গনেশ ভট্টাচার্য
১৪২৭ বঙ্গাব্দের শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজা আগত৷ বৎসরেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নগনন্দিনী পার্বতী আসছেন তাঁর পিত্রালয় হিমালয় ভবনে৷ মা উমা তাঁর প্রিয়পুত্র গণেশকে নিয়ে আসছেন স্থলপথে আর বাকী তিনসন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক আকাশপথে৷ চারিদিকে সাজো সাজো রব, কোন হাইপ্রোফাইল নেতা-মন্ত্রী এলে যেমনটা হয়৷ বাড়ীতে নতুন করে রঙের পোঁচ আর তাতে মাকে ওয়েলকাম জানানো— “এসো মা আনন্দময়ী এ দীনের কুটিরে”, কোথাও বা— “এসো মাগো মোর গহে সন্তানদের সাথে লয়ে”৷
কিন্তু আবাহন হলে কী হবে? মা ও তাঁর সন্তানেরা মর্ত্যধামের এই ঘৃণ্যসমাজে আর আসতে চান না৷ তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে— যেমন গণেশ ব্যবসা-বাণিজ্য, লক্ষ্মী কৃষি ও অর্থ, সরস্বতী শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং কার্তিক সামরিক ক্ষেত্রে আজ বড়ই বিপন্ন৷ তাঁরা অসহায়— কারণ প্রতিটি বিভাগে মহিষাসুরের উত্তরসূরিরা পুণরায় স্বমহিমায়৷ রক্তবীজের রক্ত হতে চিরকাল জার্মিনেশন হবেই— আমরা যতই “জাগো— তুমি জাগো— জাগো দুর্গা” বলি না কেন? দীর্ঘ তপস্যার বলে সন্তুষ্ট হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা একদিন করালাসুরকে বরদান করেন যে তার রক্ত মৃত্তিকায় পতিত হওয়া মাত্রই প্রতিবিন্দু রক্তে একটি সমরূপ অসুরের উৎপত্তি হবে৷ করালের রক্ত বীজ হওয়ার জন্য তার অপর নাম হয়েছিল রক্তবীজ৷ ডাকিনী-যোগিনী বেষ্টিতা মা চামুণ্ডাকালী সমরকালে একাংশে শিবামূর্তি ধারণ করে রক্তবীজের সমস্ত রক্ত ভক্ষণ করলেও তিনবিন্দু রক্ত ত্রিস্থানে পতিত হয়৷ জল-স্থল-অন্তরীক্ষে যুদ্ধকালীন একবিন্দু রক্ত জলে পতিত হওয়ায় জোঁকের সৃষ্টি, একবিন্দু কাষ্ঠে পতিত হওয়ায় ছারপোকার জন্ম এবং একবিন্দু শৃগালিনীর মস্তকে পতিত হওয়ায় উকুনের উৎপত্তি হয়৷ এরা রক্তবীজের বংশধর— আজও এদের বিনাশ নেই৷
এখন প্রশ্ন— অসুরকূল কেন অবিনাশী আর কেন তারা সুরবিদ্বেষী? কেনই বা তাদের এত বাড়বাড়ন্ত, শক্তি অনন্ত? এই সমস্ত প্রশ্নের সমাধান অনুসন্ধানের পূর্বে আমাদের জানা আবশ্যক প্রকত অসুর কে আর দেবতারাই বা কে? “কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর৷” অষ্টাদশ পুরাণ ও বিভিন্ন উপপুরাণ, মঙ্গলকাব্য, বেদ ও উপনিষদ অনুযায়ী নাকে নির্ঝরার স্থান এ বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। অর্থাৎ ভূঃ, ভূবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ তপঃ ও সত্য— এই সপ্তস্বর্গে দেবতার অবস্থিতি আর তল, অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল ও রসাতল— এই সপ্তপাতাল হল দৈত্যাসুরের স্থান৷ কিন্তু না, দেবতার খোঁজে স্বর্গারোহণ আর অসুরের সন্ধানে পাতালগমন নিষ্প্রয়োজন৷ চুরাশী লক্ষ যোনি পরিভ্রমণের পর আমাদের এত সাধের মানবজনম, এই রক্তমাংসের তনুতেই সুরাসুরের সহাবস্থান৷ তাহলে আমাদের দেহাভ্যন্তরে অসুর কারা? চতুর্বিংশতি তত্ত্বের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য— এই ষড়রিপুই আমাদের দেহের ষড়াসুর৷ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন সহযোগে এই ষড়াসুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপে আমাদের আসুরিক শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে আমরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি৷ কবির কথায়— “রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়, আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।”
এ তো গেল দেহতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক জগতের কথা৷ বাস্তবেও সমাজ সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাক্রমশালী অসুরগণ বিরাজমান৷ শিক্ষা-সংস্কতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের দুর্দম্য জিঘাংসা লক্ষণীয়৷ বর্তমানে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উন্নতগঠন ও মজবুতকরণ এবং সমস্ত কর্মপ্রণালীর প্রধান মাধ্যম হল কম্পিউটার, যেটি বিজ্ঞানের আশীষে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের উপহার৷ এই গণনযন্ত্রটির মাধ্যমেও ভাইরাসরূপী কুখ্যাত অসুরগণ চায় তামাম দুনিয়ার উপর কর্তত্ত্ব ফলাতে, বিশ্বায়নের গতি স্তব্ধ করে দিতে৷ পৌরাণিক যুগের মহিষাসুর, জম্ভাসুর, শুম্ভ, নিশুম্ভ, চণ্ড, মুণ্ড, বিড়ালাসুর, রক্তাসুর, বলাসুর, করিন্দ্রাসুর, মেঢ্রাসুর, বৃত্তাসুর, ভষ্মাসুর, অঘাসুর, বকাসুর, মুরাসুর প্রভৃতি অনন্ত বলান্বিত অসুরগণের চেয়ে বর্তমান প্রযুক্তিবিদ্যার যুগের অসুরেরা নামে কিন্তু স্বতন্ত্র, তবে কর্মবিষয়ে অনেক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়৷ অত্যাধুনিক কালের কম্পিউটার ভাইরাসরূপী যে সমস্ত অসুরদের অত্যাচারে সমগ্র পথিবীর চিন্তাংশ ব্যবহারকারীরা চিন্তান্বিত ও জর্জরিত সেগুলি হল ট্রোজান হর্স, টাইম বম্ব, লজিক বম্ব, মেলিসা, এসকেএ, ওয়ার্ম প্রভতি৷ পদ্মযোনি ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে আহবকালে মহিষাসুর কখনও মহিষের জঠর হতে আবির্ভূত হতেন, আবার পরক্ষণেই মেঘের অন্তরাল হতে আঘাত হানতে সমর্থ হতেন৷ তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মহিষাসুরের মতো কম্পিউটারের “ট্রোজান হর্স” অসুরটির আচরণও খুব সংগতিপূর্ণ, কেননা এটি একটি আস্ত প্রোগ্রামের সাথে আড়ালে লুকিয়ে থেকে সমগ্র সিস্টেমের পাসওয়ার্ডের উপর আক্রমণ করে৷ তারকাসুর ও বকাসুর যেমন ঋষি-মুনি ও দেবতাদের যজ্ঞে আবর্জনা ও মতপ্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিক্ষেপপূর্বক যজ্ঞ পণ্ড করতেন তেমনি “টাইম ও লজিক বম্ব” নামক অসুরদ্বয় কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক রিফরম্যাট করে বোকা বাক্সের উপাত্তের উপর নানা আবর্জনা ঢুকিয়ে দেয়৷ “টাইম বম্ব” অসুরের উদ্ভাবনই যেন নিজ নামানুসারে কর্মের জন্য, কারণ এটি কম্পিউটারের ডেটার উপর একটি নির্দিষ্ট দিনে অর্থাৎ শুক্রবার বোমাবর্ষণ করে উপাত্ত উড়িয়ে দিয়ে বল বাউন্স করায়৷ রামায়ণে বর্ণিত “ইল্বল ও বাতাপি” নামক দুই অসুরভ্রাতার কাণ্ডকারখানা বিষয়ে আমরা সকলেই জ্ঞাত৷ অনুজ বাতাপি মেষরূপ ধারণ করত ও তাকে রান্না করে অগ্রজ ইল্বল মুনিগণকে নিমন্ত্রণপূর্বক ভোজন করাত এবং আহারান্তে জ্যেষ্ঠভ্রাতার আহ্বানে কনিষ্ঠ পূর্বাবয়বে জঠর হতে নির্গত হলেই মুনিগণের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটত৷ এইভাবে সকলের সনির্বন্ধ অনুরোধে ঋষি অগস্ত্য দ্বারা মেষরূপী অসুর ভক্ষণে ও পরিপাকে তাদের বিনাশ ঘটে৷ রামায়ণের বাতাপির মতো “লজিক বম্ব” অসুরটিও কম্পিউটারের পাবলিক ডোমেইন প্রোগ্রাম ডাউনলোডিংয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সাথে যুক্ত হয়ে পুরো সিস্টেমকে ধ্বংস করে৷ কথায় বলে— “জন্ম হোক জাঁহা-তাঁহা কর্ম হোক ভালো।” সুতরাং অসুরগণ নামে ভিন্ন হলেও, তাদের সৃজন ও পালন নানা স্থানে ও বিভিন্ন মাধ্যমে হলেও কর্মাচারে তারা কিন্তু একই— শুভের অশুভসাধন৷
এবার পূর্বোল্লিখিত প্রশ্নে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন কেন এই প্রভূত ক্ষমতাধর অসুরদের এত বাড়বাড়ন্ত? তাদের সজন ও বলপ্রদানের মূলে কিন্তু সেই অমরাবতীর দেবতাগণ যাঁরা বাতাহারী অসুরদের কঠিন তপস্যায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে তাদের বরাভয় প্রদানে বাধ্য হয়েছেন অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণ কোন দেবতা নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যে খেলাটিতে বর্তমানে সারা বিশ্ব মত্ত৷ প্রথম বিশ্বের উন্নত অনেক দেশ অর্থনীতিতে তার সমকক্ষ বা অতিক্রমকারী কোন দেশকে যেমন ধ্বংস করার কারণে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা তাদের সংগঠনকে সৃজন ও পালন করে, সুরপুরের সুরগণও সমরূপভাবে তৎকালীন অসুরগণকে সম্ভূত করেছেন৷ তবে তোষণ করলেও তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রদান থেকে দেবতারা বিরত থেকেছেন৷ দ্বাদশ দিবসের সমুদ্রমন্থনে দেবতাগণ যদি অসুরকূলকে সুধাপান থেকে বঞ্চিত না করতেন তাহলে তারা কভু সুরবিদ্বেষী হত না৷ সুতরাং কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তির দীর্ঘ নিপীড়নের ফলে অসহনশীলতাবশত অসভ্য ও কুপথগামী হওয়ার মূলে কিন্তু তথাকথিত সভ্য সমাজের অবদানও অনস্বীকার্য৷ আত্মস্বার্থে তারা চায় অপেক্ষাকত দুর্বল শ্রেণীকে অশিক্ষিত করে রাখতে এবং অসুরকূলও সমভাবেই বর্ণবৈষম্যের শিকার৷ এরূপ স্বেচ্ছাচারী বিভেদকামী গোষ্ঠীর পরশ্রীকাতরতার কারণে অসুরসমাজের অসূয়াও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে ঠিক যেরূপ আমাদের দেহাভ্যন্তরে আত্মাসুরগণের বংশবিস্তারে আমরা সহায়তা করে চলেছি৷ পঞ্চভূত, দশেন্দ্রিয়, ত্রিনাড়ী, ষটচক্রের সাথেই কামাদি ষড়রিপুও আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এবং একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ওয়েবমাষ্টার সষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এগুলি মাতৃগর্ভেই আমাদের শরীরে আপলোড করেন৷ এরপর এই ষড়াসুরের মদতে আমাদের আপন যথেচ্ছাচারে ও অতিভোজনের গৌরবে আমরা মধুমেহ বা বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপ, কর্কট, এইডস প্রভতি ভয়ানক অসুর প্রজননে মেতে উঠি৷ বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী এইসব নষ্টাসুরদের নিধন করার জন্য অদ্যাবধি কোন মারণাস্ত্র অথবা অসুরদলনীর উদ্ভব ঘটে নাই৷
আমাদের এই নশ্বর দেহটা কী তাহলে চিরকালই কায়াসুরগণের ভোগার্হ? এইসমস্ত নিঃশব্দ ঘাতকদের মূলোৎপাটনের কী কোন সুনির্দিষ্ট পন্থা নেই? আছে৷ মানবশরীরের নষ্টাসুরজনিত ক্লেশাবহ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাবার একমাত্র উপায় জ্ঞানচেতনামূলক প্রকৃত শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত ও ব্রহ্মচর্য দীক্ষায় দীক্ষিত করে তোলা৷ কারণ প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি জীব আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করে চলেছি ত্রিতাপ জ্বালা— ১)আধ্যাত্মিক, ২)আধিদৈবিক ও ৩)আধিভৌতিক৷ আধ্যাত্মিক জ্বালা আবার দুই প্রকারের— দৈহিক ও মানসিক৷ সুতরাং জীবদেহে আধ্যাত্মিক জ্বালা সৃষ্টিকারী অসুরদের নির্মূলকরণের পথ হল আত্মসংযম অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য ব্রতধারণ এবং এর ফলেই আমাদের শারীরিক দোষবাচক বিশেষ্যাসুরগণের অবসান ঘটবে৷ দেবতা ও অসুরের সম্পর্ক কভু মধুর নয়, তাঁদের সম্পর্ক চিরবৈরিতার৷ অতএব আমরা জীবগণ যদি সংযমী হয়ে দেহাসুরদের বংশলোপ করি তাহলে এই দেহে স্বর্গবাসী দেবতার আসন চির অলংকৃত হবে৷ “প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে, স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে৷”
আর মাত্র কয়েকটা দিন পর ২০২০ সালের দুর্গাপূজা৷ এ বছরের শারদোৎসব বর্ণহীন, কারণ ইংলিশ বিশ সালে এক অসুরের বিষে বিশ্ব জর্জরিত— তিনি “করোনাসুর”৷ কৈলাসপতি শিবের জটা হতে যেমন বীরভদ্র দৈত্যাসুরের জন্ম, গোরুর শিং হতে গোসিংহার জন্ম, তেমনি চীনদেশের উহান প্রদেশ হতে করোনাসুরের জন্ম এবং দেবতাদের ন্যায় স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই এর উদ্ভব৷ এই অসুরের করালগ্রাসে ইতিমধ্যেই ভারত-আমেরিকা-রাশিয়া আদি দুনিয়ার তাবড় রাষ্ট্রসকল ধরাশায়ী৷ শাস্ত্রানুযায়ী বিশ্বজননী দুর্গা বধেন মহিষাসুরে, জগজ্জননী চামুণ্ডাকালী চণ্ড-মুণ্ড-রক্তবীজে, বিশ্বপিতা শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুর-বকাসুর-তৃণাবর্ত অসুরকে, পরমপিতা শিব ত্রিপুরাসুরে দলন করেন— কিন্তু করোনাসুরে দমন করবেন কে? এরূপ ভয়াল অসুর বধের অস্ত্রশস্ত্রই বা কোথায়? জগজ্জননীর গর্ভজ সন্তান বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারতমাতা নতুবা বিশ্বমাতা করোনাসুরকে অবশ্যই নিধন করবেন৷ বেদ ও মনীষীদের কথায় ভারতমাতা স্বয়ং মা দুর্গার এক রূপ৷ মহিষাসুর দলনকালীন মা মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা শিব প্রদত্ত ত্রিশূল, বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, ব্রহ্মার অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, ইন্দ্রের বজ্র, মহাকালের খড়্গ ও ঢাল, বরুণের দিব্যশঙ্খ ও পাশাস্ত্র, হুতাশনের শক্তি, পবনের তীরধনুক ও বাণপূর্ণ তূণ, যমের দণ্ড, কুবেরের অঙ্কুশ, বিশ্বকর্মার অভেদ্যবর্ম ও কবচকুঠার, বাসুকীর নাগহার, হিমালয়ের সিংহ প্রভতি সমরাস্ত্র সহ সুসজ্জিতা ছিলেন৷ এবার করোনাসুর নিধনের জন্য ভারতমাতা বা বিশ্বমাতা পরমুখাপেক্ষী হবেন না, সকলেই আপন অস্ত্রের খোঁজে গবেষণাগারে অধ্যবসায়রত৷ শুধুমাত্র আমাদের মতো উদ্বিগ্ন সন্তানসন্ততিদের মায়ের নিকট আকুল প্রার্থনা— মাগো “রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।”
কিন্তু আবাহন হলে কী হবে? মা ও তাঁর সন্তানেরা মর্ত্যধামের এই ঘৃণ্যসমাজে আর আসতে চান না৷ তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে— যেমন গণেশ ব্যবসা-বাণিজ্য, লক্ষ্মী কৃষি ও অর্থ, সরস্বতী শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং কার্তিক সামরিক ক্ষেত্রে আজ বড়ই বিপন্ন৷ তাঁরা অসহায়— কারণ প্রতিটি বিভাগে মহিষাসুরের উত্তরসূরিরা পুণরায় স্বমহিমায়৷ রক্তবীজের রক্ত হতে চিরকাল জার্মিনেশন হবেই— আমরা যতই “জাগো— তুমি জাগো— জাগো দুর্গা” বলি না কেন? দীর্ঘ তপস্যার বলে সন্তুষ্ট হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা একদিন করালাসুরকে বরদান করেন যে তার রক্ত মৃত্তিকায় পতিত হওয়া মাত্রই প্রতিবিন্দু রক্তে একটি সমরূপ অসুরের উৎপত্তি হবে৷ করালের রক্ত বীজ হওয়ার জন্য তার অপর নাম হয়েছিল রক্তবীজ৷ ডাকিনী-যোগিনী বেষ্টিতা মা চামুণ্ডাকালী সমরকালে একাংশে শিবামূর্তি ধারণ করে রক্তবীজের সমস্ত রক্ত ভক্ষণ করলেও তিনবিন্দু রক্ত ত্রিস্থানে পতিত হয়৷ জল-স্থল-অন্তরীক্ষে যুদ্ধকালীন একবিন্দু রক্ত জলে পতিত হওয়ায় জোঁকের সৃষ্টি, একবিন্দু কাষ্ঠে পতিত হওয়ায় ছারপোকার জন্ম এবং একবিন্দু শৃগালিনীর মস্তকে পতিত হওয়ায় উকুনের উৎপত্তি হয়৷ এরা রক্তবীজের বংশধর— আজও এদের বিনাশ নেই৷
এখন প্রশ্ন— অসুরকূল কেন অবিনাশী আর কেন তারা সুরবিদ্বেষী? কেনই বা তাদের এত বাড়বাড়ন্ত, শক্তি অনন্ত? এই সমস্ত প্রশ্নের সমাধান অনুসন্ধানের পূর্বে আমাদের জানা আবশ্যক প্রকত অসুর কে আর দেবতারাই বা কে? “কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর৷” অষ্টাদশ পুরাণ ও বিভিন্ন উপপুরাণ, মঙ্গলকাব্য, বেদ ও উপনিষদ অনুযায়ী নাকে নির্ঝরার স্থান এ বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। অর্থাৎ ভূঃ, ভূবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ তপঃ ও সত্য— এই সপ্তস্বর্গে দেবতার অবস্থিতি আর তল, অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল ও রসাতল— এই সপ্তপাতাল হল দৈত্যাসুরের স্থান৷ কিন্তু না, দেবতার খোঁজে স্বর্গারোহণ আর অসুরের সন্ধানে পাতালগমন নিষ্প্রয়োজন৷ চুরাশী লক্ষ যোনি পরিভ্রমণের পর আমাদের এত সাধের মানবজনম, এই রক্তমাংসের তনুতেই সুরাসুরের সহাবস্থান৷ তাহলে আমাদের দেহাভ্যন্তরে অসুর কারা? চতুর্বিংশতি তত্ত্বের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য— এই ষড়রিপুই আমাদের দেহের ষড়াসুর৷ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন সহযোগে এই ষড়াসুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপে আমাদের আসুরিক শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে আমরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি৷ কবির কথায়— “রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়, আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।”
এ তো গেল দেহতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক জগতের কথা৷ বাস্তবেও সমাজ সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাক্রমশালী অসুরগণ বিরাজমান৷ শিক্ষা-সংস্কতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের দুর্দম্য জিঘাংসা লক্ষণীয়৷ বর্তমানে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উন্নতগঠন ও মজবুতকরণ এবং সমস্ত কর্মপ্রণালীর প্রধান মাধ্যম হল কম্পিউটার, যেটি বিজ্ঞানের আশীষে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের উপহার৷ এই গণনযন্ত্রটির মাধ্যমেও ভাইরাসরূপী কুখ্যাত অসুরগণ চায় তামাম দুনিয়ার উপর কর্তত্ত্ব ফলাতে, বিশ্বায়নের গতি স্তব্ধ করে দিতে৷ পৌরাণিক যুগের মহিষাসুর, জম্ভাসুর, শুম্ভ, নিশুম্ভ, চণ্ড, মুণ্ড, বিড়ালাসুর, রক্তাসুর, বলাসুর, করিন্দ্রাসুর, মেঢ্রাসুর, বৃত্তাসুর, ভষ্মাসুর, অঘাসুর, বকাসুর, মুরাসুর প্রভৃতি অনন্ত বলান্বিত অসুরগণের চেয়ে বর্তমান প্রযুক্তিবিদ্যার যুগের অসুরেরা নামে কিন্তু স্বতন্ত্র, তবে কর্মবিষয়ে অনেক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়৷ অত্যাধুনিক কালের কম্পিউটার ভাইরাসরূপী যে সমস্ত অসুরদের অত্যাচারে সমগ্র পথিবীর চিন্তাংশ ব্যবহারকারীরা চিন্তান্বিত ও জর্জরিত সেগুলি হল ট্রোজান হর্স, টাইম বম্ব, লজিক বম্ব, মেলিসা, এসকেএ, ওয়ার্ম প্রভতি৷ পদ্মযোনি ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে আহবকালে মহিষাসুর কখনও মহিষের জঠর হতে আবির্ভূত হতেন, আবার পরক্ষণেই মেঘের অন্তরাল হতে আঘাত হানতে সমর্থ হতেন৷ তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মহিষাসুরের মতো কম্পিউটারের “ট্রোজান হর্স” অসুরটির আচরণও খুব সংগতিপূর্ণ, কেননা এটি একটি আস্ত প্রোগ্রামের সাথে আড়ালে লুকিয়ে থেকে সমগ্র সিস্টেমের পাসওয়ার্ডের উপর আক্রমণ করে৷ তারকাসুর ও বকাসুর যেমন ঋষি-মুনি ও দেবতাদের যজ্ঞে আবর্জনা ও মতপ্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিক্ষেপপূর্বক যজ্ঞ পণ্ড করতেন তেমনি “টাইম ও লজিক বম্ব” নামক অসুরদ্বয় কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক রিফরম্যাট করে বোকা বাক্সের উপাত্তের উপর নানা আবর্জনা ঢুকিয়ে দেয়৷ “টাইম বম্ব” অসুরের উদ্ভাবনই যেন নিজ নামানুসারে কর্মের জন্য, কারণ এটি কম্পিউটারের ডেটার উপর একটি নির্দিষ্ট দিনে অর্থাৎ শুক্রবার বোমাবর্ষণ করে উপাত্ত উড়িয়ে দিয়ে বল বাউন্স করায়৷ রামায়ণে বর্ণিত “ইল্বল ও বাতাপি” নামক দুই অসুরভ্রাতার কাণ্ডকারখানা বিষয়ে আমরা সকলেই জ্ঞাত৷ অনুজ বাতাপি মেষরূপ ধারণ করত ও তাকে রান্না করে অগ্রজ ইল্বল মুনিগণকে নিমন্ত্রণপূর্বক ভোজন করাত এবং আহারান্তে জ্যেষ্ঠভ্রাতার আহ্বানে কনিষ্ঠ পূর্বাবয়বে জঠর হতে নির্গত হলেই মুনিগণের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটত৷ এইভাবে সকলের সনির্বন্ধ অনুরোধে ঋষি অগস্ত্য দ্বারা মেষরূপী অসুর ভক্ষণে ও পরিপাকে তাদের বিনাশ ঘটে৷ রামায়ণের বাতাপির মতো “লজিক বম্ব” অসুরটিও কম্পিউটারের পাবলিক ডোমেইন প্রোগ্রাম ডাউনলোডিংয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সাথে যুক্ত হয়ে পুরো সিস্টেমকে ধ্বংস করে৷ কথায় বলে— “জন্ম হোক জাঁহা-তাঁহা কর্ম হোক ভালো।” সুতরাং অসুরগণ নামে ভিন্ন হলেও, তাদের সৃজন ও পালন নানা স্থানে ও বিভিন্ন মাধ্যমে হলেও কর্মাচারে তারা কিন্তু একই— শুভের অশুভসাধন৷
এবার পূর্বোল্লিখিত প্রশ্নে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন কেন এই প্রভূত ক্ষমতাধর অসুরদের এত বাড়বাড়ন্ত? তাদের সজন ও বলপ্রদানের মূলে কিন্তু সেই অমরাবতীর দেবতাগণ যাঁরা বাতাহারী অসুরদের কঠিন তপস্যায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে তাদের বরাভয় প্রদানে বাধ্য হয়েছেন অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণ কোন দেবতা নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যে খেলাটিতে বর্তমানে সারা বিশ্ব মত্ত৷ প্রথম বিশ্বের উন্নত অনেক দেশ অর্থনীতিতে তার সমকক্ষ বা অতিক্রমকারী কোন দেশকে যেমন ধ্বংস করার কারণে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা তাদের সংগঠনকে সৃজন ও পালন করে, সুরপুরের সুরগণও সমরূপভাবে তৎকালীন অসুরগণকে সম্ভূত করেছেন৷ তবে তোষণ করলেও তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রদান থেকে দেবতারা বিরত থেকেছেন৷ দ্বাদশ দিবসের সমুদ্রমন্থনে দেবতাগণ যদি অসুরকূলকে সুধাপান থেকে বঞ্চিত না করতেন তাহলে তারা কভু সুরবিদ্বেষী হত না৷ সুতরাং কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তির দীর্ঘ নিপীড়নের ফলে অসহনশীলতাবশত অসভ্য ও কুপথগামী হওয়ার মূলে কিন্তু তথাকথিত সভ্য সমাজের অবদানও অনস্বীকার্য৷ আত্মস্বার্থে তারা চায় অপেক্ষাকত দুর্বল শ্রেণীকে অশিক্ষিত করে রাখতে এবং অসুরকূলও সমভাবেই বর্ণবৈষম্যের শিকার৷ এরূপ স্বেচ্ছাচারী বিভেদকামী গোষ্ঠীর পরশ্রীকাতরতার কারণে অসুরসমাজের অসূয়াও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে ঠিক যেরূপ আমাদের দেহাভ্যন্তরে আত্মাসুরগণের বংশবিস্তারে আমরা সহায়তা করে চলেছি৷ পঞ্চভূত, দশেন্দ্রিয়, ত্রিনাড়ী, ষটচক্রের সাথেই কামাদি ষড়রিপুও আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এবং একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ওয়েবমাষ্টার সষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এগুলি মাতৃগর্ভেই আমাদের শরীরে আপলোড করেন৷ এরপর এই ষড়াসুরের মদতে আমাদের আপন যথেচ্ছাচারে ও অতিভোজনের গৌরবে আমরা মধুমেহ বা বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপ, কর্কট, এইডস প্রভতি ভয়ানক অসুর প্রজননে মেতে উঠি৷ বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী এইসব নষ্টাসুরদের নিধন করার জন্য অদ্যাবধি কোন মারণাস্ত্র অথবা অসুরদলনীর উদ্ভব ঘটে নাই৷
আমাদের এই নশ্বর দেহটা কী তাহলে চিরকালই কায়াসুরগণের ভোগার্হ? এইসমস্ত নিঃশব্দ ঘাতকদের মূলোৎপাটনের কী কোন সুনির্দিষ্ট পন্থা নেই? আছে৷ মানবশরীরের নষ্টাসুরজনিত ক্লেশাবহ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাবার একমাত্র উপায় জ্ঞানচেতনামূলক প্রকৃত শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত ও ব্রহ্মচর্য দীক্ষায় দীক্ষিত করে তোলা৷ কারণ প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি জীব আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করে চলেছি ত্রিতাপ জ্বালা— ১)আধ্যাত্মিক, ২)আধিদৈবিক ও ৩)আধিভৌতিক৷ আধ্যাত্মিক জ্বালা আবার দুই প্রকারের— দৈহিক ও মানসিক৷ সুতরাং জীবদেহে আধ্যাত্মিক জ্বালা সৃষ্টিকারী অসুরদের নির্মূলকরণের পথ হল আত্মসংযম অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য ব্রতধারণ এবং এর ফলেই আমাদের শারীরিক দোষবাচক বিশেষ্যাসুরগণের অবসান ঘটবে৷ দেবতা ও অসুরের সম্পর্ক কভু মধুর নয়, তাঁদের সম্পর্ক চিরবৈরিতার৷ অতএব আমরা জীবগণ যদি সংযমী হয়ে দেহাসুরদের বংশলোপ করি তাহলে এই দেহে স্বর্গবাসী দেবতার আসন চির অলংকৃত হবে৷ “প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে, স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে৷”
আর মাত্র কয়েকটা দিন পর ২০২০ সালের দুর্গাপূজা৷ এ বছরের শারদোৎসব বর্ণহীন, কারণ ইংলিশ বিশ সালে এক অসুরের বিষে বিশ্ব জর্জরিত— তিনি “করোনাসুর”৷ কৈলাসপতি শিবের জটা হতে যেমন বীরভদ্র দৈত্যাসুরের জন্ম, গোরুর শিং হতে গোসিংহার জন্ম, তেমনি চীনদেশের উহান প্রদেশ হতে করোনাসুরের জন্ম এবং দেবতাদের ন্যায় স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই এর উদ্ভব৷ এই অসুরের করালগ্রাসে ইতিমধ্যেই ভারত-আমেরিকা-রাশিয়া আদি দুনিয়ার তাবড় রাষ্ট্রসকল ধরাশায়ী৷ শাস্ত্রানুযায়ী বিশ্বজননী দুর্গা বধেন মহিষাসুরে, জগজ্জননী চামুণ্ডাকালী চণ্ড-মুণ্ড-রক্তবীজে, বিশ্বপিতা শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুর-বকাসুর-তৃণাবর্ত অসুরকে, পরমপিতা শিব ত্রিপুরাসুরে দলন করেন— কিন্তু করোনাসুরে দমন করবেন কে? এরূপ ভয়াল অসুর বধের অস্ত্রশস্ত্রই বা কোথায়? জগজ্জননীর গর্ভজ সন্তান বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারতমাতা নতুবা বিশ্বমাতা করোনাসুরকে অবশ্যই নিধন করবেন৷ বেদ ও মনীষীদের কথায় ভারতমাতা স্বয়ং মা দুর্গার এক রূপ৷ মহিষাসুর দলনকালীন মা মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা শিব প্রদত্ত ত্রিশূল, বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, ব্রহ্মার অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, ইন্দ্রের বজ্র, মহাকালের খড়্গ ও ঢাল, বরুণের দিব্যশঙ্খ ও পাশাস্ত্র, হুতাশনের শক্তি, পবনের তীরধনুক ও বাণপূর্ণ তূণ, যমের দণ্ড, কুবেরের অঙ্কুশ, বিশ্বকর্মার অভেদ্যবর্ম ও কবচকুঠার, বাসুকীর নাগহার, হিমালয়ের সিংহ প্রভতি সমরাস্ত্র সহ সুসজ্জিতা ছিলেন৷ এবার করোনাসুর নিধনের জন্য ভারতমাতা বা বিশ্বমাতা পরমুখাপেক্ষী হবেন না, সকলেই আপন অস্ত্রের খোঁজে গবেষণাগারে অধ্যবসায়রত৷ শুধুমাত্র আমাদের মতো উদ্বিগ্ন সন্তানসন্ততিদের মায়ের নিকট আকুল প্রার্থনা— মাগো “রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।”
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
কি দুর্দান্ত লেখা!! স্বর্গ মর্ত্য, দেবতা অসুর, ভালো মন্দ, বাস্তব পরাবাস্তব, পুরাণ বিজ্ঞান সব অদ্ভুত সমন্বয়ে মিলিয়ে দিয়েছেন। তর্কাতীত ভাবে। অসাধারণ।
এমন স্নেহাশীষপূর্ণ প্রশংসায় অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হলাম৷ শুভকামনা রইলো নিরন্তর৷
এমন স্নেহাশীষপূর্ণ প্রশংসায় অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হলাম৷ শুভকামনা রইলো নিরন্তর৷
খুব ভালো লাগলো। ষড়াসুরকে বধ করাই চাপের। ❤️
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো কবিদাদা৷