short-story-pandulipi-kore-ayojon

পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
সৌরভ মুখোপাধ্যায়



আজ আকাশটা বড় প্রসন্ন। একেবারে মাজা-ঘষা নীল। কাল পর্যন্তও এক-আধটা গোমড়ামুখো মেঘের কুচি মাঝেমধ্যে ভুরু কুঁচকে ঘোরাফেরা করছিল, আজ তাদের কারও চিহ্নমাত্র নেই। শেষ কালির দাগটুকুও চেঁছেপুঁছে নিয়ে, টা-টা করে চলে গেছে বর্ষা। বাতাসে রিন্‌রিন্‌ করছে সমাসন্ন উৎসবের সুর। শিউলিগাছের নিচে দাঁড়িয়ে তুহিনা অনেকক্ষণ বুক ভরে সেই বাতাস টেনে নিয়েছেন। তারপর সাজি ভর্তি করে ফুল কুড়িয়ে এনেছেন নিজের ঘরে।

সবে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ, কিন্তু শিউলিগাছটা এর মধ্যেই উপচে উঠছে ফুলে। সাদায় সাদা হয়ে থাকে সকালবেলা। গত বছরেও অনেক ফুটেছিল, কিন্তু এত অজস্র নয়, বেশ মনে পড়ে তুহিনার।

‘আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়…’

সাজি ঠাসা শিউলিফুল, এখনও শিশিরে ভিজে— তার মধ্যে আলতো করে নিজের তালু দুটি ডুবিয়ে, গুনগুন করে উঠলেন তুহিনা। ‘প্রতীক্ষা’ বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনের পাঁচিল-ঘেঁষা এই ঝাঁকড়া শিউলিগাছটার সঙ্গে গত শরতেই তাঁর প্রথম পরিচয়। একটি গোটা বছর কাটল এখানে। উইমেন্‌স কলেজের অধ্যাপিকাদের নিজস্ব হস্টেল ছিল, সেখানে কাটিয়েছেন আগের তেইশটি বছর। মা গত হওয়ার পর থেকেই। বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলাতেই। মায়ের অবর্তমানে আর কেউ আত্মজন ছিল না তুহিনার। কর্মজীবন শেষ হতেই চলে এসেছেন হোমে। সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল। আর তো যাওয়ার নেই কোথাও; একা মানুষ।

পাঁচ বছরের পুরোনো ‘প্রতীক্ষা’ হোমটি একটু ব্যয়বহুল, কিন্তু বেশ সুন্দর প্ল্যান করে তৈরি। মাঝে ছোট উঠোন, দুপাশে দুটি আলাদা ব্লক। একটি পুরুষদের, অন্যটি মহিলাদের। প্রাইভেসিও পুরোমাত্রায়, আবার দেখাসাক্ষাৎও অবাধ। একত্রে আড্ডা জমানোর জন্য কমিউনিটি হল রয়েছে। বাগান আছে চমৎকার, সেখানে বেঞ্চ পাতা। বুড়োমানুষদের আনন্দে রাখার আয়োজন।

আবাসিকরা, যাঁদের পুজোটুজোর ঝোঁক আছে, আশ মিটিয়ে ফুল তোলেন। হোমের নিজস্ব বাগানটিতে জবা গাঁদা ডালিয়া দোপাটি মেলে। কিন্তু সেখানে মালীর নিয়ন্ত্রিত পরিচর্যায় যা ফোটে, তার চতুর্গুণ বুকে নিয়ে ডাঁটে দাঁড়িয়ে এই অযত্নের শিউলিগাছ। কেই বা জল দেয়, কেই বা মাটি খুঁচিয়ে দেয়। তবু দ্যাখো, ফুলের জোয়ার! ভোরবেলা ঘাসমাটি চোখে পড়ে না গাছতলায়, কমলা টিপ-দেওয়া সাদা চাদর বিছানো। আজ সেই মাটিতে-ঝরা শিউলিই সাজি ভর্তি করে এনেছেন তুহিনা। তাঁর ঘরে ঠাকুর-দেবতা নেই, তিনি কোনোদিন ফুল আনতে যান না। আজই প্রথম।

ঠুক ঠুক লাঠির শব্দ। দরজায় ছায়া পড়ল।

“পুজো নেই আচ্চা নেই, শুধু-শুধু চাট্টিখানি ফুল তুলে নিয়ে আসা সক্কালবেলা, ব্যাপার কী গো দিদিমণি?”

লীলারানি বিশ্বাসের বয়স পঁচাত্তর ছাড়িয়েছে। চুলগুলি সাদা, মুখে সর্বদাই হাসি, সামনের দুটি দাঁত নেই। তুহিনার এক্কেবারে পাশের কামরার ইনমেট। কোন্‌ মফস্‌সলের গৃহবধূ ছিলেন, ছেলে বিদেশে থাকে, স্বামীর মৃত্যুর পর এই ‘প্রতীক্ষা’ হোমে চার বছর হল। অভিযোগহীন বৃদ্ধা, বড় মিশুক। রসবোধও শুকিয়ে যায়নি। তুহিনাকে আদর করে ‘দিদিমণি’ বলে ডাকেন, কখনও একটু ঠাট্টা করে ‘মাস্টারনি’। শিউলি ফুলগুলোর মধ্যে হাতের আঙুল অল্প অল্প নাড়ছিলেন তুহিনা। লীলার প্রশ্নটা স্বাভাবিক। পুজো-পাঠে মতি কোনোদিনই দেখা যায়নি তুহিনার, হঠাৎ সাতসকালে তাঁকে সাজি ভরে ফুল আনতে দেখলে কৌতূহল হবেই।

সরাসরি জবাব এড়িয়ে গেলেন তুহিনা। একটু হেসে বললেন, “এ-বছর গাছটাতে যেন ফুলের বন্যা, দেখেছেন?”

ফের ফোকলা দাঁতগুলি বেরোল, “হি হি। বয়সের গুণ। ওর এখন ফোটার বয়স রে, মাস্টারনি! ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ বই দেখেছিস? সেই-যে গান? ‘আমার এ যৌবন, চম্পা-চামেলি-বনে’…? যৌবনের বন্যা, একে হাজার বাঁধ দিয়েও বেঁধে রাখা যাবে না, বয়সের ধর্ম… ফেটে বেরোবেই!”

বন্যা! যৌবনের বন্যা… বন্যার মতো যৌবন। সাধারণ কথা, তবু হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন একষট্টি-পেরোনো অনতিপ্রাক্তন অধ্যাপিকা তুহিনা সরকার। এক-এক সকালে কেন যে অন্য-অন্য বিকেলের ছায়া এসে পড়ে! বিগত জন্মের এক অপরাহ্ণ বুঝি সে।

যেন কাঠ কুঁদে-কুঁদে বানানো মূর্তি, এমন শক্ত মুখ করে বসে ছিল অভিলাষ। সেই চল্লিশ বছর আগের বিকেলটিতে। চল্লিশ বছর… তবু মনে হয়, গতকাল! না, এমন সোনার শরৎ নয়, সেটা ছিল ঘোর শ্রাবণদিন, সারাদিন বৃষ্টির পর আকাশ সদ্য ক্ষান্তবর্ষণ। সেই বিষণ্ণ বিকেলে ইউনিভার্সিটির উল্টোদিকের পার্কে একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসেছিল চব্বিশ বছরের অভিলাষ মিত্র। ফাইনাল ইয়ার, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। আর তার পাশে, সন্তর্পণে যেন কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে, একটি মেয়ে। তখন সে সদ্য-বাইশ, তার ফার্স্ট ইয়ার।

সে-ই কথা বলছিল একটানা। তার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। নরম মসৃণ গাল বেয়ে, ঠোঁট ছুঁয়ে অশ্রুবিন্দুগুলি চিবুকের পাশ বরাবর নেমে যাচ্ছিল অবিরাম। অভিলাষ স্তব্ধ কঠিন হয়ে শুনেছিল অনেকক্ষণ। ধীরে ধীরে রক্তহীন হয়ে যাচ্ছিল তার মুখের চামড়া, শ্বাস ধীর হয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটির দিক থেকে সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। অন্যদিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল, “কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বলছিস না তো?”

মেয়েটি এতক্ষণে তার চোখের জল মুছেছিল, সেই প্রথমবার। গলায় উঠে-আসা শব্দগুলো থেকে কান্নার দাগ সরিয়ে শান্তভাবে বলেছিল, “অপমান কোরো না, প্লিজ।”

এবার হাতের মুঠো শক্ত করে ছটফটিয়ে উঠেছিল অভিলাষ, “সরি। সরি। মাথা কাজ করছে না। … কিন্তু, কিন্তু… এর চিকিৎসা নেই? ডাক্তারি করে সারানো যায় না? সাইকিয়াট্রিস্ট? নার্ভের ডাক্তার? বা… প্লেন গাইনো…?”

“না। এটা ইনবর্ন। এটা তো অসুখ নয়। এটা ক্যারেক্টারিস্টিকস। প্রবণতা। আমাকে এইভাবে তৈরি করে পাঠানো হয়েছে, অভিদা। এটা যে ডিফারেন্ট, তাও আমি পরে অন্যদের কাছ থেকে শুনে জেনেছি। এই শরীর অন্যদের মতোই, কিন্তু তারা শরীরে যেমন ফীল করে, আমি তা পাই না। বাট, আমার ফাইনার ফীলিংসের তো খামতি নেই! আমি গান শুনে মাতাল হয়ে যাই, প্রকৃতি ভালবাসি পাগলের মতো, কবিতা পড়ে কাঁদি… মিথ্যে নয় তো, বলো?”

“অ্যান্ড হোয়াট অ্যাবাউট মি? এতদিন… এতটা পথ এসে… এখন বলছিস,” অভিলাষকে একই সঙ্গে ক্রুদ্ধ, হতাশ, উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। মেয়েটির দুটি তালু সে নিজের মুঠিতে চেপে ধরেছিল, “বিশ্বাস হয় না! এত অপূর্ব তুই, এমন বন্যার মতো তোর যৌবন… তুই বলতে চাস… ইউ… ইউ নেভার ফেল্ট…! কিচ্ছু হয় না তোর?”

“অভিদা, বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করো… ফর হেভন্স্‌ সেক! তোমার সঙ্গে একটু দেখা হওয়ার জন্যে আমি ছটফট করি। তোমার কথা শোনার জন্যে, তোমার পাশে একটু বসার জন্যে আমি উন্মুখ হয়ে থাকি, কাঙাল মনে হয় নিজেকে! কতবার আমি স্বপ্ন দেখি, অভিদা, আকাশে থালার মতো চাঁদ, তোমার কাঁধে আমার মাথা, তুমি আমাকে গান শোনাচ্ছ! বিলিভ মি, এই স্বপ্নের সুখ আমাকে পাগল করে দেয়! কিন্তু… তুমি যখন আমাকে টেনে নিয়ে আদর করো… যতবার আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালে, ইভন আমার গলায়, বুকেও…,” মেয়েটির গলা ধরে আসে ফের, “আমার কিচ্ছু ফীলিংস হল না, একটুখানিও না! সত্যি বলছি। নাথিং!”

“একদম শুরুতেই বলতে পারতিস!” হাত ছেড়ে দিয়েছিল অভিলাষ।

“আমার খুব আশা ছিল গো, অভিদা… যে, খুব ভালবেসে কেউ যদি কখনও আমাকে ছোঁয়, আমার মরা গাঙে বান ডাকবে নির্ঘাত! আমি সেই আশায় এই একুশটা বছর পথ চেয়ে ছিলাম, যোগ্য কোনও পুরুষের জন্যে! শেষ পর্যন্ত তুমি তো এলেও, অভিদা… কিন্তু কই, আমি তো…,” মেয়ে মাথা নিচু করেছিল, স্বরও নিচু হয়েছিল, “তুমি যাকে বন্যার স্রোত ভেবেছ, আমি জেনেছি সেটা একটা জমাট হিমবাহ! আমার নাম যিনি তুহিনা রেখেছিলেন তিনি জানতেন না কতবড় আয়রনি হয়ে সেটা ফিরবে।”

অভিলাষ পর পর দু’বার বড় বড় শ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল হঠাৎ, তার দীর্ঘ পেটানো শরীর যেন কোন অচেনা জেদে আরও টান-টান লাগছিল। কেটে-কেটে বলেছিল, “ও! তাই তুই এই পার্কে ডেকে এনে রিফিউজ করছিস এতদিনের পর? চেকমেট করে দিচ্ছিস! ভাবছিস, অভিদা শরীরের কাঙাল… শরীরের মজা নেই শুনলেই লেজ গুটিয়ে পালাবে?”

“ছিঃ, রাগের বশে নিজেকে ছোট কোরো না গো!” মেয়েটি গাঢ় গলায় বলেছিল ফের, “আমি তোমাকে পুজো করি অভিদা। তাই তোমাকে সত্যি কথাটা বলতে খুব দেরি করিনি। আমাদের বিয়েটা হতে পারবে না, এটা আমি জেনে গেছি! এটা ভবিতব্য, এতে তোমার কিছুই করণীয় নেই।”

“কে বলেছে করণীয় নেই? তুই কে, আমার করণীয় ঠিক করে দেওয়ার? আমি তোকে চাই, দ্যাটস অল! তুই ফ্রিজিড তো ভারি বয়েই গেল। শরীর দরকার নেই আমার।”

যেন অবুঝ বাচ্চাকে ভোলাচ্ছে, এমন সস্নেহ ভঙ্গিতে বলেছিল মেয়ে, “ছেলেমানুষি কোরো না। আমি তত স্বার্থপর হতে পারি? তুমি স্বাভাবিক চাহিদার একজন মানুষ। তোমাকে একটা তেতো অবদমনের মধ্যে সারা জীবন কাটাতে হবে এমন সিচুয়েশন আমিই বা তৈরি হতে দেব কেন? ডিজায়ার ম্যাটার্স, বায়োলজি ম্যাটার্স, ইউ নো! কিছুদিন পরেই আমরা পরস্পরের কাছে তেতো হয়ে যাব। তোমার বঞ্চনাবোধ জাগবে, আমার সেন্স অব গিলটি।”

অভিলাষ সঙ্গে সঙ্গে আর কিছু বলতে পারেনি। বিভ্রান্তের মতো চুপ করে ছিল।

“তুমি স্বাভাবিক জীবন বেছে নাও অভিদা,” আবার কোমল স্বরে বলেছিল মেয়ে, “আমিও, আমার পক্ষে যেমন স্বচ্ছন্দ, তেমন জীবন কাটাব।”

“তাহলে তুই… কী বলতে চাস তুই? এখানেই দ্য এন্ড? সব গল্প শেষ?”

ঠিক তখনই আবার বৃষ্টি নেমেছিল চারপাশ সাদা করে দিয়ে। তার মধ্যেই ওরা দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টির সুবিধে অনেক। কার চোখে জল আছে… আর কার চোখে নেই, ধরা যায় না।

আনমনা দৃষ্টিতে জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিলেন তুহিনা। তারপর হঠাৎ শুনলেন, লীলারানি বিশ্বাস বলছেন, “হ্যাঁ দিদিমণি, কাল যে নতুন ভদ্রলোক এলেন ওদিকের ব্লকে, তোর পরিচিত? তুই দেখা করতে গেলি?”

তুহিনা যেন সম্বিৎ ফিরে পেলেন। একটু কি ইতস্তত করলেন? গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, “হ্যাঁ। চিনতাম… ইউনিভার্সিটিতে আমার সিনিয়র ছিলেন।”

“তা, হোমে কেন? সংসারে নেই বুঝি কেউ?”

“রিটায়ার্ড মানুষ, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে রিসেন্টলি, স্ত্রীও বছর দশেক আগে…,” কথাটা শেষ করলেন না তুহিনা, একটু থেমে, যেন ভেবে নিয়ে বললেন, “ভালো হোম খোঁজ করছিলেন, আমি প্র…, মানে, এইখানে আছি শুনে… ফোনে জানতে চান কেমন সব ব্যবস্থা। আমি হোমের ওয়েবসাইটের হদিশ দিলাম, দেখেশুনে পছন্দ হয়েছে, চলে এলেন।”

“বেশ, বেশ। ঝাড়া হাত-পা। পুরোনো দিনের চেনা একজন মিলে যাওয়া, সেও মন্দ কী?” লীলা হাসেন, “আমি তো সেই কবে থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকি, নতুন বোর্ডার এলেই উঁকি দিয়ে দেখি— যদি চেনা-পরিচিতের মধ্যে কেউ থাকে, বাপের বাড়ির দিকের কিংবা শ্বশুরবাড়ির! নিদেনপক্ষের পুরোনো পাড়ার কেউ! এত নামডাকওলা হোম… একটা চেনা লোকও এই এত বছরে নাম লেখাতে এল না গা! হোমের নাম প্রতীক্ষা… তো সেই প্রতীক্ষাই রয়ে গেল আমার।” ম্লান হাসলেন বৃদ্ধা, “তোর ভাগ্যি ভাল রে দিদিমণি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চেনা মানুষ অন্তত একটাও তো মিলল।”

তুহিনা যেন একটু গুটিয়ে নিলেন নিজেকে। মৃদু মাথা নেড়ে শুধু বললেন, “তা ঠিক।”

“লোকটিকে দূর থেকে দেখলুম। শুধু টাকটি পড়েছে মাথায়, কিন্তু বেশ সুপুরুষ ছিলেন, না রে? যৌবনবেলা হলে বলতুম… আইবুড়ো মাস্টারনি গো, একটু রোমান্স করে নাও… হি হি! তা, সেই বয়স তো আর নাই।”

তুহিনার চোখে ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধ আলো ফুটে ওঠে। ঠোঁটে একটু স্থির হাসি লাগিয়ে রেখে তিনি চুপ করে থাকেন। সত্যিই, সে বয়স আর নাই। তাই তো এতদিনে…

শুধু লীলা বিশ্বাস কেন, কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়… এই অসম্ভব, আশ্চর্য কথাটি! বয়স চলে-যাওয়ার জন্যেই ছিল তাঁদের দীর্ঘ অপেক্ষা। ভাগ্যিস বয়স গেল! সেই তুমুল বৃষ্টির মধ্যে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, চল্লিশ বছর আগের সেই বিকেলে তুহিনা বলেছিলেন, “গল্পের শেষ বলে কিছু নেই, অভিদা! কে জানে, হয়তো একদিন আসবে… বহু বছর পর, এমন বয়স… যেদিন আমাদের দুজনের জীবনেই এই ‘শরীর’ ব্যাপারটা আর ম্যাটার করবে না! তখন, কোনও একদিন, হয়তো…”

কখনও কখনও, পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে, জোনাকির রঙে ঝিলমিল এক অলীক পাণ্ডুলিপির আয়োজন সম্পূর্ণ হয়। তখন সব পাখি আর সব নদী ঘরে আসে। পৃথিবীর সব লেনদেন ফুরিয়ে-যাওয়া এক অলৌকিক অন্ধকারে, মুখোমুখি বসা যায় তখন। সে এক বিরল গল্পকথা।

মাটির গন্ধ-মাখা শিউলির সাজি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তুহিনা। ‘প্রতীক্ষা’-র শিউলি। লীলা বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যাই একবার। এগুলো দিয়ে আসি।”

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

3 thoughts on “short-story-pandulipi-kore-ayojon

  1. মিস্টার মুখোপাধ্যায়, আপনার হাতের ছোঁয়া এই ছোটোগল্পকে পৌঁছে দিয়েছে সংবেদনশীল পাঠকের মনের মণিকোঠায় । জীবনানন্দ দাশের কবিতার কিছু লাইনের অনুপ্রবেশ গল্পটির উত্তরণ ঘটিয়েছে নিঃসন্দেহে । যে ভাবে শেষ করলেন, আপনার মতো সাহিত্যিকের কাছে সেটাই প্রত্যাশিত । অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।

  2. খুব সুন্দর লেখা। এক অন্যরকম মাত্রা যোগ হয়েছে গল্পের শেষে জীবনানন্দের কবিতার অনুষঙ্গে

  3. আহা অপূর্ব সমাপতন! ধন্যবাদ জানাই শ্রদ্ধেয় লেখককে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *