rannaghar-abhoya-shakti

অভয়া শক্তি ‘ বল ‘ প্রদায়িনী …
পাঞ্চালী দত্ত


লাল হলুদ শাড়ি পরে স্নান করে মায়ের ঘরে হাজির লক্ষ্মী। চুল থেকে তখনো ঝরে পড়ছে জল।

‘মা, এবার কিন্তু মামাবাড়ি গিয়ে খিচুড়ি, বাসন্তি পোলাও, ছানার ডালনা ওসব খাব না। ওরা কী সুন্দর কত্ত কিছু খায়। আর আমাদের জন্যে একই ধরনের খাবার, সে আবাসন, ক্লাব, বাড়ি, পাড়া যেখানেই আমাদের খেতে দেওয়া হোক না কেন! মা, আমাদের এট্টু মোমো, চাইনিজ পোলাও, সিজলার, নুডুলস খেতে মন চায় না বুঝি? বরফ ঘেরা কৈলাসে এমনিতেই সেরকম খাবার পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করি মামাবাড়ি গিয়ে জিভের স্বাদটা পাল্টে কিছুদিন আবার চালিয়ে নেবো। কিন্তু সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর সেটিং মেনু খেয়ে এখন জিভে সব এক স্বাদ পাই। ‘ মুক্তোর জলের দানা চিবুকে, গাল ভরা অভিমান আর থেবড়ে যাওয়া কাজল চোখের কোলে একরাশ বিরক্তি।

– ছিঃ, ছিঃ সোনা এমন করতে নেই। ওরা সবাই কত তো ভালবেসে আদর করে আমাদের জন্য রান্না করে বলো? মিষ্টিমুখের আয়োজনে ময়রা এতো মিষ্টির আইডিয়া যে কোথা থেকে পায়, সেটাও আমি ভাবি। উত্তর কলকাতার ভীমচন্দ্র নাগ বা গিরিশ – নকুর চন্দ্রের ছানার সন্দেশ … শুধু মনে হয় খেয়েই যাই। সেই কাঠের বিশাল থালায় ছানার ধবধবে মণ্ডকে হাতের চেটোতে নিয়ে কী যে ম্যাজিক করে! পুঁটিরামের ‘আবার খাব’ সন্দেশের কথা মনে পড়লেই আমার আবার খেতে ইচ্ছে হয় রে!

– মা, ব্যাপারটা কী বলতো? মিষ্টির গল্পে যে তুমি একবারে বুঁদ হয়ে আছো? বয়স কি তাহলে সত্যি বাড়ছে তোমার?

– মেনকার সেসব কথা কানেই যেন ঢুকছে না। তিনি বলেই চললেন, ওই যে নেপাল চন্দ্র সুইটস এর গোলাপ সন্দেশ, খেলে মনে হয় বাঙালি জাতটার এলেম আছে বৈকি! ওদিকে আবার বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক সাবেকি স্বাদকে একটু পাল্টে অন্যভাবে মিষ্টি তৈরি করার চেষ্টা করেছে। তাদের বেকড রসগোল্লা একদম খাসা। চন্দননগরের ফেলুমোদক, কে সি দাস, সেন মহাশয় … উফ কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব? ব্রহ্মা কী দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন! সব দিকে তার অসীম ক্ষমতা। দেব ভাব, পরমাত্মায় একাত্ম হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নিজেদের দানব করার ক্ষমতা রাখে। এই কথাটা বলতে মনে পড়ল রে, কলকাতায় ডাক্তার মেয়েটিকে নিয়ে যা চলছে এতো অসুর কুলকেও হার মানিয়ে দিল।

– মা, we want justice। তুমি তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করো, তাহলে এবারে মর্তে গিয়ে ওদের একটু সাহায্য করো মা। মা মনে মনে হাসলেন। কিছুক্ষণ আগে মেয়েটি খাবারের বায়না করে এসেছিল। কিন্তু এইমুহূর্তে সব ভুলে গিয়ে অভয়ার বিচার চাইছে।

এইসময় গণেশের আগমন।

– ভাই, তুই কোথায় থাকিস রে? তিনদিন ধরে তোকে খুঁজছি। কোথায় যে ইঁদুরটাকে নিয়ে পালিয়ে যাস।

– শ্রী, শোন তোর সঙ্গে কথা আছে। জানি না তুই আমার সঙ্গে সহমত হবি কি না! তোরা দুই বোন আবার কখন কী ভাবনা নিয়ে চলিস বুঝতে পারি না।

– এই তুই এত গৌরচন্দ্রিকা না করে আসল কথাটা পেড়ে ফেল তো।

– শোন, এবারে আমি মর্ত্য থেকে খবর পেয়েছি, পুজোর জন্য কিছু স্পেশাল আইটেম নাকি লঞ্চ হচ্ছে অনেক জায়গায়। জিভে জল আর জিভে জল। আমি ওই লাড্ডু আর মোদক খেতে খেতে বিরক্ত।

– ভাই …

– কি রে লাফিয়ে উঠলি যে!

– তুই কি আমার কথা শুনেছিস একটু আগে?

– বাহ রে, এই যে বললি আমাকে খুঁজে পাস না। তাহলে তোর কথা শুনবো কি করে?

– না আসলে মাকে আমি এই কথাটাই বলছিলাম এক্ষুনি। এবারে মামাবাডীতে অন্য ধরনের খাবার খাব। আমারো খুব একঘেয়ে লাগছে।

– শোন উত্তর কলকাতা ভাজাভুজির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ঠেলায় করে নিয়ে বসে কিসব দারুণ ভাজাগুলো। মা, তোমার বাড়ির লোকেরা ওসব খেতে দেয় না কেন গো আমাদের? ট্রাকে করে যখন আমাদের ওরা প্যান্ডেলে নিয়ে যায়, গন্ধ পেলেই মনটা কেমন যেন আনচান করে ওঠে। বেগুনিটা মাঝেমধ্যে পাই খিচুড়িতে। কিন্তু খিচুড়ির সঙ্গে মিশে ওটা ঠান্ডা ন্যাতানো হয়ে যায়। আমি অনেক জায়গার হদিশ নিয়ে এসেছি এবারে।

জিহ্বার জল ( ঢাকুরিয়া ) ৪০ বছর পুরনো এই দোকান। পটলের চপ, টমেটো চপ এধরনের নানারকম চপ পাওয়া যায় এখানে।

কাশীরামের তেলেভাজা ( বিডন স্ট্রিট) ৬০ বছরের পুরনো দোকান। আলুর চপ, ভেজিটেবল চপ-এর জন্য জনপ্রিয়।

মুখরুচি ( বরানগর, গোপাল ঠাকুর রোড) – শ্রী রামকৃষ্ণদেব এই দোকানের চপ খেতে ভালবাসতেন। মাঝেমাঝে আসতেন গিরীশ ঘোষ।

পটলার চপের দোকান ( বাগবাজার স্ট্রিট ) ৯০ বছর পুরনো এই দোকানে আলু, মোচা, ক্যাপসিকাম, পটলের চপ পাওয়া যায়।

হাতিবাগান চত্বরে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ যাকে নেতাজির চপের দোকানও বলা হয়। সেখানে নারকেলের চপ, সয়াবিনের চপ থেকে শুরু করে কী না পাওয়া যায়! তুই আবার শাড়ি, গয়না ওখানে খুঁজে ফেলিস না। কী না পাওয়া যায় বলতে বুঝিয়েছি — চপের নানারকম।

— ভাই, তুই সবসময় আমার সঙ্গে অমন করিস না তো! আসল গল্পে ফিরে আয়।

কলেজ স্ট্রিটের কালিকার দোকানেও ভাজাভুজির বিপুল সম্ভার। এছাড়া রয়েছে মেদিনীপুরের জয়গোপালের পাঁশকুড়া চপ।

শোন, বোম চপ নাকি সুপারহিট। পুরনো দিনের একটি চপ। মায়ের কালী রূপে যখন পুজো হয় তখন বোম ফাটায় মামাবাড়িতে। বোম চপটা নাকি অনেকটা ওইরকম দেখতে। তুই আবার বোমকে চপ ভেবে খাস না। আলু সেদ্ধ করে মেখে তার ভেতরে মশলা দিয়ে মুড়ে নেয় আর সলতের জায়গায় কাঁচালঙ্কা সাজিয়ে মুচমুচে করে ভেজে নেয়। ভাব একবার শ্রী। আমার নোলাটা কেমন যেন কচ্চে।


কথার মাঝে সেতার বাজাতে বাজাতে ঢুকলেন ঘরে সরস্বতী।

– মা, আজ একটা সুরের সৃষ্টি করলাম। তুমি একটু শুনে বলতো কেমন হয়েছে? তুমি গ্রিন সিগন্যাল দিলেই আমি গন্ধর্ব লোকে এই সুরের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করব। তারপর গন্ধর্ব থেকে মর্তে পাঠাতে হবে যে! গণু আর শ্রী যে একসঙ্গে এখানে আজ! কী ব্যাপার। মনে হচ্ছে কোন গভীর বিষয়ে আলোচনা চলছে। না রে দিদি। ওই মর্তের খাবার দাবার নিয়ে একটু কথা হচ্ছিল। মাকে বলেছি, মামাবাড়িতে এবারে জানিয়ে রাখতে আমাদের মেনুটা যাতে পাল্টানো হয়। একই ধরনের খাবার খেয়ে ফুল বোর।

– গণু, একটা খাবারের নাম আমার মনে পড়ছে না। গোল ছোট লুচির মত। ভেতরে দেখেছি আলু সেদ্ধ দিয়ে তেঁতুল জলে ডুবিয়ে খেতে দেয়। ছেলেমেয়েগুলো এমন চোখ মুখ করে খায় যে আমারও খেতে ইচ্ছে হয়েছিল কয়েকবার। তারপর গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ, উফ কী যে ভয়ানক আকর্ষণ করেছিল। আমি লক্ষ্য করেছি প্রায় প্রতিটা পুজো প্যান্ডেলের একদম কাছাকাছি ওই খাবারটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেই কেউ না কেউ।

– দিদি, ওটার নাম ফুচকা।

সেদিন শুনছিলাম ঢাকুরিয়া দক্ষিণাপণের সামনে রাজেন্দ্রর ফুচকার কথা। ওখানে নাকি জল ফুচকা, দই ফুচকা, মিঠা পানি ফুচকা, আলুর দম ফুচকা বিখ্যাত।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর রামগুপ্তার ফুচকায় অসাধারণ একটা মশলা ব্যবহার হয় এবং টক মিষ্টি ঝাল-এর জল, ফুচকার স্বাদকে করে তোলে অনবদ্য।

চক্রবেড়িয়ার উপেন্দ্রর ফুচকায় আলুর পরিবর্তে ব্যবহার হয় কাঁচকলা। জৈনদের কথা ভেবে উপেন্দ্রর এই উদ্যোগ। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস বা যারা ডায়েটে চলছেন তারাও নির্দ্ধিধায় এখানে ফুচকা খেতে পারেন।

আলিপুরের প্রবেশের ফুচকা, এইচ পি পেট্রোল পাম্পের পাশে রয়েছে, যেখানে তৈরি হয় সতেরো রকমের ফুচকা। ঘুগনি ফুচকা, সেজওয়ান ফুচকা, চকলেট ফুচকা ইত্যাদি।

লেক কালীবাড়ির পাশে দুর্গা পন্ডিতের ফুচকা খুব পছন্দ ভোজনরসিকদের। দই ফুচকা, আলু ফুচকার চাহিদা রয়েছে ভীষণ।

রাসেলপার্কের নানকু রামের ফুচকার বৈশিষ্ট্য হলো আলুমাখার একটা ইউনিক রেসিপি রয়েছে। রেসিপি কখনই সেই দাদা কাউকে শেয়ার করেন না। আলু মাখাতে একটা ফ্লেভার, সঙ্গে মশলা-জল মিলেমিশে কী যে অদ্ভুত ভালোলাগা সৃষ্টি করে, সেদিন শুনছিলাম ওখানের লোকেরা গল্প করছিল।

এছাড়া বিবেকানন্দ পার্ক ( পাথুরিয়াঘাটা ) এর ঠাকুর পন্ডিতের আলুর দম ফুচকার নাকি আলাদাই দম আছে।

দিদি, কলকাতার আনাচে কানাচে প্রচুর ফুচকার স্টল রয়েছে সে গুণে বলা যাবে না।

– গনু তুই তো ভাল খবর রাখছিস এসবের। কী ব্যাপার বলতো।

– শ্রী, সব ব্যাপারে ‘ব্যাপার ‘ খুঁজিস না তো!

– আচ্ছা, তোকে কিছু বললে মনে লেগে যায় আর আমার বেলায়!

– ভাই রাগ করিস না ( লক্ষ্মী গণেশের গালটা আলতো করে টিপে দিল )। তবে দেখেছিস ভাই দারুণ সব হোটেলগুলোয় পুজোতে কী সুন্দর করে সাজায়! তারপর নানারকম খাবার তৈরি করে শুধুমাত্র আমরা আসছি বলে।

দ্য ওবেরয় গ্র্যান্ড, আইটিসি রয়েল বেঙ্গল, জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট, তাজ বেঙ্গল, নভোটেল, পার্ক হোটেল, হোটেল হিন্দুস্তান এবং আরো অনেকেই রয়েছে এই তালিকায়।

তুই ভাব আমরা যাবো বলে সবার কত আনন্দ, কত উচ্ছ্বাস। কত দুঃখকে ভুলে শুধু আমাদের নিয়ে মাতোয়ারা থাকে এই কদিন। বিদায়ের দিন দেখেছিস ওরা কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে পড়ে। অনেককে দেখেছি কাঁদতে।

– শ্রী, গণু আমরা খাবার নিয়ে মামা বাড়িতে এবারে কথা বলতে পারবো? দেখেছিস ওদের প্রত্যেকের চোখে জল। মন ভীষণ খারাপ অভয়াকে নিয়ে।

– জানি রে, দিদি। তুই ওদের একটু সুবুদ্ধি, সুশিক্ষায় সমৃদ্ধ করে দে না রে! যাতে নোংরা কাজ করতে গেলে ওরা বারবার পিছিয়ে আসে।

– শ্রী, তোকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধর তোর কোনো ভক্ত ধন চাইলো। তুই দিলি কিন্তু সে ওই ধন নিয়ে ভুলভাবে খরচ করে ফেলল। এটার দায় কিন্তু তোর নয়। মানুষকে তো সমস্ত বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এবারে সে কিভাবে খরচ করবে সেটা তার ওপর। আর মানুষ এটাও জানে কর্মের ফল ভোগ করতে হয়। এবারে যে যেটা চাইবে সে সেটা পাবে, পরিষ্কার হিসেব।

অশ্রু ছলছল চার জোড়া চোখ যখন, ঠিক সেই মুহূর্তে ঢুকলেন শিব। বেশ মুডেই রয়েছেন।

– কি ব্যাপার, এবারে নতুন শাড়ি দেখতে পাচ্ছি না তো। মামাবাড়ি যাবে, ভারী মজা হবে। সুটকেস কোথায়? চোখগুলোতো তোমাদের ভেজা। কী গো, মেয়েদের কিছু বললে টললে নাকি?

– তুমি তো ভস্ম মেখে কিসব খেয়ে শ্মশানে থাকো, বাপের বাড়ির খবর পেয়েছ ওখানে কি চলছে? শিবের মুখখানা গম্ভীর, সমস্ত জগৎ যেন নেমে এসেছে তাঁর ত্রিনয়নে। চোখ অর্ধ উন্মীলিত। পার্বতী বুঝলেন শিব এবারে গভীর ধ্যানে প্রবেশ করবেন আর এই ধ্যান কবে ভাঙ্গবে তা কেউ জানে না। তিনি মহাযোগী পুরুষ। প্রকৃতিকে একটুও বিচলিত করতে চান না। তাই থাকেন খোলা আকাশের নীচে। কাঁচা ফলমূল খেয়ে। বাঘের ছাল পরিধান করে।

থমথমে পরিবেশকে থামাতে পার্বতী বললেন, বিমলা, তুই কী সুর সৃষ্টি করেছিস, শোনা আমাদের।

– চলল সুরের খেলা। বিলম্বিত থেকে মধ্য, তারপর দ্রুত লয় … আহা আকাশে বাতাসে ঝরে পড়ছে সুরের সুগন্ধি ফুল। সুরের মূর্ছনায় মোহাবিষ্ট হয়ে রামধনু তার রং ছড়িয়ে দিয়েছে গোধূলির আকাশে । শরতের আকাশে মেঘের ভেলা সুরের মধ্যে জাগিয়েছে শান্তির রেশ। কাশ বন মাথা দুলিয়ে প্রণাম জানিয়ে সমোচ্চlরিত কন্ঠে পাঠ করতে লাগল :

ॐ द्यौः शांतिरन्तरिक्षं शान्तिः
पृथिवी शान्तिरापः शान्तिरोषधयः शान्तिः ।
वनस्पतयः शांतिर्विश्वेदेवः शांतिर्ब्रह्म शांतिः
सर्वं शांतिः शांतिरेव शांतिः सा मा शांतिरेधि ॥
ॐ शांतिः शांतिः शांतिः ॥

আহা, পারমার্থিক সুখ। এই সুখের লয় নেই, ক্ষয় নেই। হে মানবজাতি, তোমরাও এই স্থায়ী সুখ খুঁজে পাবে শুধু বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করো। গান চলল দুদিন ধরে। সবার চোখ বন্ধ, নাকি ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করে মহাজাগতিক শক্তির জগতে সঁপে দিলেন তাঁদের!

( এই লেখাটি রূপকার্থে লেখা হয়েছে। ছবিসুত্র : গুগল )



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *