short-story-bhat

ভাত

সায়ন্তনী বসু চৌধুরী

অন্নপূর্ণা হোটেলের পাশের গলি দিয়ে কটা পা এগোলেই রাস্তার বাঁহাতি বাঁকখানায় একটা ছোটখাট ডাম্পিং গ্রাউন্ড। বিরাট বড় পরিসর জুড়ে নয় যদিও, তবে আবর্জনার হৃষ্টপুষ্ট স্তূপগুলো স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে ওইটিই গোটা এলাকার ময়লা ফেলার একমাত্র জায়গা। মজার কথা হল সরকারের তরফ থেকে জায়গাটা গ্রীনবেল্টের জন্য ইস্যু করা আছে। আরে মশাই, গ্রীনবেল্ট শোনেননি? আচ্ছা থাক। ওসব গালভরা নাম ছেড়ে দিন। জায়গাটায় একটা বাগান তৈরির কথা ছিল। বড় রাস্তার পাশেই একখানা বাগান থাকলে মন্দ লাগেনা বলুন! গাছগাছালি থাকবে, দু’ চারটে সিমেন্টের বেঞ্চ রাখা হবে, মালীরা নিত্যদিন গাছেদের সেবা করবে। রাস্তার পাশের ওই একফালি জায়গা থেকে পাখির কলতান ভেসে এসে ক্লান্ত পথিকের মনে স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেবে। গ্রীষ্ম কী বসন্তের সন্ধ্যায় দুদণ্ড বসে জিরিয়ে নেবেন কেউ কেউ। পথপ্রান্তের ওই বাগিচায় কমবয়সীরা প্রেম করতেও ঢুকবে। আজকের এই ব্যস্ত সময়ে এটুকুইবা কম কী? কিন্তু সব পরিকল্পনাই কি আর বাস্তবায়িত হয়? না বাস্তবায়িত করার জন্য সব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কোনদিন? তবে এই মাঠখানা উদ্ধারের বিস্তর চেষ্টা চলেছিল জানেন। পাঁচ সাতবার প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে, মাসখানেক ধরে মাইকে প্রচার করেও এলাকার মানুষের স্বভাব বদলানো যায়নি। সপ্তাহ দুয়েক হলেই বস্তির বাচ্চারা প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ঘুড়ির মত হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছে। আর মাইকে প্রচার ব্যাপারটা তো বড্ড সেকেলে। অন্যের কথা আজকাল কেইবা কানে নেয়! কারও কিছু অতিরিক্ত হল তো বালতি কি বস্তায় পুরে কোনোমতে টেনে এনে ওইখানেই ঢেলে দিল, আর দায় নেই। এ যেন একটা অলিখিত নিয়ম চলছে। মানুষের মস্তিষ্কে চেপে বসে গেছে নিয়মটা। অগত্যা মিউনিসিপ্যালিটির সাফাই কর্মীরা ওইখানেই দু’ তিনটে দামড়া ডাস্টবিন বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। প্রথম ক’মাস নির্দিষ্ট সময় অন্তর কর্পোরেশনের বড়ো গাড়ি এসে আবর্জনা সংগ্রহ করে নিত; এখন গড়িমসি করে কালেভদ্রে মাঠ পরিষ্কার হয়। চিঠিপত্র দিয়েও কর্পোরেশনের জমাদারদের ডেকে আনতে হয় মাঝে মাঝে। মোটা প্লাস্টিকের বিনগুলোর অবস্থা জঘন্য। আবর্জনা গিলতে গিলতে আকণ্ঠ হয়ে গিয়ে তারা এখন উগরে দিতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি জলকণার অবাধ গতিবিধিতে গলির মুখের আলোটারও মেজাজ বিগড়েছে। প্রতি সেকেন্ডে সেটা একবার জ্বলছে আর একবার নিভছে। অন্নপূর্ণা পাইস হোটেলের সামনে থেকে তাড়া খেয়ে পা টিপে টিপে গলির অন্ধকারের ভেতর সেঁধিয়ে গেল লোকটা। নোংরা ফেলার মাঠের কোণের দিকে বেশ কিছুটা হেঁটে গিয়ে চটের বস্তাটা পিঠের ওপর থেকে নামিয়ে রাখল। ওই বস্তাতেই আপাতত সারাদিনের কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের বোতল জমা আছে। তারপর মুখটা তুলে ডাস্টবিনের দিকে চাইলো। লোকটার মুখ ম্লান, তাও বহুদিনের জমা ময়লা আর দাড়ি গোঁফের ফাঁক দিয়ে ফাটা ঠোঁটদুটো ঈষৎ ফাঁক হল যেন! চাউমিন, মোমো, বিরিয়ানি আরও কী কী সব দামী খাবারের গন্ধ জমে আছে এইখানকার বাতাসে। পরম তৃপ্তিতে চোখদুটো বুজে লম্বা লম্বা কখানা শ্বাস টেনে নিল লোকটা। বাতাসে মিশে থাকা সেই খাদ্যঘ্রাণ তার বুকের অন্দরে যেতেই আধশুকনো আলজিভ ঠেলে অজান্তেই একটা “আহ” শব্দ ছিটকে বেরিয়ে এল। বেশ লম্বা শরীর। হয়তো কোনোকালে ঋজু ছিল। আজ তার উল্টো। সামনের দিকে আরও খনিকটা ঝুঁকে পড়ে উল্টান ইউ-এর মতো ভঙ্গিতে চাউমিন আর মোমোর টুকরো লেগে থাকা এঁটো কাগজের প্লেটকটা নিজের দিকে টেনে আনতে গেল লোকটা। কিন্তু একী! চার পাঁচটা অপুরুষ্টু কুকুরের বাচ্চা জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতো প্লেটের ওপর আটকে রয়েছে। চিনির ডেলার ওপর ভিড় করে থাকা পিঁপড়ে যেন। লোকটার মায়া হল। আহা রে! আশপাশে ভাল করে তাকিয়ে দেখে নিল সে। এদের মা নেই নাকি? তারপর উবু হয়ে বসে পড়ল। চোখদুটোতে জোর দিয়ে দেখল কুকুরের ছানাগুলোর ছাই ছাই ময়লা রঙ। দুটোর গায়ে ঘা। একটার লেজ খসে গেছে। খিদের জ্বালায় ওরা কাগজে লেগে থাকা লাল রঙের আধপচা চাটনি চাটছে একমনে। দুধটুধও পায়না মনে হয়! লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। টিনের থালায় লেগে থাকা গরম ফ্যান চাটার চুকচুক শব্দ তার কানে বেজে উঠল। সে নিজেও তো জন্মের পর মায়ের দুধ পায়নি। ইন্তিমাসি তো সেরকম গল্পই শোনাত।

***
কবে যেন জন্মেছিল লোকটা? উনিশশো সত্তর সাল! লেখাপড়া শেখা হয়নি। পরিচিতি বলতে বেশিকিছু নয় শুধু জন্মসালটুকুই জানে। নামটা বিস্মৃতপ্রায়। কিন্তু নাম একটা আছে। লোটন সামন্ত। জন্মের আগে পর্যন্ত তার নিবাস ছিল দক্ষিণ কলকাতার কাঁকুলিয়া। দেশের হাওয়ায় তখন বারুদ গন্ধ ভাসছে। সাম্রাজ্যবাদ, বুর্জোয়া এসব শব্দ বড্ড ভারি। কাঙাল লোটন এসব বুঝবে কেমনে? তবে সে কানে শুনেছে এবং মনেও রেখেছে। বাতাস যখন ভারি, সে তখন তার দুবলা মায়ের পেটের ভেতর একমনে সাঁতার কাটছিল। রক্তরস সিঞ্চন করে ধীরে ধীরে বাড়ছিল। পঞ্চু সামন্তর ছেলে হবে না মেয়ে সে নিয়ে মাথাব্যথা ছিলনা কারও। পঞ্চুর বৌয়ের নয় এমনকি খোদ পঞ্চুরও নয়। কিন্তু বড় মানুষের পেটের মধ্যে একটা ছোট্ট মানুষ এবং অবিকল মানুষ বড় হচ্ছে সেটা অনুভব করার কৌতূহল খানিকটা হলেও বোধহয় দুজনেরই ছিল। কী একটা জরুরি দরকারে মাঝরাতের একটু পরে কটা লোক পঞ্চুর দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মেরেছিল। বৌ বলেছিল “যেওনা!” পঞ্চু শোনেনি। দরজা ফাঁক করে মুখ বাড়াতেই লোকগুলো বলেছিল,
-“তাড়াতাড়ি ওদিকে চল, জরুরি কাজ আছে।”
পঞ্চুকে দিয়ে কী কাজ হবে সেটা সে নিজেও জানত না। কিন্তু “না” বলতে পারেনি। তার কনুইটা শক্ত করে ধরে রাখা হয়েছিল। সেইসময় অচেনা লোকগুলোর মুখের সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্চুর একবার মনে হয়েছিল বটে, যদি তার ছেলে হয়! কার মত দেখতে হবে সেই ছেলে? বৌ সীমার মত নাকি …? সাড়ে পাঁচ ফুটের অত্যন্ত সাধারণ দেখতে পঞ্চু নিঃশব্দে বেরিয়ে যাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে সীমা সামন্ত অনুমান করে নিয়েছিল, তাদের মা তারা ভাণ্ডারের সামনের ফাঁকা রাস্তাটায় একটা দৌড়ের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। লোকগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল।
“ওরা আসে?”
“… কে চিনিস?”
“ছেলেগুলো কাকে কাকে নিয়ে আসে?”
“আগামী রবিবার কে কে বিহারের দিকে যাচ্ছে?”
পঞ্চু একটা আদ্যোপান্ত গবেট, মুখ্যু মানুষ ছিল। সে জানত কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে হয়। বলে দিলে পাস। বলে দিলে মুক্তি। দৌড়তে দৌড়তেই আঙুল গুনে গুনে সে বলেছিল,
-“আসেন তো। বড় কলেজের দাদারা আসেন। অনেকে। আমার দোকান থেকেই বিড়ি, সিগারেট, মুড়ি, চা সব খান। বিহার যাওয়ার কথা তো আমি জানিনা বাবু।”
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। চুপচাপ…। পঞ্চু হাঁপাচ্ছিল। হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করেছিল,
-“এ…বার এবার… থামব? থামি বাবু?”

লোকগুলো আর সাড়া দেয়নি। আর পঞ্চু একেবারেই থেমে গিয়েছিল। মায়ের পেটের ভেতর শুয়ে শুয়ে লোটন কি গুলির শব্দদুটো শুনতে পেয়েছিল? বোধহয় হ্যাঁ। ছমাসের ভ্রূণের তো শ্রবণক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু লোটন চেঁচাতে পারেনি। কাঁদতেও পারেনি। কাঁদতে অবশ্য লোটনের মাও পারেনি। টিনের দরজা ঘেরা পায়খানার ভেতরে দমবন্ধ করে লুকিয়ে লোটনের মা দুটো গুলির আওয়াজ শুনেছিল। আপাদমস্তক কেঁপে উঠেছিল তার। তারপর আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি। রাতের অন্ধকারে পায়ে হেঁটেই বজবজে এক পিসতুতো দাদার বাড়ি পালিয়ে এসেছিল। আঠেরো বছরের নির্জীব মেয়ে। তায় ধুমসো পেটের ভেতর একটা বাড়ন্ত ভ্রূণ! সারাক্ষণ খাই খাই। খেতে পেলে আবার শুতেও মন চায়। কিন্তু বিধবা পোয়াতিকে এত আরাম জোগাবেটা কে? দাদা বৌদির সেসব ভাবার সময় ছিলনা। তারা হাতের মুঠোয় চাঁদ থুড়ি বিনা মাইনের ঝি পেয়েছিল।
দাদার বাড়ির সব কাজ দেখাশোনা করত লোটনের মা। বৌদির ছেলের বয়স তিন মাস। ভারি কাজে ডাক্তারের নিষেধ ছিল। পিসির ছেলে ফ্যাক্টরির লোকজনের সামনে ঝি বললেও লোটনের মা উত্তর দিত না। মাথা নিচু করে চোখের জলে লোনা হয়ে যাওয়া বাসি ভাত গবগব করে গিলে নিত। পেটেরটাকে খোরাক দিতে হবে তো! অবশেষে লোটন ষষ্ঠীতে ছেলের জন্ম। তাই মা নাম রেখেছিল লোটন।

লোটন লোটন লোটন! শ্রাবণ মাসের সন্তান। দুর্বল মায়ের সন্তান। মা ষষ্ঠীর দেওয়া সন্তান! কিন্তু বর নয়, সে তো অভিশাপ। লোটন লোটন লোটন! বাপমরা ছেলে। নাহ। সে তো বাপখেকো! জন্মের তিন দিনের মাথায় মাটাকেও খেয়ে ফেলেছিল লোটন সামন্ত। লোকে বলেছিল, এ তো ক্ষীরের লোটন নয়। একে আগলানোর দরকার কী বাপু? বাপখেকো মাখেকো লুটেরা লোটন সামন্ত। তাড়াও একে। খ্যাংরা মেরে তাড়াও দেখি। লাথি মেরে তাড়াও। বিয়েভাঙা ইন্তিমাসির একটা ছেলের বড্ড শখ ছিল। যেমন তেমন ছেলে। কানা ছেলে লোটনই হল ইন্তিমাসির পদ্মলোচন।

***
ইন্দিরা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে ছিলেন। বিয়ের পর থেকে হাজারটা নিয়ম মানতে মানতে এখন আর নিজস্ব কোন মতামতই নেই তাঁর। তারওপর স্বামী প্রায় শয্যাশায়ী। থ্রোট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। যদিও ডাক্তারের বারণ আছে, রোগ সম্বন্ধে রোগীকে কিচ্ছু জানানো যাবেনা। তাতে মনোবল হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ছেলে-মেয়েও পইপই করে মাকে বুঝিয়েছে।
-“বাবার কানে যেন না যায়। তুমি তো বেশি কথা বল। দেখ, যেন ভুল করে…”
ইন্দিরা অলস ভঙ্গিতে নিজের নাড়িছেঁড়াদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কেবল। ওরাও কি তাঁকে গৃহশত্রু ভাবে? নাকি ওরাও ইন্দিরার সমস্ত সুপ্ত অভিমান আর ক্ষোভের হিসেব রেখেছে! অজিতেশ তো কোনকালেই ইন্দিরাকে অর্ধাঙ্গিনীর উপযুক্ত মর্যাদা দেননি। শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর প্রত্যেকেই ফুটবলের মত ছুটিয়ে গিয়েছেন এক কোণ থেকে অন্য কোণে। হালেই বিদেশের মাটিতে পা রেখে ছেলে মেয়েও মাকে অশিক্ষিত ভাবতে শুরু করেছে। সংসারের প্রতি একনিষ্ঠ থেকে আর লাভ কী? বাবা মাও আর বেঁচে নেই এখন যে ভয়ে ভয়ে ইন্দিরা কর্তব্য করে যাবেন! দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতেই দিবারাত্র খেটে যান ইন্দিরা। হেঁসেলে উৎপাদিত হাল্কা মুখরোচকেও এখন অজিতেশের গলা জ্বলে। ইন্দিরা বলেন,
-কিচ্ছুনা। বাবুনকে তো ডাক্তারবাবু বলেছেন, তোমার টনসিলের অবস্থা ভাল নয়। তাই হয়তো…
ভাত ফেলা যায়। তরকারি, ডাল, মাছের রসা সবই ফেলা যায়। ইন্দিরা একা আর কত গিলবেন? এ বাড়ির ভাত কি তাঁর কাছে খুব সম্মানের ছিল কোনদিন? পঞ্চান্নতে পদার্পণ করেও রাশভারি পুলিশ অফিসার শ্বশুরের কীর্তিতে কোনদিন বুক কাঁপেনি ইন্দিরার বরং ঘৃণা হয়েছে। অজিতেশ এখনও গর্ব করেন।

অজিতেশকে ভেলোর নিয়ে যাবে বাবুন। পরের মাসে। এখনও বেশ কটা দিন দেরি আছে। বছর পঁচিশেই বাবুন বাপের বেশ হাত ধরা হয়েছে। বাবুনের বান্ধবীটি দক্ষিণ ভারতীয়। সেও প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই শ্বশুর ন্যাওটা। ইন্দিরা শুধু দেখেন। ত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবনের শেষে মানুষ বুঝি এসব আপেক্ষিক শান্তিই কামনা করে। কিন্তু ইন্দিরার মনে শান্তি নেই। আজকাল মাঝে মাঝেই নানা নেতিবাচক চিন্তা আসে মনে। পাপ, মৃত্যু, প্রায়শ্চিত্ত এসব নিয়ে সাধারণ আর্টস গ্র্যাজুয়েট যে ইন্দিরা কোনদিন ভাবেননি, তিনি এখন প্রায় নিশ্চিত যে অজিতেশ তাঁর পিতার পাপের শাস্তি পাচ্ছেন। আসলে তো স্বর্গ নরক বলে কিচ্ছু হয়না। ওসব কল্পনা। যা হওয়ার এইখানেই হবে। এক এক দিন ইন্দিরার ইচ্ছে হয়, অজিতেশের হাতে উষ্ণ টোম্যাটো স্যুপের বাটি তুলে দিতে দিতে বলেন,
-“টনসিল নয়, তোমার গলায় বাসা বেঁধেছে একটা দাগী কর্কট। এবার ডাকো তোমার বাবাকে। বল, পেছন দিক থেকে তোমার গলাটা তাক করে সেই কর্কটের গায়ে বুলেট ছুঁড়ে দিতে।”
কিন্তু নাহ! ভাবা সহজ। বলা বোধহয় নয়। ইন্দিরার ঘোর ভেঙে যায়। সম্পর্কসূত্রে পাওয়া মানুষগুলোকে শুধু কল্পনাতেই কুপিয়ে কুপিয়ে মারেন তিনি। তরকারির ফুটন্ত ঝোলে মনপ্রাণ ভরে লাল লংকা বাটা গুলে দেন। জ্বলুক। জ্বলুক!

***
ডাস্টবিনের ভেতরদিকে হাতের কনুই পর্যন্ত চালান করে দিয়ে একটা থলথলে পলিথিনের প্যাকেট খুঁজে পেল লোকটা। কোণা ধরে উঁচু করে নাকের কাছে তুলে এনেই টাটকা ভাত আর তরকারির গন্ধে আজন্মের খিদেটা চাগাড় দিয়ে উঠল। “আহ! যে ফেলে গিয়েছে ঈশ্বর তার মঙ্গল করুন।”
ভাত আর তরকারির আলু মাখিয়ে মাখিয়ে কাগজের ওপর দিতেই কচি কচি কুতুয়ারা হামলে পড়ে খেতে আরম্ভ করল। একগ্রাস লোকটা নিজের মুখে তুলছে। একগ্রাস বাচ্চাদের পাতে ছুঁড়ে দিচ্ছে। বেশ খানিকক্ষণের দেওয়া নেওয়ার পর লোটন আপন মনে গান ধরল,
-“ইন্তি বিন্তি সিন্তি
উঁকি মারে গাছের আড়াল থেকে……”

 

6 thoughts on “short-story-bhat

  1. সাম্রাজ্যবাদ ও নৈরাজ্যের মাঝে কাঙালি মানুষ ও কুকুরছানা অার বাস্তবিক চাহিদা,
    পরিশেষে মানবিক অাবেদন….
    একরাশ হতাশার মধ্যে সিমাহীন মুক্তি ….
    অসাধারণ……

  2. ট্রেনে বাসে চলতে চলতে পড়তে হয় বুঝলে!অথবা ডিউটির ফাঁকে সময় মেলে যদি। মনোসংযোগ বারবার নষ্ট হয়। এসবের মধ্যেও যে লেখাগুলো টানা পড়ে ফেলা যায়,সেটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো লেখা। তোমার জীবন-যাপন আর লেখার মধ্যে কোনও ভণিতা নেই। এটা তোমার লেখার অন‍্যতম সম্পদ। যারা কথা বলতে পারে তাদের কথা শুনে তো সবাই লিখতে পারে। কিন্তু যারা কথা বলতে পারে না, তাদের না বলতে পারা কথাগুলো লিখতে পারাই হল আসল ক্ষমতা। আর এই দুয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে তুলতে পারাটাই হল ক্রেডিট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *