short-story-ke-kahar

কে কাহার 
রুমা মোদক

নবীন মাধব সরকারি কলেজের নাইট গার্ড মোঃ আব্দুল কাইয়ূমের চোখ যখন অশ্রুতে টলমল করে তখন ঠিক দুপুর। আলেয়া খাতুনের রাতের বিছানার মতো খাঁ খাঁ শূন্যতায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা দুপুর। রান্নাঘরে কাঠ কয়লার গনগনে আঁচে ঘামতে ঘামতে আলেয়া খাতুন আড়াল থেকে কাইয়ূমের চেহারা দেখে আর আঁচলে মুখ টিপে হাসে। এমন তৃপ্তির হাসি বিয়ের পর আসেনি তার ভেতর থেকে।

দরখাস্তটি টেবিলে রেখে নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকা কাইয়ূমের চেহারাটা দেখে প্রিন্সপাল ঠিক আন্দাজ করতে পারেননা কাইয়ূম আসলে কী চায়। দরখাস্তে লেখা, নব-বিবাহিত হিসাবে আমার আবেদন খানি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু আকুলতার বিন্দুমাত্র ছাপ তার চেহারায় নেই। তিনি একবার দরখাস্ত আরেকবার কাইয়ূমের চেহারার দিকে তাকিয়ে কাইয়ূমের ভেতরের ইচ্ছাটা পড়ে নিতে চান। ওর আবেদনটি খালি যে যৌক্তিক তাই নয়, মানবিকও বটে। নৈশ প্রহরী হিসাবে চাকরি করলেও নতুন বিবাহিত ছেলেটিকে অন্তত মাসখানেক নাইট ডিউটি থেকে ছুটি দেয়াই উচিত। কিন্তু কাইয়ূম কেমন উদাসীন, যেনো দিতে হয় বলে দরখাস্তটা দিয়েছে এমনতর নির্বিকারত্ব আচরণে তার স্পষ্ট। প্রিন্সিপাল দ্বিধায় পড়ে জিজ্ঞেসই করে ফেলেন, তুমি কি সত্যি নাইট ডিউটি থেকে কয় মাসের ছুটি চাও কাইয়ূম? কাইয়ূমের নির্বিকারত্বে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগেনা প্রিন্সিপালের প্রশ্নে। বরং ততোধিক নির্বিকারত্বে প্রিন্সিপালের সামনে থেকে চা ফুরিয়ে যাওয়া কাপটা সরিয়ে নিতে নিতে উত্তর দেয়,আপনের ইচ্ছা স্যার। পারলে দিয়েন, না পারলে কেমনে দিবেন। কাইয়ূম বের হয়ে গেলে কাইয়ূমের পক্ষে তদবির করা শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি আর অফিস স্টাফ একটু বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। দেখেন স্যার, কী করবেন। আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, বলে পরিস্থিতির অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে নিজেদের গা বাঁচিয়ে দুজনেই উঠে চলে যান।  

 প্রিন্সিপাল ভাইস প্রিন্সিপালকে ডেকে পাঠান। ভাইস প্রিন্সিপাল এলে দরখাস্তটি পড়তে দিয়ে তিনি পরামর্শ চান কাইয়ূমকে ছাড়া আর কাকে দিয়ে নাইট ডিউটি করানো সম্ভব। অন্তত মাস কয়েক। বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়,আবার গুরুত্বপূর্ণও বটে।

ভাইস প্রিন্সিপাল এই কলেজে অনেকদিন। নতুন প্রিন্সিপালকে তিনি আগপাছতলা ব্যাখ্যা করেন, কেন কাইয়ূমের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়ে করানো কঠিন। কাইয়ূম এলাকার ছেলে। কেবল ছেলে নয়। একসময়ের পাড়া কাঁপানো বখাটে।এলাকায় যতো চুরি চামারি,ছিনতাই তার নেতৃত্বেই হতো বিষয়টা ছিলো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। দুয়েক বার লোকজন ধরে পুলিশের কাছেও দিয়ে ছিল। ফিরে আবার যেই কে সেই। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা কাইয়ূমের নেশার টাকা যোগাড় করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিলো না।

 তার মাস্টার রোলের চাকরিটা রাজস্ব খাতে যাওয়াতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পুরো কলেজ। কলেজ প্রাঙ্গণটা শহর নয় ঠিক শহরতলিতে। ছিঁচকে চোরের উপদ্রবে কলের ট্যাপ, ইট বালি কোনো কিছুই রাখা মুশকিল ছিলো। কতোদিন জানালা ভেঙে ফ্যান, প্রজেক্টর নিয়ে গেছে। নাইট গার্ডের দায়িত্ব যাকেই দেয়া হয়, মাস দুয়েকের বেশি কেউ টিকে না।ছিঁচকে চোরগুলো জং ধরা ছুরি দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে এটা ওটা নিয়ে যায়। থানায় জিডি করা ছাড়া বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়নি কেউ, অবশ্য বিশেষ কিছু খোয়া যায়নি তখনও। তবে সবার টনক নড়ে গতবছর কলেজের সামনের বিরাট জেনারেটর চুরি হয়ে গেলে। কয়েক লক্ষ টাকার জেনারেটর পুরদস্তুর ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়াকে চুরি বললে ডাকাতির সম্মান থাকে না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময় একটা ভাবনাই মাথায় ছিলো, চোরকে পাহারায় দিলে কেমন হয় একবার দেখা যাক। নইলে এমন মার্কামারা ছেলেকে নৈশ প্রহরীর চাকরি দেয়াটা বালখিল্যতার নামান্তর। অসহায় বাপ অনুরোধ করলে তার জন্য বরইয়ের বীজ গেলা যায়, কিন্তু আস্ত ঢেঁকি!

তখন সদ্য সূর্য মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ফিরেছে কাইয়ূম। ওকে সুস্থ রাখতে হলে ব্যস্ত রাখতে হবে। ওর বাবা ভেসে যাওয়া শেষ কুটোটি ধরে রাখার মতো প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে আসে ওকে। একটা কাজ না পেলে ছেলেটা আবার বিগড়ে যাবে। প্রিন্সিপাল তখন এলাকার স্থানীয় একটা ছেলে খুঁজছিলেন নাইট গার্ডের কাজটির জন্য। দুইয়ে দুইয়ে চার প্রায় মিলবার উপক্রম। কিন্তু কাইয়ূমের নিকট অতীতের কুখ্যাতি তখনও হাওয়া বাতাসে উড়ছে। অনেকের অমতেই ছেলেটিকে কাজে নিলেন তিনি। হতাশ করেনি কাইয়ূম। নেশা ছেড়ে পুরদস্তুর চাকরিজীবী বনে যায় কয়েক মাসেই। তার দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তো বটেই, তার জন্মদাতা বাপ পর্যন্ত অবাক বনে যায়। কলেজটাও নিরাপদ হয় ছিঁচকেচোরের হাত থেকে। কাইয়ূমের পর এলাকায় নেতৃত্ব দেয়া বখাটেরা সব ওরই চ্যালা চামুণ্ডা। ভয়ে কিংবা সম্ভ্রমে কেউ কলেজের আশেপাশে ঘেঁষে না।

 অথচ ওর প্রয়োজনটাও জরুরি, প্রিন্সিপাল ভাবেন। ভাইস প্রিন্সিপালের জন্য চা নিয়ে কাইয়ূম ফিরে এলে, প্রিন্সিপাল আবারও জিজ্ঞেস করেন, তোমার কি আসলেই নাইট ডিউটি বাতিল দরকার। নিরুদ্বেগ স্বরে কাইয়ূম বলে, দেন স্যার, আপনের ইচ্ছা। না পারলে কেমনে দিবেন!

ছুটি নামঞ্জুর হয়।

 ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে, মনে হয় নাম ধরে কেউ ডাকে। এশার আজানের পর টুপি পরা শেষ মানুষটি চলে গেলে, টুপি খুলে কাইয়ূম কলেজের গার্ড রুমে বসে। রাতে ওর একাই ডিউটি, সারাটা রাত কাটাতে হয়। বিরক্ত লাগে না। বরং কী এক অবোধ্য মাদকের মতো নেশায় ধীরে ধীরে নিঃশব্দ হতে থাকা রাত তার কাছে রঙিন হয়ে উঠতে থাকে কাছেধারে কোন আকর্ষণের তীব্রতায়। ধরা যায় না, দেখা দেয় না তবু কী ভীষণ এর টান। কাউকে বলাও যায় না।

মোবাইলে নানান কিসিমের রিলস। কেউ নাচে, কেউ গান গায়, কেউ রান্না করে। সময় কোনদিকে যায় খেয়াল থাকে না। ঘড়ির দিকে তাকালে তবে হুঁশ ফেরে। দিব্যি কেটে যায় রাত। কখনোই সুদীর্ঘ কিংবা বিরক্তিকর মনে হয় না কাইয়ূমের।  

 এই নাইট ডিউটি বাতিলের জন্য বউটা রোজ হাউকাউ করে। বিয়ে করেছে দুই মাস। নতুন বউয়ের গন্ধ গা থেকে যায়নি এখনো। অথচ বেলাজার মতো হাউকাউ শুরু হয়ে গেছে। লোকে শুনলে কী বলবে,ঘরে বাপ মা আছে। রাতে বরের সাথে শোবার জন্য হাউকাউ করছে নতুন বউ!

বউয়ের হাউকাউ খুব একটা পাত্তা দেয়না কাইয়ূম। সরকারি চাকরি বলে কথা।গ্রামের হাইস্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়া কি না পড়া আলেয়া খাতুন কি করে বুঝবে সরকারি চাকরির মর্যাদা। তার উপর তার পোস্টের নাম নৈশ প্রহরী। নৈশ মানে রাত,নৈশ প্রহরীকে কি রাতের বদলে দিনে পাহারা দেয়ার জন্য রাখবে নাকি। আলেয়া খাতুন এসব বুঝতে রাজি নয়। না বুঝুক। তার কি। তারতো চাকরিটা করতেই হবে।

 হাতের মোবাইলটা বেজে উঠে,ওপাশে সাবিহা ম্যাডাম গান শুনতে পায়,,তুই যে এতো নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না। জানা ছিলো না রে বন্ধু জানা ছিলো না। সাবিহা ম্যাডাম হাসতে হাসতে শেষ। এ কেমন গান কাইয়ূম! কাইয়ূমের কাছে এই ফোনকলটা কাঙ্ক্ষিত। কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে নতুন তৈরি হওয়া এই ডরমিটরিতে তিন চারজন শিক্ষক থাকেন। মহিলা সাবিহা ম্যাডাম একাই। বরের পোস্টিং অন্য কলেজে। চেষ্টা করছে দুজন এক কলেজে যাওয়ার কিংবা আসার।

 প্রায় রাতেই এটা সেটা লাগে সাবিহা ম্যাডামের, কাইয়ূম আমার না বিস্কুট ফুরিয়ে গেছে। সকালে কী খেয়ে কলেজ যাবো। কিংবা কাইয়ূম রাতে খাওয়ার তো কিছু নেই, এক হালি ডিম এনে দিবা? সেনিটারি ন্যাপকিনও প্রয়োজন হলো একবার। ফোন পেয়ে কাইয়ূম দৌড়ে যায়। বিস্কুট নিয়ে ফিরে এসে জানালার পর্দার বাইরে থেকে স্পষ্ট দেখতে পায় সাবিহা ম্যাডামের ফিনফিনে নাইটির ভেতর বাদামী শরীর। স্যার, মানে সাবিহা ম্যাডামের হাসব্যান্ড-এর সাথে ভিডিও কলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে সাবিহা ম্যাডাম। পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে শুয়ে কথা বলার ভঙ্গিতে গোলাপি রঙের প্যান্টি উঁকিঝুঁকি দেয়। 

 কপাল ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে স্যারকে দেখানো উন্নত বক্ষ জোড়াও চোখে পড়ে যায় কাইয়ূমের। এক অবাধ্য নেশায় কলিং বেল বাজানোর আগে মিনিট কয়েক চুপ করে দেখে কাইয়ূম। বেল বাজলে উড়নায় গা ঢেকে জিনিসগুলো ভেতরে নেয় সাবিহা ম্যাডাম। মিষ্টি করে বলে, থ্যাংকস কাইয়ূম। কাইয়ূম সাবিহা ম্যাডামের চোখের দিকে তাকায় না। যদি কাইয়ূমের চোখের আগুন পড়ে ফেলে সাবিহা ম্যাডাম!

 পরের সপ্তাহে রাতের ট্রেনে বর আসে সাবিহা ম্যাডামের। বাক্স পেটরা উপরে তুলে দিতে গিয়ে কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে ভোলে না কাইয়ূম। কিন্তু বর যে কয়দিন থাকে কাইয়ূমের তেমন ডাক পড়েনা। কাইয়ূম লক্ষ্য করে, বিস্কুট আটা, লবণ তেল নিয়ে সাবিহা ম্যাডামের বর ডরমেটরিতে ঢুকছে। স্বাভাবিক এই ব্যাপারটি স্বাভাবিকই লাগে কাইয়ূমের, তবু কী এক অজানা কারণে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে তার।

 সকাল বেলা বাড়ি ফিরলে সারারাত ছটফট করা বউ রাগ দেখালে আরও দ্বিগুন তেজে ফেটে পড়ে কাইয়ূম। নাইট গার্ডের চাকরি মানে সারারাত জামাই বাইরে থাকা এটা জানলে আমি বিয়ে করতাম না, আলেয়া মুখ ঝামটা দেয়। কাইয়ূম তেজে জবাব দেয়, চাকরিখান না থাকলে তর বাপেও আমার কাছে তরে বিয়ে দিতো না। বউয়ের উত্তপ্ত শরীরে মেজাজের উত্তাপ ঢেলে বেহুঁশ ঘুমায় কাইয়ূম। সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় আবার পোশাক পরে তৈরি হলে আলেয়া আবার ক্ষেপে যায়। ঘরে আবার একচোট ঝগড়াঝাটি হলেও তোয়াক্কা না করে কলেজে চলে যায় কাইয়ূম।

সেদিন সন্ধ্যায় বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময় হঠাৎ সাবিহা ম্যাডামের ফোন। ম্যাডাম জানে, আধঘন্টার মধ্যেই ডিউটিতে যাবে কাইয়ূম। কোন দরকার থাকলে তখনই বলতে পারে। বলেও। আজ হঠাৎ এ সময় ফোন পেয়ে বুকটা ধক করে উঠে তার। ম্যাডাম বাথরুমে পড়ে গেছেন। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। পড়িমরি ছুটে যায় কাইয়ূম।

হাসপাতালে জানা যায়, ছয় সপ্তাহের অন্তসত্তা সাবিহার মিসক্যারেজ হয়েছে। রক্ত লাগে দুই ব্যাগ। এলাকার মানুষ কাইয়ূম দ্রুতই যোগাড় করে ফেলে রক্ত। দিন রাত এক করে ক্ষনে ফার্মেসি, ক্ষনে রেস্টুরেন্টের স্যুপ, ডাক্তার, নার্স নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সে। তিনদিন পর সাবিহা ম্যাডামের বর এলে ছুটি মেলে তার। দুশ্চিন্তা আর দৌড়াদৌড়ি মিলিয়ে বড়ো ক্লান্ত লাগে নিজেকে। বাড়ি ফিরে একটা ফ্রেশ গোসল আর ঘুম, ভাবতে ভাবতে বাড়ির পথ ধরে সে।

ততোক্ষণে আলেয়া নিজেই গিয়ে হাজির হয় প্রিন্সিপালের কক্ষে, লাজ শরমের মাথা খেয়ে বলতে থাকে, এ কুন দেশের চাকরি? দিন নাই রাইত নাই ডিউটি? আরও দু তিনজন অধ্যাপকের সামনে প্রিন্সিপাল বিব্রত হয়। আলেয়াকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিষয়টি তিনি দ্রুত দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

আলেয়া চলে গেলে তিনি কাইয়ূমের এপ্লিকেশন আনিয়ে তৎক্ষনাৎ বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। কাইয়ূম তিন মাসের জন্য নাইট ডিউটি থেকে ছুটি পায়। রোস্টারে দিনের বেলা ডিউটি করবে সে। বাড়িতে কাইয়ূমের নতুন বউয়ের সামনে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে সারাক্ষণ। কতক্ষণ পরপর মোবাইল চেক করে সে। বউ অভিযোগ করে তোমার তো ঘরে মন নাই। কার ফোনের অপেক্ষা কর? সাবিহা ম্যাডামের? চুপ কর, বউকে ধমকে থামিয়ে দিয়ে মোবাইলের রিলসে মনোযোগ দেয় সে। কিন্তু সাবিহা ম্যাডামের কণ্ঠস্বর শোনার তৃষ্ণায় মনোযোগ ছুটে ছুটে যায়, এমনকি রাতে আলেয়াকে আদর করে উপগত হতে গেলেও সাবিহা ম্যাডামকে দেখে সে। উন্মত্ত ঘোরে আলেয়ার বুকে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে বার কয়েক ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডেকেও ফেলে। নতুন দাম্পত্যের রাত ঈর্ষা আর নিরানন্দে অসহনীয় হয়ে উঠে।

 সাবিহা ম্যাডামের চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে পড়েছে। হবেই বা না কেনো। কী ধকলটাই গেলো। বালতি বালতি রক্ত। একদিন ফল ভরতি ব্যাগটা ম্যাডামের হাতে দিয়ে, আপনে বেশি কইরা বেদানা, আঙুর খাবেন ম্যাডাম… পরামর্শ দেয় কাইয়ূম। কথার কথা নয়, ভেতরের উৎকণ্ঠা গোপন করতে পারে না। চায়ও না সে। আজীবনই দেখেছে অসুস্থ রোগীকে আঙুর, বেদানা খেতে। এই দুটোকেই সর্বোচ্চ পথ্য মনে হয় কাইয়ূমের।

দিনের বেলা অফিস করতে গিয়ে সাবিহা ম্যাডামের কাছে বারবার জানতে চায় সে, রাতে কোনকিছু দরকার পড়ে কিনা। দরকার পড়লে যেনো ফোন করতে কোনো দ্বিধা না করেন ম্যাডাম। ম্যাডাম আশ্বস্ত করেন, নিশ্চয়ই কোনো দরকারে তুমিই তো আমার ভরসা। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডাকবো।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ‘তুমিই তো আমার ভরসা’ কথাটা যে কতো সুরে কান ছাপিয়ে হৃদয় মন জুড়ে বাজতে থাকে কাইয়ূমের। অনেক দিন পর মনে যে আনন্দটা হয়, তার সাথে কেবল শৈশব কৈশোরের ঈদের আনন্দের তুলনা চলে। কাইয়ূম অনেকদিন পর মনের আনন্দে জমিয়ে পরপর দুটো সিগারেট খায় মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে।  

তিন মাসের রোস্টার ডিউটিতে একমাস যেতে না যেতেই হাঁফিয়ে উঠে কাইয়ূম প্রিন্সিপালের কাছে আবার নাইট ডিউটির আবেদন জানায়। প্রিন্সিপাল এবার ভীষণ ক্ষেপে যায়। তুমি আর তোমার বউ কি ফাজলামি পেয়েছো? করজোড়ে ক্ষমা চায় কাইয়ূম। এরকম আর হবে না স্যার, নাইট ডিউটি কইরা অভ্যাস। রাইতে ঘুমই আসে না।

একমাস পর আবার নাইট ডিউটিতে যোগদান করে কাইয়ূম।

ঠিক পরদিন দুপুরে সাবিহা ম্যাডাম ফোনে ঘুম ভাঙলে আবারও বুকটা ধক করে উঠে কাইয়ূমের। সাবিহা ম্যাডাম জানায়, সকালে ওয়েবসাইটে বদলির অর্ডার এসেছে, এখন আমার আর তোমার দুলাভাইয়ের এক কলেজে পোস্টিং কাইয়ূম। 

খুব দ্রুত চলে যাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে একজন লোক ঠিক করতে বলে সাবিহা ম্যাডাম। যেনো জিনিসপত্রগুলো দ্রুত বেধেছেদে গুছিয়ে ফেলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *