্ষিত নারী ব্রহ্মময়ী দুর্গামোহনের সমাজ সংস্কার কাজের প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন। ততদিনে গৃহে অধ্যয়ন করেই ব্রহ্মময়ী দৈনন্দিন কাজ চালাবার মতো শিক্ষিত হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু রক্ষণশীলদের ক্রমাগত চাপে বিক্রমপুরের গ্রামে দুর্গামোহনের জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। অতএব তিনি বরিশালে কিছুদিন থাকার পর কলকাতা চলে আসেন। সেখানে আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ভগবান চন্দ্র বসু (জগদীশ চন্দ্র বসুর পিতা), শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের সহায়তায় স্ত্রী শিক্ষা ও উন্নতির জন্যে প্রথমে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় ও পরে “বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৩ সালে বেনে পুকুরে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কালে দুর্গামোহন দাশকে আর্থিক সাহায্য করেন ফরিদপুরের ডেপুটি মেজিস্ট্রেট আরেক বিক্রমপুরী ভগবান চন্দ্র বসু (জগদীশ চন্দ্রের পিতা)। এই বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় পরে বেথুন স্কুলের দুর্দিনে বেথুন স্কুলের সঙ্গে মিশে যায়। বেথুন স্কুলের সঙ্গে না মিশলে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় হয়তো টিকতো কিন্তু বেথুন স্কুল টিকতো না। বেথুন স্কুল থেকেই পরে বেথুন কলেজ হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই কাদম্বরী বসু মেয়েদের মধ্যে প্রথম প্রবেশিকা ও এফ এ পাশ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হন প্রথম নারী গ্রেজুয়েট ও ডাক্তার।
এতো সব যুগান্তকারী ভালো কাজ করা সত্বেও শেষ বয়সে দুর্গামোহন দাশ নিজের জন্যে একটি কাজ করে জনমহলে প্রচন্ড বিতর্ক ও নিন্দার তুফান তুলে দেন। তাঁর জীবন ও কর্মের সহচরী স্ত্রী ব্রহ্মময়ী ১৮৭৬ সালে মারা গেলে দুর্গামোহন খুব একাকী হয়ে পড়েন। সেইসময় দুর্গামোহন কলকাতায় হেমন্তশশী নামে চার সন্তানের মাতা এক বিধবাকে তাঁর বিবিধ অসুস্থতায় চিকিৎসার জন্যে সাহায্য করতেন। এইভাবে এই বিধবার সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রণয়ে লিপ্ত হয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলেন দুর্গামোহন। সারাজীবন বিধবা বিবাহের পক্ষে যিনি কাজ করেছেন, তিনি নিজে বিপত্নীক হবার পর যদি একজন সম্ভ্রান্ত বিধবাকে বিবাহ করেন, সমাজে সেটা এতোটা আলোড়ন তোলার কথা নয়। বিশেষ করে হেমন্তশশীর স্বামী রামপ্রসাদ সেন যেখানে জীবিত অবস্থাতেই স্ত্রীকে বলে গেছেন তাঁর মৃত্যু হলে হেমন্তশশী যেন পুনরায় বিবাহ করেন। এসব সত্বেও দুর্গামোহনের এই কাজের জন্যে সমাজে ঢিঢি নিন্দার ঝড় উঠলো। দুর্গামোহনের দ্বিতীয়া স্ত্রী এই হেমন্তশশী হলেন বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ অতুল প্রসাদ সেনের মা। পরবর্তিকালে অতুল প্রসাদ সেন বাংলার অন্যতম প্রধান গীতিকার ও সুরকার হন। অতুল প্রসাদের গান বলতে আজ বাঙ্গালি অজ্ঞান। দুর্গামোহনের সঙ্গে হেমন্তশশীর বিয়ের সময় অতুলপ্রসাদ ১৯ বছর বয়সের তরুণ। সবে মেট্রিক পাশ করেছেন। মায়ের এই বিয়ের সিদ্ধান্তে মর্মাহত হন অতুলপ্রসাদ। বিয়ের পর মা হেমন্তশশী ও দুর্গামোহন হেমন্তশশীর সব ছেলেমেয়েকে নিজেদের কাছে এনে রাখতে চাইলেও অতুলপ্রসাদ কেবল ছোট বোনদের মায়ের কছে রেখে আসেন। কিন্তু নিজে মামাবাড়িতে থেকেই প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া সাব্যস্ত করেন। এর কিছুদিন পরেই অবশ্য তাঁর বিখ্যাত মামাদের সাহায্যে তিনি ইংল্যান্ড যান ব্যারিস্টারি পড়তে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই। যাবার আগেই অবশ্য অতুল প্রসাদ জানতে পারেন, অতি নিশ্চুপে এবং গোপনে ১৮৯০ সালে তাঁর এই বিদেশে যাবার খরচের মোটা অংশটাই দিয়েছেন তাঁর সহৃদয় সৎ বাবা দুর্গামোহন। একথা শোনার পর বিদেশে যাবার আগেই মা হেমন্তশশী ও সৎবাবা দুর্গামোহনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয় অতুলপ্রসাদের। বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করেন অতুল। কিন্তু সেই সঙ্গে আপন মামাতো বোন শশীকুসুমকে (বাঙালিদের মধ্যে প্রথম স্যার উপাধি পাওয়া ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেট কে জি গুপ্তের কন্যা। কে জি গুপ্তের নামে পুরনো ঢাকায় এখনো একটি সড়ক রয়েছে) বিয়ে করে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেন। অতুল প্রসাদ দেশে ফিরে আসেন ১৮৯৪ সালে। দেশে ফিরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে-ও তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন দুর্গামোহন দাশ। কিন্তু ১৮৯৭ সালে আকস্মিকভাবে দুর্গামোহনের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয়বার স্বামীহারা মাকে নিজের সংসারে তুলে নেন অতুলপ্রসাদ। তখন অতুল প্রসাদ লক্ষনৌতে আইনজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী শশীকুসুম শাশুড়িকে একেবারে সইতে পারে না। বিশেষ করে তাদের সমাজ অসমর্থিত (মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে শাস্ত্রগ্রাহ্য নয় বলে) বিয়েকে কেন্দ্র করে সবাই যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তখনো অতুল প্রসাদের মা হেমন্তশশী, যিনি শুধু শশীকুসুমের শাশুড়ি নন, নিজের আপন পিসিও বটে, তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেননি। সেই কথা মনে রেখে হেমন্তশশীকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না শশি কুসুম। বিয়ের প্রায় শুরু থেকেই অতুল প্রসাদ-শশিকুসুমের দাম্পত্য জীবন যথেষ্ট ঝড়ো ছিল সন্দেহ নেই। অতুল প্রসাদ ও রবীন্দ্রনাথ বেশ কাছাকাছি ছিলেন মানসিকভাবে। সকলেই জানতো জগদীশ চন্দ্র বসুও ছিলেন রবি ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্যতম। একবার রবীন্দ্রনাথ অতুল প্রসাদের শহরে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন অতুল প্রসাদ ও শশীকুসুম আলাদা বাস করেন দুই ভিন্ন শহরে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আগমণ উপলক্ষে শশীকুসুম আগে থেকেই স্বামীর বাড়িতে এসে পৌঁছেছিলেন। যতক্ষণ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, শশীকুসুম বাড়ির গৃহকত্রীর মতো-ই তাঁর যত্নাদি করেছেন।
নারী শিক্ষার প্রবল উদ্যোক্তা দুর্গামোহন বড় মেয়েকে নিজের স্কুল বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন, যখন বনেদী ঘরের মেয়েরা পড়াশোনা করতে শুরু করলেও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় যেতেন না। ব্রাহ্ম মেয়েরা পর্যন্ত নয়। গৃহের অভ্যন্তরেই পড়াশনা করতেন তাঁরা। আদি ব্রাহ্মধর্মের প্রতিষ্ঠাতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাতেই বিশ্বাস করতেন। পরে বিদ্রোহী তরুণ ব্রাহ্মরা যেমন দুর্গামোহন দাশ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধায়, মনমোহন ঘোষ, শিবনাথ শাস্ত্রীরা বেরিয়ে এসে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ গড়লেন। মাঝখানে কিছুদিন অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক নারী শিক্ষায় বিশ্বাসী কেশব চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে গড়া ও প্রথম আদি ব্রাহ্মসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ “নববিধান” এ ছিলেন এই তরুণ ও বিপ্লবী ব্রাহ্মরা। নারীর সক্ষমতা তখন থেকেই স্বীকৃত হতে শুরু করলো। নারীপুরুষে পাঠ্যসূচি ও পাঠের ধারা অভিন্ন রেখেই নারীশিক্ষার পক্ষপাতি ছিলেন এই তরুণ ব্রাহ্মসমাজ যে ব্যাপারে কেশব চন্দ্রের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাঁধে। কেশবের নববিধান ব্রাহ্মসমাজে নারীদের জন্যে নারীসূলভ কিছু বিশেষ পাঠ্যসূচির ওপর জোর দেওয়া হতো, যেমন রন্ধন শিল্প, সেলাই ইত্যাদি। কাদম্বরী বসু এবং দুর্গামোহনের জ্যেষ্ঠা কন্যা সরলা দাশ এক-ই সঙ্গে পড়তেন এবং বাংলার নারীদের মধ্যে তারা দুজনেই কেবল প্রবেশিকা পরীক্ষা দেবার অনুমতি পেয়েছিলেন। কাদম্বরী যথাসময় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে বাংলার নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। কিন্তু পরীক্ষার কয়েক মাস আগে সরলা দাশের বিয়ে হয়ে যায় প্রেসিডেন্সী কলেজের প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে। পরে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি সরলার। এদিকে তখনো মেয়েদের মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হতো না বাংলায়। শুধু ছেলেরাই মেডিকেল পড়তে পারত। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও দুর্গামোহন দাশ বহুভাবে নারীর মেডিকেলে ঢোকার জন্যে চেষ্টা করেন। অবলাকে মেডিকেলে ভর্তি করার জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘোরেন তাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে। প্রাথমিক বছরগুলোতে বহু সভাসমিতি, বক্তৃতা, পিটিশন দিয়েও কিছু হয় না। ফলে দুর্গামোহন কনিষ্ঠা কন্যা অবলাকে নিয়ে বেঙ্গালোর গিয়ে সেখানে মেডিকেল কলেজে তাকে ভর্তি করে দেন। কিন্তু সেখানে অবলার স্বাস্থ্য টেকে না। ফলে তার বড় বোন যেমন অল্পের জন্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাংলার অন্যতম প্রথম নারী (কাদম্বরীর সঙ্গে) হতে পারলেন না, অবলাও তেমনি বাংলার প্রথম নারী যিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার ও ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এতো কাঠখড় পুড়িয়ে মেডিকেলে ঢুকলেও সেখান থেকে প্রথম নারী মেডিকেল গ্রেজুয়েট হয়ে বেরুতে পারেন নি অবলা। প্রথম মেডিকেল গ্রেজুয়েট-ও হন সেই এক-ই নারী, কাদম্বরী বসু, প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি প্রবেশিকা, এফ এ ও বি,এস,সি পাশ করেন। কাদম্বরী অবলার দুই বৎসর পরে মেডিকেলে ঢুকেছিলেন কেননা তাঁকে বিএসসি পাশ করে তবে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয়েছিল, এফ এ পাশ করার পর কোন মেয়েকে বঙ্গদেশের মেডিকেল কলেজে তখন গ্রহণ করা হতো না, যদিও মেডিকেল কলেজ ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেই মেডিকেলে ভর্তি হবার সুযোগ মেলার কথা। কিন্তু সেতো ছিল তখন কেবল পুরুষদের জন্যে সংরক্ষিত। স্বাস্থ্যগত কারণে বাংলার প্রথম মেডিকেল পড়তে যাওয়া নারী অবলার বেঙ্গালোর থেকে কলকাতায় ফিরে আসার কিছুদিনের ভেতরেই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্সী কলেজের অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র বসুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। মেডিকেল পড়া আর হ্য় না তাঁর। দিদির সঙ্গে গোখলে স্কুল ও আরো অনেক স্কুলের মাধ্যমে ছোটদের পড়াশোনায়, বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় তিনি মনোযোগ দেন। আগেই বলেছি, জগদীশ ও অবলা রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁদের জমিদারী দেখতে পূর্ববঙ্গে যেতেন, প্রধানত শাজাহাদপুর ও শিলাইদহে, কলকাতা থেকে প্রায়-ই তাঁর কাছে চলে আসতেন জগদীশ ও অবলা। পদ্মায় বজরা নৌকোয় তারা ঘুরে বেড়াতেন ও জীবন, জগৎ, সাহিত্য নিয়ে কথা বলতেন। রবীন্দ্রনাথ নৌকোর ভেতরে বসে বসে উদাত্ত গলায় নিজ উপন্যাস, গল্প বা কবিতার লাইন পড়ে শোনাতেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তা শুনতেন অবলা আর জগদীশ। জগদীশ ও অবলার আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন সিস্টার নিবেদিতা। তিনিও বসু দম্পতির সঙ্গে মাঝে মাঝে সপ্তাহান্তে চলে আসতেন শাহজাদপুর। নিবেদিতার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল। তাঁরা পরস্পরকে তাঁদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতার জন্যে খুব-ই পছন্দ করতেন, কিন্তু জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে যেমন কিছু মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা দুই মেরুতে অবস্থান করতেন মাঝে মাঝে। তা সত্বেও রবীন্দ্র প্রতিভায় মুগ্ধ নিবেদিতা নিজের হাতে রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গল্প ও কবিতা অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথের কাছেও অন্য অনেক বিদেশীদের চাইতে নিবেদিতার তর্জমা ঢের বেশি ভালো বলে মনে হতো। কারণ, শুধু ভিন্ন ভাষা আয়ত্ব করাই যথেষ্ট নয়, আসলে যে দেশের কবিতার বা গল্পের তর্জমা করা হবে সে দেশের প্রকৃতি, আবহাওয়া, লোকজনের স্বভাব, চিন্তাধারা, ভাবাদর্শ, আপামর সংস্কৃতিটা বুঝে নিতে হয়, তাদের পাল্স্ টের পেতে হয়। না পেলে অনুবাদে মূল লেখার দ্যোতনা ঠিক মতো আসে না। রবীন্দ্রনাথের অনেক রচনার প্রথম শ্রোতা এই বসু দম্পতি ও নিবেদিতা। বিবেকানন্দ মারা যাবার পর নিবেদিতা ভারতের সত্যিকার বন্ধু হয়ে ইংরেজের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। অবলা-জগদীশের সঙ্গে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে সামান্য পেটের অসুখে অবলার হাতে মাথা রেখে মারা যান নিবেদিতা মাত্র ৪৩ বছর বয়সে। জীবনের শেষ পর্বে তিনি জগদীশ অবলার সঙ্গেই বাস করতেন। ভারতের বহু জায়গায় নিবেদিতা, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ ও অবলা একসঙ্গে বেড়াতে গিয়েছেন। এমন কি জগদীশ যখনই ইউরোপ আমেরিকাসহ বিদেশের নানা জায়গায় উদ্ভিদ ও জড় পদার্থের ওপর তাঁর মৌলিক বিজ্ঞান গবেষনার ফলাফল জানাতে আমন্ত্রিত হয়ে সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় বা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে যেতেন ছায়ার মতো সঙ্গে থাকতেন অবলা, যা সেই যুগে প্রায় দেখাই যেতো না। কখনো কখনো সঙ্গে থাকতেন নিবেদিতাও। একবার এক বিশাল বিজ্ঞান সম্মেলনে ইউরোপ যাবার জন্যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভক্ত এক ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজার মাধ্যমে বন্ধু জগদীশকে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সুলেখিকা অবলা কেবল নারী শিক্ষা ও নারী প্রগতির ওপরেই নয়, স্বামীর সঙ্গে এইসব বিদেশভ্রমণ সম্পর্কেও প্রচুর সুখপাঠ্য ভ্রমণকাহিনি লিখে গেছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে সমাজ-সেবক, সমাজ-সংস্কারক দুর্গামোহন দাশ পরিবারে এবং পরিবারের বাইরে নারী-শিক্ষা, নারীর জীবন উন্নয়নসহ সামাজিক বহু সংস্কার ও কল্যাণে অতি সাহসী, বিরল ও বৈপ্লবিক এক ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর আলোকিত পরিবার, জ্ঞাতিগোষ্ঠি, বিশেষ করে তখনকার দিনের প্রগতিশীল, সমাজ সচেতন ও শিক্ষিত ব্রাহ্ম সম্প্রদায় এই সংস্কার আন্দোলঙ্কে অনেকটা সামনে এগিয়ে দিয়েছিল।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন