prabandho-rohinga

রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্থায়ীভাবে বসবাস করা নিয়ে এতো কোন্দল কেন?
মাহাবুবা লাকি


রোহিঙ্গারা পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন ষ্টেটের উত্তরাংশে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠী। এদের বেশির ভাগই মুসলমান। এখানকার এক তৃতীয়াংশই বসবাসরত মুসলীম জনগোষ্ঠী। সপ্তম অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও স্থানীয় আরাকানীদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে চাটগাঁইয়া রাখাইন, বার্মিজ, বাঙালি, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিশ্রনে এই জাতি ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রোহিঙ্গারা পূর্বাতন বার্মার অধুনা মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এরা সংখ্যায় প্রায় বিশলাখ।

অধিকাংশ লোক বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের পাশে উত্তর রাখাইন রাজ্য নামে নামকরণ করা পূর্ববর্তী আরাকান রাজ্যের তিনটি টাউনশিপে বাস করে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাও উগ্র রাখাইনদের সাম্প্রদায়িক আক্রমনের শিকার হয়ে প্রায় দশ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বার্মার নানাবিধ বৈষম্য আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং থেকে শুরু করে থাইংখালি পর্যন্ত এলাকার রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদের বাসস্থল রাখাইন রাজ্য। যার আদিনাম আরাকান।

২০১২ সালে বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। এরই জের ধরে অক্টোবরের মাঝামাঝি বিদ্রোহী কিছু রোহিঙ্গা নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। নিরাপত্তা বাহিনী তখন সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালালে কমপক্ষে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা ওইদিনই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সেই সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। নারীদের ধর্ষণ ও তাদের ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। টেকনাফ থেকে নাফ নদী পার হলেই মিয়ানমারের মংডু এলাকা। আরাকানদের উত্তরেই রোহিঙ্গাদের বাস বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের উভয় দেশভুক্ত গ্রাম তুম্বুরু। তুম্বুরু দু ভাগ হয়ে বসেছে সীমানা পিলারও কাটাতারের বেড়া। তারপরই নো ম্যান্স বা জিরো পয়েন্ট হয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। এই দুই দিক দিয়ে তখন হাজারে হাজারে লাখে লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। প্রথম দিকে তিনলাখের কথা উঠলেও পরবর্তীতে তা প্রায় নয় দশ লাখের কাছাকাছি চলে আসে। দুই থেকে বার দিনের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রোদ, বৃষ্টি, ক্ষুধা, তৃষ্ণা বহন করে বাঙলাদেশের ঘাড়ে এসে পড়ে। বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়াই তারা বাঁশ আর পলিথিনের ঝুপড়ি তুলে বসবাস করে দেয় নিজেরাই। এ ছাড়াও টেকনাফ সীমান্তবর্তী হোয়াইক্যং উইনিয়ানসহ বান্দরবান নাইক্ষ্যাংছড়ি তুম্বুরু সীমান্তের জলপাই তলি এলাকা দিয়েও ঢুকে পড়ে। এদের প্রত্যেকের বাড়ি মিয়ানমার রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।

একটু পেছনের ইতিহাস জেনে নিতে আমরা এই অব্দি ঘটে যাওয়া ঘটনার দিকে তাকালে দেখতে পাই। একসময় পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিল রোহিঙ্গারা। ১৭৮৪ সালে বৃটিশরা আরাকান দখল করে নিলে আবারও বাংলা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বার্মার যোগাযোগ বেড়ে যায়। এইসময় বৃটিশরা বার্মার বনজ সম্পদ আহরণ ও বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যাপক সংক্ষক ভারতীয়দের মিয়ানমারে নিয়ে আসে। ভাগ্যান্বষণে অনেক ভারতীয় বিশেষ করে বাঙালিরাও সেখানে ভীড় জমায়।




স্থানীয় রাখাইনদের তুলনায় এরা ব্রিটিশদের কাছে বেশি গুরুত্ব লাভ করে এবং সরকারী পদে আসীন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে, ১৯৪২সালে জাপানিরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে মিয়ানমার দখল করে নেয়। স্থানীয় রাখাইনরা এই সময় জাপানিদের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত জনগণকে আক্রমণ করা শুরু করে। মূলত এই আক্রমনের স্বীকার হয় সব মুসলমান রোহিঙ্গারা। ১৯৪২ সালের ২৮শে মার্চ রাখাইন অধ্যুষিত মিম বিয়া ও স্লো হাং টাউনশিপে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করে রাখাইনরা। পালটা প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর রাখাইন অঞ্চলে প্রায় বিশ হাজার রাখাইনকে হত্যা করে রোহিঙ্গারা। সংঘাত প্রচন্ড তীব্রতায় ঘনিয়ে আসলে রাখাইনরা জাপানিদের সহয়তায় রোহিঙ্গাদের কোন ঠাসা করে ফেলে।

১৯৪৫ সাল অব্দি মিয়ানমার জাপানিদের দখলে থাকে। এই তিনবছরে কমপক্ষে বিশ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে তৎকালিন বাংলায় চলে আসে। সেই প্রথম শুরু বাংলাদেশে তাদের অনুপ্রবেশ। যা আজও বিভিন্ন ছলাকলায় অব্যাহত রয়েছে। ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশরা আবার ও মিয়ানমার দখল করে নেয়। এই দখলে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে মুসলিম রোহিঙ্গারা। ব্রিটিশরা মনের ভেতর একপ্রকার চালাকির ঝুলি লুকিয়ে রেখে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে এই বার তারা যদি সব কাজে সহায়তা করে, তাহলে এর বিনিময়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের জন্য তারা একটি আলাদা রাজ্য গঠন করে দেবে। এ ছাড়াও আরো আরো সুযোগ সুবিধা দেবে। কিন্তু বরাবরের মত বেঈমান ব্রিটিশরা তাদের কোন প্রতিশ্রুতিই রাখেনি। তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে মুসলিম রোহিঙ্গারা। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টা করে একটি শক্তিশালি ঘাঁটি তৈরি করতে। এই নিয়ে জিন্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা নেতারা।

এরই জের ধরে রোহিঙ্গারা ভেতরে ভেতরে একটি বড় সশস্ত্র গ্রুপও তৈরি করে এবং মংদুও বৃথিধাং এলাকাকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন রোহিঙ্গাদের এই ভুল উদ্যোগই ছিল আত্মঘাতী এবং মিয়ানমারের বৈষম্যের শিকার হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণও বটে। মূলতঃ এরই ধারাবাহিকতার রেস ধরে মিয়ানমারের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সেই সময়কার রোহিঙ্গা উদ্যোগকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করে।

এরপর ১৯৬২ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের প্রতি রাস্ট্রীয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭০ সালের পর থেকে সেনাবাহিনীতে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে থেকেই সরকারি চাকরিতে থাকা রোহিঙ্গারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হতে থাকে।

মূলতঃ যে সময় থেকে রোহিঙ্গাদের দূর্ভোগ শুরু——

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ১৪৩০-১৭৮৪ সাল পর্যন্ত বাইশ হাজার বর্গমাইল আয়তনের আরাকান রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাজ্য ছিল।মিয়ানমারের রাজা বেদওয়াফা এই রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধদের আধিপাত্য শুরু হয়ে যায়। একসময় ব্রিটিশদের দখলে চলে আসে এই ভূ-খণ্ড। তখন একটি বড় ধরনের ভুল করে ফেলে তারা এটা ইচ্ছাকৃত কি না তার সুস্পষ্ট প্রমাণ উল্লেখ নেই। তারা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে না। এমন অসংখ্য ভুল ব্রিটিশরা করে গেছে।

এরপর ভারত ভাগ হবার সময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ওঠা কট্টরপন্থী মুজাহিদিন দল গোলমাল বাধায়। তারা সেই সময় জিন্নার সাথে দেখা করে বলে আমরা পাকিস্তানের অংশ হতে চাই এবং রাখাইনের পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সাথে একত্রিত করে নিন। তবে তাদের এই দাবি জিন্নাহ রাখেন নি।

১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে। সেই সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব কিন্তু ছিল। এই জনগোষ্ঠীর কয়েকজন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা ও ছিলেন। তারা দেশের স্বার্থে বড় বড় দ্বায়িত্ব পালন করেছে।

কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাস্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে থাকে। শুরু হয় রোহিঙ্গাদের জীবনে দূর্ভোগের নতুন অধ্যায়। তবে দেশ ভাগ হবার পর থেকে মুজাহিদিন গ্রুপ রাখাইনের পূর্বাঞ্চলকে মিয়ানমার থেকে আলাদা করার সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। ওরাই একসময় কালক্রমে রাখাইনদের পূর্বাঞ্চল শাসন করা শুরু করে। এই সময় বাংলাদেশ থেকেও মুজাহিদিনদের ক্ষমতাও আরাম আয়েশের প্রলোভন দেখিয়ে সীমন্তবর্তী প্রচুর মুসলিমদের রাখাইনে আনে। তারা মিয়ানমার সরকারের বিনা অনুমতিতে সেখানে বসবাস করা শুরু করে। এই ধারার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় রাখাইন অঞ্চালের শত-শত বৌদ্ধ ভিক্ষু মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার সরকার রাখাইনদের সকল শক্তি চুরমার করার উদ্যোগ নেয়। এভাবেই ক্ষমতার রদবদলে একদিন মুজাহিদিনদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। মিয়ানমারের অনেক আর্মি নেতারা মরেছে, কেউ পালিয়েছে, কেউ ঘাপটি মেরে থেকেছে। এসব কিছুই এক দশকের ভেতর ঘটেছে। মুজাহিদিনিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের কারনে মিয়ানমার সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের সকল প্রকার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেও ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। শেষমেশ শুরু করে ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবে নানা রকম অত্যাচার।




নামাজ আদায়ে বাঁধা দেওয়া, হত্যা ধর্ষণ হয়ে পড়ে নিত্যদিনের ঘঠনা। সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া, বাধ্যতামূলক কঠিন শ্রমে নিয়োগ করা, শিক্ষা-স্বাস্থসেবা থেকে বঞ্চিত করা, বিয়ে করার অনুমতি না দেওয়া, কোন সন্তান জন্ম নিলে তার নিবন্ধন হবে না এবং জাতিগত পরিচয় প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এদের বংশবৃদ্ধি যাতে না এগোয় সে জন্য আরোপিত করা হয় একের পর এক বিধিনিষেধ। পর্যায়ক্রমে মিয়ানমারের মূল ভূ-খন্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা অবহেলিত কালা নামে ধিকৃত হতে থাকে এবং বাঙালি যারা আছে তাদেরও একই নামে ডাকা শুরু করে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ রাখাইনদের সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হয়ে প্রায় দশ লাখের মত রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এরা নিজেদের জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে যেমন সন্দিহান তেমনি অন্য একটি দেশের সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহারা হবার পেছনে যে কারণগুলো কাজ করেছে—-

১৫ই অক্টোবর ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নাগরিকত্ব আইন পাশ করে। এই আইনে মিয়ানমারে ভিন্ন ধরনের নাগরিকত্ব বিধান রাখা হয়, যেমন পূর্ণাঙ্গ নাগরিক, সহযোগী এবং অভিবাসী। এই নতুন আইনে বলা হয় ১৮২৩ সালে মিয়ানমারে ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে বসবাস করা ১৩৫টি গোত্রভুক্ত মানুষই মিয়ানমারের পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে। এই সময় পুরোপুরিভাবে রোহিঙ্গাদের গোত্র হিসেবে অস্বীকার করে সামরিক সরকার। তারা দাবি করে রোহিঙ্গা বলে কোন গোত্র তাদের দেশে নেই। এই জনগোষ্ঠী মূলত পূর্ববাংলা থেকে উড়ে আসা জনগোষ্ঠী। যারা ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তী মিয়ানমারে আশ্রয় নিয়েছিল। নতুন আইন অনুযায়ী তারা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারবে না। সেই সময় মিয়ানমারের সামরিক সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে আরাকান রাজ্যের দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগকে অস্বীকার করে। কেবল আইনে ‘সহযোগী নাগরিক “হিসেবে শুধু তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যারা ১৯৪৮ সালের নাগরিক আ্যাক্টে ইতিমধ্যে আবেদন করেছিল। তাছাড়া অভিবাসী নাগরিক (মিয়ানমারের বাইরে জন্ম নিয়েছে এমন মানুষদের নাগরিকত্ব) হিসেবে কয়েকটি শর্তের কথা উল্লেখ করে তারা। যেগুলো যথাযথ ভাবে প্রমাণ সাপেক্ষ বলেও প্রচার করে। এদিকে যারা মিয়ানমারের স্বাধীনতার আগে(৪ঠা জানুয়ারি ১৯৪৮)এদেশে প্রবেশ করেছে ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ভাষায় দক্ষ এবং যাদের সন্তান মিয়ানমারে জন্মগ্রহণ করেছে তারাই এই ধারার নাগরিকত্ব পেতে পারে।

তবে সেই মুহুর্তে যুগযুগ ধরে আরাকানে থাকা রোহিঙ্গাদের পক্ষে ১৯৪৮সালের আগে প্রবেশ করা সংক্রান্ত কোন দাললিক প্রমান উপাস্থাপন করা ছিল অসম্ভব। তাছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা এবং নিরক্ষর এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে মিয়ানমারের রাষ্ট্র ভাষার দক্ষতা প্রমান করা হয়ে পড়ে দুরহ। কারণ রাষ্ট্রীয়ভাবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যে কেন্দ্রীয় কমিটি এই নাগরিকত্ব প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। তারা প্রায় প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরুপ মনোভাব দেখায়। সুতরাং রোহিঙ্গারা আর নাগরিকত্ব পাবার কোন পথই পায় না বা খোলা থাকে না। তখন ওদের চোখে হয়ে পড়ে তারা উদ্বাস্তু। কয়েক পুরুষধরে বাস করা বাপদাদার ভিটেমাটিতে একপর্যায়ে রোহিঙ্গারা বন্দী কয়েদী হয়ে পড়ে। এভাবে অবরুদ্ধ জীবন নিয়ে বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় রাস্ট্র বিহীন সবচেয়ে বড় একটি জনগোষ্ঠী।

তবে বিস্ময় ও অবাক করার মত ব্যাপারটি ছিল মিয়ানমার সরকারের কর্মকর্তারা প্রাই প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে থাকেন এতো এতো অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারিরা সবাই বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তারা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময় বছরের পর বছর এদেশে ঢুকে পড়ে বিশাল গোত্র তৈরি করেছে। কাজেই কোন ভাবেই তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করব না, বা দেওয়া হবে না। একটি দেশের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী বাস করে আসা বড় একটি জনগোষ্ঠী নাগরিকবিহীন থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব মানুষরই একটি জন্মগত অধিকার থাকা উচিৎ। কিন্তু গায়ের জোরেই মায়ানমার সরকার সেটা প্রত্যাখ্যান করছে বারবার।

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব্যের প্রশ্নে কে কিভাবে অবস্থান নিয়েছে—-

রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব বা বসবাসের অনুমতি দিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নতুন করে সহিংসতা শুরু হবার পর স্রোতের মত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। জীবন বাঁচাতে তারা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বেঁচে থাকার আশ্রয় স্থল হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেয়। এই পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার উর্ধে থেকে তাদের আশ্রয় দেন, এবং পরবর্তীতে তাদের থাকা খাওয়ার সবরকম মানবিক সুবিধা দেন। কিন্তু সেটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। বাংলাদেশ একটি বিশাল জনবহুল দেশ। যারা নিজেদের ভরনপোষণ করতে হিমসিম খায়। সেখানে দিনের পর দিন এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করায় এক দিকে এটির পরিস্থিতি যেমন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে ফেলছে। অন্যদিকে বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের স্বর্গভূমি গড়ে তুলছে তারা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এর স্থায়ী কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারছেন না।

জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ থেকে দশ লাখের মত রোহিঙ্গাদের ভার বহন করে চলেছে কয়েকদশক ধরে বাংলাদেশ। কিন্তু তা কতদিন বা ক-বছর তার হিসেব বা দিনক্ষণ কেউ জানে না। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে বারবার অনুরোধ করলেও মিয়ানমার সরকার যেন কানে তুলো দিয়ে বসে আছেন। কিছুই শুনছেন না। এদিকে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রের কানে এ ব্যাপারটা তুললেও কোন সমাধান বেরিয়ে আসছে না।




দিনের পর দিন বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বংশ বিস্তারের পাশাপাশি পেশিশক্তির বলে খুন খারাবি ও ক্ষমতা দখল নিয়ে বেস কয়েকটি গ্রুপ বা দল সৃষ্টি হয়েছে। এদের ভেতর মাথা চড়া দেওয়া কয়েকজন গ্রুপ নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও অপরাধীদের অভয়ারাণ্যে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। এদের তৎপরতা এখন শুধু ক্যাম্পের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই, বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকহারে। যেকারনে এদের হাতে নাজেহাল হচ্ছে স্থানীয় নীরিহ জনগন। তারা বাঙালিদেরও বিভিন্নভাবে হামলাও অত্যাচার করছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পগুলোতে সক্রীয় রয়েছে ছোট বড় শতাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। এরা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ সম্রাজ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন ব্লক ভিত্তিক বাহিনী গড়ে তুলেছে। এসব গ্রুপে সর্বনিম্ন পঞ্চাশ থেকে পাঁচ শতজন করে সদস্য রয়েছে। এরা মূলতঃ ব্লকভিত্তিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে। এদের প্রধান কাজ হল চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদক ব্যাবসা, মানব পাচার ও অপহরণ সহ নানা অপরাধ করা। এদের মধ্যে বেশি আধিপত্য আদ্দু বাহিনী, জকি বাহিনী, গিয়াস বাহিনী ও মৌলভীবাহিনীর বেশি। এছাড়াও আরও অসংখ্য বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করা ব্যাবসায়ীদের দৈনিক হারে চাঁদা দিতে হয়। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার উপর নেমে আসে মরণ জ্বালা। এদিকে প্রত্যাবাসন বিরোধী রোহিঙ্গাদের বিপথগামী একটি গ্রুপ নেত্রীত্ব সহ্য করতে না পেরে পরিকল্পিত ভাবে মুহিবুল্লাহাকে হত্যা করে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এ্যান্ড হিউম্যান রাইট নামক ক্যাম্প ভিত্তিক সংঘঠনের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে নানাভাবে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। ২০১৯ সালের ২৫শে অগাস্ট কুতুপালং শিবিরে রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশ করে তিনি আলোচনায় আসেন।

দিনদিন বেড়ে চলেছে বাংলাদেশের উদ্বেগ ——

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা আমাদের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও পুরো পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। উখিয়া ছিল ঘন জঙ্গল, এখন ন্যাড়া মাথা হয়ে গেছে। তারা বসবাস করেই খ্যান্ত নয়; নারী পাচার, খুন, মাদক ও বিভিন্ন সহিংস কাজের অভয়ারণ্যের এক রাজ্য গড়ে তুলেছে। কোন ভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এদেশে রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের খুব ভাল হয়। কারণ তাদের এনজিও ভিত্তিক ব্যাবসাটাকে বেস জমিয়ে তুলতে পারবে। অনেক সময় অনেকেই প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করতে চান। আমি সোজা উত্তরে বলি–যান মায়ানমারে ওদের জন্য কিছু করে দেন। সবকিছুতে ব্যাবসা আর ব্যাবসা। আর এতোদিন পেরিয়ে গেলেও উড়ে এসে জুড়ে বসা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার কোন আগ্রহই দেখছি না। আন্তর্জাতিক সংস্তার কাছে বারবার চিত্রটি তুলে ধরেও কোন সহায়তা পাচ্ছি না।

বর্তমান রোহিঙ্গাদের অবস্থান—–

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ১৯৮২ সালের আইনে, রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকর ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

অস্টম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্বেও বার্মার আইন এই সংখ্যা লঘু নৃত্ত্বাত্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃত্বাত্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

তাছাড়া তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা -রাস্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।

রোহিঙ্গারা ১৯৭৮-১৯৯১-১৯৯২-২০১২-২০১৫-২২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের স্বীকার হয়। জাতিসংঘ ও হিউম্যান ওয়াচ মায়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমনও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দেন।

সারা বিশ্ব দেখেছে গণহত্যার মত নৃশংসতা তারা চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল দাবি করেন, মায়ানমার সরকার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে চান।

২০০৮ সংবিধান অনুসারে, মায়ানমারের সেনাবাহিনী সরকারের অধিকাংশ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা- স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেনাবাহিনীর জন্য ২৫% আসন বরাদ্দ এবং তাদের মধ্য থেকে একজন উপ রাষ্ট্রপতি থাকবেন।

যদিও রোহিঙ্গারা বলে আসছেন, তারা পশ্চিম মায়ানমারে অনেক আগে থেকেই বসবাস করে আসছেন। তাদের বংশধরেরা প্রাক উপনিবেশিক ও উপনিবেশ আমল থেকে আরাকানের বাসিন্দা ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নির্যাতন শুরু হবার পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গারা আইন প্রনেতা ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পূর্বে যদিও মায়ানমার রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেছেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের মনোভাব বদলে যায়। তাদের অফিসিয়ালি বক্তব্য হল তারা আমাদের জাতীয় কোন জনগোষ্ঠী নয়। এরা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মূলতঃ এরপর থেকেই মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি না বলে, এদের বাঙালি বলতে শুরু করে।

আজ রোহিঙ্গাদের দেশ বলতে কিছুই নেই। জাতিসংঘ তাদেরকে পৃথিবীর সবথেকে নির্যাতিতা জনগোষ্ঠী হিসেবে নাম দিয়েছে। কিন্তু কেন আজ রোহিঙ্গাদের এই অবস্থা? প্রকৃত অর্থে আসলে এরা কারা? কী তাদের পরিচয়? কেন তাদের জীবনও স্থায়ীভাবে বসবাস করা নিয়ে এতো কোন্দল?

তবে যেটুকু পাওয়া গেছে বিভিন্ন পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে। তা হল মায়ানমারের ভেতর জাতি-ও জাতীয়তাবাদী বৈদ্ধদের দ্বারা ঘৃণা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার স্বীকার। একইসাথে মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অপব্যবহারের স্বীকার। সেনাবাহিনী অভিযানের পূর্বে মায়ানমারে ১.১ থেকে ১.৩ বিলিয়ন রোহিঙ্গা বাস করতেন ৮০% রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে।

আর এখন ৯ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী হিসেবে দক্ষিণ পূর্বের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

১০০,০০০এর বেশি রোহিঙ্গা আভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে রয়েছে। ২৫শে অগাস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হবার পর, মায়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন ” শুরু করে। ওই অপারেশনে ৪০০থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়, অনেকে আহত ও নির্যাতনের স্বীকার হন। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৪০০,০০০মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ৪০% এরও বেশি তখন বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়।




মানবতার কথা চিন্তা করেই বিশ্ববাসীর এই সমাস্যা নিরাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে এগিয়ে আসা উচিৎ। গত ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যেখানে শরাণার্থী গণধর্ষণ, গণহত্যা এবং নিষ্ঠুর বিদ্রোহের গল্প তারা শুনেছেন। যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে রিপোর্ট করা সাক্ষ্যাৎকারে অর্ধেকের বেশি নারী তাদের জবানবন্দিতে বলেছে নির্যাতনের কথা। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে তাদের আগুনে পোড়ার দৃশ্য। একদিকে শরাণার্থীরা সামরিক বাহিনীকে দোষারোপ করে, অপরদিকে বার্মিজ সেনাবাহিনী দাবি করে রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশনের ভাসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমাস্যার দ্রুত সমাধানে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্বের সকল দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ রেখেছেন। কেননা এই বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তুর বোঝা বহন করার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার প্রয়োজনে ও রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণ খুবই জরুরি।

নিষ্ঠুর ও দুঃখজনক ব্যাপার হল মায়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা চালিত সামান্য সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যপক ক্ষতি করেছেন। কাজেই সারা বিশ্ব এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে কেবলি তখনি এর স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত হবে। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যাপারটিকে একটি যুদ্ধ হিসেবে দেখতে হবে। এর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। কারণ যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদেরকে অপরাধের শাস্তি দেওয়া উচিৎ। যারা গণহত্যার সমর্থন করে তাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখা উচিৎ।

সূত্রঃ প্রথম আলো ৫ই অক্টোবার ২০১৯
প্রথম আলো ১৩ই মার্চ
নয়াদিগন্ত ১৯ শে জানুয়ারি ২০২০
B B C বাংলা ২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০১৭
নয়াদিগন্ত ২৩শে ডিসেম্বর ২০২১
যুগান্তর ২৪শে অক্টোবর ২০২১
কালের কন্ঠ ১৯শে জুন ২০২১
উইকিপিডিয়া

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *