পুতুলের জন্য উলের সোয়েটার
ঘুমোচ্ছে সে। সকালের রোদ পড়েছে গালে আর নৈশ গাউনের জানালা গলে বুকের শুভ্রতায়।
সাদা, ক্রিম ও হাল্কা গোলাপের সংমিশ্রণে তৈরী ত্বকে রৌদ্রের আভা। রৌদ্র খেলা করছে বুকের ক্লিভেজে। আর একটু নীচে নামলেই নিটুট মন্দির, তার দেহের সমস্ত সৌন্দর্যকে
অ্যাম্পলিফাই করেছে যে ভাস্কর্য।
ঈশ্বরের স্থান যেখানে, মৃত্যু বাসা বেঁধে বেড়ে উঠছে দিন দিন।
নীরব মৃত্যু। বন্দরের দিকে এগিয়ে আসা নিঃশব্দ জাহাজের মত ।
রোদে চিক চিক করছে চুল।
মুখে হাসি খেলছে।
জলে ভাসমান মেঘের ছায়ার মত অভিব্যক্তির বিবর্তনগুলো চোখে পড়ে।
রোগটা ধরা পড়ার পর থেকেই সে আর হাসে না। বিষন্নতার দুর্ভেদ্য দুর্গের রাজকুমারি যেন।
এখন স্বপ্ন দেখছে ভিভিড। জায়মান জীবনের স্বপ্ন, জীবন্ত ও রঙ্গীন।
কোথাও বেড়াতে গিয়েছে। হয়তো ইওরোপের মধ্যযুগের কোন শহর ।
অথবা দক্ষিণ আমেরিকার ইওরোপিয়ান কলোনি।
অথবা অন্যত্র।
পাথর বিছানো সরু পথ, দুইদিকে সুন্দর সুন্দর ইমারত। সংস্কার চলছে কোন কোন প্রাচীন ইমারতের। সরু রাস্তা আরো হয়েছে সরু।
হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে আসে চার-পাঁচ বছরে এক মেয়ে। চুল তার কাশতান-বাদামী, চোখও চুলের সাথে ম্যাচ করে সুন্দর। ফ্রক উড়ছে বাতাসে।
এসে হাত ধরে।
“তুমি কি আমার পুতুলের জন্য একটা সোয়েটার বুনে দিবে?”
স্মৃতিতে ঝলক দিয়ে ওঠে শৈশবের কথা।
দিদিমা একটা সোয়েটার বুনে দিয়েছিল ওর পুতুলের জন্য। কী সুন্দর ছিল সেটা!
“আমি তো বুনে দিতে পারি কিন্তু অনেক দূরের দেশ থেকে বেড়াতে এসেছি আমি। কিভাবে খুঁজে পাবো তোমাকে?”
“কেন, ওই তো ওখানে থাকি আমি, ওই অনাথ আশ্রমে, আমাকে খুঁজতে হবে কেন?” বলে সে তর্জনি তুলে দেখায়।
দালানটা খুব পরিচিত মনে হয় ওর।
স্মৃতির অস্পষ্ট কুয়াশায় মনে হয় সে এমন একটা দালান কোথাও দেখেছে। বা এমন একটা দালানে থেকেছে। কখন, কোথায় কিছুই মনে করতে পারে না।
চেষ্টা করে মায়ের মুখটি মনে করতে, মনে পড়ে না। খোঁজে বাবার মুখ, কোন অবয়ব নেই।
শুধু কফিনে ফুলের মাঝখানে দিদিমার ঝাপসা নীল হয়ে আসা মুখ। সেখানে মৃদু হাসি খেলেছিল, নদীর ছোট্ট ঢেউয়ের মত। সে শিশুটিকে খুঁজতে থাকে, এদিক সেদিক ফিরে। কিন্তু কখন চলে গেছে টের পায় নি।
খুব খোশ মেজাজে ঘুম থেকে ওঠে সে।
অনেকদিন আমি ওকে এমন ভোরের রৌদ্রের মত সুন্দর দেখি নি। জাপানি সাকুরা ফুলের গোলাপি প্রিন্টের সুতির গাউন গায়ে। অতি লম্বা ও ঋজু । বাদামী চুল ঘুরিয়ে এনে ছড়িয়ে দিয়েছে বুকের উপর। বুক, যা ওর সমস্ত সৌন্দযকে সহস্রগুণ বাড়িয়ে দেয়। বুক, যেখানে মৃত্যু বাসা বেঁধেছে।
ধবল নগ্ন পা মেঝেতে। দীর্ঘ সারসীর উৎপল বৈভব।
বলে, “আমাকে একটু দোকানে নিয়ে যাবে?”
আমি মৃতপুরীতে প্রাণের সন্ধান পাই যেন, বলি, “অবশ্যই, কোথায়?”
“উল কিনতে।”
সেপ্টেম্বর ১৫,২০১৮, শনিবার, ওকালা।