গত তারার আলো

গত তারার আলো
আশান উজ জামান


দূর মফস্বলের এক বাজারে, ভেঙে পড়বে-পড়বে এমন এক বিল্ডিংয়ের ধূসর গায়ের ওপর সুখরঙের প্রলেপ দিয়ে তার ওপর, আঁকা ছিল এক-দেওয়াল এক হাসি। হাসিটা নিষ্কলুষ, আর মিষ্টি। ভীষণ আত্মবিশ্বাস আর স্নিগ্ধতা ঠিকরে পড়ত। এত আন্তরিক চাহনী, দেখলে মনে হতো দেখতেই থাকি। অথচ তুমুল ঝড়ের আভাস আনা এক সকালে দেখা গেল হাসিরাঙা মুখটায় ইচ্ছেমতো চুন-কালি লেপ্টে দিয়েছে কেউ। আর মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতে মাখিয়ে দিয়েছে তাজারঙ রক্ত। অতিরিক্ত রক্তরঙের ধারা বেয়ে পড়তে পড়তে জমে গেছে থুতনি বরাবর।
তা দেখে মুখ চেপে হাসছে কেউ কেউ, যেন হাসছে না। হয়তো তারা খুশি ভেতর ভেতর, যদিও ঠোঁটের কোনায় মেঘ। তবে বেশিরভাগ লোকজন গালাগাল করছে গালভরে, আর দিচ্ছে হুমকি-ধমকি, যে করেছে তাকে পেলে ছবির ওই রক্তাভ দাঁত দিয়েই যেন ছিঁড়ে ফেলবে তাকে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে যে কাজের কাজটাই করা হচ্ছে না, সে ভাবনা এল না তাদের মাথায়। এল এক তীব্র তরুণের মনে। আসতেই বহু আয়োজন করে সেই রক্ত কালি আর চুন মুছে সে ‘ফুলের মতো পবিত্র’ করে দিল প্রাণের নেতার মুখ।
তারপর কীভাবে যেন ছড়িয়ে পড়ল ওই ‘সাফাইয়ের’ ভিডিও। পড়তেই হুলস্থূল দেশময়। ধন্য ধন্য রটে গেল ছেলেটার নামে। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাকে ফোন করলেন, ধন্যবাদ জানালেন। আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন, এরপর রাজধানীতে গেলে সে যেন তাঁর দপ্তরে যায়। কাজ নেই শুনে একটা চাকরির ব্যবস্থাও করে দিলেন।
ব্যাপারটা অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। বিরূপ প্রতিক্রিয়াটুকু গলা পর্যন্তু আসতেই যদিও তারা গিলে ফেলেছিল ঢোক গেলার ভান করে। তবে কেউ কেউ তো থাকেই, যারা এমনিতেই এত ঢোক গেলে যে, ভান করে আর কথা গিলতে মন চায় না। অথবা জিহ্বা তাদের পিছলা ভীষণ- কোনো কথা একবার এসে সেখানে পড়লেই হলো, লজ্জা বা ভয়ের ঠোঁটে তাকে আটকে রাখার আর উপায় থাকে না। এমন একজনের কথাই আমরা শুনব এখন।
মানুষটা একজন রিকশাচালক। রিকশায় ভর দিয়েই সে বড় করেছে বাচ্চাদের। সংসারজীবনে তারা সবাই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত; রাজার হালে না থাকলেও রিকশা চালানো লাগে না। তবে আয় তাদের এতটাও বেশি না যে বাবা-মাকে খাওয়াতে পারবে। বাবার অবলম্বন তাই এখনো ওই জঙধরা হ্যান্ডেল আর নড়বড়ে প্যাডেল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকটার গায়ের জোরও কমে গেছে। পুরোনো রিকশাখানায় উঠতে চায় না লোকে। কমে গেছে আয়ের বহর। তিনবেলা আহার জুটাতে খাবি খেতে হয়। বুকে ঘর গড়েছে দম আটকানো এক রোগ। এতকিছুর পরও, পথে বেরোলেই নিজেকে তার রাজার মতো লাগে। গত প্রায় একজীবন ধরে যে গাছগুলো সে লাগিয়ে চলেছে রাস্তার ধার দিয়ে, সুযোগ পেলেই তারা কুর্নিশ করে তাকে। বাতাস করে মাথা দুলিয়ে। ছেলে-মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে মাথার উপর, রোদ লাগতে দেয় না। সে ছায়ায় কেমন শান্তি শান্তি তৃপ্তির ঘুম ধরে লোকটার। সেই তৃপ্তিভেজা মুখেই সেদিন দুঃখ জানাচ্ছিল সে।
“হাজার হাজার গাচ লাগাইচি খায়ে না-খায়ে। সারাদিন রিশকা ঠেলে আইসে বিকেল-সন্দেয় আবার পানি দ্যাও, কোনো গাচ হলদে হয়ে যাচ্চে ওষুদ দ্যাও, গরু ছাগলে ছাল ছাড়ায়ে খায়ে ফেলেচ গবর লাগাও, ডাল পাতা ছেটে দ্যাও – কত কাজ! এত কষ্ট করে এরাম এ্যাটটা কাজ করে যাচ্চি, কেউ একদিন নামও করলে না, পশংসা তো দুরির কতা! আর এ্যাটটা কচুর পোস্টার ছাফ করেই এ্যাতো কিচু! শালার দুনিয়া, তেলের দামই বাড়ে শুদু, ভালোর কোনো দাম নেই।”
রিকশায় তখন যাত্রী ছিলেন স্থানীয় সরকারী কলেজের এক শিক্ষক। গল্প কবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন যৌবনে। কিন্তু পাঠক না পেয়েই হোক, বা নিজের জ্ঞানবুদ্ধিতেই, বুঝেছেন যে ও কাজ তার জন্য না। তবে লেখা ছাড়লেও লেখকের যন্ত্রণা প্রায়ই চাগান দেয় বুকে। আর তিনি আপসোস করে বেড়ান। আপসোস করলেন রিকশাচালকের মর্মান্তিক আহাজারি শুনতে শুনতেও। নিজেরও হয়তো অমন কোনো ব্যথা লুকোনো আছে তার বুকের কাছে। হয়তো এমন কিছু তিনিও করেছেন, যার স্বীকৃতি পাননি। বা এমন আরো মানুষকে তিনি চেনেন, যারা আরো আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, কিন্তু পড়ে আছেন আড়ালেই। সকলের ব্যথাই যেন জট পাকিয়ে ঘূর্ণি মারে বুকের ভেতর। পরের ক’টা দিন তিনি তাই আটকেই থাকলেন ব্যাপারটায়। তা ছাড়া পাওয়ার চেষ্টায় কত কীই না করে মানুষ। তিনি লেখক, ছুটোছুটি হুটোপাটি না করে, লিখলেন একটা গল্প। তাতে দেখা হলো পোস্টার সাফ করা ছেলেটা আর গাছ লাগানো ওই রিকশাচালকের। তার রিকশায় চড়েই পুরস্কার হিসেবে পাওয়া চাকরিতে যোগ দিতে যাচ্ছে ছেলেটা। মুখে তার গর্বের রোদ; গর্বভরেই সে বলে চলেছে তাকে বলা প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো। শুনতে শুনতে সরল গরল মন্তব্য করছে রিকশাওয়ালা; মুখে তার তুলনার মেঘ। ছেলেটা তা মানবে কেন? সে গিয়েছে রেগে। ফলাফল হম্বিতম্বি চড়-থাপ্পড়। যতটা গড়ানোর, রাগের কারণে জল তখন গড়িয়ে গেছে তার চেয়েও বেশি। তাতে চেপে যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে গল্পটা, সেখানে ফুটে উঠেছে বেশ মায়াময় এক মানবিক আবেদন।
পড়তে গল্পটা খারাপ লাগলো না লেখকের। তাই ছাপার জন্য পাঠালেনও বড় মুখ করে। তবে ‘সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার’ রসদ থাকার অজুহাতে কোনো পত্রিকাই ছাপলো না সেটা। বাধ্য হয়ে লেখক সেটা ঝুলিয়ে দিলেন তখনকার সবচে’ জমাট সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের নীল দেয়ালে। কিন্তু যে প্রতিক্রিয়া পাবেন ভেবে তিনি উত্তেজিত, তার কিছুমাত্রও বাস্তব হলো না। আঙুলে গোনা গোটা কয়েক লাইক আর তারো কম কয়েকটা কমেন্টের মধ্য দিয়েই গল্পটার আলোচনা সমালোচনা শেষ হলো, যার অধিকাংশই আবার ‘১০০% বাস্তব!’ আর ‘প্রাণ ছুঁয়ে গেল’। ফলে বহুবারের মতো আবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, লেখালেখির চকমকি প্রজাপতির পেছনে তার বালসুলভ অকারণ দৌড় আর না। কত স্বর্ণসময় তিনি খুইয়ে ফেলেছেন এ দৌড়-এ, সংসারের কত কাজে-অকাজে মাথা দিতে পারেননি। সুখী করতে পারেননি স্ত্রী-সন্তানদের। পারেননি পেশাজীবনের ধাপগুলোও ঠিকঠাক পেরোতে। যত দুর্দশা তাকে ঘিরে থাকে প্রতিদিন, তার অধিকাংশই কি এই লেখাপ্রেমের জন্য না? ভেবে ভেবে ভারি কিছু ভর্ৎসনাও করলেন নিজেকে।
তার ক’দিন পরই জানা গেল, শহরের এক নাম-না-ফোটা নেতা একটা রিট করেছে তার নামে। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে লেগে থাকা চুনকালি মুছে দেওয়ার মতো মহৎ কাজের সমালোচনায় ব্যঙ্গাত্মক গল্প লিখে প্রকারান্তরে তাঁর নামে মিথ্যাচার ও কটূক্তি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপরাধে মৃন্ময় মানবকে কেন আইনের আওতায় আনা হবে না।’ স্থানীয় একটা পত্রিকায় ব্যাপারটা পড়েই তিনি বুঝলেন, লেখা মানুষ পড়ে এখনো, তবে বোঝে না আর। তা বুঝুক বা না বুঝুক, যা হতে চলেছে তাতে তার সমূহ সংকট। নিরীহজন, গ্রেফতার ট্রেফতার হয়ে গেলে ছাড়ানোর কেউ নেই, অস্থির হয়ে উঠলেন তিনি। এখানে ওখানে যা দু’চারজন পরিচিত লোক ছিল, তাদের ফোন করলেন। তারা বললো এ তেমন কিছু না। রীট, শুনানী, চার্জশীট পেরিয়ে গ্রেফতার হতে হতে যে সময় তাতে মানুষ নিশ্চয়ই বুঝবে, তিনি সত্যটাই লিখেছেন। তবু তিনি নির্ভার হতে পারছিলেন না। তারচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিলেন তার স্ত্রী। ফলে সেদিন যখন ক’জন প্রাক্তন ছাত্র এলো স্যারের সঙ্গে দেখা করবে বলে, গুছিয়ে নিতে দেখে বরকে বাধা দিলেন তিনি। এই অবেলায় বাইরে কেন? কার সঙ্গে দেখা? কী দরকার যাওয়ার! দিনকাল খারাপ, কী থেকে কী হয় না হয়। এটা সেটা বলেও কাজ হলো না দেখে বাজারের একটা ফর্দ ধরিয়ে দিলেন। দিলেন কাজ সেরে বেলায় বেলায় ফিরে আসার নির্দেশও।

প্রতিটা কাজেই বউ তার সঙ্গে খিটমিট করে, বিষময় অবজ্ঞার চোখে দেখে, ভালো লাগে না আর। মন খারাপ করেই বেরুলেন স্যার। দরদাম করে একটা রিকশায় উঠলেন। উঠতেই খুশি হয়ে উঠল মন। দু’ধারের ছাদগুলোতে রঙের মেলা। দড়িতে বুক বাঁধিয়ে দুপাশে শরীর এলিয়ে পড়ে আছে কাপড়গুলো। মন দিয়ে সেগুলো দেখার চেষ্টা করছেন। শুকোতে দেওয়া কাপড় দেখে বাড়ির বাসিন্দাদের সম্পর্কে আন্দাজ করা তার একটা খেলা। বহুদিন থেকে এই খেলাটা খেলতে খেলতে তিনি আবিষ্কার করেছেন, ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে বয়স্ক কাপড়ের সংখ্যা। খুব কম ছাদই আছে যেখানে তাদের চিহ্ন পাওয়া যায় এখন। ব্যাপারটা কোনো এক গল্পে তিনি উল্লেখ করবেন। ভাবতেই মনে পড়ল তিনি আর লিখবেন না বলে পণ করেছেন। তখন আবার মন খারাপ। কী এমন আছে লেখালেখিতে, যে লিখবেন না ভাবলেই মনে হয় জীবনটা বৃথা গেল? এই যে এতদিন লিখেছেন, তাতেই বা কী এমন উদ্ধার হয়েছে যার দরে লিখতেই হবে? উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই খেয়াল হলো তিনি পৌঁছে গেছেন, সামনেই তার ছাত্ররা দাঁড়ানো। আহা, এক একজন হীরের টুকরো সব! ঝিকমিক হাসি ঠোঁটে নিয়ে মুখভরা খুশি আর মাথানোয়ানো শ্রদ্ধায় তারা এগিয়ে এলো। তবে তাদের আগে স্যারের পেছন পেছন আসা একটা গাড়ি এসে থামলো পাশে, তা থেকে নেমে এলো দুজন পুরুষ। তিনিই মানব কি না নিশ্চিত হলো তারা। হতেই স্যারকে পিঠমোড়া করে তাদের গাড়িতে নিয়ে তুলল। ছাত্ররা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল, উপস্থিত দুয়েকজন বাধা দিলো। কিন্তু অমন একটা ভয়রঙের জিপ যাদের আছে, তাদের কাছে ওই কজনের জটলা সরানো কোনো ব্যাপার?
বেশ একটা ভাইরাল ভাইরাল ভাব নিয়েই মানব তারপর ছড়িয়ে পড়লেন পুরো শহরে। দোকানে দোকানে প্রশ্ন- তিনি কি গুম হলেন, না গ্রেফতার? কী অপরাধ কী অন্যায় কী কারণ? প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে গেল মুখোমুখি। পক্ষের লোক তার ভালো কাজের ফিরিস্তি হাজির করে বলল, এই কারণে তার বেঁচে ফেরা দরকার। অন্যরা তুলে আনলো তার অকাজের বহর, যার ফলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। কদিন পরই অবশ্য নতুন একটা ইস্যুর নিচে চাপা পড়ে গেলেন তিনি। পরিবারের লোকজন আর গুণগ্রাহী শিক্ষার্থীরাই শুধু দৌড়ে বেড়ালো এ দরজা থেকে সে দরজায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না যখন, তখন একটা চিঠি লিখল তার মেজো সন্তান। যদিও চিঠি তখন কেউ লেখে না আর, ফেসবুক-মেসেঞ্জার-হোয়াট্সএ্যাপ-ভাইবারেই গুঁজে দিয়েছে কথার কোমল ব্যথার কঠিন। তবু, এঘর থেকে ওঘরেও বাবার সাথে নিয়মিত চিঠি চালাচালির অভ্যাসের জোরেই হয়তো, চিঠিই লিখলো সে। লিখলো বাবার একটা নতুন প্যাডের পাতায়। লিখলো তার নিজের ভাষায়, আমি আপনার ভাষায় সেটা অনুবাদ করে দিলাম।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
অশেষ শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। আমি জানি, দেশ গড়ার কাজে আপনি ভীষণ ব্যস্ত। এত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনার খানিকটা সময় চেয়ে নিচ্ছি। অনুগ্রহ করে চিঠিটা একটু পড়বেন।
কারা যেন গত সপ্তায় আমার আব্বুকে ধরে নিয়ে গেছে। আব্বু খুব সাধারণ মানুষ। তাই হয়তো তার উধাও হওয়ার ব্যাপারটা আপনার জানা নেই। তবু আপনাকেই লিখছি। কারণ কিছু একটা ঘটলেই সবাই দেখি ‘প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের’ কথা বলে। আমার বিশ্বাস আপনিই তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
দিনরাত আব্বু লোকের সমস্যার সমাধান করে বেড়ান। আম্মু বলেন ‘ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ায়’। আমাদের দিকে তার খেয়াল নেই। একদিনও কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায় না। শেষ কবে আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছে বা মুভি দেখতে, মনে পড়ে না। আব্বুর সঙ্গে তাই সারাক্ষণ খিটিমিটি করে আম্মু। আমার রাগ লাগে। এই যে আমাদের নদীটা ভরাট করে ফেলছে, আব্বু না লিখলে দখলদারদের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াত? কিংবা বধ্যভূমি ভরাট করে মার্কেট করতে চাচ্ছিল চেয়ারম্যান, আব্বুর কলামই তো থামালো। আব্বুর তাই শত্রু অনেক। আবার ভালোবাসার মানুষও কম না। কত মানুষ যে আমাকে ডেকে আব্বুর ব্যাপারে ভালো কথা বলেছে, তার ইয়ত্তা নেই।
আব্বু আমার শিক্ষক না, তবে প্রায়ই তার কাছে পড়তে বসি। আর বসেই দেখি তিনি পড়াচ্ছেন না, শেখাচ্ছেন কীভাবে নিজে নিজে পড়তে হয়। কত আনন্দ নিয়ে যে পড়ি আমি তার কাছে! পড়াতে তিনি পছন্দও করেন খুব। গত জন্মদিনে তার কিছু শিক্ষার্থী এসেছিল বাসায়, তারাও ঠিক এই কথা বলছিল। আমার ধারণা, যারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে, তাদেরও তিনি পড়াচ্ছেন এখন। আবার কে জানে, হাতে লাঠি দুলিয়ে তারাই হয়তো শেখাচ্ছে আব্বুকে। শেখাচ্ছে কীভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, আপনাকে ভালোবাসতে হয়। কিন্তু ওরা তো জানে না, আব্বু আপনার দল না করলেও আপনার ঠিক কথার বিরুদ্ধে কথা বলে না।
তার খুব পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। পড়ার সময় একটা নোটখাতা সাথে নিয়ে বসে। প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আর হাইলাইটেড শব্দগুলোর তালিকা করে রাখাই উদ্দেশ্য। তালিকার একপাশে থাকে ঘটে যাওয়া অপরাধ, অন্যপাশে থাকে আপনার করা ভালো কাজগুলোর বিবরণ। সব ব্যাপারেই এমন দেখেছি, দু’দিক ভেবে কথা বলে আব্বু। সেই মানুষটা আপনার বিরুদ্ধে অকারণ কটুক্তি করতে যাবে কেন? তবু আপনার কিছু নেতা-কর্মী মামলা করেছিল। তারপরই এই গুম। অথবা কে জানে, নদীরক্ষা বা বধ্যভূমি সংরক্ষণ অথবা অন্য কোনো ভালো কাজের অপরাধেই হয়তো ধরেছে তাকে।
যে কারণেই হোক, আব্বুর উধাও হওয়ার দিন থেকেই আমার ভয় করছে। আব্বু খুব নরম আর সরল মনের মানুষ। আমাদের কিছু একটা হলেই কেঁদে ফেলে। আমাদের জন্য কাঁদতে কাঁদতেই কি চুপ হয়ে যাবে মানুষটা? মানুষ বলে, বাচ্চাদের খুব ভালোবাসেন আপনি। মানুষও আপনি খুব ভালো, শুধু চারপাশ ঘিরে থাকা দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষের বলয় আপনাকে আপনার যোগ্য কাজ করতে দিচ্ছে না। সেই কথার উপর বিশ্বাস নিয়েই আপনার কাছে এসেছি। আব্বুকে হারিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদেরকে উদ্ধার করুন।
আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।”

দু’বার খসড়া আর অসংখ্যবার কাটাকাটি করেই এটা চূড়ান্ত করল বাচ্চাটা। তারপর আর দেরি করল না পোস্ট করতে। অবশ্য পোস্ট করার পরই তার খেয়াল হলো, তারিখ লেখেনি সে। চিঠিতে দরখাস্তে তারিখ লেখার কথা মনেই থাকে না। বানানও ভুল হয় খুব। এসব কারণেই মার্ক কম পায় পরীক্ষার খাতায়। তবে প্রধানমন্ত্রী তো আর তাকে মার্কিং করতে বসবেন না। ফলে সে আশা করে ছিল, যেমনই হোক, চিঠিটার একটা কোনো উত্তর আসবে। কখন আসবে, কীভাবে আসবে, ভাবতে ভাবতে কল্পনা রাঙাত সে।
হয়তো সে বসে থাকবে বারান্দায়। আসন্ন শীতের বিকেল। হাতে নতুন এক লেখকের গল্পবই। পিয়ন আংকেল ছুটে এসে তার নাম ধরে ডাকবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে চিঠি লিখেছেন। সাথে একগোছা ফুলের মতো বই।
বা সন্ধ্যা, বাবার ছবিটা বুকে করে পড়তে বসেছে। কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না অক্ষরগুলো, কেমন যেন ঝাপসা সব। স্থানীয় কোনো নেতা ছুটে আসবে তখন। তুলে দেবে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি। ডগমগ খুশিতে সেটা পড়তে পড়তে জানবে এক বান্ডিল বইও পাঠিয়েছেন তিনি, কিন্তু স্থানীয় নেতা তা অস্বীকার করছে!
অথবা গোসল করতে করতে তুমুল কাঁদছে সে। আম্মু দরজা ধাক্কাবেন হঠাৎ। বের হতে বলবেন তাড়াতাড়ি। তাকে ফোন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
কিংবা আব্বুই চলে আসবে সোজা, বলবে তোমার চিঠির জন্যই তো ছাড়া পেলাম।
আরও কত কত সম্ভাবনার রঙই না উঁকি দিত কল্পনার পর্দায় তার!
অথচ ভাইয়া তাকে ভয় ধরিয়ে দিলো। ‘যে আস্পর্ধা দেখাইচিস পুলিশ তোরে এই ধরতি আসল বলে!’



কার্যকালের তিন বছর পূর্তি ও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে উৎসবের চমক আর শুভেচ্ছার জমকে শ্বাস নেওয়াই দায় প্রধানমন্ত্রীর। এখানে উদযাপন, সেখানে অনুষ্ঠান। সভাকক্ষের মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন তিনি। পাশাপাশি গোল হয়ে বসেছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কয়েকজন সংসদ সদস্য, আর উপদেষ্টারা। সঙ্গে আছে পিএস এবং অন্যান্য কর্মকর্তা। তথ্য ও যোগাযোগ সেলের একটা রোবট একের পর এক লাইনে সংযোগ দিচ্ছে, আর তাঁর হলোগ্রাফিক ইমেজ ছুটে যাচ্ছে ওপারে থাকা অগণন জনতার সামনে। হাসতে হাসতে সেটা ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাদের। জন্মদিনের কেক কাটছে, আর আরো সক্রিয় হয়ে দেশগড়ার কাজে হাত দিতে আহ্বান জানাচ্ছে।
একটা শেষ হতেই ভেসে আসছে আরেকটা অনুষ্ঠান।
ফাঁকে ফাঁকে তিনি সেরে নিচ্ছেন হাতে থাকা ছোটখাট কাজ। সন্ধ্যায় বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে ভাষণ দেবেন। তার প্রস্তুতিও নিয়ে নিচ্ছেন একটু একটু। আর ফাঁকে ফাঁকে মনে পড়ছে প্রিয় লেখকের রিসেন্ট বেস্টসেলারটা শেষ করার তাগিদ। তাঁর সৎ, জ্ঞানদীপ্ত ও দূরদর্শি নেতৃত্বকে দেশের অগ্রগতির মূল কারণ উল্লেখ করে বিশেষ বিশেষ বুলেটিন প্রচার করছে সংবাদমাধ্যম। অফিস শুরুর আগে বইটা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটা চ্যানেলের এই আয়োজন তিনি দেখেছেন। অন্তত দুটো চ্যানেল ভুল বিশেষণে আর ভুল বানানে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে তাকে। কেন? মাতৃভাষায় এই দুরবস্থা কেন এদের? ওদের জন্যও কি স্কুল খুলতে হবে আবার! কাছের কয়েকজনকে মজা করে সেটা বলেওছেন।

তাঁর সেন্স অব হিউমার মারাত্মক। মারাত্মক তাঁর অফিস পরিচালনা আর আন্তরিকতাও। দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ, অথচ সাধারণ মানুষের মতোই মেশেন সবার সাথে, পরামর্শ করেন। অফিসের সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন আজ, যা দুটো নুনভাত জোটে, একসঙ্গে খাবেন। যেন একটা পরিবার। খেতে বসে দেখলেন তার ব্যক্তিগত সহকারী তখনো এসে পৌঁছেনি। কী হলো, ছেলেটা কোথায়? সার্ভেল্যান্স ড্রোন কিংবা সহকারী রোবটকে পাঠানো যায় দেখার জন্য, কিন্তু ‘গাধাটাকে কতবার বলেছি খাওয়ার সময় কাজ না। তবু হুঁশ থাকে না’ বলতে বলতে তিনি নিজেই গেলেন তার কান মলে দিতে।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য আসা উপহার সামগ্রী, শুভেচ্ছাবার্তা এবং অন্যান্য কাগজপত্রের মধ্যে একটা চিঠি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল পিএ। ডাকঘর তাহলে টিকে আছে এখনো! কতদিন পর হাতে লেখা চিঠি দেখছে! সব রেখে সে তাই সেটাই খুলেছে আগে। খামটা ধুলোজমা, মলিন। ভেতরের কাগজটাও খুব টাটকা না। তবে পড়তে গিয়েই জ্বলে গেছে চোখ। পড়লে নির্ঘাত মন খারাপ করবেন প্রধানমন্ত্রী। না, তাঁকে এটা দেখানো যাবে না। সেটা তাই বাতিল-বাক্সে ফেলারই সিদ্ধান্ত নিলো সে। কিন্তু খামে আবার ভরছে যখন, তখনই সেখানে ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী।
একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছেন তিনি। ভোরে বাজার করতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন। একটা ইটের টুকরোর উপর বেকায়দা পা পড়েছিল। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। মুখে সেই কষ্টের ছাপ। পিএর হাত থেকে ধূসর কাগজটা নিতেই যদিও বদলে গেল চেহারাটা। এই সময়ে চিঠি, তাও আবার একটা বাচ্চা লিখেছে! ভীষণ চমৎকৃত হয়ে তিনি গিয়ে বসলেন খাওয়ার টেবিলে। তারপর শুরু করলেন পড়া। পড়ে যদিও শেষ করতে পারলেন না। জলোচ্ছ্বাস আটকে রাখা মুখে কোনোমতে এক্সকিউজ মি বলে উঠে গেলেন। ঢুকে পড়লেন তাঁর অফিসে। মনে হলো ঢেউ থামানোর চেষ্টা করছেন।
ঘটনা কী? স্বভাবতই পিএকে তখন বলতে হলো বিস্তারিত। শুনতে শুনতে আগুন ধরে গেল মুখে সবার।
কৃষ্টিমন্ত্রী: “এত বড় দুঃসাহস! দেবতার মতো মানুষটার বিরুদ্ধেও এমন মিথ্যাচার!”
জ্ঞানমন্ত্রী: “নৈরাজ্যের অন্ধকূপ থেকে তিনিই তো টেনে তুলছেন দেশটাকে। আর ডাঙায় উঠে কিনা তাকেই সেই কুয়োয় ফেলতে চাচ্ছে মানুষ!”
শান্তিমন্ত্রী: “না, এ জাতির জন্য আগের দিনের সেসব শাসকই দরকার যারা উঠতে ঝাঁটা বসতে লাথি ছাড়া বুঝত না কিছু।”
নির্মাণমন্ত্রী: “তা এত বড় একটা দেশ পরিচালনা কি চাট্টিখানি কথা? ভুল-ত্রুটি তো হতেই পারে। তাই বলে একটা বাচ্চার চিঠির ছদ্মবেশে মিথ্যা দুঃশাসনের লিস্ট পাঠাবে!”
না, এত বড় ধৃষ্টতা যে করেছে তার ক্ষমা নেই।
মন্ত্রিসভার সবচেয়ে সিনিয়র হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছেন দেশমন্ত্রী। পাশে পড়ে থাকা খামের একটা ছবি তুলে এর প্রেরককে দ্রুত গ্রেফতার করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন। ন্যায়মন্ত্রী, সাম্যমন্ত্রী, আর মর্যাদামন্ত্রী একটু ধীরস্থীর, চুপচাপ বোঝার চেষ্টা করছিলেন ঘটনাটা। তারা পর্যন্ত উতলা হয়ে উঠেছেন। বিরোধীদলের বেশ কজনকে দেশ পরিচালনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তাদের মধ্যে কয়েকজনও এখানে উপস্থিত। মনে মনে যদিও তারা খুশিই হয়েছেন এই ঘটনায়, তবু অন্যদের তালে তাল মিলিয়ে তারাও গলা ভাজছেন। সবমিলে বেশ একটা মেছোহাটই যেন বা বসে গেছে ক্যান্টিনটায়।
সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে খ্যাতি আছে প্রধানমন্ত্রীর। তবে মানসিকভাবে শক্ত খুব। কত বড় আঘাত না পেলে তিনি কাঁদছেন এভাবে! ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে উঠেছে সবাই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই যদিও ফিরে এলেন প্রধানমন্ত্রী। দেখেই বোঝা গেল, চোখমুখ ধুয়ে এসেছেন। সবাইকে তিনি শান্ত হতে বললেন। ‘পড়তে পড়তে আব্বুর স্মৃতি মনে পড়ে গেল, তাই একটু আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছি। আপনারা প্লিজ অস্থির হবেন না। চলুন, খাওয়া শেষ করা যাক।’ ফ্রুট সালাদের বাটিটা তুলে নিলেন হাতে। খেতে খেতেই পিএসকে বললেন চিঠিটার একটা উত্তর লিখতে। ‘লেখো, সবকিছুর জন্য আমি দুঃখিত। এখন থেকে আরো ভালোভাবে দেশ চালানোর চেষ্টা করব। আর বাচ্চাটার বাবাকে উদ্ধারের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’ একটু ভেবে আবার বললেন, ‘আর সাথে কিছু বই দিয়ে একটা রেজিস্টার্ড ডাকে পাঠিয়ে দাও।’

শুনে তো সবাই হা, এ কেমন মানুষ! সবাই যেখানে মুণ্ডুপাত করছে বাচ্চাটার, সেখানে তিনি সমবেদনা জানাচ্ছেন, বই পাঠাচ্ছেন! তবে এসব গুঞ্জরণে আর কান দিলেন না প্রধানমন্ত্রী। খাওয়া শেষ হয়েছে। দ্রুত গিয়ে কাজে লেগে পড়লেন। ডুবে গেলেন আটকে থাকা ফাইলগুলোয়। অন্যরা কিন্তু ভেসেই চলল ঘটনার বুদবুদে। ভাসতে ভাসতে তারা চলে এলো প্রধানের কক্ষে। তারপর জোড়া জোড়া ক্যামেরাচোখ তাক করে বসে থাকলো বিহ্বল।
সবাইকে এভাবে দেখে বিব্রত বোধ করছেন প্রধানমন্ত্রী। অস্বস্তিটা যদিও প্রকাশ করছেন না, চেষ্টা করছেন স্বাভাবিক থাকতে। তাতেই আরও অস্বাভাবিক লাগছে নিজেকে। না, এভাবে তো কাজ করা যাবে না। কিছুক্ষণ পর তাই মুখ খুললেন। ‘শুধু শুধু উদ্বিগ্ন হচ্ছেন আপনারা। আমি ঠিক আছি, কোনো সমস্যা নেই। অকারণ বসে না থেকে, যান হাতের কাজগুলো শেষ করুন আগে।’ তবু নড়ল না কেউ। ওদিকে প্রেরকের ঠিকানায় গিয়ে কারো হদিস না পেয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে চিঠিটা জাল। দিন বদলে গেলেও আগের কালের ভূত হয়তো পুরো ছেড়ে যায়নি জাতিকে। মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্যই হয়তো মিথ্যা অরাজকতার এই ফিরিস্তি। নইলে আর কেন? প্রশ্নটা ঘুরে বেড়ালো দপ্তরময় দিক হারানো গুমোট হাওয়ায়।
সে হাওয়ায় স্বস্তির রেণু ছড়িয়ে দিয়ে হেসে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘তাকে পাওয়া যাবে না জেনেই তো রেজিস্টার্ড ডাকে পাঠাতে বলেছি, চিঠিটা যেন ফেরত আসতে পারে। এলে আমাকে দিও। বহুবছর আমি এই উত্তরের অপেক্ষায় ছিলাম।’ বলে আরো একটু হাসলেন। সে হাসি টুকরো কৈফিয়ত, টুকরো বিষাদ, আর টুকরো অবিশ্বাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘরময়। তবে শ্রোতাদের মনে হলো, এটুকু না বলে সুকঠিন কোনো ধাঁধাও যদি তিনি বলতেন, তবু তারা বুঝত সহজে। ফলে ব্যাপারটা ভেঙে বলারই চেষ্টা করতে হলো।

পদার্থবিজ্ঞানের একটা তথ্য পড়ে চমকে গিয়েছিলেন ছোটবেলায়। মিটিমিটি জ্বলা অসংখ্য তারা দেখা যায় পরিষ্কার আকাশে। হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে আসছে সেসব আলো। দূরত্বের কারণেই পৃথিবীতে পৌঁছতে তাদের সময় লাগে। এই মুহূর্তে চোখে লাগা রোদরশ্মি যেমন ঠিক এই মুহূর্তের না, কয়েক মিনিট আগের, তেমন করেই আজ যে তারাটা দেখছি আমরা বাবার হাত ধরে, বা সন্তান কোলে নিয়ে, আমাদের জন্মের আগেই হয়তো মরে গেছে সে! ভীষণ অলৌকিক মনে হতো ব্যাপারটা। কী অপার রহস্যঘেরা এই জগৎ, কী অসম্ভব কল্পনার এই সময়! ভাবতেন।
ঊনচল্লিশ বছর আগের চিঠিটা আজ পেয়েও ঠিক সেই অনুভূতিই হচ্ছে তাঁর। কী অপার রহস্যঘেরা এই দেশ, কী অসম্ভব কল্পনার এই জীবন! ভাবছেন।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *