নেপথ্যের দর্শক
নিলুফা আক্তার

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষপর্যন্ত ছেলেটা তার স্বপ্নের দেশ ইংল্যান্ডে পা রেখেছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবপূর্ণ এই লন্ডন শহরে তিনটা মাস সে বাসায় বাসায় অতিথি হয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জীবন কী আর মুফতে চলে? নাকি জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো যায়? একটা সময় তাকে জীবনের মুখোমুখি হতেই হয়। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আতিথেয়তা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় যখন কড়া নাড়ে তখন টের পায়, দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে। যার বাড়িতে জীর্ণ কাপড়ের মত অযত্নে সিটিং রুমের এক কোণায় সবার চোখ আড়াল করে পড়ে থাকতো, তিনিও একদিন নোটিশ দিলেন, দেশ থেকে তার আপন ভাতিজা আসবে তাকে স্থান দিতে হবে। অর্থাৎ রাস্তা মাপো। আসলে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বেশিরভাগই কোণাসম জায়গা নিয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। দেশটার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সিস্টেম এমন যে, আম জনতার ঘাড় সোজা করে হাঁটাকে তারা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে চিন্তাকে এমনভাবে সীমাবদ্ধ করে দেয় যে, তারা এর বাইরে ভাবতে পারে না, চায়ও না। একসময় তারা জীবনের এই সীমিতবোধে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর যারা বের হতে পারে তারা অন্য গ্রহের বাসিন্দা হয়ে যায়। তাছাড়া নানা ধরনের ট্যাক্স, জিনিসপত্রের দাম, বাড়ি ভাড়া সবকিছুর ভার বহন করতে গিয়ে মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর মাস শেষে সঞ্চয়ে কিছু থাকে না। তবুও এই সোনার হরিণের দেশে একবার এলে কেউ যায় না। কী এক অদ্ভূত সম্মোহনে দেশটা মানুষকে টেনে রাখে!
ছেলেটা ভাবে, কবুতরের খুঁপড়ির মতন ঘর। ছাত্রজীবনের মধ্যবিত্ত মেসের মত একটা টয়লেট সঙ্গে বাথরুম। টাকার মত গুণে গুণে সময় কষে কষে পরিবারের সদস্যদের টয়লেট-বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। গ্রামের ছেলে সে। মৌলবীবাজারের অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে এসেছে। তারপর স্কুল শেষ করে কলেজে পড়ার জন্য মফস্বল শহরে পা রেখেছিল। কলেজ জীবন শেষ করে একলাফে বিভাগীয় শহর ছাপিয়ে, রাজধানীর নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসাবে ঘাঁড় উঁচু করে ক্যাম্পাসের ইতিউতি চক্কর, ফটোকপি আর কাট-কপি-পেস্ট চালান দিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে, আর দশজনকে দেখে জীবনের একটাই খায়েশ জেগে ওঠে, লন্ডন যাওয়া চাই। স্বপ্নের দেশে আসার জন্য ঠকাঠকির পড়াশুনা করে জমানো সার্টিফিকেট, অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর এসপার-ওসপার করে ফেলেছিল। গ্রামের মাতব্বর বৃদ্ধ পিতা ছেলের দৌঁড়ঝাপ দেখে ভর্ৎসনা করতেন আর বলতেন, হারামজাদা, এই কষ্টডা বিসিএস’র লাগি কর। চাকররি লাগি কর৷ হুদাই সোনার হরিণের পেছনে ছুটনের কাম কিরে ব্যাটা? এবার ক্ষান্ত দে বাপ। ব্যবসার পুঞ্জি দেই, যা ব্যবসা কর। নাজির মৌলানার পোলাটা ব্যবসা কইর্যা কেমুন আঙুল ফুইল্যা কলাগাছ হইছে, দেহোস না? অর লগে কাম কর, আমি কইয়া দেমু নে। ছেলে মিনতি করে বাবাকে বলে, না বাবা তুমি বাধা দিও না, প্লিজ কুফা লাগাইও না। আমারে আমার কাম করতে দাও। শেষপর্যন্ত কামটা সে বাগিয়ে ফেলে। বঙ্গবাজারের ওভারকোটের ভেতরেও হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা সয়ে সয়ে হিথরো পার করে লন্ডনের বরফ শীতল রাস্তায় পা রাখে। প্রথম দিকে নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা অবসর সময়ে লন্ডন শহর দেখানোর জন্য ওকে নিয়ে বের হতো। করিম মাতাব্বরের ছেলে হিসেবে গ্রামের কিছু প্রবাসী পরিবার তাকে বাসায় দাওয়াতও করেছে। তার পিতা, পরিবারওে অনেক গুনকীর্তনও করেছে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের স্মৃতিচারণও করেছে। তারপর আস্তে আস্তে সেই জোয়ারে ভাটা পড়ে এখন শুকনো চর জেগেছে।
প্রথম যেদিন ছেলেটা তার এক কাজিনের সঙ্গে রাতের লন্ডন শহর দেখতে বের হয়, এ শহরটাকে তার স্বপ্নের মতো লাগে। ছোটবেলায় শোনা সেই গানটা তার মনে পড়ে যায়। ‘ঢাকা শহর আইস্যা আমার আশা ফুরাইছে, লাল নীল লাল নীল বাতি দেইখ্যা পরাণ জুড়াইছে।’ আহা ‘স্বপ্নপুরী’ লন্ডন! তারপর খাতির-যত্ন যখন কমতে কমতে তলানিতে ঠেকলো, তখন এ শহর তার কাছে বিষবৎ মনে হতে লাগলো। একটা শুধুমাত্র একটা কাজ সে মরিয়া হয়ে খুঁজতে লাগলো। রেস্টুরেন্টগুলোর উপর সরকারের কড়া নজর। অবৈধ স্টাফ দেখলেই মোটা জরিমানা করে, স্টাফকে দেশে ফেরৎ পাঠাচ্ছে। লাইসেন্স বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই কেউ চাকুরি দিতে সাহস করলো না। এই অবস্থায় একজন সদাশয় পরিচিতজন রিস্ক নিয়ে তার রেস্টুরেন্টে চাকুরি দিলেন। ছেলেটার বাবা নাকি কোনোকালে ভদ্রলোককে উপকার করেছিলেন। সেই ঋণ তিনি শোধ করার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। আসলে সে নিজেই চলে আসে। সেই সময়গুলোকে বিনা নোটিশে হুটহাট সরকারি লোকজন রেস্টুরেন্টগুলোতে হানা দিতে শুরু করলো। একদিন সাতসকালে ভদ্রলোকের এখানে হানা দিলো। তখন সে টেবিল পরিষ্কার করা শেষ করে ওয়াশরুমে যাবার জন্য উদ্যত ঠিক তখনি সরকারি লোকজন ভেতরে ঢোকে। সামনে দণ্ডায়মান ম্যানেজারের সঙ্গে যখন তারা কথাবার্তায় ব্যস্ত, সেই ফাঁকে ছেলেটা চট করে কাস্টমার সেজে টেবিলে বসে পুরানো স্টাফকে ইশারায় ডেকে বাস্তবতা বুঝিয়ে দ্রুত খাবার নিয়ে আসতে বলে। তারা যখন শার্দুল দৃষ্টি নিয়ে বৃহৎ রেস্টুরেন্টের আনাচে-কানাচে চোর ধরতে টহলরত, তখন ‘চোর বাবাজী’ অন্যান্য কাস্টমারদের সঙ্গে মনের সুখে পরোটা, ডিম ভক্ষণে ব্যস্ত। সেদিনই সে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসে। আসলে নিজের জান বাঁচাতেই পালিয়ে আসে। মনে মনে বলে, আর যাই হোক বাপ-দাদার জমিজমা বেঁচে এখানে যখন এসেই পড়েছে, ফেরত সে যাবে না।
এপ্রিলের কখনো উজ্জ্বল কখনো স্তিমিত রৌদ্র-ছায়ার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ছেলেটা ভাবছে কী করবে? শেষপর্যন্ত কি ফিরেই যাবে সে? স্টুডেন্ট ভিসায় এসে যে কলেজে ভর্তি হয়েছিল, সেটা ছিল আসলে ঢাকা শহরের মুড়ির টিন বাসগুলোর মত মুমূর্ষু। আসার আগে কানাঘুষা শুনেছিল, লন্ডনে যে পড়তে যাইতাছোস দেহিছ ছিচকে চোরওয়ালা কলেজগুলোতে ভর্তি হইছ না। পড়তে যাইতাছোস বুইজ্জাশুইন্যা যা। ঐগুলো কিন্তু হুটহাট বন্ধ অইয়া যায়। বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলেন, বাপ-দাদার সহায়-সম্পত্তি নাশ করে যাইতাছোস, দ্যাহিছ সর্বনাশ কইর্যা যেন ফিরিছ না। ঘরেবাইরের ঐ কথাগুলো সেদিন তার কানে মশার কামড়াকামড়ির মত মনে হয়েছিল, আজ সেই সর্বনাশের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে সে ভাবছে কী করবে?
টেমস নদীর পাড়ে বসে মনোহর নরনারীর মনোহরী দৃশ্যপট দেখতে দেখতে, পপকর্ণ চাবাতে চাবাতে হঠাৎ ছেলেটির সর্ব শরীরে যেন কেউ গরম লোহার ছেকা দিয়েছে, এমনভাবে জ্বালাপোড়া করতে লাগলো। মনে মনে বলে, শালা ফকিন্নির পোলাপাইন বাঙালির দুইশত বছর ব্রিটিশের গোলামি কইরাও শিক্ষা হয় নি। এখনও হালাগো পাও চাটছে। আমি শালা, কোন বান্দিগিরির স্বপ্নে এহানে আইলাম? এহন না ফারছি থাকতে না ফারছি পালাইতে। যেখানেই যাই ঐ হারামির পোলা ঘুঘুগুলো ওৎ পাইত্যা থাহে। তিক্ত, হতাশ তীব্র মন খারাপ নিয়ে ছেলেটা পকেটে হাত দিয়ে কয়েনগুলো গুণে তারপর টিউব স্টেশনের পথ ধরে। উপরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ট্রেন আসতে এখনও আধ ঘন্টা বাকি। বিরক্তিতে কপালটা কুঁচকে পরমুহূর্তেই ভাবে দেরিতে আসলেইবা কী আয় যায়? আমার কী কোথাও যাইবার আদৌ কোনো তাড়া আছে? না আমার জন্য কেউ অপেক্ষা কইর্যা আছে? মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দু’চোখ অবাধ্য জলে নদী হয়ে ওঠে যেন, সে চোখ মুছে না। একটা সময় ঝাপসা চোখ মুছতেই হয়।
বিষণ্ণ অলস হাতে স্টেশনের ওয়েটিং স্পেসের ঝুড়িতে রাখা নিউজ পেপারটা হাতে নিয়ে এলোমেলোভাবে চোখ বুলাতে থাকে। মনে মনে বলে, উফ্ খোদা একটা চাকুরি জুটিয়ে দে। এই অসম্মানের জীবন থেকে মুক্তি দে। বোল্ড অক্ষরে লেখা একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায়, ‘এসকর্ট ড্রাইভার প্রয়োজন’। স্যালারি দেখে চোখ কপালে ওঠে যায়। মনে মনে বলে, আসার আগে ড্রাইভিংটা তো ভালোভাবেই রপ্ত করছিলাম। সিলেট-ঢাকা রুটেও তো বন্ধুদের গাড়ি চালাইছি। একটা ফলস্ ড্রাইভিং লাইসেন্স তো নিয়া আইছি। দেহি না দাইন মাইরা, যদি লাইগগা যায়। মানিব্যাগটা খুলে অন্যান্য কার্ডের সঙ্গে লাইসেন্সটা আরও একবার চেক করে নেয়। ছেলেটা গন্তব্য বদলে সোজা এজেন্সির ঠিকানার নির্দিষ্ট ট্রেনে ওঠে। ড্রাইভিং লাইসেন্স তার শূন্য মানিব্যাগ পূর্ণ করে অনাদরে বোঝা হয়ে পড়ে আছে। মানিব্যাগটা খুলে আরও একবার চেক করে নেয়। স্টুডেন্ট আইডি কার্ডও আছে। এগুলো সাথে রাখতে হয়। কী একটা দেশ! হালার পুলিশরা যত্রতত্র চেক করে। একবার বেকায়দায় পড়ে অল্পের জন্য রক্ষা পাইছে। এরপর থেকে ঘরের বাইরে গেলে এগুলো সঙ্গে রাখে। মনে মনে বলে, বানচোত বৃটিশরা বণিক হইয়া ঢুইক্যা, বাণিজ্য কইরা শেষে দেশটারে হজমই কইরা লাইলো। নামকাওয়াস্তে ট্যাক্স দিয়া এমন কোনো দুষ্কর্ম নাই এরা করে নাই! চোর অইয়া ঢুইক্কা ডাকাত অইয়া বাইর অইছে। আর আমরা মান্দার পুত, মালিক অইয়াও চাকরই থাইক্কা গেলাম। হালার ট্রেন-বাস, রাস্তাঘাট যেখানেই থাহি না ক্যান, বাঞ্চোতগোরে জবাবদিহি করতে করতে জানটা সয়লাব হইয়া গেলো। চ্যাটের বালের লন্ডন শহর! এমন সময় সুমিষ্ট যন্ত্র-নারী কণ্ঠ বলে ওঠে, নেক্সট স্টেশ্ন ইজ মাইলেন্ড, মাইন্ড দ্য গ্যাপ! পোটলার মুড়ি ছড়িয়ে পড়ার মত, হুড় হুড় করে যাত্রীরা নেমে চারদিকে ছিটকে যার যার গন্তব্যে ছুটছে। লম্বা পা-ছোটো পা সবার গতি প্রায় একই রকম। ছেলেটা তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে, হালাগো কী এমন তাড়া? কই যাইবার লাইগা ঠ্যাং লম্বা কইরা ক্যাঙ্গারোর মত না হাঁটে না দৌড়ায়? কী এক বিতৃষ্ণায় ছেলেটা টিউবের অন্ধকার লাইনগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেরায়। কালিঝুলি মাখা নিঃসীম অন্ধকার ট্রেনলাইনের দেয়ালগুলোর দিকে তাকিয়ে ভয়ে শিউরে ওঠে। অন্ধকার যেন জন্তু হয়ে তাকে খাবলে খেতে চায়। দ্রুত সে মানুষের দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আবার আত্মকথনে মজে যায় সে, শালারা বলে স্ট্রেনজার! দম বন্ধ হইয়া গেলেও কতা কইবো না ব্যাটারা। হালারা কয় কেউ কাউরে চিনি না সুতরাং কতা কমু না! কেউ বই পড়ছে, কেউ গান শুনছে, কেউ পাশের বন্ধু, নিকটজনের সঙ্গে মৃদুকণ্ঠে কথা বলছে, কেউ আবার ঘাড় সোজা করে, হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। যাত্রীদের বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিতে দৃষ্টি রেখে সেই যন্ত্র-মানবী আবার বলে ওঠে, নেক্সট স্টেশ্ন ইজ ভেতনালগ্রিন, মাইন্ড দ্য গ্যাপ! গন্তব্য এসে গেছে! ছেলেটা ট্রেন থেকে নেমে ঘড়ি দেখে উন্মাদের মত ছুটতে থাকে। এক্সিলেটরে উঠে আন্ডারগ্রাউন্ডে নামে। তারপর লাস্ট স্টপেজ সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় পিছলে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয়। পাশে থেকে কে যেন বলে ওঠে, কেয়ারফুল! চোখ পড়তেই দেখে বিরক্তিভরা একটি মুখ। যেন পা পিছলে সে মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছে। ছেলেটা বিশ্রী একটা মুখভঙ্গি করে আবার ছুটতে থাকে। আড়চোখে তাকিয়ে মানুষটার হতভম্ব চেহারা দেখে বেশ মজা পায়। আধঘন্টা টানা হাঁটার পর অফিস পেয়ে যায়। রক্ষা ট্যাক্সি নিতে হয়নি। পকেটে কয়েকটা পাউন্ড কেবল অবশিষ্ট আছে। অফিসটা মাঝারি সাইজের, বেশ সাজানো-গোছানো। মাঝবয়সী সাদা ভদ্রমহিলা বসে আছেন। লালচে রঙের টাইট গাউন ছাপিয়ে কয়েকটা ভাঁজ হয়ে ভুড়িটা আয়েশী ভঙ্গিতে ঝুলে আছে, বুকটাও ভুড়ির সাথে লেপ্টে আছে।
নিসঃঙ্গ সর্বস্বান্ত ছেলেটার এক পা বিভিন্ন আত্মীয়-পরিচিতজনের দোরগোড়ায় আরেক পা হীমশীতল বোহেমিয়ান পথে রেখে দুই মাসের মাথায় শেষপর্যন্ত ছেলেটার চাকুরিটা হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ ফলস কাগজপত্রও করিয়ে দিল। একদিকে পুলিশের হেপা থেকে রক্ষা অন্যদিকে মোটাসোটা বেতনের চাকুরিটা পেয়ে সে আনন্দে আটখানা হয়ে পড়ে, এ যেন হঠাৎ আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া। পরের দিন অফিসে যাবার পর ভুড়িওয়ালা সাদা মহিলাটা একটা ঠিকানা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, এই ঠিকানা থেকে একজন যাত্রীকে তুলে, সে যেখানে যাবে সেখানে পৌঁছে দেবে এবং সে ফিরে আসা না পর্যন্ত অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিতে। তারপর অফিসে গাড়ি জমা দিয়ে যাবে।
অফিসের নিদির্ষ্ট কোনো সময় নেই, যখন ডাকবে তখনই আসতে হবে, তাই মোটা অঙ্কের বেতন। প্রতিদিনের স্যালারি নগদ দেয়া হবে। ছেলেটার মাথায় কেবল ঘুরছে অর্থ আর আশ্রয়। সে ঝটপট চাবিটা নিয়ে অচেনা যাত্রীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাড়িতে লাগানো আরেক যন্ত্র-মানবী তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। গন্তব্যে পৌঁছে কল দিতেই একটি মেয়ে এগিয়ে আসে। বাঙালি মেয়ে। বয়স কত হবে? বাইশ কি তেইশ! দেখতে দারুণ। চুলে লাল-নীল রং করা। নাভি অবধি টপস আর মিনিস্কার্ট পরিহিত। বাকিটা পাতলা কালো মোজায় আবৃত। কালো পোশাকটা এমনভাবে শরীরের সঙ্গে ঠেসে আছে, মনে হচ্ছিল মেদহীন বেড়ে ওঠা দেহটাকে কালো প্রেত খাম্চে ধরে আছে। লন্ডনে আসার পর এই প্রথম ছেলেটার এই ধরনের লন্ডনি মেয়ে দেখা। তার বয়সের চোখে মেয়েটার দেহ আটকে গেছে, ঠিক তখনি মনে পড়ে শূন্য পকেট আর ঘরহীন জীবনের কথা। ছেলেটা নিমিষেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেয়েটা ভ্রুক্ষেপহীন ভঙ্গিতে গাড়িতে ওঠে, সিটবেল্ট বেঁধে, কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। ছেলেটা যারপরনাই অবাক হলেও অর্থহীন নিরাশ্রয় জীবন তার সব বিস্ময়কে নিবৃত্ত করে দেয়। মোবাইলে ম্যাসেজ ওপেন করে গন্তব্য এড করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
ছেলেটা এই প্রথম লন্ডন শহরে, তাও আবার ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ড্রাইভিং-এ মনোযোগ দেয়। ক্যানারিওরর্ফের একটা পশ হোটেলের সামনে গাড়ি থামলে, কোনো ভদ্রতার তোয়াক্কা না করে হুট করে মেয়েটা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। তারপর হাইহিল পরা পা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কেমন হাঁসের মত হেঁটে যেতে থাকে। ছেলেটা একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চারপাশটায় চোখ রাখে। কোনো এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছে, এই জায়গাটা আগে ময়লার ডিপো ছিল। গাড়ি পার্ক করার জন্য স্টেয়ারিংয়ে হাত রেখে অন্যমনস্ক ছেলেটা আরও একবার চোখ ঘুরালে দেখে দেখে একুশ/বাইশ বছরের বাঙালি মেয়েটা তার জীবন-যৌবনকে পুঞ্জি করে আবর্জনার স্তূপে নিলাম হয়ে যাচ্ছে। পেন্সিল হিলের অনিয়ন্ত্রিত গতির সঙ্গে নিজের অপটু শরীরটাকে সামাল দিতে গিয়ে বার বার টালমাটাল হয়েও থামছে না। তবে এবার ছেলেটার বুঝতে বাকি রইলো না, বণিক মেয়েটা বাণিজ্য করতে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ওর মনে পড়ে, ছোটোবেলায় বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল, ঐ জায়গার নাম ছিলো ময়লার ডিপো। যদিও এর অর্থ খোঁজার বয়স তখনও তার হয়নি।
রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে অদৃশ্য আততায়ী হিম হিম ঠাণ্ডা ক্রমশ ছেলেটাকে গ্রাস করে নিতে চায়। তার মনে পড়ে কলেজ জীবনের বন্ধু মাধুর্য, পারমিতা, নিঝুম, রিয়া, শাহেদ, শিমুল, হোঁচট আনিকা, রাকিবদের কথা। মনে পড়ে সদ্য তরুণ সেই শিক্ষকের কথা। ‘হরিপদ কেরাণী’র সেই ব্যর্থ রোমান্টিকতায় পূর্ণ কবিতার পংক্তিগুলো হঠাৎ তার কানের কাছে গুণ গুণ করতে লাগলো ‘ঘরেতে এলো না সেতো, মনে তার নিত্য আনাগোনা,
পরণে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদূর।’
আহা পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য এই লাইনগুলো মুখস্থ করতে তার বেগ পেতে হয়নি! এই মুহূর্তে যেন সে উপলব্ধি করতে পারে, কেন বেগ পেতে হয়নি! এবার ছেলেটার চোখের সামনে মাধুর্যরা নয় বরং ভেসে ওঠে কিছুক্ষণ আগে অপসৃয়মান বাঙালি মেয়েটির অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়া। সে ভাবে, আচ্ছা এই মেয়েটার জন্য কী আদৌ কেউ অপেক্ষা করে আছে? কে জানে? বিষণ্ণ ছেলেটা মনের চোখটাকে ঘুরিয়ে ভেতরটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে। একটা সময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। ‘কে হায় হৃদয় খুঁজে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?’ জাগতিক ভারের ক্লান্তি এসকোর্ট ড্রাইভার ছেলেটাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
তখন মধ্যাহ্ন ঢলে পড়েছে যদিও একাকী তার কাছে এ শহরের সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত সবই বর্ণহীন নিরাবেগে মথিত অনুভূতি শুধু। হঠাৎ কাচের ওপাশ থেকে মৃদু আওয়াজে একরাশ বিরুক্তি নিয়ে ঘুমকাতর আধখোলা চোখে বলে, উফ্ কী যন্ত্রণা রে বাবা, একটু ঘুমিয়েছিলাম, তাও কারো সহ্য হয় না। এদেশেও দেখি ভিক্ষুকের উৎপাত। ধেৎ শালা ঘুমটাও মাটি করলো। চোখ মেলে দেখে কাচের ওপাশে মেয়েটা দাঁড়ানো। দ্রুত সে লক ডোর খুলে দেয়। আড়চোখে তাকায় ছেলেটা, মেয়েটার চোখেমুখে আতঙ্ক, অবসন্ন দেহটা কোনোমতে টেনেটুনে আবর্জনার স্তূপের মত যেন গাড়ির সিটে ফেলে দেয়। ঘামার্ত দেহ থেকে বিদঘুটে দুর্গন্ধ আর লেপ্টে যাওয়া প্রসাধনের বিবর্ণ বিদঘুটে মুখ থেকে ভুরভুর মদের গন্ধে সারাদিন অভুক্ত ছেলেটার পেট মোচড় দিয়ে গা গুলিয়ে বমির উদ্রেক করে কিন্তু শেষপর্যন্ত হয় না। চলমান চাকার সঙ্গে কেমন সয়ে যায়। ড্যাসবোর্ডের বক্সে রাখা বোতলের অবশিষ্ট পানিটা এক চুমুকে শেষ করতেই না করতেই শুষ্ক প্রায় কণ্ঠে মেয়েটা বলে, ভাইয়া আমাকে একটু জল দিবেন? বড্ড পিপাসা লেগেছে। বিস্ময় আর বিব্রতবোধে একাকার ছেলেটা, মেয়েটার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলে, সরি সরি পানি তো মাত্র শেষ করলাম, বোতলটা শূন্য তুলে বলে দেখুন বোতল শূন্য! সামনে কোনো স্টপেজ থেকে নিয়ে নেবো। এবার নির্বিকার কণ্ঠে সে বলে, বলুন কোথায় নামবেন? ক্লান্ত কণ্ঠে মেয়েটা বলে, আগের ঠিকানায়…!
এখন ছেলেটার সামনে চাকরির মুখোশ খসে পড়ে, কিন্তু তার পেছনে ফেরার উপায় থাকে না। কারণ প্রথম মাসের বেতন পেয়েই সে অন্যের অন্ন ধ্বংস থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিয়ে আলাদা একটা রুম ভাড়া নিয়েছে। এখন আর কারো গঞ্জনা, অবহেলা সহ্য করতে হচ্ছে না। যদিও অবচেতনে তাদের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েই যায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, একটা বারও তারা জিজ্ঞেস করেনি কোথায় সে জব পেয়েছে? কি চাকুরিতে ঢুকেছে যে তার কপাল এক ধাক্কায় খুলে গেল? তারা হযত ভাবছে, যাক বাবা, আপদ গেলো!
পর পর ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা তাকে জীবন বাস্তবতার অন্য মোড়ে নিয়ে দাঁড় করালো। একদিন সকালে অফিসে উপস্থিত হবার পর সারাদিন অপেক্ষার পরও কলগার্ল এলো না। কেন এলো না, ছেলেটা ঠিক জানে না। সন্ধ্যায় সে যখন মাঝবয়সী সাদা সেই নারীকে জিজ্ঞেস করলো, সে কি চলে যাবে, নাকি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে? তখন সেই নারী তাকে অপ্রত্যাশিত এক অফার করলো। বললেন আজকে সারাদিন কোনো রোজগার হয় নি, সুতরাং তোমাকে প্রোফিট থেকে দেয়ার মতো এক পেনিও আমার কাছে নেই। তুমি বরং আমার সঙ্গে শয্যাযাপন করতে পারো, এর বিনিময়ে আমি তোমাকে টাকা দেবো। আমার কোনো সমস্যা নেই, তুমি কি রাজি আছো? হতবুদ্ধ ছেলেটা সেদিন সাদা নারীর দিকে আড়চোথে তাকিয়ে বলে, না না আজকে আমার পারিশ্রমিক দেয়া লাগবে না বলে অনেকটা পালিয়ে চলে আসে। কিন্তু পরের দিন ঠিক সে অফিসে হাজির হয় কারণ সব চিন্তাভাবনা, নীতি-নৈতিকতা ছাপিয়ে এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার কোনো বিকল্প পথ খুঁজে পায় না। সে মধ্যবয়সী সাদা সেই মহিলাকে বলে কয়ে অন্য শহরে ডিউটি নেয়। এবং লজ্জা, ঘৃণা, বিবেক নামক সব ধরনের অনুভূতি সে জীবন থেকে কাট করে দেয়ার কেমন যেন এক জেদ তাকে পেয়ে বসে। তার ভাবনা ছিলো কিছু টাকা জমানোর পর এই পথ সে ছেড়ে দেবে। কিন্তু বাঁধ সাধলো ঐ হারামজাদা পুলিশ। ঐদিন এক শ্বেতাঙ্গী মেয়েকে সে নির্দিষ্ট হোটেলে নামিয়ে দিয়ে এসে বাইরে পার্কিং-এ সে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঘণ্টাখানেক পর মেয়েটা উদ্ভ্রান্তের মত দৌঁড়ে এসে গাড়িতে ওঠে। তাঁর মুখে, গলায় নখের আঁচড়ের দাগ, চুল অবিন্যস্ত শিথিল স্বচ্ছ গোলাপী গাউনে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। ইতোমধ্যে ছেলেটার এই কাজের প্রতি ভীষণ ঘেন্না ধরে গিয়েছে। কেবল কয়েকটা টাকা জমিয়ে ছাড়ার অপেক্ষায় খাপটি মেরে বসেছিল। ঐদিনের ঘটনা তাকে চরমভাবে আহত করে। ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, দ্যাট স্কাউন্ড্রেল ইজ কামিং টু গেট মি, প্লিজ স্টার্ট দ্য কার! বেগতিক পরিস্থিতি বুঝে ছেলেটা দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয়। বরফ কুয়াশার ঝাপসা কাঁচ ভেদ করে ভীমকায় দেহের কুদর্শন স্রেফ আন্ডারওয়্যার পরনে এক বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ চিৎকার করে মেয়েটাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছে, হেই ইউ বাস্টার্ড স্লামডগ, হ আর ইউ রানিং অ্যাওয়ে? কামন মাদার ফাকার! ফিনিশ দ্য ব্লাডিটাস্ক! ইউ বিচ!
এই বাজে ঘটনা অনেক দূর গড়ায়। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত শিক্ষার্থী সে। রাশিয়ান এই মেয়েটার একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা মারা গেলে, ছোটো দুইবোন এবং অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণ তার উপর এসে পড়ে। ইউনিভার্সিটিও মেয়েটিকে টিউশন ফি জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠায়। এই কঠিন সময়ে একজন বান্ধবী তাকে দ্রুত ও অধিক উপার্জনের উপায় হিসেবে এই পথের সন্ধান দেয়। সেও এই কাজ করে টিউশন ফিস জমা দেওয়াসহ আয়েশী জীবন কাটাচ্ছে। পরে জেনেছে স্থায়ী, অভিবাসী, বহিরাগত অনেক মেয়েই এক্সট্রা ইনকাম হিসেবে এই পথকে সবচেয়ে লাভজনক মনে করে। একটা সময় সেই রাশিয়ান মেয়েটির কাছেও এই পথই অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা বলে মনে হয়েছিল। বছরখানেক ধরেই সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তাছাড়া এখানে এই ব্যবসা বৈধ। পরবর্তীতে মধ্যবয়স্ক সেই সাদা মহিলা ছেলেটিকে বলে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে এমন বহিরাগত ছাত্রীরাই সাধারণত এখানে কলগার্লের জব করে, তবে আরও বিচিত্র ধরণের নারীও আছে। টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের নিউজ শুনে ছেলেটা এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়। ঐ রাশিয়ান মেয়েটাকে নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। দুশ্চরিত্র সেই কৃষ্ণাঙ্গ খদ্দেরটি উচ্চপদস্থ পাওয়ারফুল লোক, সে মেয়েটাকে চোর সাব্যস্ত করে জেলে পর্যন্ত নেবার উপক্রম করেছিল। বন্ধুরা বলেছিল, তারা প্রোটেস্ট করবে, মেয়েটা লোকলজ্জার ভয়ে রাজি হয় নি। শেষপর্যন্ত কলগার্ল সাপ্লায়ার সেই মধ্যবয়স্ক সাদা মহিলাটাই মেয়েটাকে রক্ষা করে। ছেলেটা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেন তুমি এই পথে এসেছিলে, সে বলেছে পরিস্থিতির শিকার। সঙ্গে এও বলছে, তার টাকা প্রয়োজন, সে ব্যবসা ছাড়তে পারবে না। যখন সে মেয়েদের আনা-নেওয়া করতো, বেশিরভাগের সঙ্গেই তার কথা হতো। এদেশে পড়তে আসা অনেক মেয়ে আয়েশী জীবন কাটানোর জন্য, অনেকে টিউশন ফি দেয়ার জন্য, অনেকে এক্সট্রা ইনকাম হিসেবে এ পথটা সবচেয়ে সহজ বলে মনে করে।
একটা সময় ছেলেটা প্রচণ্ড ঘৃণায় চাকুরিটা ছেড়ে দেয়। এখন সে আবার সেই আগের মতই টেমস এর পাড়ে বসে একাকী পপকর্ণ খায়, এলোমেলো পথ হাঁটে। এ্যাপার্টমেন্ট তাকে ছাড়তে হয়েছে। একটা রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছে, রাতে রেস্টুরেন্টের উপরে আরও চার-পাঁচ জনের সঙ্গে গাদাগাদি করে ঘুমায়, লাইন ধরে একটা বাথরুম শেয়ার করে। এভাবে কতদিন সে এদেশে থাকতে পারবে জানে না! বাস্তবতাকে ছেড়ে সে আধ্যাত্মিকতার সহায় নিয়েছে, ভাবখানা এমন, যতদিন এ দেশে রিজিক আছে থাকবে, যখন যাবার সময় হবে, যাবে। কিন্তু টিকে থাকার জন্য নিজ থেকে কোনো চেষ্টাই সে আর করে না। বোহেমিয়ান মন নিয়ে পথচলা ছেলেটা বড় হোটেলের সামনে দিয়ে যাবার সময় অবচেতন মনে অতিসতর্ক হয়ে উঠে। শরীরে চাবুকের বারির মত সেটে থাকা পোশাকের কিশোরী-তরুণী মেয়ে দেখলেই তার ভেতরের দগদগে ঘা-টা আবার তাজা হয়ে যেতে চায়। দ্রুত পালাতে গিয়ে ছেলেটা কেবলই হোঁচট খেয়ে পড়ে, কেবলই হোঁচট খায়!