দীপু মাহমুদ
ডাক্তার সালমা সুলতানা কোনও কথা বলছেন না। তার মুখ অতিরিক্ত গম্ভীর। তিনি মাথা নিচু করে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছেন। টেবিলের ওপর প্রেসক্রিপশন প্যাড। ডাক্তার সালমা সুলতানা প্রেসক্রিপশন লেখা শুরু করছেন না।
কিছুক্ষণ আগেও অর্চি নিজের ভেতর ক্রোধ বোধ করছিল। কার ওপর ক্রোধ সে জানে না। তার স্ত্রী নিকিতার ছয় মাসের মাথায় মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার। প্রথমবার হয়েছিল গর্ভধারণের সপ্তম মাসে। ডাক্তার সালমা সুলতানা বাংলাদেশের একজন নামকরা গাইনোকোলজিস্ট। তিনি প্রচুর রোগীর জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন। তার ওপর আস্থা রাখে এ দেশের মানুষ। আগে গাইনির যে সমস্ত জটিলতায় রোগীরা দেশের বাইরে যেত এখন আর সেরকম অসুবিধার জন্য পেশেন্ট দেশের বাইরে যায় না। ডাক্তার সালমা সুলতানা সেসব কেস অনায়াসে সামাল দিতে পারেন।
অর্চি বুঝতে পারছে না যে কী এমন হলো যাতে ডাক্তার সালমা সুলতানা গভীর ভাবনায় ডুবে গেছেন! কতক্ষণ অর্চি তার সামনে বসে আছে। তিনি কথা বলছেন না। প্রেসক্রিপশন লিখছেন না। মিসক্যারেজের ঘটনায় নিকিতাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত অর্চি তার কাছে ছিল। ডাক্তার বলেছে সে ভালো আছে। আগামীকাল বাসায় চলে যেতে পারবে। অর্চির এখন আর ক্রোধ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে প্রবল হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। ক্লান্তি আর অবসন্নতা ধীরে ধীরে তাকে শূন্যতায় নিয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার সালমা সুলতানা মুখ তুলে তাকালেন। তার চোখের দৃষ্টি স্থির। মুখের মাংসপেশিতে কোনও স্পন্দন নেই। শীতল গলায় বললেন, ‘মনকে শক্ত করুন। আপনার স্ত্রীর কেস অন্যদের থেকে আলাদা নয়, তবে শকিং।’
অর্চি এখনও বুঝতে পারেনি ডাক্তার কী বলতে চাইছেন। সকালে নিকিতা কমপ্লেন করল তার কোমরে ব্যথা করছে। হালকা ব্লিডিংও হচ্ছিল। ওয়াশরুমে যাওয়ার পর মনে হলো শরীর থেকে সাদা কিছু বের হয়ে গেল। তখন তাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে এসেছে।
ডাক্তার বললেন, ‘আপনার স্ত্রীর ইউটেরাসের মুখ নিজে থেকে খুলে গেছে। আমরা সেলাই দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। আনফরচুনেটলি, বেশিরভাগ অংশ খুলে যাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি।
প্রথমবারও এরকম কিছু হয়েছিল।’
‘নিকিতাকে নিয়ে আপনার কাছে এসেছি অনেক আশা নিয়ে।’ অর্চির কান্না পাচ্ছে। সে আর কথা না বলে চুপ হয়ে গেল।
ডাক্তার বললেন, ‘আপনার স্ত্রীর ইউটেরাসের মুখ দুর্বল। আকারও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ছোট। যে জন্য সন্তান সেখানে বড় হতে পারছে না। অ্যাডভান্স স্টেজে মিসক্যারেজ হয়ে যাচ্ছে।
অর্চি বুঝে গেছে নিকিতা কোনওদিন মা হতে পারবে না। চারপাশ বর্ষার পানির মতো ঘোলা হয়ে এসেছে। সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না।
ডাক্তারের স্নেহময় আন্তরিক গলা শুনতে পেয়েছে অর্চি। সে যেন নিতল কোনো অন্ধকার কূয়া থেকে উঠে এলো। ডাক্তার ভরসা দেওয়া গলায় বললেন, ‘সারোগেসি সম্পর্কে আপনার জানা আছে?’
অর্চি কিছু বলল না।
ডাক্তার বললেন, ‘সারোগেসি হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি যেখানে সন্তান জন্মদানের জন্য গর্ভ ভাড়া নেওয়া হয়। সারোগেসি পদ্ধতিতে কোনও একজন সুস্থ সবল নারী নিজ গর্ভে অন্যের সন্তান বড়ো করে এবং জন্ম দেয়। আলাদা একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণ হচ্ছে সারোগেসি। আর এক্ষেত্রে গর্ভ ধারণের কাজটি যে নারী করেন তাকে আমরা বলি সারোগেট মাদার।’
সারোগেসি সম্পর্কে অর্চি জানে। বাবা হতে পারার সম্ভাবনার কথা শুনেও সে চুপ করে থাকল। তার কাছে এখন সবকিছু কেমন ফাঁকা বোধ হচ্ছে।
ডাক্তার সালমা সুলতানা বললেন, ‘খরচ অনেক বেশি। তা ছাড়া আমাদের দেশে সারোগেসির লিগ্যাল পারমিশন নেই। আপনি চাইলে ইন্ডিয়া থেকে করাতে পারেন।’
খরচ নিয়ে ভাবছে না অর্চি। সে ভাবছে নিকিতা বিষয়টা কীভাবে নেবে। তাছাড়া একজন সারোগেট মা খুঁজে বের করতে হবে। এমন কেউ রাজি হলেও তার শারীরিক ও মানসিক দিক ভাবতে হবে। ঝুঁকিটাও নেহাত কম নয়।
অর্চি শুকনো গলায় বলল, ‘ইমিডিয়েট কমপ্লিকেসি বা রেগুলার চেক-আপের জন্য বাংলাদেশে কার হেল্প পাব?’
ডাক্তার সালমা সুলতানা বললেন, ‘ইউএসএতে সারোগেসির ওপর কাজ করেছি। আপনারা প্রিপেয়ার হয়ে এলে আমি টেক কেয়ার করতে পারব।’
নিকিতা রাজি হয়েছে। সবচেয়ে উত্তেজনাকর ঘটনা হচ্ছে একজন সারোগেট মাদার পাওয়া গেছে। সাইমন আর অর্চি ছোটোবেলার বন্ধু। স্কুল, কলেজে একসঙ্গে পড়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনা শেষে অর্চি জাপানি এক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কাজ শুরু করল। সাইমন তার বাবার গড়ে তোলা খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়েছে।
সাইমন বলল, ‘নিকিতাকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে আয়।’
অর্চি বলল, ‘ট্রিটমেন্ট সব এক। আর এটা নিকিতার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ব্যাপার। ডাক্তার সালমা সুলতানাকে তো তুই জানিস। তিনি পৃথিবীর যে কোনও ডাক্তারের থেকে এ বিষয়ে কম জানেন বলে মনে হয় না।’
‘তবু চান্স নেওয়া। মানে ট্রাই করা। মেন্টাল স্যাটিসফেকশনও বলতে পারিস।’
‘সমাধান অবশ্য একটা পাওয়া গেছে।’
‘কী?’
