কোনো শিল্পকর্মের বিশ্লেষণ দিয়েই যদি আমরা শুরু করি তবে দেখতে পাবো, তা সব সময় স্বগোত্রীয় একটি বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে পতিত হয়। কৃত সমালোচনার সবটাই ব্যক্তিগত অপছন্দ বা অননুমোদনের প্রকাশ। একটি নির্মোহ জায়গা থেকে আমরা বিচার করে বলতে পারি না যে শিল্পের নৈতিক প্রশ্নটিই প্রধান নয়। তার নান্দনিক প্রশ্নটিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতা ঢালাওভাবে সব শিল্পকর্মের বিচারের মানদন্ড হতে পারে না। এমনকি নৈতিক বক্তব্য প্রকাশ সব শিল্পের লক্ষ্য নয়। যখন বলা হয়ে থাকে নৈতিকতা শিল্পের উদ্দেশ্য নয়, প্রকৃতপক্ষে তখন নৈতিকতা শেখানোর দিকে ইঙ্গিত করা হয়। শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পী কোনো সাধারণ মানদন্ড নির্মাণ করেন না কিংবা শিল্পকর্মের উৎকর্ষের বাইরে তাৎক্ষণিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন না। আবার ভয়-উদ্দেশ্য নিয়েই কেউ শিল্প রচনা করতে পারেন। শিল্পকর্মকে নিখুঁত করার মধ্য দিয়ে শিল্পী নিজের দক্ষতার প্রকাশ যেমন চান, যা তার একটি বাজার মূল্য নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জনের পথ সুগম করবে; পাশাপাশি একটি নৈতিক আকাঙ্ক্ষাও তার থাকতে পারে। কিন্তু তিনি কখনোই চাইবেন না তার শৈল্পিক দক্ষতা আদর্শের নিচে চাপা পড়ে যাক। একজন শিল্পীর মূল আরাধ্য বিষয় হলো তার শৈল্পিক দক্ষতার আকাঙ্ক্ষা আর তার অনুপস্থিতি তাকে নৈতিকতা আশ্রয়ী বা অর্থকরী শিল্প নির্মাণে উৎসাহী করে তোলে। একটি কাল্পনিক সৃষ্টি বাস্তবে রূপ লাভ করতে পারে না যদি শিল্পীর মনে আন্তর তাগিদ না থাকে। অনেকেই মনে করেন শিল্পে আদর্শের প্রকাশ অত্যন্ত জরুরী, আর যে শিল্পে নৈতিকতা অনুপস্থিত থাকে তা শুধুমাত্র বিক্ষিপ্ত অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। আধুনিক মনস্তত্ত্ববিদরা অবদমিত আকাঙ্খার বিপুল ভাণ্ডার। শিল্প শিল্পের এমন কিছু অভিজ্ঞতার ফসল যা সাধারণ মানুষেরা সব সময় ধারণ করেন না। শিল্পী স্বপ্নের কারিগর, ভাবনার অতীত বিষয়াবলীকে ধারণ করেন।মধ্যযুগের শেষ প্রান্তে, রেনেসাঁ বা আঠারো শতকে ইতালির চিত্রকলার যে বিবর্তন আমরা লক্ষ্য করি তার সাথে রেনেসাঁ আমলের ডাচ চিত্রকলার পার্থক্য সুস্পষ্ট। ডুসিও ও জত্তোর চিত্রকলা সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় ভাবাদর্শের। সেখানে ধর্মানুরাগী, উপাসনা ও ভক্তিভাব প্রকাশিত হয়েছে যার পেছনে পাদ্রীদের প্রভাব রয়েছে। রেনেসাঁ আমলে ধর্মীয় ভাবাদর্শের চিত্রকলা অঙ্কিত হতো কিন্তু তা পৌত্তলিক বৈশিষ্ট্যের। সেখানে ধর্মীয় আবেগ এর পরিবর্তে মানবিক বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে যা রাফায়েল, মাইকেল এঞ্জেলো, টিশিয়ান, জর্জিয়োনে, তিনতোরেত্তো প্রমুখের চিত্রকলায় দেখা যায়।বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব বিকাশ, ধ্রুপদী সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের ফলে প্রাচীন ধারণা ও মূল্যবোধ পাল্টে গেল। সামগ্রিকতা উপলব্ধি ও তার ঐশ্বর্য উপভোগ হয়ে উঠলো জীবনের অন্তর্নিহিত আদর্শ, যা রেনেসাঁ চিত্রকলায় প্রকাশিত হতে থাকলো। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে গেল। আঠারো শতকের বাস্তববাদী চিত্রকলায় আমরা খুঁজে পেলাম দৃঢ়-মার্জিত, অপ্রতিসম ও অভিজাত উৎকর্ষ। ফ্লান্ডার্স ও ডাচ চিত্রকলায় প্রায় একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। আদি শিল্পকর্মের পরিশীলিত মরমীবাদ থেকে দৃষ্টি পার্থিব সৌন্দর্যের দিকে সরে এলো। তবে ডাচদের চিন্তাভাবনা যথেষ্ট গার্হস্থ্য, মোটেও বীরত্বব্যঞ্জক নয়, অতি সাধারন ও স্বচ্ছন্দ বুর্জোয়া সমাজের খুব পছন্দের। এ থেকে সুস্পষ্ট হচ্ছে যে প্রতিটি যুগের শিল্পকলায় যুগচরিত্রের একটি প্রতিফলন থাকে। শিল্পী যেমন নিজের সময়কে ধারণ করেন আবার তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মধ্যযুগের চিত্রকলায় আমরা এক ধরনের ইন্দ্রিয়পরায়ণতা লক্ষ্য করি যার মধ্যেও রয়েছে জীবনের প্রকাশ। তখনকার শিল্পগড়নের মধ্যে কল্পনা ধরা পড়েছে তা সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়। যা থেকে অনুমান করা যায় যে শিল্পের সাথে বাইরের জগতের শুধুমাত্র আনুষঙ্গিক নয়, অন্তর্নিহিত একটি যোগাযোগ রয়েছে। অন্তর্নিহিত যোগাযোগ বলতে বোঝায় উদ্দীপ্তকারী অভিজ্ঞতা যা রয়েছে সঙ্গীতে, আর তাই সংগীত উপভোগ বা প্রশংসার অর্থই হলো ব্যক্তিত্বকে মহিমান্বিত করা। শিল্পকলা মানুষের অভিজ্ঞতা ও সৃষ্টিশীলতার ফসল। শিল্পীর সমগ্র ব্যক্তিত্ব এর মাঝে প্রবেশ করে এবং একটি নতুন আকার ধারণ করে যার কোন নৈতিক বৈশিষ্ট্য নেই। যেভাবে দর্শন সর্বত্র একই রকম, আমার তোমার বলে আলাদা কিছু নেই, সেভাবে নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য সর্বজনীন নয়। চিত্রশিল্পী কাউকে মহিমান্বিত করেন না। শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি তার অভিজ্ঞতার একটি নতুন গড়ন নির্মাণ করেন মাত্র। তাছাড়া মহৎ জীবন মানে একটি সংকীর্ণ বিশুদ্ধবাদী জীবন নয়, পঙ্কিলতার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে একাকী বিচ্ছিন্ন থাকা নয়, বরং বিপদ এবং নিরন্তর প্রতিকূল অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলাই জীবন।বলা হয়ে থাকে, কোন যুগের সর্বোৎকৃষ্ট চিত্র তার শিল্পকলার মধ্যে পাওয়া যায়, আবার এ কথাও শোনা যায় যে কোন যুগের মানুষ তার শিল্পকলায় প্রদর্শিত বৈশিষ্ট্যের কিছুই ধারণ করেন না। একটি যুগের চিত্রকলা সেই যুগের আচার-আচরণ, সমস্যা, আবেগ ইত্যাদি ধারণ করে, কিন্তু তা ওই যুগের ইতিহাসের অভিন্ন রূপ নয়। কারণ এর বাইরের জীবন ওই বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তি নয়, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগের বিকশিত শৈল্পিক রূপ। শিল্পী সময়ের আবেগকে শুধু ধারণই করেন না, তাকে বিকশিতও করেন। আর এ কথাও সত্য যে শিল্পী প্রতিফলিত জীবন শিল্পের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন সংগীতের জীবন সংগীতের মধ্যেই থাকে যা একটি সাংগীতিক অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি এও সত্য, মানুষের অভিজ্ঞতাই সংগীতে রূপ নেয়, ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ সংগীতের মাঝে। শিল্পের নিজস্ব কোন প্রকাশ ক্ষমতা নেই। যদি থাকতো, তাহলে বর্বর সভ্য শিল্পকলা অনুধাবন করতে পারত আর শিশুরাও প্রাপ্তবয়স্কদের শিল্পকলা বুঝত। শিল্পকলার স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো অনুধাবন করতেও শৈল্পিক অভিজ্ঞতা বদলাতে হয়। সেই জন্য বিশেষ ধরনের শিল্পকলা অনেকের পক্ষে অনুধাবন করতে সমস্যা হয় কেননা সেগুলো তাদের আবেগকে ধারণ করে না।শেক্সপিয়ার কি তাঁর নাটকে নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন? নাট্যকার হিসেবে তিনি কতটুকু নৈতিকতা ধারণ করতেন সেই প্রশ্ন জরুরি নয়, তিনি তার সাহিত্যকর্মে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। যদিও কিং লিয়ার বা ম্যাকবেথ নাটকে কিছু নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তা পূর্বপরিকল্পিত নয়। প্লট যেভাবে এগিয়েছে,চরিত্রগুলোর অস্তিত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমন ঘটেছে। শেক্সপিয়ার চরিত্রগুলোকে আদর্শায়িত করতে চাননি। তারপরও আনন্দ, ঔৎসুক্য, ইত্যাদি রেনেসাঁ আদর্শের কিছু বৈশিষ্ট্য তার নাটকে রয়েছে। তবে আমরা একমত হই বা না হই, শিল্পের কিছু সহজাত বৈশিষ্ট্য আছে যা প্রকৃত অর্থেই নৈতিক এবং ঐতিহাসিকভাবে সত্য এবং যুগ ও সময়ের মধ্যেই তার ন্যায্যতা প্রমাণিত হয়। এবং এর মাঝে যে নৈতিকতা রয়েছে তা সংকীর্ণশুদ্ধতাবাদী ধর্মাচারণের মাঝে অনুপস্থিত।নৈতিকতা বলতে যদি কিছু কঠোর অনুশাসন ও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য যার সাথে আনন্দ ও ভালোবাসার কোন সম্পর্ক নাই এবং শিল্পের জন্য অপরিহার্য মনে করি তাহলে নিশ্চিত করে কিছু শিল্পকর্মকে অনৈতিক হিসেবে রায় দিতে হয়। অথবা শিল্প ও নৈতিকতাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে কল্পনা করতে হয়। উনিশ শতকে এমন ঘটেছে। কেউ কেউ শিল্পে কোন কোন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিকে খারিজ করেছেন আবার কেউ কেউ নৈতিকতাকে শিল্পের চৌহদ্দিতে ঢুকতে দিতে চাননি। একেবারেই নৈতিক বিবেচনা থেকে মুক্ত রাখতে চেয়েছেন। উভয় গোষ্ঠীই শুদ্ধতাবাদী দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি বিবেচনা করেছেন।কারো কারো মতে, শিল্পকে নৈতিকতার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা ছিল শিল্পকে বিশৃংখল করে তোলার নামান্তর। যারা শিল্পের কাছে নৈতিকতাকে ঘেঁষতে দেননি তারা ব্যাপকভাবে শুদ্ধতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সরে এসে অবাধ স্বাধীনতার চর্চায় নিমগ্ন থেকেছেন। ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ এই আদর্শের চূড়ান্ত অর্জন মহৎ কিছু হয়ে ওঠেনি বলে বিরুদ্ধবাদীরা সবসময়ই অভিযোগ করে থাকেন। নৈতিকতা বর্জন শিল্পের আরেকটি আদর্শ হয়ে ওঠে। শিল্পে নৈতিকতার অর্থ সীমিত কিছু আদর্শ চর্চা নয়। শিল্পকে দেখতে হবে ইতিহাসের আলোকে এবং ধারাবাহিকভাবে নতুন মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনে বিয়োগান্ত ঘটনা প্রবাহের আধিক্য রয়েছে। আর এই বিয়োগান্ত বিষয়সমূহ অতিমাত্রায় প্রতিফলিত হয়। তবে তার অর্থ এই নয় যে মহৎ শিল্প চরিত্রগতভাবে দুঃখবাদী। দুঃখ বা নৈরাশ্যবাদ একটি দুর্বল পদ, কারণ তার মাঝে নেতিবাচক উপাদান লুকিয়ে রয়েছে। আর শিল্পে পরিপূর্ণ হতাশাবাদ সৃষ্টিশীলতায় বিরতি টেনে দেয়,কারণ তার সব ধরনের মূল্যবোধকে অস্বীকার করে। জেকোবিন নৈরাশ্যবাদী কবিতা লিখেন । তিনি নিজের হতাশাকে খুব উপভোগ করেন এমন নয়, এমন কি তিনি যদি আগামীকাল জগতের ধ্বংস কল্পনা করেন তাহলেও আজ তার গুরুত্ব অনুধাবন করেন। সমস্ত শিল্পী এক ধরনের মূল্যবোধ লালন করে কিন্তু কোন ধরনের গড়ন বা আকার নেবে তা ভবিষ্যৎবাণী করার মতো বিষয় নয়। নৈরাশ্যবাদী শিল্পী তথাকথিত আশাবাদী শিল্পীর চেয়ে সবসময়ই খাঁটি সত্যপ্রেমী হয়ে থাকেন। মূল্যবোধের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই তার হতাশা জেগে ওঠে। বিষয়ের কৌলিন্য ও হৃদয়ানুভূতি- এই দুটি বিষয়কে রাস্কিন শিল্পের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। কোন শিল্পে এই দুইয়ের অনুপস্থিতি থাকলে তিনি সেই শিল্পকর্মকে মর্যাদাহীন মনে করতেন। কিন্তু এর সঙ্গে নৈতিকতার যোগসুত্র খুবই ক্ষীণ। আর নৈতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনশীল। এই দুইটি বৈশিষ্ট্য বিমুর্ত এবং নৈতিক শিল্পকলার অন্তঃ প্রকৃতি ধারণ করে না। বিষয়বস্তু বা হৃদয়ানুভূতি গৎবাঁধা যেমন নয়, আবার আগে থেকে অনুমান করা যায় না। অবক্ষয় ও অনৈতিক শিল্পকর্মের অস্তিত্ব আছে এবং অবক্ষয় অকস্মাত্ নেমে আসে না আর তা শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়। আধুনিক শিল্পকলাকে এই দুই বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতির কারণে খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু গভীর ভাবে দেখলে তার মধ্যে নতুন উপলব্ধির খোঁজ মিলবে। প্রথাগত মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করার অর্থ অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়। যদি আমরা যৌনতার প্রসঙ্গ কে বাদ দেই যা সব অনৈতিকতার মূল হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে বলতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিল্পী একটি আদর্শ দ্বারা চালিত হয় যা অদ্ভুত ও অনাকাঙ্খিত গড়ন আকার ধারণ করে।শিল্পের নৈতিকতা বিষয়ের আলোচনায় শিল্পীর নৈতিকতা প্রসঙ্গ ব্রাত্য নয়। এটা ভিন্ন হলেও বিচ্ছিন্ন প্রসঙ্গ নয়। আমরা অনেক নীতিহীন মেধাবীর কথা জানি, জানি তাদের পাগলামির কথা। তারা পুঁজিবাদী ও বুর্জোয়া সমাজের সৃষ্টি। তারা কেউ কেউ তাদের অসাধারণ শৈল্পিক মেধার অপচয় ঘটিয়েছেন। শিল্প বিপ্লব মানুষের জীবনকে কদর্য ও পাশবিক করে তুলল যার কোনো প্রয়োজন ছিলনা। কিন্তু তাই ঘটলো।শৈল্পিক মেজাজের ধারণাটি তখন সবাই বুঝতে শুরু করল এবং এর বিপরীতে পুঁজিপতিরা শক্ত অবস্থান গ্রহণ করল। আধুনিক শিল্পীর বিশৃংখল হওয়ার অজস্র যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল, কারন সে পুঁজিপতিদের সংকীর্ণ, ভনিতাপূর্ণ ও নৃশংস মূল্যবোধের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন-উঠত যে তাদের আদর্শ সত্যিই কী দুর্বৃত্ত পুঁজিপতিদের আদর্শের সমার্থক ছিল? ব্যক্তিগতভাবে শিল্পীর সংকীর্ণ হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবার পাশাপাশি এমন প্রশ্ন উচ্চারিত হয়েছে যে নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্তে অবস্থানকারী কোন মানুষ কী শিল্প সৃষ্টি করতে পারে? একটি শৈল্পিক মনের অধিকারী মানুষ ভাবনা চিন্তায় উঁচু স্তরের হবেন এটাই প্রত্যাশিত, কিন্তু একজন ফ্রান্সিস বেকন একই সাথে মহান সাহিত্যিক ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত। তবে এই দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি নয় । ইতিহাস মন্থনে দেখা যায় যে শিল্পজগতের খলনায়কেরা অত্যাধিক খল চরিত্রের নন। একজন শিল্পী যাযাবর, বিত্তশালী অথবা গুন্ডা হতে পারেন, কিন্তু তার লেখনিতে কোন অপরাধী মনের প্রতিফলন দেখা যায় না। কেননা লেখক ও তার লেখনি, কিংবা শিল্পী ও তার সৃষ্টির মধ্যে কদাচিৎ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আর তাই ধারাবাহিক অনৈতিকতা শিল্পের ক্ষেত্রে কখনো ঘটে না। মানুষ হিসেবে একজন শিল্পীর অনেক দুর্বলতা থাকতে পারে। তার সৃষ্টির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না বা থাকাটা খুব জরুরী নয়। একজন শিল্পী মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারেন, কিন্তু শিল্প নির্মাণে নজর কাড়তে না পারলে তা কোনো কাজে আসে না, কারণ শিল্পীকে মূল্যায়ন করতে সর্বপ্রথম বিবেচনায় আসে তার সৃষ্টি।অনেক আগে থেকেই প্লেটোর শিল্পতত্ত্বের মূল বিতর্ক শিল্পের নান্দনিক ও নৈতিক বিষয় ঘিরেই আবর্তিত। প্লেটোর বন্ধু এবং শত্রু সকলে সমস্বরে যুক্তি প্রদান করে এসেছেন যে শিল্পীর কার্যকরী শিক্ষা নির্ভর করে তার স্বতন্ত্র নৈতিক বক্তব্যের উপর। তবে প্লেটোর শিল্প শিক্ষা আনুষ্ঠানিক নৈতিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত। তার রিপাবলিকে প্লেটো শিল্পের যে সমালোচনা তুলে ধরেছেন তার মূলভিত্তি নৈতিক আদর্শ অর্থাৎ শিল্পের ভালো-মন্দ নৈতিক বক্তব্য নির্ভর। তার মতে, একটি শিল্পকর্ম একটি নান্দনিক সৃষ্টি হিসেবে নৈতিকতা ধারণ করে থাকে যদি তা প্রকৃত শিল্পকর্ম হয়ে থাকে। প্লেটো কবিতার প্রতি যেমন বীতশ্রদ্ধ ছিলেন শিল্পকলাকে আরো একধাপ এগিয়ে অনৈতিক মনে করতেন। কিন্তু শিল্প শুধু বৈশিষ্ট্য নৈতিক হয়ে উঠবে এটাও অতিরঞ্জিত এক বক্তব্য। প্লেটোর শিল্পতত্ত্ব কারিগরি দক্ষতা বা শিল্পনৈপুণ্য ও নৈতিকতার মধ্যকার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আর অনুকরণকে শিল্পের মূল বিষয় হিসেবে তিনি বিবেচনা করতেন। শিল্পে বাস্তবতা বা বাস্তবের উপস্থিতিকে অবিকল তুলে ধরাই অনুকরণ। কবিতা সম্পর্কে তাঁর অভিযোগ হলো, কবিতা বাস্তুবতাকে আড়াল বা বিকৃত করে এবং আমাদের মনোযোগ ভিন্নমুখী করে তোলে। কিন্তু প্রকৃত শিল্প একটি নৈতিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে যার সহযোগী হয় সৌন্দর্য বা নান্দনিক বৈশিষ্ট্য। আর শিল্পনৈপুণ্যের উৎসও হয়ে ওঠে বাস্তবতা। একটি সুসংগঠিত শিল্পকর্ম বাস্তবতার নিয়ম মেনেই নির্মিত হয়। যে কোন জিনিসের উৎকর্ষ কোনো দুর্ঘটনা নয়। প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের সঠিক ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ আয়োজন ও বিন্যাসের মাধ্যমে তার নান্দনিক সৌন্দর্য নির্মাণ করা হয়। এর মাধ্যমে শিল্প নৈপুণ্যও অর্জিত হয়। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য কোন জিনিসের নৈতিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত লাগে। একটি বৃক্ষ বা পাথর বা মানুষ চিত্রায়নে একই রকমের উৎকর্ষ অর্জন সম্ভব কিন্তু এর মাঝে মানুষ ব্যতীত আর কেউ মানবিক প্রাণী নয়। অন্যদের চিত্রায়নে নান্দনিক বৈশিষ্ট্য আরোপ সম্ভব হলেও নৈতিক বৈশিষ্ট্য আরোপ অসম্ভব। যদিও ইংরেজি মোরাল শব্দের কোন প্রতিশব্দ গ্রীক ভাষায় নেই। নৈতিকতা অর্থে প্লেটো যা ব্যবহার করেছেন তার কাছাকাছি ইংরেজি শব্দ হল জাস্টিস। সক্রেটিসের শব্দটিকে বুঝেছেন সৌন্দর্য হিসেবে। গ্রিক আর্টি বা উৎকর্ষ হল আত্মার সৌন্দর্য। প্লেটো বা অপরাপর গ্রিকদের কাছে সৌন্দর্য, উৎকর্ষ ও কল্যাণকর আদর্শ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আর তাই তারা মনে করেন শুভ ও সৌন্দর্য আলাদা কিছু নয়। প্রায়োগিক কারণে তা ভিন্ন হয়ে ওঠে।যে শিল্পকর্ম শুধুমাত্র সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নির্মিত তার প্রতি সক্রেটিসের খুব ভালো ধারণা পোষণ করতেন না এবং যারা এই ধরনের চিত্রকলা পছন্দ করতো তাদের তিনি চক্ষু ও কর্ণপ্রেমী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, তারা রং-রেখা-গড়ন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ভালোবাসে কিন্তু তাদের চিন্তাশক্তি দুর্বল হওয়ায় তারা বস্তুর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য উপভোগ করতে অক্ষম। আমরা দেখে থাকি যে শিল্পনৈপুণ্য যে কোন বস্তুর সৌন্দর্যকে সঠিক মাত্রায় উপস্থাপন করতে সক্ষম, তার সৌন্দর্যের অর্থ ব্যাপক। এমনকি যে সমস্ত সৃষ্টির উপযোগিতা বেশি তার মধ্যেও সৌন্দর্য নির্মাণে সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। প্লেটো মনে করতেন কাব্যের সৌন্দর্যের সাথে নৈতিকতার বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। হোমারকে বড় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তার আদর্শ রাষ্ট্রে তাকে স্থান দিতে চাননি। গ্রিক সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের নিশ্চিত রূপে একটি নৈতিক অর্থ থাকে। কিন্তু ক্লাইভ বেলের মত সমান সমালোচক মনে করেন যে একটি শিল্পকর্ম নৈতিক হয়ে ওঠে আদর্শিক বিচারে নয়, বরং শিল্পকর্মের নৈতিকতা নিরূপিত হয় শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের গুণে। শিল্পের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য ব্যতীত আর কোনো নৈতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় আগ্রহী ছিলেন না। আবার তলস্তয় বিষয়বস্তুর নিরিখে ভালো ও মন্দ শিল্পের পার্থক্য নিরূপণ করতেন। তিনি শিল্পনৈপুণ্যকে বিবেচনায় নেননি।প্লেটোকে সবাই শিল্প নিন্দুক হিসেবে জানে, কিন্তু তীক্ষ্ণ অনুভূতি সম্পন্ন প্রকৃত শিল্পের কল্যাণকর বৈশিষ্ট্যকে তিনি মূল্যায়ন করতেন। তিনি শিল্পকে খারিজ করেননি তবে তার সময়ের শিল্পকলার প্রতি তার বিরাগ ছিল। একজন চিত্রশিল্পী শিল্পের সমস্ত উপাদানকে সমন্বিত ও সুসংহত করে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন এবং তিনি ভালো জানেন কিভাবে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে হয়। শিল্পকর্মের নিজস্ব সত্তা, নৈতিকতা ও সৌন্দর্য মিলিয়েই একটি প্রকৃত শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়।নৈতিকতাবাদ মনে করে যে কোন শিল্পকর্মের জন্য নৈতিক বৈশিষ্ট্য প্রাসঙ্গিক হলে চিত্রায়নে তার প্রকাশ থাকাটা জরুরী। শৈল্পিক উপস্থাপনায় কোনো খামতি সেই শিল্পকর্মের মূল্য খর্ব করে যা বেশ হাস্যকর। নৈতিকতাবাদ বিতর্কমূলক। এই প্রসঙ্গে বিভিন্নজন নানামুখী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। যেমন, নোয়েল ক্যারোল বিকল্প হিসেবে মডারেট মোরলিজম বা সীমিত নৈতিকতার একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন যা সাহিত্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী নৈতিক চরিত্র কখনো কখনো কোন সৃষ্টির শৈল্পিক মূল্য নিরূপণে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, তবে সব সময় নয়। আর এখানেই নৈতিকভাবে সংবেদনশীল দর্শক সাড়া দিতে ব্যর্থ হন। আর তাই অনৈতিক চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য কোনো কোনো শিল্পকর্মের শিল্পমূল্য খর্ব করে বলে ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে সীমিত নৈতিকতার এই তত্ত্ব প্রয়োগ যোগ্য। নৈতিকভাবে দুর্বল কোনো বৈশিষ্ট্য কোনো সৃষ্টিকর্মের মূল্য সবসময় খর্ব করতে পারে না। এক্ষেত্রে আদর্শবাদী দর্শকদের বিবেচনাকেই শেষ কথা বলে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু একথা তো সত্য যে সাহিত্যের একটি নেতিবাচক চরিত্র বা শিল্পের কোনো নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আমাদের চিন্তাকে উসকে দেয়। আবার এই একই উপলব্ধি আমরা কোনো শিল্পকর্ম না দেখে বা সাহিত্য না পড়েও পেতে পারি। তাহলে অনৈতিক শিক্ষার জন্য শিল্প ও সাহিত্যের কাঁধে দোষ চাপানো কেন? মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা নৈতিক শিক্ষা ভুল কোন কৃতকর্মের ফল হিসেবেও লাভ করে থাকি। শিল্প বা সাহিত্য যদি কোনো অনৈতিক বিষয় তুলে ধরে, দর্শক বা পাঠক হিসেবে আমরা কি তাৎক্ষণিক তার প্রতি সাড়া দেই? তাহলে নান্দনিক বিষয় শৈল্পিক বিষয় অপেক্ষা গৌণ একথা কোনোমতেই বলা চলে না।অনেকেই একমত হবেন যে অনেক শিল্পকর্মের কোনো নৈতিক বৈশিষ্ট্যই নেই। একটা গান, একটা জড়জীবনের চিত্র কিংবা বর্ণনাত্মক কোনো সৃষ্টির নৈতিকতা প্রশ্নবোধক। কিন্তু নৈতিকতা সম্পর্কিত বিতর্কের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি কোন সৃষ্টিকর্মে নৈতিকতা থাকে তবে তা হবে সমস্যা নিরপেক্ষ। অর্থাৎ শিল্পী বা লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন দর্শক সেই বক্তব্যটি ঠিক ঠিক বুঝবে। কিন্তু আদতে তা কখনোই সম্ভব হয়না। শিল্পীর বক্তব্য আর দর্শকের উপলব্ধির মাঝে বিস্তর প্রভেদ থাকে। নৈতিক শিক্ষা ও নৈতিক উপলব্ধি এক নয়। ভিনসেন্ট ভ্যান গগের ছবিটির কথা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাবো যে যখন ছবি আঁকা হয়েছিল তখন সবাই কৃষক জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি ও জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত ছিল। এর সমাজতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু সেখানে তার নান্দনিক মূল্য নিহিত নেই। এখানে শিল্পী কৃষক জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। একটি কষ্টকল্পিত বিমুর্ত শৈলির মধ্য দিয়ে শিল্পী কৃষকদের সংগ্রামী জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। এই ছবি ইতিহাসের বিকল্প নয়। শহুরে মানুষ এমনকি যারা কৃষক জীবনের এই ইতিহাস জানেন না তারা এই ছবি দেখে একটি কাল্পনিক উপলব্ধিতে পৌঁছাবেন। কিন্তু শিল্পী এখানে কোন নৈতিকতা প্রচার করেন নি। নৈতিকতা অপেক্ষা নান্দনিকতার উৎকর্ষ প্রমাণ করতে চেয়েছেন।এই শিল্পকর্ম যে শিক্ষা দেয় তা ওই কৃষকদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কিত আমাদের পূর্বানুমানের ওপর নির্ভ করে না। যা আমরা বুঝতে পারি যা আমরা বুঝতে পারি তা হল এই কৃষকদের কঠিন জীবন, মৃত্তিকা লগ্ন সরলতা ও সততা। এখানে কৃষক জীবনের রূঢ় বাস্তবতা তুলে ধরাতে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ বেড়েছে কি? এই ছবি দেখার পর আমাদের দায়িত্ববোধ ও প্রতিশ্রুতি কতটুকু বৃদ্ধি পাবে তা এক জটিল প্রশ্ন। শিল্পকর্ম আমাদের মাঝে সেই উপলব্ধি বাড়াতে পারে যদি আমরা সংবেদনশীল হই।নৈতিকতাবাদ মানুষকে জগত সম্পর্কে একটি নৈতিক উপলব্ধি দিতে চায় আর তা নৈতিক দর্শনের বিষয়। শিল্পের মাধ্যমে নৈতিকতা শিক্ষা অপরিহার্য নয়। ম্যাথিউ কিয়েরান মনে করেন যে নৈতিক বা রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত শিল্পকর্মের শৈল্পিক মূল্য কম। আর নান্দনিকতাবাদ মনে করে শৈল্পিক উৎকর্ষ সম্পন্ন শিল্পনৈতিক বক্তব্য নিরপেক্ষ হবে। শিল্প যদি নৈতিক শিক্ষা দানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় তাহলে নান্দনিকতার কি হবে? শিল্প নৈতিক দর্শনের ভূমিকা নিতে পারে না। শিল্পের মাধ্যমে গল্প বলা বা জীবনের নানা বিধ ঘটনাপ্রবাহ অথবা বক্তব্য তুলে ধরার প্রধান কারণ হল, শিল্প যদি সবসময় এমন বিষয় তুলে ধরে যার সাথে আমাদের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ ও অনুভূতি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে শিল্পকর্ম গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তাই নৈতিকতা প্রসঙ্গ সহ অন্যান্য বিষয়সমূহ শিল্পকর্ম বর্জন করতে পারেনা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে শিল্পে বিষয়বস্তু অনুধাবন নিয়ে যত মাতামাতি তার ক্ষুদ্রাংশ যদি শিল্প নৈপুণ্য নিয়ে হতো তাহলে শিল্পকর্ম দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেত। তুলির টান, রঙের ব্যবহার, বাদী বিবাদী রঙের মিশ্রণ, পরিপ্রেক্ষিত উপস্থাপনের কৌশল অনুধাবন করলে শিল্পকর্মের নান্দনিক মূল্য অধিক গুরুত্ব পেত। আর একথা সত্য যে শিল্প নৈপুণ্যের গুণেই শিল্পীর মান বিচার করা হয় ।শিল্পের কাজ আমাদের চিন্তাশক্তিকে কর্ষণ করা; ছবিতে যেটুকু প্রতিফলিত তার চেয়েও গভীর অনুসন্ধানে উৎসাহী করে তুলবে। শিল্প একটি প্রধান সংস্কৃতিচর্চা যার মাধ্যমে মানুষের রুচি ও সংবেদনশীলতা গড়ে ওঠে। নান্দনিক আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সংবেদনশীলতা মানুষকে ভেতর থেকে মানবিক ও নৈতিক করে গড়ে তোলে, শিল্পের বক্তব্যের মাঝে আলাদা করে খুঁজতে হয় না।