prabandho-telegu-mohila-lekhika

প্রথম তেলুগু মহিলা লেখিকা কিম্বা প্রথম নারী ইতিহাসবিদ বণ্ডারু আক্কামাম্বা
বিতস্তা ঘোষাল


অন্ধ্রপদেশের পেনুগানচিপ্রোলু গ্রামে এক দেওয়ানের ঘরে ১৮৭৪ সালে জন্ম নিল এক কন্যা সন্তান। তাঁর জন্মের পর উলুধ্বনী বা শাঁখ বাজেনি। সেই সময় মেয়ে হয়ে জন্মালে তার ভাগ্যে কী জুটতো তার সাক্ষী ইতিহাস। কুসংস্কার, অশিক্ষা ও অল্প বয়সে বিয়ে, এবং বিধবা হলে তাকে যে যন্ত্রণাময় জীবনের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করতে হত পথ, তার সাক্ষীও তো ইতিহাস।

শিশুটির ভাগ্যও এমনই এক ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে গেল। এদেশের নব্বই শতাংশ মানুষের মতো তার বাবাও বিশ্বাস করতেন, মেয়েদের স্থান অন্দরমহলে। সেই সময় গুটিকয় মানুষ নারী শিক্ষার উদ্যোগ নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে মেয়েদের পড়াবার জন্য আবেদন-নিবেদন করলেও বহু শিক্ষিত ও সমাজসেবীবৃন্দ এই বিষয়ে গোঁড়া মতই পোষণ করতেন। তাঁদের মতে, মেয়েরা শিক্ষিত হলে এবং স্বাধীনতা পেলে এতদিন ধরে টিকে থাকা ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্য গোল্লায় যাবে, মেয়েরা এর অপব্যবহার করবে, সংসার, পরিবার এর ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে, গৃহস্থালীর দায়িত্ব না নিয়ে তারা ঘুরে বেরাবে, এর ফলে পুরুষ মানুষের বা বাড়ির কর্তাদের অসম্মান হবে। তাছাড়া শিক্ষিত মেয়েরা কখনোই ভালো স্ত্রী বা ভালো মা হতে পারে না। এসব উপেক্ষা করে অবশ্য হাতে গোণা ক’জন নারীর অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল শ্বশুরবাড়ি এসে। তার কারণ স্বামীর দেওয়া চিঠি যাতে তারা নিজেরা পড়তে পারেন, ও দু-এক কথা লিখে উত্তর দিতে পারেন।

শিশুটির বাবা-মা দুজনেই এই নিয়ানব্বই শতাংশ মানুষের মতোই ভাবনা-চিন্তা করতেন। ফলত শিশুটির বিদ্যালয়ে যাওয়া হল না। ছ বছর বয়সে পিতৃ বিয়োগ তাতে আরও ঘি ঢালল। বিধবা হবার পর তিনি দুই সন্তান নিয়ে তাঁর স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে শঙ্কর রাওয়ের বাড়িতে এসে উঠলেন। দশ বছর হতে না হতেই আর পাঁচটা শিশুর মতোই নিজের বিপত্নীক ভাই, দ্বিগুণেরও বেশি বয়সী মাধব রাওয়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায় সারলেন মা। অবশ্য তিনিও একান্ত নিরুপায়ই ছিলেন। বাচ্চা মেয়েটির নাম বন্ডারু আক্কামাম্বা।

বিয়ের পর সতেরো বছর বয়সে বন্ডারু স্বামী গৃহে পাকাপাকিভাবে থাকতে এল। ছোটো ভাই কে ভি লক্ষণ রাও এল দিদির সঙ্গে থাকতে। নিয়ম মতো ক’দিন পর থেকে তাকে স্কুলে পাঠানো শুরু হল। অন্য দিকে বন্ডারুর ভাগ্যে জুটল হেঁশেলের ভার। তিনি মেনে নিলেন স্বামীর ইচ্ছে। সেই অনুযায়ী সতী সাবিত্রী স্ত্রীর মতো অন্দরমহলে রইলেন, পর্দা প্রথা অনুযায়ী বাইরের কারোর কাছে মুখ দেখালেন না ঘোমটা সরিয়ে।

কিন্তু মেয়ের মন পড়ে স্কুলে, বইয়ের পাতায়।সে চায় পড়াশোনা করতে। অথচ মা বা স্বামীর কারোরই সম্মতি নেই। বিদ্যালয়ে পাঠানো তো দূরের কথা, অক্ষর পরিচয় করানোর মত মানসিকতাও নেই তাদের। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে এ দেশে সামগ্রিক নারী শিক্ষার হার তখন এক শতাংশও নয়। কিছু মানুষ একক প্রচেষ্টায় মেয়েদের জন্য স্কুল ও শিক্ষা চালু করার চেষ্টা করলেও দেশের বৃহত্তর অংশই এর থেকে দূরে। কাজেই বন্ডারুর স্কুল যাওয়া হল না।

কিন্তু কিশোরী আক্কামাম্বার দিন রাত মন পড়ে বইয়ের পাতায়, গন্ধে, শব্দে, অক্ষরে। সে চায় সেগুলোকে আত্মস্থ করতে। মনের মধ্যে ঘুরে বেরানো অজস্র শব্দকে, চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে লেখনীর রূপ দিতে।তার কলমে ধরে রাখতে সময়কে।

একা একাই সে গোপনে তাই অনেক দিন ধরে চেষ্টা করল বর্ণের সঙ্গে পরিচিত হতে, লিখতে শিখতে। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছিল না। বাধ্য হয়ে একদিন সাহায্য চাইল ভাইয়ের। দিদির আগ্রহ দেখে ভাই রাজি হয়ে গেল তাকে পড়াশোনা শেখাতে। ভাই লক্ষ্মণের সাহায্যে আর নিজের একাগ্র অধ্যাবসায় ও মেধায় অল্পদিনের মধ্যেই সে শিখে নিল মাতৃ ভাষা তেলুগুতে লেখা ও পড়া। তবে এতেই আবদ্ধ না থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে ভাইয়ের হাত ধরেই হিন্দি, ইংরেজি ও মরাঠি ভাষার প্রথম পাঠ ও গণিতের প্রাথমিক পর্যায়টুকুও শিখলেন।

কয়েক বছর পর কিশোর লক্ষ্মণ উচ্চ শিক্ষার জন্য নাগপুর চলে গেল। কিন্তু আক্কামাম্বা থেমে থাকতে রাজি নয়। হেঁশেল ও সংসারের দায় দায়িত্বর পাশাপাশি সে তখন শিক্ষার আলোকে আলোকিত হবার জন্য উন্মুখ। তাই ভাই চলে গেলেও থামল না তার অধ্যাবসায়। সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় শিখে ফেলল গুজরাতি, কিছুটা বাংলা ও আদি ভাষা সংস্কৃত। ইংরেজি ভাষা তখনও আয়ত্ব করতে না পারায় মরাঠী অনুবাদে পড়তে শুরু করল ইংরেজি সাহিত্য। একে একে পড়ে ফেললেন মিল, স্পেন্সর, জন লুব্বকের সেই সময় পর্যন্ত অনূদিত যাবতীয় লেখা। মারাঠি বিদ্বানদের উদ্দেশ্যে এই অনুবাদের কাজ করার জন্য ভূয়সী প্রশংসা জানিয়ে আর্জি রাখলেন তেলুগু শিক্ষিত মানুষ যদি এমন অনুবাদ করতেন তবে এ রাজ্যের তেলুগুভাষী ভাই-বোনেরাও এই ইংরেজি লেখকদের লেখা পড়তে পারতেন।

পড়তে পড়তে একে একে তাঁর সামনে উন্মোচিত হচ্ছিল ভারতের প্রাচীন দর্শন, যেখানে নারীদের শিক্ষা স্বীকৃত। ক্রমশ উপলব্ধি করলেন কী ভীষণ ধর্মীয় ও সামাজিক অন্ধবিশ্বাস ভারতীয় সভ্যতাকে আলোর যুগ থেকে নিয়ে চলেছে এক অন্ধকার দিকে। নারী পুরুষের মধ্যেকার ভয়াবহ লিঙ্গ বৈষম্য তাঁর সংবেদনশীল মনকে উদ্বেলিত করে তুলল। এই বৈষম্য, কুসংস্কার, মেয়েদের এভাবে পর্দানসীন করে রাখার কারণ খুঁজতে গিয়ে কোথাও সদুত্তর পেল না। অথচ প্রশ্নগুলো তাঁকে ভাবাচ্ছিল। এর থেকে মুক্তি পাবার উপায় স্বরূপ এক সময় আক্কামাম্বা কলম তুলে নিলেন হাতে। একের পর এক নিবন্ধ, গল্প, কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ ও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সমাজের তথাকথিত মাথার দিকে। প্রশ্ন তুলল ধর্ম ও এতদিন ধরে জোর করে চাপিয়ে দাওয়া রীতিনীতির বিরুদ্ধে।

অবশ্য নির্বিবাদে তাঁর পরিবার এসব মেনে নেয়নি। তার স্বামী প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছিলেন পড়াশোনায়। এর পর যখন বন্ডারু লেখালিখি শুরু করলেন, এবং তা পত্রিকায় ও অন্যান্য জায়গায় প্রকাশ পেতে শুরু করলো, বিরোধিতা আরও বাড়ল। কিন্তু বন্ডারু ভেঙে পড়ার মতো নারী নয়। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে একাই আয়ত্ব করেছেন লেখা-পড়া। ফলে তাঁর কলম আরও দ্রুত গতিতে আছড়ে পড়ল সাদা পাতায়। সেই সময়ের দুটো উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকা হিন্দু সুন্দরী ও সরস্বতীতে নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হল ধন ত্রয়োদশী, বীরাকুটুম্বম, খনা সহ একাধিক নারীকেন্দ্রিক কাহিনি। এইসব কাহিনির মধ্যে দিয়ে তিনি বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, নারীকে পর্দানসীন রাখা, কুসংস্কার, অশিক্ষা, জাতিভেদ, সামাজিক বৈষম্য, ব্রাক্ষণ্যবাদের গোঁড়ামি প্রভৃতি বিষয়গুলোর জন্য সমাজের শোচনীয় অবস্থার কথা তুলে ধরে এদের কুফল দেখিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিলেন নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সার্বিক উন্নতি কতটা প্রয়োজন সমাজের, দেশের ও ভবিষ্যতের জন্য। তিনি লিখলেন-“ women’s education only helps to build one’s character, and not the other way round. The country will only benefit from the freedom for women to receive education, and it will cause no damage. Women’s education is of utmost importance and necessity.”

গল্প ছাড়াও শতকম নামে একশোটি কবিতা লিখেছিলেন যারও বিষয় নারী ও তার দুরাবস্থা। এছাড়া লিখেছেন শিক্ষিত নারীদের প্রতি আবেদন, স্ত্রী বিদ্যা প্রভাবম সহ একাধিক নিবন্ধ, যেগুলোর মধ্যে দিয়ে বিষয় সম্পর্কে তাঁর নির্ভীক ভাবনা উপস্থিত হয়েছিল।

একের পর এক লেখা যখন তাকে পরিচিত করে তুলছে তেলুগু পাঠকদের সামনে তখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। দুই শিশু সন্তান মারা গেলে সন্তান শোকে ভেঙে পড়লেও সাহিত্যকে আশ্রয় করে ঘুরে দাঁড়ালেন আক্কামাম্বা। এই সময় থেকে জনসেবার কাজটিও শুরু করলেন। এতদিন অল্পবিস্তর আড়ালে থেকে করলেও এবার সন্তান শোকে কাতর জননী পুরোপুরি তাতে নিমজ্জিত হল। নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন পাঁচটি অনাথ বাচ্চা। তাদের শিক্ষা ও ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব নেবার পাশাপাশি বাড়িতেই গড়ে তুললেন অসহায় অনাথ শিশু ও নিঃসহায় নারীদের আশ্রম।

বলা বাহুল্য তার এই কাজ স্বামী মাধব রাও ও তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেনে নিতে পারেন নি। ক্রমাগত বিরোধিতা ও আটকাবার সব রকম চেষ্টা করলেও আক্কামাম্বাকে থামানো যায়নি। বরং এই বাধাগুলো তার মনোবল আরও বাড়িয়ে দিল। অদম্য উৎসাহ ও জেদ নিয়ে জড়িয়ে পড়লেন নারী সমাজের সামগ্রিক উন্নতিকল্পে।

সময়টা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই সময়টা খুবই গুরূত্বপূর্ণ। একদিকে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধছে, যার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠছে জাতীয় কংগ্রেস, অন্যদিকে সমাজের, পুরুষের ও পরিবারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাড়া ফেলছে নারীরা। সংখ্যায় কম হলেও, যতই বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, তাদের যে দমিয়ে রাখা যাবে না এই সত্যটা উন্মোচিত হচ্ছে। এইসময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের প্রথম দেশীয় মহিলা সংগঠন সত্যশোধক সমাজ, যার মহিলা বিভাগের প্রধানা ছিলেন সাবিত্রীবাঈ ফুলে, যিনি ইতিমধ্যে মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় তৈরি করেছেন। বাংলা পাচ্ছে প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে। অন্য দিকে ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রে ভারতসম্রাজ্ঞী ভিক্টরিয়ার উদ্দেশ্যে ভারতীয় নারীদের সমস্যা জানিয়ে খোলাখুলি চিঠি লিখছেন রুখমাবাঈ। সেখানে তিনি নারীকে নিজের শর্তে বাঁচবার অধিকার দাবী জানাচ্ছেন। এবং এরই ফলে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার “বিবাহের বয়স সংক্রান্ত সম্মতি আইন” পাশ করে এদেশের মেয়েদের বিয়ের সার্বিক আইন সম্মত নূন্যতম বয়স ১০ থেকে বাড়িয়ে ১২ করছে।

আবার এই সময়ই ভারত পায় প্রথম অ্যানেস্থেটিক ডাক্তার রুপাবাঈকে। ১৮৮৯ তে তিনি হাকিম ডিগ্রি লাভ করে নিজামের সরকারি চিকিৎসা বিভাগে যোগ দেন পূর্ণ সময়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রূপে।

এঁরা ছাড়াও এই দশকেই আরেক মহিলা, যিনি বন্ডারুকে প্রভাবিত করেছিলেন, যাঁকে নিয়ে তিনি পরবর্তীকালে লিখেওছিলেন তিনি হলেন সরস্বতী পণ্ডিতা রমাবাঈ। বেদপাঠ, বেদ ও শাস্ত্র ব্যাখ্যার পাশাপাশি সমাজ সংস্কারক রমা ১৮৮৯ সালের মার্চে সহায় সম্বলহীন বাল্য বিধবাদের আশ্রয় ও শিক্ষাদানের জন্য গড়ে তুলছিলেন সারদা সদন ও মুক্তিমিশন। বম্বে ও পুনাতে গড়ে ওঠা এই দুটি প্রতিষ্ঠানেই জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাল্যবিধবা, গরিব, অনাথ শিশুকন্যাদের আশ্রয়, প্রথাগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দান ও উপার্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার আলো দেখান রমাবাঈ।

কাজেই বোঝা যায় এই সময়েই ভারতের অন্য নারীদের কার্যকলাপ বন্ডারুকে নিজের পথে অবিচল থাকতে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল। তিনি নারী সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য এবার আরও বেশি সক্রিয় হলেন। ১৯০২ সালে সহমর্মী আরেক মহিলা সমাজকর্মী অরুঙ্গতি সুন্দরী রত্নমাম্বার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মছলিপত্তনম শহরে গড়ে তুললেন বৃন্দাবন স্ত্রীলা সমাজম। এটিই উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রথম নারী সংগঠন। এরপর তিনি এমন অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেন অন্ধ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবার তিনি এ বিষয়ে সাহায্যও করলেন অন্যান্য সমাজসেবী সংস্কারকদের।

কিন্তু এসব কাজের মধ্যে, হাজার ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর কলম থেমে থাকেনি। এই সময় কালেই তিনি লিখছিলেন ভারতের ইতিহাস নিয়ে লেখাগুলো। ১৯০১ সালে প্রকাশিত হল ইতিহাসগ্রন্থ ‘অবলা সচ্চরিত্র রত্নমালা’। এটিই ভারতের প্রথম কোনও মহিলা দ্বারা রচিত ইতিহাসগ্রন্থ। এই লেখায় ভাই লক্ষ্ণণ রাও তাঁকে সর্বত্রভাবে সাহায্য করেছিলেন। তিনি তখন তেলুগু সাহিত্য জগতের প্রতিষ্ঠিত নাম। ঠিক হয় তিনটি পর্বে এই গ্রন্থ প্রকাশ পাবে। পরিকল্পনানুযায়ী ১০০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে তখন পর্যন্ত প্রাপ্ত মহিয়সী নারীরদের জীবনী লেখার কথা ভাবা হয়। প্রথম পর্বে রাখা হয় ৩৪ জন মহিয়সী নারী কথা। পদ্মাবতি, সংযুক্তার পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, বঙ্গদেশ, গুজরাত, কাশ্মীর, রাজস্থান, পঞ্জাব ও অন্ধ্র থেকে নির্বাচিত হাতি বিদ্যালঙ্কার, তারাবাঈ, পণ্ডিতা রমাবাঈ, আনন্দীবাঈ, কাশীবাঈ কানিতকার, কৃপাবাঈ সত্তিয়ান, সিকান্দার বেগম, মোল্লা ও তারিগোণ্ডাদের মতো মহিয়সী নারীর জীবনীও স্থান পেল তাঁর এই গ্রন্থে।

গ্রন্থের ভূমিকায় আক্কামাম্বা পরিষ্কারভাবে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে বললেন-

১- অনেকেই মনে করেন মহিলারা দূর্বল, অল্প মেধার ও তাঁদের মধ্যে সাধারণতম জ্ঞানও নেই। আমার প্রথম উদ্দেশ্যই হল এই অভিযোগ যে সম্পূর্ণ ভুল, তা প্রমাণ করা। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার এই দাবীকে নস্যাৎ করে দেখাতে চাই যে যে নারীরা প্রকৃতিগতভাবেই অপার সাহস, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, উচ্চ শিক্ষার অধিকারী।তারা তাদের দেশকে অসম্ভব ভালোবাসে ও যথেষ্ট রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন। তাদের নিজস্ব বোধ থেকেই এই শিক্ষা, শক্তির জন্ম হয়। সেটাকে অনুসরণ করা ও স্বীকার করা দরকার, নেতিবাচক দিকগুলো না দেখে।

২-কিছু পুরুষ মনে করেন মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাধীনতা দিলে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুল পথে যাবেন, স্বামী, সন্তান,সংসার ও পরিবার এর ফলে সমাজে অপমানিত হবেন। আমি উদাহরণ দিয়ে দেখাতে চাই তাদের এই অভিযোগ একেবারেই যুক্তিহীণ ও মিথ্যে। মেয়েদের শিক্ষা আসলে সমাজের কুসংস্কার ও সন্তান এবং পরিবারকে কূপথে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে। মেয়েদের স্বাবলম্বীতা ও শিক্ষা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। তাই নারী শিক্ষা আবশ্যিক।

৩- এই গ্রন্থ লেখার আরেকটা বড়ো কারণ হল অন্ধ্রে বসবাসকারী আমার হাজার হাজার বোনেদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তাদের শিক্ষায় উৎসাহিত করে তোলা। প্রত্যেকেই আমরা জানি পুঁথিগত বিদ্যা বা বানানো গল্পের তুলনার আমাদের জীবন থেকে উঠে আসা গল্প ও শিক্ষায় মানুষ বেশি আকর্ষণ বোধ করেন। আমি তাই দেখাতে চাই পতিধর্ম ও দেশকে ভালোবাসার পাশাপাশি অন্ধ্র প্রদেশের মেয়েদের শিক্ষিত হয়ে ওঠা ও মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটাও সমান জরুরী। এই গ্রন্থ আশা করি তাদের পথ দেখাবে।

আক্কামাম্বা লেখেন- “so I present these stories of real women to my sisters in Andhara”

এই গ্রন্থ রচনার জন্য ভাই লক্ষ্ণণ রাও এর পাশাপাশি তার স্বামীর ভূমিকাও যথেষ্ট ছিল। প্রথম খন্ডের কাজ করার সময় তাঁর নজরে এল এমন কয়েকজন নারীর কথা, তাদের সময়কাল বুদ্ধের সময়কার। অর্থাৎ খ্রীষ্টের জন্মের আগে। তখন তিনি উপলব্ধি করেন ইতিহাস মানে যতটা সম্ভব পিছনের দিকে তাকিয়ে সময়ের কালসীমা অনুযায়ী যেসব ঘটনা গুরূত্বপূর্ণ তাকে সংরক্ষণ করা বা ধরে রাখা। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই দ্বিতীয় খণ্ডে বেদ থেকে পাওয়া গার্গী মৈত্রেয়ী, পুরাণে উল্লিখিত পার্বতী, সীতা, তারা, দময়ন্তী, দ্রৌপদী সহ অন্য নারী, এবং বৌদ্ধনারীদের (নাম লিখিত নয় খন্ডে) রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তৃ্তীয় খণ্ডে এদেশের বাইরে বিশেষ করে ইংল্যণ্ডের উল্লেখযোগ্য নারীদের জীবনী রাখার কথা ভাবা হয়।

এই কাজ যাতে নিঁখুত ও ত্রুটিপূর্ণ হয় তার জন্য তিনি মাসে পর মাস এমনকি বছর ভর পরিশ্রম করেছেন, যেখান থেকে যা তথ্য পাওয়া গেছে তা সংগ্রহ করেছেন, যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন মূল উৎস থেকে নিতে। তাঁর গ্রন্থের প্রকাশক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন, প্রথম খণ্ড থেকে দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করার জন্য চার বছর সময় লাগছিল। তার কারণ আক্কামাম্বার যথার্থ ও যথাযথ তথ্য নির্ভুলভাবে অনুসন্ধান করার খিদে।

প্রথমদিকে তার স্বামী শিক্ষা নিয়ে বিরোধিতা করলেও পরবর্তী কালে এই গ্রন্থের জন্য আক্কামাম্বা যখন পাঠ্য পুস্তকের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে নিতে চাইছে যাদের নিয়ে লিখছেন তাদের সত্যিকারের অবস্থান, ছুটে যাচ্ছে তাদের বাড়ি, কথা বলছেন সেইসব মহিয়সীদের পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে, যাতে কোনও ভুল তথ্য পরিবেশিত না হয়, বাদ না যায় কোনও নাম, তার লেখায়, তখন এই যাত্রা পথের সঙ্গী তার স্বামীই। উদাহরণ স্বরূপ কৃষ্ণা গোদাবরী অববাহিকায় তিনি পুরো ১৯০৩ সাল জুড়ে তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করছেন অন্ধ্রের বিদুষীদের কথা জানার জন্য। সঙ্গী স্বামী মাধব। আবার এখান থেকে যাচ্ছেন বেনারসে। সেখানে গিয়ে সংস্কৃত পণ্ডিতদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের থেকে বেদের শিক্ষা নিচ্ছেন, শুধুমাত্র বেদে যেসব নারীর উল্লেখ আছে তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য। তিনি চেয়েছিলেন ঋতু সংহিতা থেকে কোনও উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে। তার জন্য হায়দ্রাবাদ থেকে মূল গ্রন্থের প্রতিলিপি আনিয়েছিলেন। ছুটে গেছিলেন মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন অংশে। যেখানেই গেছেন সেখানকার বিদ্বানদের সহযোগিতা চেয়েছেন এই কাজ সফল করার জন্য। আর তার পাশে ছিলেন তার স্বামী। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে মালাথী নিড্ডাভলু আক্কামাম্বার জীবনী লিখতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কয়েকটা দিক তুলে ধরেছেন। তিনি লিখছেন, আক্কামাম্বা নারীর অধিকার, শিক্ষা, স্বাধীনতা নিয়ে লেখা লিখলেও এবং পুরুষতন্ত্রকে বিভিন্ন বিষয়ে তার গল্পের ও কবিতার মাধ্যমে আক্রমণ করলেও ব্যক্তি আক্কামাম্বা সরাসরি স্বামীর বিরোধিতায় যান নি, এমনকি স্বামী পছন্দ করেন না বলে খুব দরকার ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে কথাও বলতেন না। যদি বা প্রয়োজনে বলতেন, তা খুবই অল্প সময়ের জন্য। কারণ আক্কামাম্বা তীব্র ভাবে সতী ধর্ম পালনের বিষয়টি বিশ্বাস করতেন। একটি ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন এই প্রসঙ্গে।

একবার বণ্ডারু, মাধব ও তাদের সৎকন্যা মীনাকাম্মা একজন প্রখ্যাত লেখকের সঙ্গে দেখা করে আড্ডা দিচ্ছেন। খাওয়া শেষ হলে সেই লেখক পান মুড়ে বণ্ডারুর দিকে এগিয়ে দেন। বণ্ডারু সেটা তাঁর হাত থেকে নিলেন বটে, কিন্তু খেলেন না। মুঠোয় ধরে রাখলেন।

সেই লেখক জানতে চাইলেন কেন তিনি মুখে দিলেন না পান। আক্কামাম্বা কোনও উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। লেখক তার এই অদ্ভুত ব্যবহারে অবাক হলে মায়ের সঙ্গেই বেরিয়ে যাওয়া তার কন্যা ফিরে এসে দরজা একটু ফাঁক করে বলেছিলেন- আমার বাবা এখনও পান খান নি, তিনি না খাওয়া অবধি মা মুখে দেবেন না।

এই একটি ছোট্ট ঘটনা থেকে বোঝা যায় বণ্ডারু কিভাবে তার স্বামীর সঙ্গে ব্যালেন্স করে চলতেন। একদিকে তিনি তাঁকে সবরকম ভাবে সম্মান দিয়ে তার প্রতি যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন, অন্য দিকে কোনও বিতর্কে বিবাদে না গিয়ে নিজের লেখাপড়া, কাজ, সমাজসেবা করতেন। সেখানে স্বামীকে প্রথমে পাশে না পেলেও নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন তিনি কি চান। যার ফলে তিনি যখন লেখার প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রদেশে যাচ্ছেন তখন সঙ্গী তার স্বামী। আবার যখন বাড়িতে অনাথ আশ্রম শুরু করলেন, তখন তার স্বামী মত না দিলেও তিনি কিন্তু তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও সরে আসেন নি। এমনকি দেখা যাচ্ছে সেই শুরুর দিনগুলোতে আর্থিক দায়ভার বাড়ির কর্তাটিই মেটাচ্ছেন।

অর্থাৎ আমাদের ভারতীয় সনাতনী সভ্যতায় নারীর যে দৃশ্যকল্প রচিত হয়েছে, তা পালন করেও নিজের কাজে অবিচল থেকেছেন বণ্ডারু।

জীবনীকার আরও উল্লেখ করেছেন যে আক্কামাম্বা ছোটো থেকেই একদিকে শান্ত, নিজের যন্ত্রণার কথা প্রকাশে অনিচ্ছুক, অন্য দিকে অন্যের দুঃখ কষ্ট তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করত। তার নিজের জন্য বরাদ্দ অর্থ নিজের জন্য খরচ না করে গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে এক মুহূর্তও দ্বিধা করতেন না। শোনা যায় তার পাঁচ বছর বয়সে একদিন খেলার সময় অন্য বন্ধুদের ও তাকেও বিছে কামড়ালে বন্ধুরা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাড়ির লোকেরা এসে তাদেরকে তাড়াতাড়ি নিয়ে গিয়ে ওষুধ দেয়, কিন্তু বণ্ডারু শান্ত ভাবে অপেক্ষা করে, কোনও যন্ত্রণা তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। অবশেষে পরিবারের এক সদস্য অন্যদের মুখে শুনে তাকে খুঁজে বের করে বিছেটাকে মেরে সেই জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে দেন।

এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে জীবনীকার মালাথী বলতে চেয়েছেন বণ্ডারু একদিকে যেমন সীতা সাবিত্রীর মতো ধীর স্থির ও প্রাচীন মূল্যবোধ সম্পন্ন নারী হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন, অন্য দিকে নিজের মেধা শিক্ষা ও ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলেম মেয়েরা কারোর থেকে কোনও অংশে কম নয়।

‘সচ্চরিত্র রত্নমালা’ লেখার জন্য জন্য তিনি সংগ্রহ করেছেন পুরোনো বাখারি( পুঁথি), প্রয়োজনীয় নিবন্ধ, প্রবন্ধ, ঘটনা, ইতিহাসের বই, এবং প্রচুর সংখ্যক হিন্দি ও মরাঠী পত্রিকা। তিনি এই বিষয়ে লিখছেন- “ When I said history, I had in mind the period from 1000 AD to the present. As the work progressed, I found stories of some Buddhist women existing in 300 to 400 years B C.

Secondly, although I was not knowledgeable in English, I gathered several narratives from Marathi translations of English works…. Because of the texts in Marathi language, I was able to write this book without learning the English language and I commend them for their service.”

এর পাশাপাশি যেখানেই গেছেন তিনি সেখানকার অভিজাত শ্রেণীর শিক্ষিত মহিলাদের সঙ্গে দেখা করে মহিলাদের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভূমিকাতেও সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলছেন, এই এলিট মহিলাদের উচিত বছরে একবার নিজেদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করা। এইজন্য তিনি ভূমিকার শেষে নারী সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবীদের একটা তালিকা রেখেছেন, যাতে এরা পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। কারণ তার মতে, নিজেদের মধ্যে মৈত্রীবোধ থাকা খুব জরুরী।

প্রগতিশীল ও অন্ধ্রের জনপ্রিয় লেখক তার ভাইয়ের সূত্রে তেলুগু নবজাগরণের জনক বিরসালিঙ্গম পান্তুলুরুর ‘চিন্তামণি’ পত্রিকায় প্রথম খণ্ডের কিছু অংশ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে। এগুলোর পাশাপাশি সেলাই নিয়ে তার দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

কিন্তু তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যধিক ভ্রমণ, পরিশ্রম,ও লেখালিখি, পাশাপাশি সমাজসেবার চাপে তার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। বোম্বেতে এই সময় প্লেগ রোগের উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। দূর্বল শরীরেও তিনি সেখানে থেকে কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুর যান দ্বিতীয় খণ্ডের তথ্যের প্রয়োজনে। কাজ সমাপ্ত হলেও প্রকাশের আগেই সেখানেই তিনি মারা যান। সাল ১৯০৫। জানুয়ারির ১৮ তারিখ। তখন তাঁর বয়স মাত্র তিরিশ।

আক্কামাম্বার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় অসম্পূর্ণ কাজ নিয়ে প্রকাশিত খণ্ডটি। অবশ্য ততদিনে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী ঐতিহাসিক হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্টিত করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর লেখায় যে শুধু নারীর কথাই উঠে এসেছে, তা নয়, ধর্মের গোঁড়ামি, পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতিকেও আক্রমণ করেছেন। লিখেছেন আর্যরা এদেশের আদি মানুষদের সরিয়ে দিয়ে নিজেকে স্থাপনের জন্য ভারতের প্রাচীন লোকায়ত সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানকে কিভাবে নির্বিচারে ধ্বংস করে প্রভুত্ব কায়েম করেছে।

আবার নারীদের নিয়ে ইতিহাস লেখার সময় সুতীক্ষ্ণ বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। বারবার তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন নারী নিজেই পারে নিজেকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠতে। এর জন্য অন্যর সাহায্যর থেকেও বেশি দরকার নিজের বোধ বিবেক সাহস ও শক্তিকে জাগ্রত করার।

বর্তমানে আক্কামাম্বাকে আর শুধুমাত্র মহিলা ইতিহাসবিদ হিসাবে পরিগণিত না করে তেলুগু সাহিত্যের প্রথম আধুনিক লেখিকা হিসাবেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত মনে করা হত গুরজাদা আপ্পারাও-ই প্রথম তেলুগু গল্প লিখেছিলেন ১৯১০ সালে। কিন্তু এখন এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে তাঁর থেকে আট বছর আগে ১৯০২ সালে বণ্ডারু লিখে ফেলেছিলেন তাঁর ধনত্রয়োদশী গল্পটি।

সে যাই হোক না কেন প্রথম তেলুগু মহিলা লেখিকা কিম্বা প্রথম নারী ইতিহাসবিদ, এ কথা অনস্বীকার্য পরাধীন ভারতবর্ষে লেডি ম্যাকবেথ বা জেন অস্টিনের মতোই তিনি যে আলোকবর্তীকা জ্বালিয়ে গিয়েছিলেন আজও তা প্রজ্জ্ব্লিত এবং উজ্বল।

সূত্র-
Bhandaru Acchamamba: First Telugu story writer- Kondaveeti Satyabati
Bhadaru Acchamamba: Outstanding Life and work- Malathi Nidadavolu

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *