ডেড ম্যান’স লেন
অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী

– এবার আমরা ঢুকছি ডেড ম্যান’স লেন-এ।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটু থেমে ফের বলে উঠলাম – ঈশ, এতো রাত করা ঠিক হয়নি। একদম খেয়াল হয়নি।
– তাহলে কি এদিক দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? অন্য দিক দিয়ে ঘুরে চলো না। পিছন থেকে আমার স্ত্রী রিনী বলে উঠল।
– কথা বলতে বলতে খেয়াল করিনি। অন্যদিক দিয়ে ঘুরে বাড়ি ফিরতে এখন অনেক সময় লেগে যাবে। এসেই যখন পড়েছি।
হাইওয়ে ছেড়ে ততক্ষণে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সাপের মতো আঁকাবাঁকা অন্ধকার সরু রাস্তাটায় ঢুকে পড়েছি। যদিও এই রাস্তার নাম ডেড ম্যান’স লেন নয়। সে নামটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত।
মানে? ডেড ম্যান’স লেন! এ কেমন অদ্ভুত নাম! চমকে উঠল মিলন।
সে অনেক কথা। পরে বলব। এখন বললে ভয় পেয়ে যাবি।
ধুর! ভূতের ভয় নাকি! আমি কি আর সেই স্কুলের মিলন আছি? হেসে উঠল ও।
না, না, তোকে ভয় দেখাবো কী জন্যে! ভয় আমাদের সবার পাওয়ার কথা।
মুখে কোন রকম প্রকাশ করলেই সব মজা নষ্ট হয়ে যাবে। মনে মনে হেসে নিলাম। মিলন এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্তা। স্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়েছি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে। তখন মিলন ভূতের নাম শুনলেই আঁতকে উঠত। এমন কি দিনে দুপুরেও ভূতের ভয় পেতো। ওকে নিয়ে আমরা সবাই নানান মজা করতাম। এবারেও সেই একই প্ল্যান। এতো বছর পরে দেখা। একটু মজা না করলে চলে!
কি ব্যাপার বলো না? কোনো রহস্য আছে এ রাস্তাকে নিয়ে? পিছন থেকে জিজ্ঞেস করল ওর স্ত্রী স্বাতী।
স্বাতীর এই কৌতূহলও আমাদের প্ল্যানের পার্ট। সবাই মিলে ভয় দেখাবো প্ল্যান করেছি। স্বাতী ওর সঙ্গে প্রেসিডেন্সীতে পড়েছে। ও তাই জানে মিলনের এই বিশেষ দিকটা। আমরা সবাই ছোটবেলায় কম-বেশী ভয় পেতাম ভূতে। তবে বড় হয়ে সেটা আমাদের কারোরই ছিল না। কিন্তু মিলন সেই একইরকম ভীতু আছে। যদিও মিলন সেটা মুখে স্বীকার করে না। পুরোটাই তাই স্বাতীর প্ল্যান। ওকে ভয় দেখানোর। আমরা শুধু উপযুক্ত সঙ্গত দিচ্ছি।
ওরা আমার ইংল্যান্ডের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে দু’সপ্তাহের জন্য। ভৌতিক পরিবেশ বলতে গেলে ইংল্যান্ডই সেরা। সারা পৃথিবীর কত যে হরর সিনেমার জন্ম হয়েছে এই দেশের পাহাড় – জঙ্গল –ভিক্টোরিয়ান ম্যানসন হাউসগুলোকে ঘিরে। আমার বাড়ি পিক ডিস্ট্রিক্টের বেকওয়েল শহরে। আমরা স্কটল্যান্ড এডিনবারগ ঘুরে আজ ফিরছি। ফেরার পথে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই সরু আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাটা পড়ে। ভয় দেখানোর আদর্শ পরিবেশ।
কোন রহস্য আছে এ রাস্তাকে নিয়ে? ফের স্বাতী জিজ্ঞেস করে উঠল।
আমি বলা শুরু করলাম—
এই জায়গার পাশেই ছিল এক বিশাল লেড মাইন। আঠেরোশো সালের শুরুর দিকে। তখন লেডের প্রচুর চাহিদা। কিন্তু এসব লেড মাইন ছিল ভয়ংকর বিপজ্জনক। একদিন এখানকার এক খনিতে বড় দুর্ঘটনা হয়। হঠাৎ খনির ছাদ ভেঙে পড়ে যায়, চাপা পড়ে মরে যায় অনেক শ্রমিক। খনিটা এখান থেকে এক মাইল মতো দূরে। পথে ওদের বন্ধ হয়ে যাওয়া অফিসটাও পড়বে। সেই ঘটনার পর থেকেই এই রাস্তার দুর্নাম।
গাড়ি চলছিল আঁকাবাঁকা, সরু পাহাড়ি পথে। দু’পাশে অন্ধকার জঙ্গল। মাথার উপর চাঁদহীন আকাশ। আজ মনে হয় অমাবস্যা। গাড়ির হেডল্যাম্পের বাইরের পৃথিবীটাই নেই যেন। গভীর অন্ধকারের পোশাক পরে সামনে থেকেও অদৃশ্য।
ঘড়িতে রাত একটা। এই সময়ে এ রাস্তায় গাড়ি সচরাচর চলে না। ভাবছিলাম, পরিবেশ আর গল্পের ভৌতিক আবহে মিলনের মনে একটু হলেও ভয় ধরাতে পারব।
কিন্তু নাহ, ও দিব্যি হেসে বলল—
ভালোই তো! যদি সত্যি ভূতের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে তো জমে যাবে! দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে। তা খনিটা দেখা যাবে এতো রাতে?
না। আগে খনি ছিল, এখন নেই। দুর্ঘটনার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই জঙ্গলের মধ্যেই। তবে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই।
আমার কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। এই এলাকায় একটা খনি ছিল যেখানে ব্লু জন নামে এক বিরল ফ্লুওরাইট পাথর পাওয়া যেত। সারা বিশ্বে এই পাথর শুধু এই এলাকাতেই পাওয়া যেতো। আরথার কোনান ডয়েলের – দ্য টেরর অফ ব্লু জন গ্যাপ লেখাটা এখানকার এরকম এক গুহাকে নিয়েই লেখা।
সেই দামী পাথর থেকেই বাকিংহ্যাম প্যালেসের চেয়ার থেকে ভ্যাটিকানের দামী অনেক পাথরের জিনিস তৈরি হতো। তাছাড়া এই খনিতে পাওয়া যেতো লেড বা সীসা। কিন্তু সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর খনিটা গত দেড়শ বছর ধরে বন্ধ। এখন আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, সেই খনি এর খুব কাছেই।
চারদিক নিঝুম। এতোটাই নিঃশব্দ, নিস্পন্দ চারপাশের পরিবেশ যে এরকম পরিবেশে সবারই একটু গা ছমছম করতে বাধ্য। গাড়ির আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। উলটো দিক থেকে কোন গাড়ি এলে এই সরু রাস্তায় জায়গা দেওয়া শক্ত। তবে রাতে অনেক দূর থেকে গাড়ির আলো দেখা যায়, এটাই ভরসা। সেক্ষেত্রে জায়গা বুঝে দাড়িয়ে গিয়ে জায়গা করে দিতে হবে।
কিন্তু এর নাম ডেড ম্যান’স লেন কেন? — কিছুক্ষণের নীরবতা কাটিয়ে আবার প্রশ্ন করল মিলন।
শোনা যায়, রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে বহুবার লোকজন হঠাৎ রাস্তায় এরকম মানুষকে দেখেছে। ধুলো মাখা শরীর, নেশাগ্রস্ত হাঁটা। তারা কোনদিকে না তাকিয়ে শুধু মাথা হেলিয়ে হেঁটে যায়। যারা ভয় পেয়ে গাড়ি থামিয়েছে, বা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, তারা আর কেউ ফিরে আসে নি। তবে সবসময় যে এরকম হয়, তা নয়। তবে এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল বলেই এরকম নাম হয়ে গেছে।
মিলন হেসে বলল, গল্প বেশ জমেছে। এরসঙ্গে একটা ভৌতিক গান চালালে পুরো হরর সিনেমার মুড তৈরি হয়ে যেতো।
বুঝলাম মিলন অতো সহজে এখন আর ভয় পাবে না।
তুই এখনও মজা ভাবছিস। কিন্তু এখানে এতক্ষণে একটাও গাড়ি দেখলি? কেউই আসতে চায় না এ রাস্তায়। এরকম সব ঘটনার কথা শোনা গিয়েছে বলেই তো এই রাস্তার এরকম কুখ্যাতি।
থেমে গেলাম।
ঠিক তখনই, হঠাৎ! সামনে কিছু দূরে দুটো জ্বলজ্বলে চোখ। আমি জোরে ব্রেক কষলাম। একটা হরিণছানা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছিল। গাড়ির গতি কম থাকায় বেঁচে গেল।
রিনী চেঁচিয়ে উঠল—
এসব বাজে গল্প বাদ দিয়ে এবারে মন দিয়ে গাড়ি চালাও!
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম—
সেভাবে চালাচ্ছি বলেই থামাতে পেরেছি। তবে মনে রেখো, যদি লোকটা সামনে আসে, থামানো যাবে না। গাড়ি চালিয়ে সোজা উপর দিয়ে চলে যেতে হবে।
রিনী গলায় আতঙ্কের ভাব ফুটিয়ে বলে উঠল —
সব জানলা-দরজা লক আছে তো? শুনেছি, কেউ নাকি গাড়ির জানলা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিল! কি যে হবে, যদি হঠাৎ করে সামনে এসে উদয় হয়।
বলতে যাচ্ছিলাম, হ্যাঁ লক আছে। কিন্তু বলার সময় পেলাম না।
হঠাৎই সামনে যা দেখলাম, তাতে আমরা সবাই স্তব্ধ!
আমার গাড়ির আলো একটা লোকের উপরে গিয়ে পড়েছে। প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে। লোকটা সামনের রাস্তায় কীরকম অদ্ভুতভাবে হাঁটছে। গাড়ি যেদিকে যাচ্ছে, ঠিক সেদিকে। কেমন যেন নেশাগ্রস্তের মতো টলতে টলতে হাঁটছে। তার গায়ে মাটি ধুলো, ছেঁড়া জামা। পুরনো দিনের পোশাক। ঠিক যেন সেই চাপা পড়া খনিশ্রমিক। গাড়ির আলোয় অদ্ভুত এক ছায়া পড়েছে তার চারপাশে।
এবারে বুঝলাম মিলন সত্যি ভয় পেয়েছে। ভয় যে আমরা একেবারে পাই নি, তা নয়। ইয়ার্কি করতে করতে এরকম একটা লোক যে সত্যি করে সামনে চলে আসবে ভাবতে পারি নি।
মিলনের কাঁপা গলা শুনলাম —
এই লোকটা এতো রাতে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কেন? সঙ্গে কোন টর্চও নেই! দেখছিল কি করে এতোক্ষণ?
সত্যিই! এতো রাতে এই অন্ধকারে এরকম পথে কীভাবে যাচ্ছে? পুরো নিশাচর হলেও এই অন্ধকারে এক পা এগোনো যায় না। ড্রাগ-অ্যাডিক্ট কি? এরকম কিছু লোক এ দেশে আছে। কিন্তু সে এখানে কী করছে? আশেপাশে তো থাকার মতো বাড়িঘরও নেই। এই বাকি পথ পেরোতে লোকটার সারা রাত কেটে যাবে।
থামিস না, রঞ্জন! একদম থামবি না। জোরে চালিয়ে বেরিয়ে যা। মিলনের কণ্ঠে এবার সত্যি ভয়।
ঠিক কথা। যেই হোক না কেন, এতো রাতে কোন স্বাভাবিক মানুষ এরকম করতে পারে না। আমি স্পিড বাড়িয়ে লোকটার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, লোকটা গাড়ি যে ওর পিছন থেকে আসছে সেটা বুঝতে পেরেও সে আলো দেখেও একবারও পিছনে ফিরে তাকাল না। কি আশ্চর্য!
পেরিয়ে আসার পরপরই স্বাতী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল
মুখ দেখতে পেলে?
না। রিনী বলে উঠল।
আমিও না।
কেউই দেখতে পাইনি। কারণ লোকটা এক মুহূর্তের জন্যেও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়নি। গাড়ি যখন পাশ থেকে যাচ্ছিল, তখনই একমাত্র হয়ত কিছুটা দেখার উপায় ছিল। কিন্তু বোধহয় সে সময় দেখা কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি, বা সাহসে কুলায়নি।
আমরা সবাই কিছুক্ষণ চুপ। লোকটাকে ফেলে ইতিমধ্যে মিনিট দুয়েক এগিয়ে এসেছি গাড়িতে ঝড়ের গতিতে চালিয়ে। মিলনই জোর করে প্রায় হেসে উঠে বলল—
দেখেছিস! ভয় দেখাতে গিয়ে তোরা নিজেরাই ভয় পেয়ে গেলি। সাহস থাকলে একটু ফিরে যাই না? দেখি লোকটা কে।
কথাটার মধ্যে কিছু হয়ত ছিল। তবে গাড়ি এরকম আকা বাঁকা সরু পাহাড়ি রাস্তায় ব্যাকে চালানো সহজ নয়।
তাই আমরা আলো জ্বালিয়ে রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। মিনিট পাঁচেক। কিন্তু কেউ গেলো না পাশ দিয়ে। লোকটা যেভাবে হাঁটছিল, এতোক্ষণে আমাদের পেরিয়ে যাওয়ার কথা।
হঠাৎ মিলন গাড়ির দরজা খুলে নামতে গেলো।
আমি বলে উঠলাম – এই পাগলামি করছিস কেন? ভেতরে এসে বোস।
কেন ভয় পাচ্ছিস? এতক্ষণ যে ভয় দেখাচ্ছিলি। চল না দেখে আসি জায়গাটা। সত্যি যদি কোন ভূত দেখার সুযোগ হয়। সারা বিশ্বে কেউ তো কোনদিন দেখে নি। আমরাই ফাস্ট দেখব হয়ত।
বলে হেসে উঠল।
আমি আবার বাস্তবে ফিরে এলাম। ২০২৫ সাল। ইংল্যান্ডে একটা নামী সংস্থায় আমি CXO লেভেলে কাজ করি। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হয়েছিলাম, পরে কেম্ব্রিজে পড়াশোনা করেছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে শেষে আমরাও ভূতে বিশ্বাস করে বসলাম।
আমরা চারজনে গাড়ি থেকে নেমে উলটোদিকে হাঁটা লাগলাম। সেই জায়গাটা পৌঁছতে মিনিট পাঁচেক লাগল।
শেষে খুঁজে পেলাম লোকটাকে। তবে লোকটা এখন আর হাঁটছে না। একটা গাছের নীচে বসে আছে। মুখে- চোখে ভয় আর আতঙ্ক। লোকটার মুখ অবশ্য ভূতুড়ে নয়, টর্চের আলোয় দেখে মনে হয় সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। আমরা এগিয়ে যেতেই, হঠাৎই সে পাগলের মতো উঠে দাঁড়ালো। তারপর কীসব বলতে বলতে উলটো দিকে ছুটে পালাল!
কি হলো রে? শেষে আমরা ভূতকে ভয় দেখালাম। হো হো করে হেসে উঠল মিলন।
ঠিক তখনই সামনের দিক থেকে একটা গাড়ির আলো এগিয়ে আসতে দেখলাম। সঙ্গে গাড়ির টায়ারের ঘষটানির আওয়াজ। সরু রাস্তা ধরে কোন গাড়ি দ্রুত আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়ির জানলা মনে হয় খোলা। ভেতরে জোরে কোন হারড রক মিউসিক চলছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গাড়িটা আমাদের সামনে পড়ল। গাড়ি চালাচ্ছে একটা কমবয়সী ছেলে! এখানকার।
কিন্তু সে আমাদের দেখে হাসল না, স্পিডও কমালো না, থামলও না। বরং গতি বাড়িয়ে সোজা যেন আমাদের দিকেই তেড়ে এলো। তারপরে আমাদের উপর দিয়েই গিয়ে চলে গেল গাড়িটা!
আমাদের কিন্তু কিছুই হল না। আমরা পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলাম অন্ধকারে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমরা চারজন স্তব্ধ হয়ে শুধু একে অপরের মুখের দিকে তাকালাম।
মিলন সম্বিৎ পেয়ে বলে উঠল, আরেকটু হলে চাপা পড়তাম। কি রেকলেস ভাবে গাড়িটা চালাল ছেলেটা। নাম্বার প্লেটটা দেখেছিস? আমাদের কমপ্লেন করা উচিত।
না দেখিনি। আমাদের এরকম জায়গায় সরু রাস্তার মধ্যে গাড়ি থেকে নামা একদম উচিত হয়নি।
রিনীর কাঁপা গলা—
কিন্তু আমাদের সবার একসঙ্গে চোখ খারাপ হল নাকি! গাড়িটা তো ঠিক যেন আমাদের উপর দিয়েই চলে গেলো। আমি তো ঠিক তাই দেখলাম।
হ্যাঁ, আমিও। কিন্তু তারপরেও আমরা সবাই বেঁচে আছি কি করে? স্বাতী বলে উঠল।
পুরো এলাকাটা ভূতুড়ে! রিনী কাঁপা গলায় বলে উঠল। আর এক মুহূর্ত এখানে থাকব না। চলো গাড়িতে ফেরা যাক।
আমি সত্যি কথা বলতে কোন কথা বলার মতো কথাও খুঁজে পেলাম না। রিনী, স্বাতী ঠিকই বলছে। এক মুহূর্তের জন্যে হলেও ঠিক যেন গাড়িটা আমাদের উপর দিয়েই চলে গেলো। কিন্তু ধাক্কা মারল না। আর যাই হোক এখানে থাকা একদম নিরাপদ নয়। সবকিছুই যেন অস্বাভাবিক।
জোরে হেঁটে বা বলা যায় কিছুটা ছুটে আমরা চলে এলাম আমাদের গাড়ির দিকে।
কিন্তু…
আমাদের গাড়ি কোথায়?
পুরো রাস্তা ফাঁকা।
গাড়ি যেন আমাদের মতোই অদৃশ্য হয়ে গেছে।
হঠাৎ স্বাতীর চোখ পড়ল রাস্তার এক কোণে। ও চেঁচিয়ে বলে উঠল – ওই – ওই যে।
ফোনের টর্চের আলো ফেলতেই দেখলাম— একটা ভাঙাচোরা মার্সিডিজ এসইউভি। অনেকটা ঠিক আমাদের গাড়ির মতোই। মরচেধরা লোহার কাঠামো। ভেতরে কেউ নেই।
আমরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। ফোনের গুগল ম্যাপে এখন রাস্তার নাম দেখে চমকে উঠলাম। স্পষ্ট দেখাচ্ছে – ডেড ম্যান’স লেন।
তারপর চারপাশের অন্ধকার যেন আমাদের একসঙ্গে গিলে নিল।