‘সারোগেসি।’
সাইমন তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে একজনকে খুঁজে বের করেছে। কাজটি সে করেছে অত্যন্ত গোগনে এবং সতর্কতার সঙ্গে। মেয়েটির নাম তিথি। তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তার তিথিকে সারোগেট মাদার হওয়ার উপযুক্ত বলে নিশ্চিত করেছেন।
খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে তিথি হেল্পার হিসেবে কাজ করে। তার স্বামী অটোরিকশা চালায়। নাম বাদল। তাদের একজন ছেলে আছে। চার বছর বয়স।
তিথি বলেছে পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখতে হবে। সন্তান জন্মদানের সময় ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধানে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। সন্তান জন্মদানের পর সে স্বামীকে জানাবে পেটের ভেতর সন্তান মারা গেছে।
তিথির কথা সাইমন মেনে নিয়েছে। সে বাদলকে ডেকে পাঠিয়েছে ফ্যাক্টরিতে। বাদলের চোখে ভয়। তার মুখ হয়ে আছে ফ্যাকাসে। তাকে কেন ডেকে আনা হয়েছে সে সম্পর্কে তিথি কিছু জানায়নি। শুধু ভারী গলায় বলেছে, ‘এমডি স্যার তোমার সাথে কথা বলবেন। তিনি আমাদের ভালো চান।’
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক একজন সামান্য হেল্পারের কী ভালো চাইবেন, আর সেজন্য তার স্বামীকে ডেকে নিয়ে আসবেন, এই ধাঁধা কিছুতেই খোলসা হচ্ছে না বাদলের কাছে। সে এমডির রুমে ঢুকে হকচকিয়ে গেল। তার ধারণা ছিল ফ্যাক্টরির বড়ো অফিসার কিংবা মালিকের রুম হয় বিশাল। এই ঘর বিশাল নয়। তবে অসম্ভব ঠান্ডা আর ঝকঝকে তকতকে। চারপাশে কাচ দিয়ে ঘেরা কোনো ঘর হয় বলে সে জানত না। আজ দেখল। বাইরে থেকে ঘরের ভেতর কিছু দেখা যায় না। ঘরের ভেতর থেকে বাইরে দেখা যায়।
সাইমন নরম গলায় বলল, ‘পানি খান। টেবিলের ওপর গ্লাসে পানি আছে।’
চমকে উঠেছে বাদল। পানি পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে চরের শুকনো বালি হয়ে আছে, তা এই ভদ্রলোক কীভাবে বুঝলেন সে বুঝতে পারছে না। টেবিল থেকে পানিভর্তি গ্লাস তুলে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানি খেয়ে ফেলল সে।
সাইমন বলল, ‘তিথি বেশ ভালো কাজ করছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে হেল্পার থেকে অপারেটর হিসেবে প্রমোশন দেব।’
আবার সব তালগোল পাকিয়ে গেল বাদলের। তিথি ভালো কাজ করছে, প্রমোশন দেবে, সে জন্য তাকে কেন ডেকে আনা হয়েছে। তার কাছে জমানো কোনও টাকা নেই। যদি জামানত হিসেবে ফ্যাক্টরি টাকা চায় সে দিতে পারবে না। তাকে এখন কেউ টাকা ধার দেবে না। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক টাকা ধার করতে হয়েছে। সেসব টাকা এখনো শোধ করতে পারেনি। তিথি সবই জানে। তাকে ডেকে আনার দরকার হতো না। তিথি বলে দিতে পারত। তিথির ওপর বাদলের রাগ হচ্ছে। আবার সন্দেহ হচ্ছে, তিথির প্রমোশন আর জামানতের কথা কেন মালিক নিজে বলবে। একথা ফ্যাক্টরির যে কোনও অফিসার বলতে পারে। যাদের প্রমোশন হয় তাদের সকলের পরিবারের কাউকে ডেকে এনে মালিক নিজে এসব কথা বলেন নাকি শুধু তাকেই ডেকে আনা হয়েছে? তিথি কি বড়ো কোনও অন্যায় করেছে! মালিক আদতে সেই কথা বলতে তাকে ডেকেছেন। শুরুতে একটুখানি খেলছেন তাকে নিয়ে। বিড়াল যেমন ইঁদুর ধরে খেলা করে।
‘আমরা জাপান থেকে নতুন এক ধরনের মেশিন এনেছি। সেই মেশিন অপারেট করার মতো ট্রেনিং এখানে হয় না। আমরা ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকজনের একটা গ্রুপকে ইন্ডিয়াতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই মেশিন অপারেট করার ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। তিথি সেই গ্রুপে আছে।’
বাদল খেয়াল করল সে ঘামছে। তিথি হেল্পার থেকে অপারেটর হলে তার বেতন বাড়বে। বিশেষ মেশিন যখন, সেক্ষেত্রে বেতন অন্যান্য অপারেটরদের চাইতে বেশি হওয়ার কথা। তিথির বেতন দিয়ে সব লোন শোধ দেওয়া যাবে। অনেকদিন থেকে সে নিজে অটোরিকশা কেনার কথা ভাবছে। এবার হয়তো অটোরিকশাও কিনে ফেলতে পারবে। তার আবার গলা শুকিয়ে চৈত্রের খটখটে মাঠ হয়ে গেছে। পানি পিপাসা পেয়েছে। পানি চাইতে পারছে না। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হবে বলে মনে হচ্ছে না।
সাইমন বলল, ‘আপনাদের একজন ছেলে আছে, তিথি বলেছে। তিথি যে কয়দিন ইন্ডিয়াতে ট্রেনিংয়ে থাকবে, সে কয়দিন আপনাকে ছেলের দেখাশোনা করতে হবে।’
অবাক লাগছে বাদলের। তাদের ছেলে আছে, একথা তিথি বলেছে কিন্তু ছেলের দেখাশোনা যে মা করে সেই কথা বলেনি! তিথি কেন বলল না যে সে ঘরে শাশুড়ির কাছে ছেলে রেখে কাজে আসে!
সাইমন স্থির গলায় বলল, ‘অফিস থেকে তিথিকে কিছু টাকা অ্যাডভান্স দেওয়া হবে। আপনি কাজে যেতে না পারলে যাতে সংসার চালাতে অসুবিধা না হয়।’
বাদল এখন বুঝতে পারল তিথি কেন বলেনি ছেলেকে শাশুড়ির কাছে রেখে আসে। তিথির বুদ্ধিতে বাদল খুশি হয়েছে। নগদ টাকা তার খুব দরকার।
যেমন আচমকা প্রবল পানি পিপাসা লেগেছিল তেমনি হঠাৎ বাদলের পানি পিপাসা চলে গেল। তার মনে বেশ আনন্দ হচ্ছে। হালকা বোধ হচ্ছে। খানিকটা ফুরফরে ভাব। সে আনন্দিত মনে ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে এলো।
তিথি অপারেটর পদে প্রমোশন পেয়েছে। ফ্যাক্টরিতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তাকে সুইং মেশিন অপারেট করার ট্রেনিং করিয়েছে। তিথি ইন্ডিয়াতে গিয়েছিল অর্চি আর নিকিতার সঙ্গে। সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে তার গর্ভে অর্চি আর নিকিতার সন্তান বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইন্ডিয়া থেকে ফেরার সময় সে আত্মীয়স্বজনের জন্য প্রচুর উপহার কিনে এনেছে।
বাদলের জন্য অতিরিক্ত আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, তিথি বলেছে, ফ্যাক্টরি থেকে যাদের ইন্ডিয়াতে ট্রেনিং করতে পাঠিয়েছিল তাদের এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছে। ট্রেনিং ভাতাও দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বাদল প্রথমে বাড়িওয়ালার সব লোন শোধ করল। বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনে নিয়ে এলো। মায়ের রান্না অতি চমৎকার। তিনি বেশি ঝাল দিয়ে মুরগির ঝোল তরকারি রান্না করলেন। বাদল পোলাওয়ের চাল নিয়ে এসেছিল। তিনি পোলাও রান্না করেছেন। চাকাচাকা করে বেগুন ভাজি আর ডিমের কোরমা। ঈদ ছাড়া তাদের জীবনে প্রথম ভালো খাওয়াদাওয়া। তারা আরাম করে খেয়েছে।
সেই রাতে বাদল মুগ্ধ চোখে তিথিকে দেখল। তিথির চোখে বিদ্যুৎ। তার শরীরে বিদ্যুৎ। সে বলল, ‘ছেলে বাড়িতে একা থাকে। আরেকজন থাকলে তারসঙ্গে খেলতে পারত।’
তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছে বাদল, ‘তুমি ইনজেকশন নেওয়া বন্ধ করেছ?’
সন্তান না নেওয়ার জন্য তিথি তিন মাস পরপর জন্মনিরোধ ইনজেকশন নেয়।
বাদলকে জড়িয়ে ধরে তিথি বলল, ‘বাড়িতে মা আছে। অসুবিধা হবে না।’
তিথির চাওয়াকে বাদল অস্বীকার করল না। তবে আদর করতে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে অনুভব করল তিথির পুরো শরীর জুড়ে আলস্য। তার ভেতর অদ্ভুত শিথিলতা। আদর করার আগে তিথির শরীরে যে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছিল তার কিছু অবশিষ্ট নেই।
পরের সপ্তাহে তিথি ফ্যাক্টরি থেকে ফিরে জানাল, ফ্যাক্টরির ডাক্তার আপা বলেছেন সে সন্তানসম্ভাবা। আরও এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছে ফ্যাক্টরি তাকে। বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেছে।
সন্তান তিথি চেয়েছে। সন্তান আসছে শুনে তিথির উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা। বাদল দেখল তিথির চোখে গভীর বিষণ্ণতা।
সাড়ে পাঁচ মাস পরের ঘটনা।
ডাক্তার তিথিকে জানিয়েছে গর্ভের সন্তান ভালো আছে। তার কন্যা সন্তান হবে। সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য তারিখ ৫ আগস্ট।
বাদল এই খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ওপর অতিশয় খুশি। তাদের ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। তিথিকে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ৬ মাসের ছুটি দেবে বলেছে। ছুটির সময় তাকে বেতন দেবে। আগাম বেশকিছু টাকা দিয়েছে। বাদল যেমন ভেবেছিল তাই হয়েছে। প্রমোশন পেয়ে একলাফে তিথির বেতন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। তাদের যত লোন ছিল সব শোধ করে দিয়েছে। বাদল ভেবেছিল পুরাতন অটোরিকশা কিনবে। তিথি বলেছে, পুরাতন অটোরিকশার ঝামেলা অনেক। তুমি নতুন অটোরিকশা কিনে নাও।
বাদল নতুন অটোরিকশা কেনার ব্যবস্থা করেছে। টাকা তিথি দেবে। অটোরিকশার পেছনে লেখা থাকবে, তিথির উপহার।
শাশুড়ি তিথির বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন। বাদল মাঝেমধ্যে উৎসাহের বাড়াবাড়ি করে ফেলে। একদিন বিকেলে ঘরে ঢুকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে তিথিকে বুকের কাছে নিয়ে এলো। গাঢ় গলায় বলল, ‘চলো, নতুন অটোরিকশায় চড়িয়ে তোমাকে শিশুমেলায় নিয়ে যাই। তুমি বনবন করে ঘোরা চরকিতে চড়বে।’
তিথি নিজ পেটে হাত রেখে অবাক চোখে বলল, ‘তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ চরকিতে চড়ে!’
‘আরে তার জন্যই তো। তুমি তাকে নিয়ে চড়বে। মেয়ে আমার চরকিতে চড়ে আনন্দ পবে। সে তোমার পেটের ভেতরে শুয়ে আনন্দে লাফাবে।’
‘ছাড়ো এখন। মা দেখে ফেলবে। ছেলে চলে আসতে পারে।’
বুকের ভেতর থেকে তিথিকে আলগা করে দিয়েছে বাদল। আদর মেশানো গলায় বলল, ‘অটোরিকশার আয়-রোজগার ভালো। দুই-রুমের বাসা ভাড়া করব। এক ঘরে মা থাকবে তার নাতিকে নিয়ে, অরেক ঘরে তুমি আমি আর আমাদের মেয়ে থাকব।’
আচমকা তিথির কান্না পাচ্ছে। বুকের ভেতর থেকে আগুনের ধোঁয়ার মতো জমাট ঘন কান্না দমক দিয়ে ঠেলে উঠে আসছে।
হাতভর্তি কন্যার ড্রেস আর খেলনা কিনে বাসায় ফিরেছে অর্চি আর নিকিতা। তারা দুজন মাঝে মাঝে শপিংয়ে যায়। তাদের অনাগত সন্তানের জন্য ড্রেস কেনে, খেলনা কেনে। কয়েকদিন আগে বেবিকট কিনে এনেছে।
ঘরের এসির সুইচ অন করে নিকিতা বলল, ‘ওই লাল ব্যাগ থেকে ফটোফ্রেমগুলো বের করো তো, দেখি কোথায় কোথায় রাখা যায়।’
‘ঠান্ডা কিছু খেয়ে আসি।’
‘অ্যাই, আমরা কিন্তু মেয়ের নাম ফাইনাল করিনি এখনও।’
‘আনারকলি। এমন সুন্দর রং আর কিছুতে দেখিনি।’
‘তাহলে জবা রাখো।’
ফ্রিজ থেকে হিমশীতল অ্যাপেল জুস বের করে অর্চি দুটো গ্লাসে ঢালল। একটা গ্লাস নিকিতার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘নামের বই কিনেছ। সেই বই থেকে কয়েকটা নাম বেছে চিরকুটে লিখব। চিরকুট তোলা হবে চোখ বন্ধ করে। যে নাম উঠবে, মেয়ের সেই নাম রাখা হবে। ফাইনাল।’
তারপর থেকে টানা এই ঘটনা ঘটে চলেছে। তারা দুজন টুকরো করে কাটা কাগজে তাদের পছন্দের নাম লেখে। চোখ বন্ধ করে নাম তোলে। অর্চি বলে, ‘হবে না, আমি তুলব’। অর্চি তোলে। নিকিতা বলে, ‘এটা হবে না। আমি আবার তুলব’। নিকিতা চোখ বন্ধ করে নাম লেখা কাগজের চিরকুট তোলে। অনাগত কন্যার জন্য কোনও নাম তারা চূড়ান্ত করতে পারে না। কন্যার নাম রাখা এমন খেলা তাদের চলতেই থাকে।
সাতাশে জুন। বুধবার। সকাল এগারোটা।
টেলিভিশন স্ক্রলে দেখাচ্ছে খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। কয়েকটা টিভি চ্যানেল সেটা লাইভ দেখাচ্ছে। ফ্যাক্টরির নিচের দিকের এক ফ্লোরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পুরো ফ্যাক্টরি কালো ধোঁয়ায় প্রায় ঢাকা পড়েছে।
অর্চি অফিসে। নিকিতা অস্থির হয়ে গেছে। সে কয়েকবার তিথিকে কল করেছে। তিথির ফোনে রিং হচ্ছে। ধরছে না। অর্চিকে কল করল। অর্চি ঘটনা শুনে বলল, ‘আসছি এখুনি।’
সাইমনকে কল করল অর্চি। সাইমনের ফোন বন্ধ। তিথির ফোনে একটানা রিং হয়ে যাচ্ছে। তিথি কল রিসিভ করছে না। অর্চি বুঝতে পারছে না, তিথি এখন ফ্যাক্টরিতে নাকি বাসায়। বারবার শুধু মনে হচ্ছে তিথি যেন বাসায় থাকে। ফ্যাক্টরিতে না যায়।
তিথির স্বামীর ফোন নম্বর তার কাছে আছে। তাকে ফোন করে জেনে নেওয়া যায়। তিথির কাছ থেকে অর্চি তার নাম শুনেছে, বাদল। কোনওদিন দেখা হয়নি। বাদলকে কল করে সে কী পরিচয় দেবে অর্চি বুঝতে পারছে না।
রিং হচ্ছে। বাদল কল রিসিভ করেছে। অর্চি শান্ত গলায় বলল, ‘খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মেডিকেল সেন্টার থেকে বলছি। আপনার স্ত্রী তিথি কি বাসায়?’
উৎকণ্ঠিত গলায় বাদল বলল, ‘না, সে তো ফ্যাক্টরিতে গেছে কাজে। কেন কী হয়েছে?’
‘ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে। সব ওয়ার্কারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
লাইন কেটে দিলো অর্চি। তার শরীর থেমে আসছে। মনে হচ্ছে সে গাড়ি ড্রাইভ করে বাসা পর্যন্ত যেতে পারবে না।
নিকিতা আর অর্চি খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কাছে এসে থমকে গেল। আগুন এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে সামনে থেকে না দেখলে কোনওদিন বুঝতে পারত না তারা। দোতলায় আগুন লেগেছে। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়েছে ফ্যাক্টরির তিনতলায়। জানালা দিয়ে হুহু করে আগুনের তীব্র শিখা বের হয়ে আসছে। ওপরের দিকে কালো ধোঁয়া।
ফায়ার ব্রিগেডের আটটা ইউনিট এসেছে। তারা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ফায়ার ব্রিগেডের আরও আটটা ইউনিটকে আসতে বলা হয়েছে। তারা রওনা দিয়েছে। কিছুক্ষণের ভেতর চলে আসবে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে ফায়ার ব্রিগেডের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে, শটসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। ফ্যাক্টরিতে কাপড়ের গাইট ছাড়া আর কী ছিল তারা জানে না। আগুন কেন এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তাও তারা বুঝতে পারছে না।
ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের সন্ধানে মিডিয়া আর প্রশাসন থেকে লোক গেছে। ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার পর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
খান অ্যান্ড খান গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ওয়েলফেয়ার অফিসার শাহনাজ পারভীন। তিনি সকালে বাসা থেকে প্রশিক্ষণ-ওয়ার্কশপে চলে গিয়েছিলেন। ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে বিজিএমইএ। শাহনাজ পারভীনের নতুন চাকরি। ফ্যাকটরিতে আগুন লেগেছে শুনে তিনি অন্যকিছু না ভেবে ওয়ার্কশপ থেকে ফ্যাক্টরিতে ছুটে এসেছেন। এখানে এসে ফায়ার ব্রিগেড আর মিডিয়া কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন। তারা তাকে নানান প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলেছে। নতুন অ্যামপ্লয়ি হিসেবে বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর শাহনাজ পারভীনের অজানা।
‘আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ফ্যাক্টরির দোতলায়। নিচে যারা ছিল তারা জানিয়েছে দোতলায় বেরুনোর কলাপসিবল গেট আটকানো ছিল, কেন?’
‘আমি বলতে পারব না।’
‘দোতলায় গেটের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি গেট না খুলে ছুটে ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে গেছেন, কেন?’
‘হয়তো আগুন দেখে ভয় পেয়েছিলেন। আতঙ্কে ছুটে বেরিয়ে এসেছেন। গেট খোলার কথা মনে আসেনি।’
‘আতঙ্কে বেরিয়ে এসেছেন নাকি ইচ্ছে করে বেরিয়ে এসেছেন?’
‘ইচ্ছে করে বেরুনোর কথা নয়।’
‘সেই গার্ডকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে?’
‘গার্ডের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই।’
অর্চি আর নিকিতা ছুটে এলো। তাদের অবস্থা হয়ে গেছে এলোমেলো। অস্থির গলায় অর্চি বলল, ‘আমাদের সন্তান!’
শাহনাজ পারভীনের হাত ধরে নিকিতা বলল, ‘আমাদের সন্তানকে বাঁচান।’
অবাক হয়ে শাহনাজ পারভীন জিগ্যেস করল, ‘কে আপনাদের সন্তান?’
‘ফ্যাক্টরির ভেতরে আছে।’
কয়েকজন মিডিয়ার কর্মী এগিয়ে এসেছে। তারা জানতে চাইল, সে কি অ্যাডমিনে কাজ করে?
না, সে মাত্র শিশু।
শাহনাজ পারভীন বললেন, ‘ফ্যাক্টরির ভেতরে কোনো শিশু নেই। আমাদের ডে-কেয়ার সেন্টার গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আগুন লাগার পর তাদের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। তারা সেইফ হোমে আছে। অভিভাবকের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বেবিদের গার্জেনের কাছে দিয়ে দেওয়া হবে। আপনার সেইফ হোমে খোঁজ করুন।’
নিকিতা কাতর গলায় বলল, ‘সে সুইং অপারেটর তিথির কাছে আছে। ফিফথ ফ্লোরে।’
‘বললাম তো, ডে-কেয়ার সেন্টার ছাড়া আমাদের ফ্যাক্টরিতে কোথাও কোনও শিশু থাকার নিয়ম নেই। থাকে না।’
অসহায় গলায় অর্চি বলল, ‘তিথিকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন।’
‘তিথি আপনার কে হয়?’
অর্চি তাকাল নিকিতার দিকে। নিকিতা হাইমাউ করে কেঁদে উঠেছে। ফায়ার ব্রিগেডের একজন কর্মী পানির হোস পাইপ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। অর্চি তাকে জাপটে ধরল। কাতর গলায় বলল, ‘ফিফথ ফ্লোরে সুইং সেকশনে অপারেটর তিথি আছে। তাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন। যেভাবে হোক, তার জন্য যা দরকার হয় আমি করব। তিথিকে বাঁচান আপনারা।’
অতিশয় ব্যস্ত ফায়ার ব্রিগেডের কর্মী হোস পাইপ নিয়ে ছুটে চলে গেল আগুন নেভাতে।
অর্চির চেহারা হয়ে গেছে উশকোখুশকো। নিকিতা হাউমাউ করে কাঁদছে। অর্চি এগিয়ে গিয়ে নিকিতাকে বুকের ভেতর শক্ত করে আঁকড়ে ধরল।
পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে আসছে বাদল। ফায়ার ব্রিগেডের আরও আটটি ইউনিট চলে এসেছে। ফায়ার ব্রিগেডের মোট ষোলোটি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুনের ভয়াবহতা আগের থেকে আরও বেড়ে গেছে। আগুন ছাড়িয়ে পড়েছে ফোর্থ ফ্লোরে।
আগুন লাগার পর ওয়ার্কাররা এমার্জেন্সি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেছিল। জমাট ধোঁয়ার নিচে নামতে পারেনি। বেশিরভাগ ফ্লোর থেকে বেরুনোর কলাপসিবল গেট বন্ধ। নিজ নিজ ফ্লোর থেকে ওয়ার্কারদের বেরুনো সম্ভব হয়নি। যারা বেরুতে পেরেছে তারা সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠে গেছে। অনেকে ফ্যাক্টরির ছাদে উঠে চিৎকার করছে।
সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এসেছে তাদের রেসকিউ করার জন্য। হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসে আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কয়েকজন লাফিয়ে পড়েছে নিচে। ওপর থেকে লাফ দিয়ে তাদের সকলেই আহত হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথির ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। বাদল বারবার ফোন করছে। কোনও সাড়া পাচ্ছে না। সে যখন এখানে রওনা হয়েছিল তখনো তিথির ফোনে রিং হচ্ছিল। এখন আর রিং হচ্ছে না। তিথির কী হয়েছে বাদল বুঝতে পারল না।
বাদল এসে ভেঙেচুরে পড়ে গেল। অসহায় গলায় বলল, ‘আমার স্ত্রী মা হবে। তার গর্ভে সন্তান। তিথির কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। তাকে আপনারা আমার কাছে এনে দেন।’
জলন্ত ফ্যাক্টরির সামনে রাস্তায় বাদল ছোটাছুটি করছে আর চিৎকার করে যাচ্ছে, ‘আপনারা তিথিকে বাঁচান। তার গর্ভে সন্তান আছে। তিথির কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। আপনারা তার খোঁজ এনে দেন।’
ফ্যাক্টরির সামনে রাস্তায় কয়েক হাজার মানুষ। তারা উৎসুক হয়ে ফ্যাক্টরিতে ছড়িয়ে পড়া আগুন দেখছে। যারা ওপর থেকে বিল্ডিংয়ের সেনেটারি পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করছে দৌড়ে গিয়ে তাদের ধরছে। পানি দিয়ে আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেড কর্মীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
রাস্তার ওপাশে সরু এক গাছের নিচে নিকিতা আর অর্চি বসে আছে। ফুটপাতের ওপর অর্চি গাছে ঠেস দিয়ে বসেছে। কোলের ভেতর নিকিতা। তার পুরো শরীর অবশ হয়ে এসেছে। সে শরীর ছেড়ে দিয়ে অর্চিকে জাপটে ধরে আছে। অর্চির কোলের ভেতর মাথা গুঁজে রেখেছে। ভয়াবহ আগুন সে দেখতে চায় না।
অর্চি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফ্যাক্টরির দিকে। সেখানে বাঁচার জন্য মানুষ আর্তি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। তাদের বাঁচানোর জন্য আর্ত চিৎকারে বাতাস থমথমে হয়ে উঠেছে। অর্চি তাদের ভেতর তিথির মুখ খুঁজছে। কোথাও তিথির মুখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে অর্চির চোখের সামনে সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে এলো। অর্চিল চোখ কুয়াশার মতো ঝাপসা হয়ে এসেছে। সেই ঝাপসা চোখে সে দেখল, ভয়ংকর আগুন ফ্যাক্টরির ফোর্থ ফ্লোর থেকে ফিফথ ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে তার আর নিকিতার সন্তান গর্ভে নিয়ে তিথি আছে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন