সৌমিতা চ্যাটার্জী
পান্তুয়া এবং লেডিকেনি কাছাকাছি মিষ্টি হয়েও তার উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায়। কেউ বলেন পানিতব্য শব্দ থেকে এই নামের উৎপত্তি। তব্য মানে নীচে। রসের নীচে ডুবে থাকে বলে নাকি এই নামের উৎপত্তি। আবার কেউ বলে পানিতুয়া শব্দ থেকে। কিন্তু কোনটিরই কোনো ইতিহাসগত ভিত্তি নেই। তবে পান্তুয়া খুব পুরোনো মিষ্টি তাতে সন্দেহ নেই। শ্রী চৈতন্য চরিতামৃততেও পান্তুয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৯০৫ সালে শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত সেন কল্যাণী কাব্যগ্রন্থের “ঔদরিক” গানে লিখছেন –
“যদি কুমড়ার মত চালে ধরে রত
পান্তুয়া শত শত।”
আবার লেডিকেনির উৎস সম্বন্ধে শোনা যায়। বিভিন্ন মতের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত হলো ১৮৫৬ সালে লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রী লেডি ক্যানিংয়ের ভারত সফরের উদ্দেশ্যে তাঁর সম্মানে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়। সেই থেকেই এই মিষ্টির নাম লেডিকেনি৷
তো সে যেটাই হোক এই পান্তুয়া বা লেডিকেনি আর গুলাব জামুন, দেখলেই আমাদের জিভে জল আসে। কিন্তু এগুলো সব এক না আলাদা সেটা নিয়েও কিন্তু বিতর্কের শেষ নেই। আজ বরং আমরা আলোচনা করব এই বিষয়টা নিয়ে৷ আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কী কী পার্থক্য আছে এদের মধ্যে, নাকি সত্যিই আসলে এরা একই?
এরা এক না আলাদা সেটা জানতে প্রথমে আমরা এই মিষ্টি কিভাবে বানায় সেটা দেখে নেবো। তারপর বিস্তারিত আলোচনায় বলে দেব ঠিক কোথায় কোথায় কী কী ফারাক আছে এই রেসিপিগুলোতে৷
উপকরণ:
ডো বানানোর জন্য –
খোয়া – ১ কাপ,
জলঝড়ানো ছানা – ১ কাপ
ময়দা – ২ টেবিল চামচ
সুজি – ২, টেবিল চামচ (কেবলমাত্র পান্তুয়ার জন্য)
চিনি – ২ টেবিল চামচ
নুন – সামান্য
গুঁড়ো দুধ – ২ টেবিল চামচ
ছোট এলাচ – অল্প (শুধু পান্তুয়ার জন্য)
নকুল দানা – (শুধু পান্তুয়ার ক্ষেত্রে)
গোলাপ এসেন্স – ২ টেবিল চামচ (শুধু গোলাপ জামুনের ক্ষেত্রে)
জাফরান – ১ টেবিল চামচ।
রসের জন্য –
চিনি – ২ কাপ
জল – ২.৫ কাপ
প্রণালী: প্রথমেই ছানাটাকে হাত দিয়ে ভাল করে মেরে নিতে হবে যাতে মোলায়েম হয়ে যায়, ছানা তাহলে ফাটবে না। এবার একটা পাত্রে খোয়া, চিনি, ছানা, নুন, ময়দা আর গুঁড়ো দুধ সব দিয়ে একসাথে মাখতে হবে। যদি পান্তুয়া চান তাহলে এই মিশ্রণে ছোট এলাচের গুঁড়ো দিন আর ওই মাখাটাকে ছোট ছোট বল করে নিয়ে বলের মাঝখানে একটা করে নকুল দানা আর ছোট এলাচের দানা দিয়ে দিন।
যদি গোলাপজামুন করতে চান সেক্ষেত্রে অল্প খোয়া আর একটু গোলাপের এসেন্স এবং জাফরান দিয়ে মেখে রাখুন তারপর ওই খোয়ার পুর দিয়ে দিন বলগুলোর ভিতরে। এরপর কড়াইয়ে বনস্পতি দিয়ে ভাল করে ভাজুন। মনে রাখবেন কম আঁচে ভাজতে হবে যাতে ভিতরটাও পুরো ভাজা হয়। ভেজে তোলার আগে আঁচ বাড়িয়ে নিন। এরপর একটা পেপার ন্যাপকিনে বলগুলো রাখুন। বনস্পতি শুষে নিলে রসে ফেলুন। অন্ততঃ ৪-৫ ঘণ্টা রসে ভেজান তারপর প্লেটে দিয়ে দিন।
পার্থক্যাগত টিপ্পনী –
১. পান্তুয়া অবশ্যই কড়া করে ভাজবেন কিন্তু গুলাবজামুনের ভাজা হবে হালকা। কেউ চাইলে গুলাপজামুনের ভিতরে গোলাপী খাবার রঙ ব্যবহার করতে পারেন।
২. গুলাপজামুন করতে হলে রস অপেক্ষাকৃত পাতলা হবে। ৪ কাপ জলে ২ কাপ চিনি দিয়ে রস বানাবেন আর রসের মধ্যে হালকা জাফরান আর গোলাপজল মিশিয়ে দেবেন। রসে যেন এগুলোর ফ্লেভার আসে। পান্তুয়ার ক্ষেত্রে রসটা মোটা হবে। এক ফোঁটা রস আঙুলে ফেলে দেখবেন। যদি আঠার মত লাগে তাহলে বুঝবেন পান্তুয়ার রস হয়েছে।
৩. আগেই বলেছি পান্তুয়ায় নকুলদানার পুর হবে আর গোলাপজামুনে খোয়ার। পান্তুয়াতে পুর না দিলেও চলবে কিন্তু গোলাপজামুনে পুর অবশ্যই জরুরী৷ ইদানীং কালে অবশ্য নকুল দানার পুর দেওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে৷
৪. পান্তুয়া ঠান্ডা অথবা রুম টেম্পারেচারে খেতে দেওয়া হয় কিন্তু গোলাপজামুন অবশ্যই গরম খেতে হবে ৷
৫. দুটোর ক্ষেত্রেই ছানাটাকে হাত দিয়ে ভাল করে মারতে হবে। হাতে তেল লাগলে বুঝবেন ছানা তৈরি।
৬. গোলপজামুনে সুজির ব্যবহার নেই কিন্তু পান্তুয়ার ক্ষেত্রে সুজিটা আগে একটু গরম জলে ভিজিয়ে রাখবেন।
দুটো রেসিপিই দেওয়া থাকলো, এবার আপনাদের পছন্দমতো বানিয়ে ফেলুন যার যেটা ইচ্ছে কারণ জেনেই তো গেলেন কোনটা কিভাবে বানাতে হবে৷
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন