short-story-dehradune-prem

দেরাদুনের প্রেম
তসলিমা নাসরিন

চোখ খুলে দেখলাম আমি চিৎ হয়ে একটা সাদা চাদর পাতা বিছানায় শুয়ে আছি। ঘরটি ছোট, নোংরা, টেবিল চেয়ারে ধুলো। জানলার পাল্লা একবার খুলছে, একবার বন্ধ হচ্ছে। কখন থেকে শুয়ে আছি, জানি না। জ্ঞান হারিয়ে শুয়েছিলাম কি না জানি না। নাকি  ঘুমিয়েছিলাম জানি না। কেউ নেই পাশে যাকে জিজ্ঞেস করতে পারি এটি কার ঘর, কে আমাকে এই ঘরে নিয়ে এল। আমি কেন পাশ ফিরতে পারছি না, আমি কেন বিছানা থেকে উঠতে পারছি না, কেন আমার সারা শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার শরীরে কয়েক হাজার সুঁই গেঁথে রেখেছে, শুধু তাই নয়, কেউ যেন আমাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রেখেছে। ডান কাতে শুতে চাইলে বড় একটা ভোঁতা সুঁই ঢুকে যাচ্ছে পেটে। বাঁ কাতেও একই রকম। চেঁচিয়ে কাউকে ডাকতে চাইছি, পারছি না। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে, শব্দ বেরোতে চাইছে না। এই ঘর যে আমার সেই গ্যালাক্সি হোটেলের ঘর নয়, যে ঘরে আমি অন্তত এক সপ্তাহ আছি, বেশ বুঝতে পারি। বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না। ক্লান্তি চলে আসে, ক্লান্তিতে সাধারণত আমার ঘুম পায়। সেই ঘুমটাও পাচ্ছে না। আমার ঘুম ভেঙ্গেছে, আমি অনুমান করছি, জানালার খটাখট শব্দে। কিন্তু শাহিল কোথায়। আমার স্যুটকেস কোথায়? আমার ফোনই বা কোথায়? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। 

চোখ বুজে পড়েছিলাম। চারদিক অন্ধকার হয়ে এলে শাহিল ঢোকে ঘরে। ঘর বাইরে থেকে তালা বন্ধ ছিল। শাহিল তালা খুলে ঘরে ঢুকেছে। আলো জ্বালিয়ে বললো, সারাদিন তোমার কাগজপত্র তুলতেই ব্যস্ত ছিলাম। কী যে ঝামেলা বাঁধিয়েছ, তোমাকে বাঁচানোটাই তো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল! 

আমি ইশারায় পানি চাইলাম। তার হাতে পানির ছোট একটি বোতল ছিল। সেটিই দিল আমার হাতে। আমি শুয়ে শুয়েই পুরো বোতলের পানি শেষ করলাম। যেন মরুর শুষ্কতা পাঁজর জুড়ে। আরও চাই পানি। শাহিল বললো, কিছুক্ষণ পর সে শুধু পানি কেন, খাবারও আনাবে। আমি যেন বিশ্রাম নিই। 

আমাকে বাঁচানোটাই মুশকিল হবে কেন? কী হয়েছিল আমার? 

এইবার আমার শিয়রের কাছে বসে আমার একটি হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে শাহিল বললো, হোটেলে তোমার জ্বর হলো, জ্বরে তুমি তো বেহুঁশ হয়ে গেলে, তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে দেখি তোমার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। 

আমি উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলতে থাকি, আমার কিডনি কেন নষ্ট হবে? কোনও কারণ তো নেই। হাবিজাবি কথা বলো না তো!

আমার চোখে উপচে ওঠে জল। সে জল মুছে নিলেও আবার জলে ভরে যায় দু’চোখ। 

শাহিল ধমকের সুরে বলে, তুমি একটা আনস্মার্ট মেয়ে, নায়লা। কী বুঝবে তুমি তোমার কী হয়েছে? তুমি নায়লা আক্তার আর যা কিছুই হও, ডাক্তার তো নও। আমি শাহিল আহমেদ ডাক্তার। গঙ্গোত্রি হাসপাতালে আমি আজ চার বছর চাকরি করছি। 

আমি এখন কোথায়? এ তো আমার হোটেল নয়। আমার সুটকেস কোথায়? কিছুই তো দেখছি না, আমাকে এখানে কে নিয়ে এল? 

শাহিল উঠে বসতে চাওয়া আমাকে শুইয়ে দিয়ে বললো, গ্যালাক্সি হোটেল তো সেদিনই ছেড়ে দিয়েছি। তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলো। হোটেলে রেখে কী করবো। এতদিন হাসপাতালে ছিলে। এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট। কেউ থাকে না। খালিই পড়ে আছে। সে কারণে এখানে নিয়ে এলাম। তোমার হোটেলের টাকাটা বাঁচলো। 

আমি মৃদু স্বরে বলি, হাসপাতালে ছিলাম কতদিন? জানি না তো! ওখানেও বেহুঁশ পড়ে ছিলাম? আমি তো এমন বেহুঁশ আগে কখনও হইনি! 

হওনি, হয়েছো। কড়া স্বর শাহিলের। মানুষের কি অসুখ বিসুখ আগে যা হয়েছে, সেগুলোই হয়? নতুন করেও তো হয়। 

আমি মাথা নাড়লাম। হ্যাঁ, নতুন করেও হয়। তাই বলে এত বড় একটা অসুখ হয়ে গেল আমার, আর আমি কিছুই জানলাম না! অনেক প্রশ্ন উদয় হচ্ছে, কিন্তু শাহিলকে সব প্রশ্ন করতে আমার ভয় হতে থাকে। মনে হতে থাকে শাহিল আমাকে আবারও ধমক দেবে। আমাকে আনস্মার্ট, আনকুথ ইত্যাদি বলবে। 

 জানালায় অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকি। শাহিল ঘরটির ভেতর হাঁটাহাঁটি করতে করতে বলতে থাকে, যে ডাক্তার অপারেশান করেছে, সে দেরাদুনের সবচেয়ে ভাল নেফ্রোলজিস্ট। বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে।  কিডনির ডাক্তার  তার ওপরে কেউ নেই। এত বিজি ডাক্তার। তোমার অপারেশান করার সময় ছিল না তার। আমি হাতে পায়ে ধরে করিয়েছি। আমাকে চেনেন, তাই খাতির করলেন। 

শাহিল দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল। কথাগুলো আর কানে ঢুকছিল না আমার। জানিনা কোত্থেকে লু-হাওয়া ঢুকে আমার পাঁজরকে শুষ্ক করে তুলছিল। ভেতরে শুধু টের পাচ্ছিলাম এক মরু হুহু। জানালা থেকে চোখ সরিয়ে শাহিলের মুখখানা দেখি, মুখখানা চিনতে চেষ্টা করি, এই লোকটিই কি মালদার সেই লোকটি, যাকে শৈশব থেকে চিনি, যার জন্য কৈশোর জুড়ে আমারে অস্থিরতা ছিল! দুজন মিলে কাউকে না জানিয়ে রূপকথা সিনেমা হলে কতবার সিনেমা দেখেছি! এ কি সেই শাহিল? পনেরো বছরের দূরত্ব মনে মনে ঘুচিয়ে ফেলেছিলাম বলেই হয়তো এই শাহিলকে মালদার শাহিলই ভেবেছি। কিন্তু এই শাহিলকে আমার একটু একটু করে  অচেনা মনে হতে থাকে। পনেরো  বছর হয়তো একটি চেনা মানুষের অচেনা হয়ে যাওয়ার জন্য খুব বেশি বছর নয়। কিন্তু কারও কারও জন্য হয়ত অচেনা হয়ে যাওয়ার জন্য পনেরো যথেষ্ট’রও  বেশি। রূপকথা সিনেমা হলে শাহিল আমার একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে থাকতো। অন্ধকার হলের ভেতর শাহিলকেই আমার মনে হতো আমার একমাত্র নায়ক। তার সঙ্গেই বিয়ে হবে, ঘর সংসার হবে। এমন স্বপ্ন শাহিল দেখাতো আমাকে। কিন্তু একদিন হঠাৎ সে মালদা ছেড়ে চলে গেল। তার বাবার বদলির চাকরি, মুর্শিদাবাদ চলে গিয়েছিল বদলি হয়ে। শাহিল আমাকে কিছু জানায়নি সে যে চলে যাচ্ছে।  

পনেরো  বছর পর হঠাৎ, আমাকে আমূল চমকে দিয়ে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেসেজ করে জানালো সে দেরাদুনে থাকে, ভাল একটা ক্লিনিকে চাকরি করে। আমাকে খুব মিস করে। তাকে ফেসবুকের ফ্রেন্ড করে নেওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই সে একটু বেশি-রাতের দিকে  হাসপাতালের ব্যস্ততা শেষ হলে আমার সঙ্গে  কথা বলতো। প্রথম দিকে অডিও কল, এরপর ভিডিও কল। ভিডিও কল সে হাসপাতালে নিজের চেম্বারে বসেই করতো। তার নাকি খুব মনে পড়ছে পুরনো দিনগুলোর কথা। সে অনেকবার ভেবেছে দেখা করার কথা, এবার সে দেখা করবেই আমার সঙ্গে। বলেছিলাম সে মালদায় এলেই দেখা হবে, কিন্তু সে আসবে না মালদায়। তার আত্মীয় স্বজন মালদার জমিজমা বাড়িঘর বিক্রি করে দুবাই চলে গেছে। মাঝে মধ্যে সে দুবাই যায়, কিন্তু মালদায় যায় না। ঠিক আছে মালদায় যায় না তো যায় না। আমার সঙ্গে কেন সে দেখা করার জন্য ছটফট করেছিল? ছটফট করলেই বা আমাকে কেন স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে হলেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেরাদুন আসতে হলো? শাহিল টিকিট পাঠিয়েছিল বিমানের। কলকাতা থেকে দেরাদুন, ওয়ান ওয়ে টিকিট। ফেরার টিকিটের কথা সে বলেছিল মুখে না আনতে। আমি ভেবেছিলাম আমাকে বোধহয় দেরাদুনেই সে রেখে দিতে চায়। যদি পুরোনো প্রেম নতুন করে জেগে ওঠে ক্ষতি কী! আমি তো একাই বাস করি। বিয়ে থা করিনি, অনির্বাণের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বপ্নহীন একটা জীবন বয়ে বেড়াচ্ছি। হিন্দু মুসলমানে বিয়ে হতে দেবে না, না আমার পরিবার, না অনির্বাণের পরিবার। দুজনকে প্রাণে মেরে ফেলবে এমন হুমকি আসার পর দুজনই বিয়ের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছিলাম। পরে পরিবারের পছন্দের এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে অনির্বাণ। আমার আর ইচ্ছে হয়নি কাউকে বিয়ে করার। যেমন ছিলাম, বেশ ছিলাম। একটি হাইস্কুলে ইংরেজি পড়াই। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। টাকা পয়সার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না। একটা মেয়ের জন্য এর চেয়ে বড় স্বস্তির আর কী আছে! স্বস্তিতে থেকেও একটুখানি প্রেম পাওয়ার জন্য প্রাণ কেমন করেছে কি? নিশ্চয়ই করেছে, তা না হলে আমি কেন দেরাদুনে এসেছি! 

শাহিল তখনও কথা বলে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, শাহিল এক কথা বার বার বলছে। দেরাদুনে যখন নেমেছি, শাহিল দাঁড়িয়েছিল আমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য। শাহিলকে সেই কৈশোরের পর প্রথম দেখছি ঠিক বলা যাবে না, ভিডিও কলে গত কয়েক মাস অনেকবারই দেখেছি। তারপরও সামনাসামনি দেখাটা আলাদা। পনেরো বছরে শাহিলের চুল কমেছে, চাপ দাড়ি গজিয়েছে, গায়ে মেদ মাংস বেড়েছে। আগের ছিপছিপে লম্বাটে কলেজ ছাত্র শাহিল এখন ডাক্তারি করে। কেন শাহিল পনেরো বছরে একবারও মালদায় যায়নি, একবার আমার সঙ্গে দেখা করেনি, এই প্রশ্নের উত্তর সে এড়িয়ে গেছে। তার ছোট ভাই শাকিলকে আমি মালদার ইংলিশ বাজারের রাস্তায় দু’তিনবার দেখেছিলাম, কিন্তু কথা হয়নি। জিজ্ঞেস করতে অবশ্য ইচ্ছে হয়েছিল শাহিল এখন কোথায় আছে, কেমন আছে। 

শাহিল আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে দেরাদুনের গ্যালাক্সি নামের একটা হোটেলে নিয়ে গেল। হোটেলের রিসেপশানে এমন ব্যবহার করলো যেন আমি তার বিয়ে করা বউ। একটি রুমই দুজনের জন্য নেওয়া হলো। শাহিল রুমসার্ভিসেকে বলে রুমেই খাবার আনালো, আমার কী খাবার পছন্দ তা জেনে নিয়েই আনালো। আমি স্নান সেরে এসে খেতে বসলাম। মাথায় সাদা টাওয়েল পেঁচানো, গায়ে সাদা বাথরোব। শাহিল রুটি মাংস নিজে খেল আর আমাকে মুখে তুলে খাওয়ালো। আমার মনে হচ্ছিল আমি ঠিক এই জগতে নেই, অন্য একটি জগতে আমি সাঁতার কাটছি। আমার পিঠে দুটো সাদা ডানা, মেঘের মতো আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছি। আমার উথাল পাথাল কৈশোরে শাহিলকেই ভাবতাম আমার সবচেয়ে আপন মানুষ। এই পরিণত বয়সে আমার হাতে আমার কৈশোরকে উপহার দিচ্ছে শাহিল। আমি কেন মুঠো খুলে স্বপ্নকে কর্পূরের  মতো নিঃশেষ হতে দেব!

রাতে শাহিল আমাকে গভীর করে চুমু খেল। আমার সালোয়ার কামিজ ওড়না খুলে ফেলতে ফেলতে বললো, এত গরমে এত কাপড় কেন গায়ে রাখো বলো তো, তারপর আমার শরীরের সুগন্ধ নিতে নিতে সে মাতাল হলো। আমি বাধা দিলাম না, কারণ শরীরটা স্পর্শহীন পড়ে ছিল কয়েক বছর। ভালবাসার স্পর্শ কার না ভাল লাগে! শাহিলকে তো মনে মনে কতই কামনা করতাম, কিন্তু সে তো দুজনকে একসঙ্গে এক শহরে বেড়ে উঠতে দিল না, হারিয়ে গেল। ফিরে যখন এলই, কেন মুখ ফিরিয়ে থাকবো! শাহিল আমার ভেতরে নির্দ্বিধায় প্রবেশ করতে করতে বললো, ‘অনির্বাণের সঙ্গে অনেকদিন শুয়েছ, বলেছ। কিন্তু মনে হচ্ছে একেবারে ভার্জিন।’ আমি লজ্জায় মুখ ঢাকলাম দু’হাতে। পরদিনও শাহিল আমাকে সাত আসমানে ওড়ায়, তার পরদিনও। আমার শরীরে যে নিভৃতে একটি নদী লুকিয়ে থাকে, তার সব কচুরিপানা সরিয়ে শাহিল তরঙ্গ তৈরি করে। সেই তরঙ্গ আমার হৃদয়কে উদ্বেলিত করে।

বিয়ে করবে বলেই আমাকে ডেকেছে শাহিল। বিয়ের আগে কিছুটা মেলামেশা করতে হয়। সেই মেলামেশা তো আমাদের মালদার ইংলিশ বাজারেই হয়ে গেছে। কিন্তু চৌদ্দ পনেরো বছর বয়সের মেলামেলা কি তিরিশোর্ধ বয়সের মেলামেশার সমান? একবার বলি না, একবার বলি হ্যাঁ। তখন শুধু চুমু খেয়েছিল, আর বুকে একটু হাত দিয়েছিল, আর এইবার আমার গভীর পর্যন্ত শাহিল ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছে গেল। যদি মালদা ছেড়ে চলে না যেত আমাকে একা ফেলে, তাহলে আমি তো তারই ছিলাম। অনির্বাণ এল তো শাহিল ছিল না বলেই। কিন্তু শাহিল তার দেরাদুনের  বাড়িতে না নিয়ে আমাকে হোটেলে ওঠালো কেন, এই কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিল সে ডক্টরস কোয়ার্টারে থাকে, সেখানে উঠলে লোকে নানা কথা জিজ্ঞেস করবে, বিয়ে হয়েছে কি না, পরিবেশ মোটেও ভাল নয়, তাছাড়া মালদার লোকও কিছু ওই কোয়ার্টারে আছে। শাহিল চাইছে বিয়ে দুবাই গিয়েই করবে, আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দেরাদুনে ফিরে সংসার করবে। 

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর আমার মালদার ইস্কুলের চাকরি? 

শাহিল হেসে আমার নাক টিপে দিয়ে বললো, দেরাদুনে বদলি করাতে দুমিনিট লাগবে। 

শাহিল যেন উড়ে এসে আমার জীবনে জুড়ে বসলো। আমি ঠিক বুঝে ওঠার আগেই আমাকে সম্পূর্ণ অধিকার করে নিয়েছে। আমি আর আমার নই। সে যা বলছে আমি ঠিক তা-ই করছি। বলছে আজ ঘরেই থাকো, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। আমি ঘরেই থাকছি। বলছে আজ আর ভাত খাওয়ার দরকার নেই, আজ পিৎজা খাও, আমি দিব্যি পিৎজা খাচ্ছি, ভাত খাচ্ছি না। বলছে আজ সালোয়ার পরো না, আজ জিন্স পরো, আমি ঠিক ঠিকই জিন্স পরছি। একবার গাড়ি চালিয়ে আমাকে দেরাদুনের স্নো দেখিয়ে নিয়ে এল। বললো দুবাইয়ে তার বাবা মা’র সঙ্গে একদিন  কথা বলিয়ে দেবে। সেই কথা বলার দিন আসার আগে আমার জ্বর এল।  

শাহিল আবার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, জ্বর হয়েছিল, ভীষণ জ্বর। জ্বরে অজ্ঞান হয়ে গেলে। 

জ্বর সারাতে তুমি বললে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আমি তো কতবার বললাম, প্যারাসিটামল খেলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি মানলে না। দিলে না প্যরাসিটামল। 

শাহিল বলছে যে আমি জ্বরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানি আমি অজ্ঞান  হইনি। জ্বর সারাতে হাসপাতালে নিয়ে গেল আমাকে। হাসপাতালে শাহিলকে দৌড়োদৌড়ি করতে দেখলাম। আমাকে পেটের সিটি স্ক্যান করা হলো। কিন্তু কেন করা হলো তা বুঝিনি। শাহিলও কিছু বললো না। আমি সম্পূর্ণ তার ওপর ভরসা করে আমার জ্বর সারাবার ভার তার ওপর দিয়ে, খুব ঘুম পাচ্ছিল, সিটি স্ক্যান যেখানে করা হয়, সেখানে একটা সাদা বিছানা ছিল, শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর ঘুম ভাঙলে দেখি আমি একটা নোংরা ঘরে, কিন্তু জায়গাটা হাসপাতাল নয়। শাহিল বললো ওটি একটি খালি অ্যাপার্টমেন্ট। 

 শাহিল আমাকে সেদিন না দিলেও এখন খেতে দিচ্ছে প্যারাসিটামল। অ্যান্টিবায়োটিকও দিচ্ছে। আমার তো জ্বর নেই, এত ওষুধ দিচ্ছ কেন? 

এবারও শাহিল দেয়ালের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, তোমার তো অপারেশান হলো। সে কারণেই। ব্লাড প্রেশার ভীষণ বেড়ে গিয়ে কিডনির বারোটা বেজেছিল। দুটো কিডনিই যাচ্ছিল, একটা কিডনি কোনওভাবে রক্ষা করা গেছে। 

ঘরময় পায়চারি করছিল শাহিল। তাকে ডেকে পাশে বসালাম। শান্ত হতে বললাম। বললাম, ‘তুমি ডাক্তার, আমার ভাল চিকিৎসাই তো তুমি করবে।’ ভাবি, যার সঙ্গে কদিন পর বিয়ে হবে আমার, তাকে এমন উদ্বিগ্ন দেখলে ভাল লাগবে কেন আমার! আমি ডাক্তারির কী বুঝি। শাহিল যা করেছে, আমার ভালর জন্যই করেছে। আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে রাখলো শাহিল। আমার একটি হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে পাশে শুলো। শাহিলের গা থেকে ব্রুট পারফিউমের সুঘ্রাণ ভেসে আসছিল। ব্রুট আমার প্রিয়, একবার অনির্বাণকে উপহার দিয়েছিলাম। 

রাতের খাবারের অর্ডার দিল শাহিল। খাবার এলে মুখে তুলে খাইয়ে দিল। এত আদর শাহিল করতে পারে, যেন ও ডাক্তার নয়, ও নার্স। পেটের যে জায়গাটা কেটেছে, সেখানে নিজে হাতে ড্রেসিং করিয়ে দিল। প্রস্রাবের জন্য একটি নল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিজে হাতে প্রস্রাব যে ব্যাগে জমা হচ্ছে, সেটি খালি করে আবার লাগিয়ে দিল। 

সন্ধ্যের সময় আমি যখন ভাবছি এই হোটেল থেকে গ্যালাক্সি হোটেলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে, ওখানে আমার সুটকেস আছে, আমার হাতব্যাগ আছে, যে ব্যাগে আমার ফোন, টাকা পয়সা, ক্রেডিট কার্ড। শাহিল বললো, আমাকে আজই বাসে দিল্লি যেতে হবে। দিল্লি থেকে যেন আমি কলকাতায় চলে যাই ফ্লাইটে। প্রস্রাবের ব্যাগটা সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে। কলকাতায় গিয়ে যেন বাড়িতে ডাক্তার ডেকে ব্যাগটা খুলে নিই। এই অপারেশানের শরীর নিয়ে বাস জার্নি! শাহিল আবার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললো, এই ব্যবস্থাটি করতে সে বাধ্য হয়েছে, কারণ হাসপাতালের জরুরি কাজে কয়েকদিনের জন্য তাকে চেন্নাই যেতে হচ্ছে কাল সকালে। আর শাহিল ছাড়া দেরাদুনে একা একা থাকা আমার পক্ষে ঠিক হবে না। 

নায়লা তুমি তো শক্ত মেয়ে, পারবে তো একা যেতে? বাসে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে, ডোন্ট ওরি, আমি দিয়ে দিচ্ছি ওষুধ। দেখবে ঘুম যখন ভাঙবে, তুমি দিল্লিতে। একটা উবার নিয়ে চলে যাবে এয়ারপোর্টে। ওখান থেকেই কলকাতা যাওয়ার টিকিট কিনে নেবে। ইজি, খুব ইজি। তুমি স্মার্ট মেয়ে। স্মার্ট মেয়ে না তুমি? আমার কিন্তু স্মার্ট মেয়েদের পছন্দ। স্মার্ট না হলে সাবলম্বী হওয়া যায় না। 

আমি মাথা নাড়ি, পারবো। 

 দেরাদুনে এসে আমি শাহিলকে ফ্লাইট টিকিটের দাম দিতে চেয়েছিলাম আট হাজার টাকা। কিছুতেই নেয়নি। বলেছে, তোমার জন্য এইটুকু করতে পারবো না? দেরাদুন থেকে দিল্লি যাওয়ার বাস টিকিট শাহিলই কিনেছে। তবে একটা বিল শেয়ার না করে পারেনি, বললো চিকিৎসার খরচ এক লাখ টাকা হয়েছিল, পঞ্চাশ হাজার টাকা শাহিল নিজেই দিয়েছে, আর আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছে। আর কিছু টাকা তো গেছেই হোটেল খরচ। শাহিল কী করে টাকাটা নিল, আমি জানি না। একবার শুধু বললো, ডোন্ট ওরি, তোমার ব্যাগেই কার্ড ছিল, অসুবিধে হয়নি। 

 রাতে আমাকে অন্ধকার বাড়িটি থেকে নিজেই তার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল বাসস্ট্যান্ডে, অবশ্য মাঝখানে গঙ্গোত্রিতে ঢুকে আমার সুটকেস নিয়ে এসে আমাকে দিল, বললো, ‘তোমার হাতব্যাগ সুটকেসের ভেতরেই ভরে দিয়েছি।’  বাস দাঁড়িয়ে ছিল দিল্লি যাওয়ার। যতক্ষণ না বাস ছাড়ছে শাহিল বসে ছিল আমার পাশে। বলছিল যে আমাকে আরও কিছুদিন কোনও ফাইভ স্টার হোটেলে রাখা উচিত ছিল, আমার শুশ্রুষা করা ওর দায়িত্ব ছিল, আর যদি যেতেই হতো মালদায়, বিমানে তুলে দিতে পারতো সে। কিন্তু চেন্নাইয়ের জরুরি কাজের জন্য সে যা চেয়েছিল, কিছুই করা সম্ভব হয়নি। আমি যেন মালদায় গিয়ে ফোন করে জানাই ঠিকঠাক পৌঁছেছি কিনা। আবার বলতে শুরু করলো সেদিনের কথা, সেদিন সে না থাকলে আমার যে কী হতো ভেবে সে থেকে থেকে আঁতকে উঠছে। শাহিল ছিল বলেই আমি এ যাত্রা বেঁচেছি। আমি যেন এখন থেকে খুব সাবধানে থাকি। কোনও ভাইরাস যেন আবার আমার অন্য কিডনিকে আক্রমণ না করে। শাহিল ক্রমাগত উপদেশ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি শুনতে শুনতে একসময় ওকে শুনিনি, ওর শুধু ঠোঁটের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছিলাম। এটা অদ্ভুত, যদি কারও কথা না শুনতে ইচ্ছে করে, তাহলে তার কথা আমি শুনতে পাই না। কানের কাছে চিৎকার করে বললেও তাকে আমি শুনি না। আমার তলপেটে যন্ত্রণা হতে থাকে। আমি এই যন্ত্রণার কথা শাহিলকে বলি না। 

বাস চলতে শুরু করলে শাহিল হাত নেড়ে বিদেয় নিল। আমার ভেতরটা দীর্ঘবছর শ্যাওলা জমে যাওয়া অব্যবহৃত পুকুরঘাটের মতো স্তব্ধ হয়ে থাকে অনেকক্ষণ। শাহিলের দেওয়া ঘুমের আর ব্যথার ওষুধ একটির বদলে দুটো করে খাই। খাই কারণ শরীরে এবং মনে যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে, সেটি কিছুতেই কমছে না, বরং হৈ হৈ  করে বাড়ছে। ঘুমোলে যন্ত্রণা টের পাবো না, যন্ত্রণা কমার ওষুধ একটু বেশি করে খেলে যন্ত্রণা আমাকে বার বার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে না। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার এই সিদ্ধান্তটা শাহিল বেশ ভাল নিয়েছে। হাসপাতালেও নিশ্চয়ই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল, তাই কী ঘটেছে কিছুই টের পাইনি। রাতের বাসে চেয়ারগুলো অনেকটাই পেছনে নামানো যায়। অমন হেলান দিয়ে শুয়েও, ঘুমের ওষুধ দুটো খেয়েও আমার ঘুম আসে না। সারারাত জানালার ওপারে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার মনে হতে থাকে ওই ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে আমি দাঁড়িয়ে আছি একা। আমার কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।  দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আরও ঘোর অন্ধকারের অতল গহ্বরে আমি তলিয়ে যেতে থাকি। কেউ নেই আমাকে হাত ধরে টেনে তোলে। 

কী করে আমি দিল্লি পৌঁছেছি, কী করে দিল্লি থেকে মালদা পর্যন্ত পৌঁছেছি, সেইসব রোমহর্ষক কাহিনী আর না-ই বা বললাম। শুধু এইটুকু বলে রাখি, মালদায় পৌঁছোতে আমার ছ’দিন লেগেছিল। শাহিলকে অনেকবার ফোন করেছি। ও ফোন রিসিভই করেনি। চেন্নাইয়ে বোধহয় ব্যস্ত, সে কারণে ফোনে কথা বলার সময় নেই। এ ছাড়া আর কী বলে নিজেকে প্রবোধ দিতে পারি আমি! নিজেকে তো আমার টেনে তুলতে হবে অতল গহ্বর থেকে। 

ছ’দিন পর মালদার ঘরে ঢুকে ঘরের কাজকর্ম করার সহায়িকা সেলিমের মাকে ডাকলাম, তাকে দিয়ে পাড়ার সফিকুল ডাক্তারকে ডেকে আনালাম। ওই ডাক্তার একটা নার্সকে ডেকে এনে আমার প্রস্রাবের রাস্তায় যে নল বসানো হয়েছিল, সেটা খোলালেন। রক্ত উপচে পড়েছে। ডাক্তার আমাকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি হতে বললেন মালদা সরকারি হাসপাতালে। ভর্তি হওয়ার পর কয়েকজন ডাক্তার আমার সঙ্গে কথা বলে হিস্ট্রি নিলেন। প্রশ্ন এবং উত্তরগুলো এমন ছিল। 

–আপনার কি কখনও কিডনির কোনও অসুখ ছিল? 

–না। 

–কখনও ইউ টি আই হয়েছে? প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশান? ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া, কিন্তু প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা হওয়া? ঘন ঘন গা কেঁপে জ্বর আসতো, ইউরিন করতে গিয়ে জ্বালা পোড়া ছিল? 

আমি মাথা নাড়ি। কখনও এমন ছিল না। 

জীবনে কখনই হয়নি? 

–- না। কখনই না। 

–প্রেশার হাই ছিল কখনও? 

–না। 

–পেটে ব্যথা ছিল? 

–না। 

–তাহলে ক্যাথিটার লাগানো ছিল কেন? 

–আমার জ্বর হয়েছিল দেরাদুনে। সর্দি কাশির জ্বর। এ রকম জ্বর হলে আমার সেরে যায়, ম্যাক্সিমাম সাত দিন। 

–জ্বর হয়েছিল, তারপর কী হলো? 

–তারপর আমাকে একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। 

–ক্লিনিকে কী করা হয়? 

–সে আমি জানি না। তবে বলা হয়েছে অপারেশান হয়েছে, অপারেশান নাকি সাকসেস্ফুল। 

শাহিলের দেওয়া কাগজপত্র সব ডাক্তারের হাতে দিলাম। ডাক্তাররা পড়ে নিজেদের মধ্যে মৃদু স্বরে কথা বলে নিলেন। আমি অনুমান করি তাঁরা বিশ্বাস করেছেন যে আমার এমন ভয়ংকর কিছু ঘটেছিল, যে ভয়ংকর কিছু থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য একটি কিডনি ফেলে দিতে হয়েছে। চার জন ডাক্তারের মধ্যে একজন ডাক্তার করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার ঠোঁট শুকিয়ে মরাকাঠ হয়ে আছে, গলা এমন শুকিয়ে গেছে যে কথা বলতে গেলে ফ্যাসফ্যাস করে শব্দ হচ্ছে। সেই ডাক্তারটি দাঁড়িয়ে থাকা নার্সকে বললেন আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে। 

সেই ডাক্তারটিই, নাম মোজাফফর হোসেন, সন্ধের দিকে আমার শরীরের অবস্থা দেখতে এসেছিলেন। তখন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তো মালদার লোক, দেরাদুন কেন গিয়েছিলেন? 

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, বেড়াতে। 

এবার ডাক্তার বললেন, দেরাদুন থেকে দেওয়া কাগজপত্রে আপনার যে হিস্ট্রি লেখা হয়েছে, তাতে  আছে, আপনি অনেক বছর যাবৎ কিডনির রোগে ভুগছিলেন, চিকিৎসা করাতে নাকি দেরাদুন গিয়েছিলেন। 

–আর কী লেখা আছে ওতে? 

–লেখা আছে আপনার পেটে প্রচণ্ড পেইন ছিল। কিডনিতে স্টোন ছিল, ইনফেকশান ছিল।

দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আমার।

–দেরাদুন যাওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করাননি কখনও?

–স্কুল থেকে বছর বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হতো টিচারদের। আমার কোনও অসুবিধে তো ধরা পড়েনি কখনও। বরং স্বাস্থ্য পরীক্ষা যাঁরা করতেন, বলতেন, আমার স্বাস্থ্য নাকি অন্য সব টিচারের  থেকে ভাল। 

 –দেরাদুনে জাস্ট বেড়াতে গিয়েছিলেন?  

–এক ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। 

–বন্ধুটির নাম কি? ক্লিনিকের নামই বা কী? 

আমি চোখ বন্ধ করি। আমার যে কোনও প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না, ডাক্তার বোঝেন। এবার ডাক্তার মোজাফফর আমাকে বললেন, ‘দেখুন, একটা কিডনি নিয়েও কিন্তু বেঁচে থাকা যায়। আপনি হতাশ হবেন না। আগে আপনার ব্লাড প্রেশার নরমাল ছিল, তবে এখন থেকে প্রেশারের ওষুধ খেতে হবে। একটা কিডনি নেই বলে প্রেশার বেড়ে গেছে। আপনার তো দুটো কিডনিই ওরা নিয়ে নিতে পারতো। ভাল যে একটি রেখেছে। আমি তো বলবো আপনি লাকি।’ 

প্রেশারের ওষুধ আর ক্যাথিটারের কারণে যে ইনফেকশান হয়েছে, সেটি সারানোর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দুদিন পর হাসপাতাল থেকে আমাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়। 

এর তিন সপ্তাহ পর স্কুলে জয়েন করি। কলিগরা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আনন্দে। 

–‘এত দিন পর কেন? বিয়ে টিয়ে করেছো নাকি?’

 একজন কলিগ ঘনিষ্ঠ ছিল, সে তো ছড়িয়ে দিল, ‘দেরাদুনে গিয়ে ও তার বাচপান কা পেয়ার, চাইল্ডহুড সুইটহার্টকে বিয়ে করেছে। বর ডাক্তার।’ 

আমি তাদের থামতে বলি না। মুখে আমার চাপা হাসি, চাপা হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকে চাপা কান্না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *