সেই ভোর

সেই ভোর
রুমা মোদক

সেই ভোরটা যেরকম হওয়ার কথা ছিলো, সেরকম হলোনা। আমাদের প্রথম রাতকাটানো ভোর । আমার আর উর্মির। দিনের পর দিন কত স্বপ্ন বোনা, প্রতীক্ষার সিঁড়ি টপকানো…..। অমিত আর লাবণ্যের মতো শিলংয়ের পাহাড়, দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর…। আমাদের প্রথম রাত হবে শ্যামল পাহাড়ে, খোলা আকাশের নিচে। প্রকৃতির সন্তান আমাদের প্রথম রাত কাটবে প্রকৃতির কোলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার মাইল উচ্চতায় আমার কাঁধে নির্ভরতার মাথা রেখে উর্মি দেখবে দূরে অচেনা জনপদে জাগছে চেনা মায়ার সংসার। খুদে পিঁপড়ের মতো জীবন, অথচ সে জীবনে অসংখ্য সুখ দুঃখ কাম ক্রোধের ক্ষুদ্রতা। আমরা জীবন দেখবো, ক্ষুদ্রতা নয়। আমাদের প্রথম ভোর হবে দূর থেকে পার্থিব ক্ষুদ্রতার ক্ষুদ্রতা দেখে দেখে। রোমান্টিসিজমে ভোগা স্বপ্নাতুর মেয়ে উর্মি। রূঢ় কঠোর বাস্তবতার সাথে নিত্য যুঝে চলা আমার কাছে এসব রোমান্টিসিজম হাস্যকর হলেও, উর্মির এসব ছেলেমানুষী অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

রাতকাটানো বলতেই যে প্রচলিত ধারণা, সেরকম রাত আমরা কাটাবো না। আমরা আকাশ দেখবো, নক্ষত্র দেখবো, দেখবো সপ্তর্ষিমণ্ডল, স্বাতী, ধ্রুব। কিন্তু সে মন্দিরের পবিত্র অঙ্গনে শারিরীক মিলনের সুখ খুঁজবো না আমরা সে রাতে। এমন নয় যে আমার আর উর্মির শরিরী ভালো বাসা হয়নি। তীব্র কামনায় হয়েছে। অনেকবার হয়েছে। এখানে সেখানে, মেসের ভ্যাপসা গরমে, উর্মির নিজস্ব রুমের এসির ঠাণ্ডায়। তবু সে রাতটি উর্মি চেয়েছে কেবল প্রকৃতির কোলে পারস্পরিক নির্ভরতায়। আরে এটুকু সংযম দেখাতে না পারলে মানুষ কেন আমরা? তাইতো। উর্মি গভীর আবেগে আমার শার্টের বোতাম খুলে লোমশ বুকে চুমু খায়।

কিন্তু সেই ভোরটা হলো ভয়াবহ। আগের সারারাত জেগে থাকার স্বপ্ন আমাদের ক্লান্ত করে ফেললো শেষরাতে, উর্মি প্রচণ্ডভাবে না করা সত্ত্বেও আমি গভীর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না, উর্মি বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করলো আর আমরা দুজনেই নিঃশ্বাস বিনিময় করতে করতে কখন যে সারাদিনের ক্লান্তির কাছে সমর্পিত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম জানিনা। ঘুম যখন ভাঙলো তখন সূর্য প্রাতঃদায়িত্ব শেষ করে ভোর পেরিয়ে সকালের পথযাত্রী। পিঠের নিচে জড়াজড়ি ঘাসগুলো নুয়ে নুয়ে সমান হয়ে গেছে আমাদের পিঠের পিষ্টনে। চোখে হঠাৎ উষ্ণ তেরচা রশ্মি খোঁচা দিতেই আমার ঘুম ভাঙে আর ঘুম ভেঙেই আমি চমকে উঠি অতর্কিত আতঙ্কে। পাশে উর্মি। জাগেনি। অভাবনীয়, ভয়াবহ রক্তাক্ত উর্মি। এবড়োথেবড়ো উল্টে আছে উর্মি। উর্মি কি মরে গেছে? কীভাবে? কে মারলো ওকে? উর্মি কি বেঁচে আছে? ছুঁয়ে দেখবো? উৎকণ্ঠার হাতটা বাড়িয়ে আবার গুটিয়ে নেই, ভেতর থেকে এক পরিচিত সংকট আমাকে তাড়া করে। জন্ম থেকে যে সংকটের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছি আমি। যে সংকট প্রতিনিয়ত আমাকে কানে কানে বলে বেঁচে থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে যে কোন উপায়ে। উর্মি মৃত না জীবিত এই ধন্ধ কাটবার আগেই আমার নিজেকে বিশ্বাস করাতে হয় আমি বেঁচে আছি। এবং আমার নিজেকে বাঁচাতে হবে।

কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি এদিক সেদিক লক্ষ্মণকে খুঁজি। অদূরে এক প্রাচীন জটিল বিন্যস্তের শেকড়ে ঘুমাচ্ছিলো লক্ষ্মণ, এখন নেই। সন্ত্রস্ত আমি ঝটিতি উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশটা একবার দেখে নেই সাবান চুরি করতে আসা কাকের মতো। তারপর আর পিছনে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে ভাঙতে থাকি লালমাটির ঢাল….., পেছনে পরে থাকে সফেদ তাজমহলের মতো শিবমন্দির, খুঁজে না পাওয়া পাহারাদার লক্ষ্মণ আর মৃত নাকি জীবিত রক্তাক্ত উর্মি।

পুলিশ আমাকে ফোনে অনুসরণ করলোই। যা সচরাচর ঘটে। প্রাথমিক সন্দেহ সাথে থাকা সঙ্গীর দিকেই যায়, যেমন দোকানে কিছু কিনতে গেলে সাথে থাকা ফ্রি জিনিসটির দিকে চোখ যায় আগে। আমার মর্যাদা আসলে উর্মির সাথে থাকা ফ্রি উপহারের মতো নয়, বরং একটা কিনলে একটা ফ্রি-এর মতো, উর্মির একমাত্র সঙ্গী, পুলিশের কাছে সহজলভ্য এবং অব্যর্থ লক্ষ্য । পুলিশ তাই আমাকে ধরে লকআপে পুরবে, এটা স্বাভাবিক আর প্রত্যাশিতই ছিল। আমি পুরোটা না হলেও আধাআধি প্রস্তুতই ছিলাম। তাই ফিরে আসার তিনদিনের মাথায় আমি যখন অফিসের ছয়তলার ক্যান্টিনে ফ্রায়েড রাইস আর মুরগির লেগপিস ফ্রাই দিয়ে ডিনার সারছিলাম, তখন রিসেপশন থেকে কল এলো আপনাকে পুলিশ খোঁজে। আমি একটুও অবাক না হলেও ‘পুলিশ’ শব্দটা শুনেই ডাইনিং শুদ্ধ লোক আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা কিম্ভুতকিমাকার ভিন গ্রহের প্রাণী, যার খোঁজে এই অভিজাত অফিসে পুলিশ আসতে পারে! তাদের স্বাভাবিক খাবার প্রক্রিয়া থেমে গেল। কারো হাতে ভাতের লোকমা, কারো মুখে আধচিবানো ভাত পেটে যেতে ভুলে গেল। আমি নির্বিকার ধীরলয়ে খেয়ে, যেমন সবসময় খাই তেমনভাবেই, যেন কিছুই হয়নি ভাব নিয়ে সবার কৌতুহলদ্দীপক দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিচে নেমে গেলাম।

জানতাম পুলিশ আমাকে নিতে আসবে, ফোনে ফোনে দু’দিন ধরেই তার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করছিলো পুলিশ। বুঝে গিয়েছিলাম আজই ধরে নিতে আসবে দিনের যে কোন সময়। তবু আমি নির্বিকার অফিস করতে এসেছি। কারণ আমি নিশ্চিত জানি আমি উর্মিকে হত্যা করিনি। হাজতের প্রথমদিন, বিকেল। হাঁটুতে মাথা গুঁজে ভাবছিলাম, কি ভাবছিলাম আগামাথা মনে নেই। মাথাটা ফাঁপা বেলুনের মতো শূন্য হয়ে যাচ্ছিল বারবার, সব ভাবনার আদি অন্ত সুতো ছিঁড়ে। থানা চত্বর শুনশান। বারান্দা, চেয়ার সব শূন্য। লাঞ্চের সময় দুপুরের অনতিদীর্ঘ বিরতি পেরিয়ে বিকাল ছুঁইছুঁই কিন্তু লাঞ্চে গিয়ে তখনো ফেরেনি কেউ। পরপর অর্থহীন ক্রিং….ক্রিং…..বেজে চলেছে।

হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে কেউ ডাকে, উপল….। একদম উর্মির কণ্ঠ। আমি মুখ তুলে তাকাই। হ্যাঁ উর্মি। সাথে একজন পুলিশ অফিসার। আমি ভূত দেখার মতো চমকে ওঠি। তবে কি তবে কি সেই ভোর থেকে মিথ্যাই দৌড়ে দৌড়ে হয়রান হচ্ছি আমি? উর্মি বেঁচে আছে? আমি মাথা তুলে, বিস্ময় আর আকুল দৃষ্টিতে তাকালেও উর্মি আমার দিকে মোটেই মনোযোগ দিয়ে তাকালো না, বরং উপেক্ষার একটা নজর ছুঁড়ে দিয়ে সাথে থাকা এসআইকে নিশ্চিত করলো, হ্যাঁ এটাই উপল।

তারপর দীর্ঘ সাত বছরের প্রেম, ডেটিং, একান্তে কাটানো ছোঁয়াছুঁয়ির সময়, বাবুইপাখির বাসার মতো খড়কুটো কুড়িয়ে কুড়িয়ে বোনা স্বপ্ন ছেঁড়া কাগজের মতো উড়িয়ে দিয়ে নির্বিকার হেঁটে বেরিয়ে গেলো উর্মি, যেন আমি এরকম একটা রাফ কাগজই ছিলাম ওর জীবনে, যার এরকম তাচ্ছিল্যই প্রাপ্য। যতই অস্বীকার করি, ভয় তো কিছু ছিলোই। ভয় কেটে গিয়ে এখন হচ্ছে রাগ, অভিমান, ক্ষোভ। কী দুঃসহ, বিভীষিকাময় কয়টা দিন আমার, উফ, কেন যে একটাবার উর্মিকে ছুঁয়ে নিশ্চিত হলাম না! আর কি আশ্চর্য উর্মিও একটা খোঁজ নিলো না! একটা ফোন পর্যন্ত না? আমিও তো মৃত নিখোঁজ হতে পারতাম!

আমি আমার ঔচিত্য নিয়ে ভাবি। আমার কি ওকে ফোন করা উচিত ছিলো? ওর নাম্বারে অন্তত একবার চেষ্টা করা উচিত ছিলো? কিন্তু কীভাবে? এত সাহস আমার কোনকালে ছিলো? সাহস থাকলে সেই ভোরে উর্মি জীবিত না মৃত নিশ্চিত না হয়ে ওকে অরক্ষিত রেখে পালিয়ে আসি? কিন্তু উর্মি তো সাহসী মেয়ে, ও একবারও খোঁজ নেবে না আমি বেঁচে আছি কিনা? ও তো শিল্পপতি পিতৃপ্রদত্ত শ্রেণি পরিচয় দুরন্ত সাহসে বাদামের খোসার মতো এক ফুঁতে উড়িয়ে আমাকে ভালোবেসেছে। হ্যাঁ, আমার সহজাত স্বভাব আমার কৃতকর্মকে লঘু করে আমাকে নিশ্চিত করে যে উর্মিরই আসলে উচিত ছিলো আমার খোঁজ নেয়া।

পরদিন আদালতে হাজির করে পুলিশ আমার তিনদিনের রিমান্ড চায়। আমি এবার সত্যিকারের ভয় পাই। সেদিনের সেই ভোরের চেয়েও বেশি। আমি গ্রাম থেকে উঠে আসা কথিত মেধাবী ছাত্র। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্টক্লাস পেয়ে পাশ করা আর একদিনও বেকার না থাকা সো কলড সফল পুরুষ। আর আমার সাফল্যের সেরা পালক উর্মি। ক্লাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেয়েটি, যে প্রথম বর্ষে নোটের গোছা নিতে এসে আমার প্রেমে পড়েছে আর ক্যাম্পাসের কয়বছর আমার সাথে ঘুরে ঘুরে সবার চোখ টাটানোর গনগনে আগুনে কেরোসিন ঢেলেছে। আমার ভয় এবার হৃৎপিণ্ডের লয় দ্রুত করে। সেই দ্রুত লয় আমার হাত কাঁপায়, পা কাঁপায়। কান ফুঁড়ে যেন ধোঁয়া বের হতে থাকে সদ্য নিবানো আগুনের। রিমান্ড মানেই সেদ্ধ ডিম, নখের ভেতরে সুঁই, মুখে গরম পানির ঝাপটা, উফ কতো মিথ!

এখনো আমি ব্যাগ নিয়ে সীমানা পার হলে বাড়ির সম্ভ্রম রক্ষাকারী কলাপাতার প্রাচীর ধরে মা দাঁড়িয়ে থাকে, যতক্ষণ না আমার ছায়াটাও মিলিয়ে যায়। ঘরে একখানা চকিতে বাপ মা আর অটিস্টিক ভাই ঘুমায় আর সেই ঘরটাকেই চাটাই-এর বেড়া দিয়ে আলাদা করে গরু আর বাছুর রাখা হয়, যে ঘরে কাপড় রাখার আলমিরা দূরে থাকুক, একটা আলনাও নেই। বাঁধা দড়িতে কয়খানা তেল চিটচিটে কাপড় ঝুলে,একপাশে বড় গোলা অর্ধেক ভরতি ধান, পাশে ওল্টানো টুকরি, ছালার বস্তায় মুখ বাঁধা চিটা। যে ঘর থেকে বের হতে গেলে মাথা আটকে যায় দরজায়, মাথা না নুইয়ে বের হওয়া যায় না। সেই ঘরের ছেলে আমি ভালো রেজাল্টের কারণে আর মহেন্দ্র স্যারের সুনজরের ছায়া এড়াতে পারিনি বলে গ্রাম ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে এসে উঠতে পেরেছি। আর তারপর মাথাটা বড় উঁচু করে হাঁটতে শিখে গিয়েছি উর্মির প্রেমে পড়ে কিংবা উর্মি আমার প্রেমে পড়ায়। প্রকৃতির বোধহয় সহ্য হয়নি এতটা বাড়াবাড়ি।

আদালত থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় লক্ষ্মণের সাথে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে লক্ষ্মণ। সারা গায়ে কালশিটে দাগ গায়ের ময়লা আস্তরণের সাথে মিলেমিশে একাকার। দূর থেকে আলাদা করে চোখে পড়ে না। আমি কাছ থেকে দেখি, ডাকি, লক্ষ্মণ! লক্ষ্মণ চোখ তুলে তাকায়। আমাকে চিনে নাকি চিনে না তার দৃষ্টিতে কোন ছায়াই স্পষ্ট হয়না। আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

পুলিশ বোধহয় বেদম পিটিয়েছে ওকে। ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরো তিনদিন আগে। থানায় এসেই জেনেছি আমি। আমাকে নয়, স্পটে হাতের কাছে পাওয়ায় সবার আগে গ্রেফতার করা হয়েছে লক্ষ্মণকেই। লক্ষ্মণকে দেখে আমার কষ্ট হয়, আহা বেচারা শ-পাঁচেক টাকার লোভে! আমাকে চেনা অচেনার দমবন্ধ কূয়ায় ফেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে লক্ষ্মণ এগিয়ে গেলে আমাকে ভয় আর আতঙ্ক সাঁড়াশির মতো চেপে ধরে। রিমান্ড শেষ হলে পুলিশের মার খেয়ে আমিও কি এরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটবো? আমার হার্টবিট এবার এমনভাবে বেড়ে যায় যে মনে হয় যে কোন মূহুর্তে তা ক্লান্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

আমার উর্মিকে একটা ফোন দিতে ইচ্ছে করে। একমাত্র উর্মিই আমাকে এই ভয়াবহ আতঙ্ক থেকে, ধেয়ে আসা পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। একমাত্র ওই তো বলতে পারে সে রাতে আসলে কি হয়েছিলো, কে বা কারা ওকে রক্তাক্ত করেছে!

কিন্তু ফোন করার উপায় নেই, থানায় এনেই এরা সর্বপ্রথম আমার মোবাইল আর মানিব্যাগ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু উর্মির নাম্বার আমার মুখস্থ। পাশের কনস্টেবল ফোনে কাকে গালি দিচ্ছে, মাদারচোদ….টাকা নিয়ে কখন আসবি তাই ক। আদালত প্রাঙ্গণের ভীড় তখন বেশ দূরে সরে গেছে। আমি সাহস করে কনস্টেবলের কাছ থেকে ফোনটা চাইলাম। আমার চেহারা সুরতে প্রভাবিত হয়েই বোধ করি ফোনটা নির্দ্বিধায় দিয়ে দিলো সে। আমি উর্মির নাম্বারে কল করলাম। আননোন নাম্বার দেখেই সম্ভবত একটা রিং হতেই কলটা ধরলো উর্মি। আমার নাম্বার থেকে ফোন দিলে ধরতো না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমি আমার সমস্ত প্রেম, ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর সবার উপরে অগ্রাহ্যের অযোগ্য তীব্র কৌতুহল একত্রিত করে উর্মিকে অনুরোধ করলাম, আমাকে বাঁচাও উর্মি। আদালত আমাকে রিমান্ড দিয়েছে। উর্মি, উর্মি তুমি জানো রিমান্ড কি, রিমান্ড উর্মি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমাকে বাঁচাও তুমি। আমি উর্মির উত্তরের অপেক্ষা না করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে হাঁফাতে থাকি। গত কয়দিনের অনিশ্চিত আর্ত তাড়া এই হাঁফানোকে আরো অস্থির করে।

উর্মিকে কিছুই স্পর্শ করেনা। ক্যাম্পাসের সাত বছরের শত প্রেমময় মূহুর্ত, অনিয়ন্ত্রিত আবেগের স্পর্শ যেন মিথ্যে মরিচীকা। নির্বিকার আবেগহীন উত্তর দেয়, আমি ক্ষমা করার কে উপল? সেদিন ভোরে তুমি যা করেছো তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারো? আমাকে আর কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইনটা কেটে দেয় সে। আমার রাগ হয়। অক্ষম রাগ, কিন্তু অযৌক্তিক। আমি জানি সেই ভোরে আমি ঠিক করিনি। মোটেই ঠিক করিনি। বিষণ্ণ অসহায় লাগে নিজেকে। পরবর্তী করণীয় ভাবতে ভাবতে হাঁটতে শুরু করি যখন, তখন দূর থেকে আবার লক্ষ্মণকে দেখি। আদালত চত্বর ছেড়ে বাইরের দিকে আসছে, কোমরে পুলিশের দড়ি। আরে ওর পাশে কে? উর্মি? হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে ওরা। তাইলে উর্মি আশেপাশেই ছিলো? এখান থেকেই আমার ফোন ধরেছে, অথচ আমাকে বুঝতে দেয়নি, আমার সাথে দেখাও করতে আসেনি! অসংখ্য ঠোঁটে ঠোঁট রাখা মূহুর্ত, হাতে হাত রাখা স্বপ্ন, কাঁধে মাথা রাখা শিহরণ সব এত সহজে ভুলে গেলো উর্মি? এটা কী করে সম্ভব?

আমি সাথের কনস্টেবল দুজনকে অনুরোধ করি একটু অপেক্ষা করতে। উর্মি আর লক্ষ্মণ এদিকেই আসছে। কনস্টেবল দু’জন আমার কথা রাখবে কি রাখবে না দ্বিধাগ্রস্ত হয়। আর এদের দ্বিধার মধ্যেই উর্মি আর লক্ষ্মণ আমাদের সামনে এসে পড়ে। উর্মি আমাকে দেখেই কিনা কে জানে দ্রুত আরো এগিয়ে যায়। আমি অদূরে দাঁড়িয়ে এক অচেনা উর্মিকে আবিষ্কার করি, আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে যে গাড়িতে ওঠে অনায়াসে চলে যেতে পারে। অথচ কতদিন গাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আমার সাথে রিক্সার হুড ফেলে রিক্সায় সন্ধ্যা অতঃপর রাত করে বাড়ি ফিরে মায়ের গালি শুনে কাঁদতে কাঁদতে আবার ফোনে কথা বলতে বলতে রাত ভোর করেছে উর্মি।

লক্ষ্মণ:
আমি ক্যান তুদের মন্দিরের টিলায় উঠতে দিলাম। মজা করতে উপ্রে গেলি। আমি কি ভুল করলাম? গরীব গুর্বা মানুষ। দুইটা টেকার লুভে আজ জেল খাইটতেছি। সালির সালি। ধরলাম না ছুঁইলাম না, বিনা দোষে পুলিসের মাইর খাইতেছি। লক্ষ্মণ উর্মিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলতে থাকে গড়গড়িয়ে। ক্ষোভ হতাশার সাথে কেমন আক্ষেপও। গাড়ির পা দানিতে পা রেখে ঘুরে দাঁড়ায় উর্মি। দৃষ্টিতে উপচে পড়ে কৌতুক, বলে, বিনা দোষে লক্ষ্মণ? তারপর ভূপৃষ্ঠ থেকে সুরুৎ করে উপরে উঠতে থাকা স্যাটেলাইটের মতো অদৃশ্য হয়ে যায় উর্মির গাড়ি। লক্ষ্মণ বিড়বিড় করে, হ হাছাইতো কইলি, বিনা দুষে লয় রে, বিনা দুষে লয়। ক্যান যে লুভ করতে গেলাম! হা রাম! লক্ষ্মণ ফুঁপিয়ে কাঁদে। অনুশোচনায় নাকি ব্যাথায় ঠিক বোঝা যায় না।

সাথে থাকা কনস্টেবলগুলো নিয়মিত এরকম দৃশ্য দেখে আর হাসে। গোঁয়ারের মতো ব্যাটা গজগজ করে প্রতিদিন। শালা যে কেসে ফেঁসেছে, এত সহজ নয় নির্দোষ প্রমাণ করা। তার উপর না আছে লোকের জোর, না আছে টাকার জোর। হয়তো সারাজীবন জেলেই পচে মরবে।

কনস্টেবলরা মজা পায়, এই লক্ষ্মণ, হাছাই ঐ সুন্দরীরে……ওরা স্পষ্টই উর্মিকে ইঙ্গিত করে। লক্ষ্মণ মূর্খ দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে, যেন এমন কথা সে জীবনে প্রথমবার শুনলো, রাম রাম, কি কস বাবু! নারী হইল মায়ের জাত। ছেদিন ছন্ধ্যা ছন্ধ্যা লড়কী এক লড়কা কা সাথ এলো। অভাবের ছংছারে পাঁচশ টাকা কি কম, ক দেখিন, এক বস্তা চাইল রে বাবু, পনেরো দিনের খোরাকী, দিনকে দিন না খেয়ে থাকি, মাত্র একশ টাকা রোজে আটটা পেট চলে ক দিখিন…শুরু হয় লক্ষ্মণের গল্প। এই গল্প গত তিনদিন ধরে বলতে বলতে ক্লান্ত লক্ষ্মণ, বাকিরা ক্লান্ত শুনতে শুনতে।

গল্পটা এরকম ভাবে শুরু:
চাকরি পাওয়ার পর উপলের হাতে কচকচে টাকাগুলো এলেই উপলের বন্ধুদের সাথে এখানে সেখানে যাবার সাধ পূর্ণ হয়। ছাত্রজীবনে সুযোগ হয়নি তার, টাকার অভাবে। এখন বাড়িতে বিকাশ করে বাপ মায়ের মাস খরচের টাকা পাঠিয়েও বেশ টাকা থেকে যায় হাতে। নিজের ইচ্ছামত খরচ করা যায়। বন্ধুদের সাথে এই লালছড়া বাগানটাতে এসে যতটা না মুগ্ধ হয়েছিলো এর বিস্তীর্ণ সবুজ চা বাগান আর যত্ন করে ঢেকে রাখা বীজতলায় সদ্য ফোটা সবুজ কুঁড়িগুলো দেখে তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলো ঢাল বেয়ে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে উঠে শিবমন্দিরটা দেখে। অপূর্ব স্কাল্পচার। ধবধবে সাদা পুরো প্রাঙ্গণ। দিনের একেক সময়ে সূর্যের আলো একেক রং তৈরি করে। ভেতরে সিঁদুর লেপ্টানো শিবলিঙ্গটা বাদ দিলে এ যেন আরেকটা তাজমহল। দূরে দেখা যায় ভারতের সীমান্ত শহর শিলং এর পাহাড়ের সারি। নিচে তাকালে বাংলাদেশের সীমান্ত শহরের গাড়ির সারি। ছায়াবৃক্ষের মাথাগুলো ছুঁয়ে আছে শিবমন্দিরের পাল্লা। তার ডালে ডালে বিচিত্র পাখিদের কোলাহল। উপলের খুব ইচ্ছে হয় এখানে পরেরবার উর্মিকে নিয়ে আসবে সে। উর্মি চমকে যাবে। এখন এসব ছোটখাটো ইচ্ছে মেটাতে খুব ভাবতে হয় না উপলের। কয় মাস পরেই দুম করে বিয়ে করে ফেলে দুজন। সেদিনই উর্মিকে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে রওয়ানা দেয় সে শ্রীমঙ্গলের দিকে। গাড়িতে ওঠার আগে উর্মি আবার মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রথম রাত প্রকৃতির কোলে কিন্তু, পুরুষ হয়ে নারীর শরীর ছোঁবে না।

মানবেন্দ্র:
আদালতে যেদিন মানবেন্দ্রকে হাজির করে, আমি চিনতে পারিনি। উকিলের জেরায় জানা হয় মন্দিরের বর্তমান পাহারাদার সে। লক্ষ্মণকে পুলিশে ধরার পর চাকরিটি পায় মানবেন্দ্র। দৈনিক ১০০ টাকা মজুরির চাকরি। একসময় মন্দির দিনরাত সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো। কিন্তু বৈশাখী পূর্নিমার রাতে এখানে একটা খুন হবার পরই মালিক পক্ষ আর ম্যানেজার কর্মচারীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, পাঁচটার পর মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ। মন্দিরে প্রবেশের পথে একজন পাহারাদার নিয়োগ দেয়া হয় তখন।

মানবেন্দ্র নিয়োগপ্রার্থী হিসাবে ম্যানেজারের সাথে দেখা করেছিল। বাগানে পাতা তোলার কাজ করা মা তিনদিনের জ্বরে মরে গেলে ঘরে আর রোজগেরে কেউ ছিলোনা। বাপ এমনিতে যক্ষা রোগী, তার উপর সারাদিন তাড়ি খেয়ে চুরচুর, দুনিয়াদারির কিছুই তাকে স্পর্শ করেনা। হাঁ করে থাকা চার চারটা ভাইবোন ওর ছোট। প্রয়োজনটা মানবেন্দ্রর বেশি হলেও, যথেষ্ট শক্ত সামর্থ্য নয় বলে চাকরিটা তার হয়নি।

তখন বড়সাহেব আশ্বাস দিয়েছিলো পরবর্তীতে কাউকে নেয়া হলে তাকেই নেয়া হবে। শক্ত সামর্থ্য হবার জন্য ভাতের মাড় আর সাধনা ঔষধালয়ের সালশা বহু কষ্টে যোগাড় করে খাওয়া শুরু করেছিল সে।

চায়ের দেশে পৌঁছানোর পর:
তখন সন্ধ্যা সন্ধ্যা, যখন তারা দুপাশে চাগাছের বিছানো কার্পেটের উপর থেকে মাথা গুটিয়ে নিচ্ছে ছায়াবৃক্ষের ছায়া। উর্মি প্রথমবার চা বাগান দেখেছে। যা দেখে তাতেই সে মুগ্ধ। প্রতিটি বাঁকে তার ছবি তোলা চাই। প্রতিটি লালমাটির ঢালে উর্মি ফুটে থাকে ছবির মতো। উপল মুগ্ধতায় মোবাইলে ক্লিক ক্লিক করে মূহুর্তগুলো বন্দি করে। মাথার উপর সূর্য দিনশেষে রাতের দিকে যাবার আয়োজন করে, আঁচলের লাল রং সারা গায়ে ছোপ ছোপ ছড়িয়ে পরা সাদা শাড়ি হয়ে উঠে আকাশ। আজ রাতটা সেই নিরালা পাহাড়ের কোলে জেগে গল্প করে কাটিয়ে দেয়ার প্ল্যান দুজনের। এমন স্বপ্ন কত দেখেছে দুজন৷ একটা চন্দ্রিমা রাত। দুজন পাশাপাশি। সবুজ পাহাড়ের কোলে। স্বপ্ন এভাবে এত সহজে সত্যি হয়ে যাবে ভাবেনি উর্মি। ভাবেনি উপলও।

টিলার ঢাল ভাঙতে ভাঙতে হাঁফাচ্ছিলো উর্মি। শ্রাবণের শেষ। বাতাসে ভাদ্রের তালপাকা গরমের আগমনী তীব্রতা। ঘেমে নেয়ে একশেষ। উপল বুঝতে পারছিল ওর কষ্ট। আর মনে মনে ভাবছিল, আহা আরেকটু। মন্দিরের শুভ্র শ্যামলিমায় ওর বিস্ময়াভিভূত দু’চোখ কল্পনা করে উপল উৎসাহ দিচ্ছিল, আরেকটু উর্মি…আরেকটু…সব কষ্ট ভুলে যাবে।

কিন্তু কাছে যেতেই বাধলো বিপত্তি। পাহারাদার লক্ষ্মণ পথ আটকে দিলো। কিছুতেই মন্দিরে ওঠা যাবে না। কিছুতেই না। ক’দিন আগে মাত্র একটা খুন হয়েছে এখানে। সন্ধ্যার পর তাই মন্দিরে যাওয়া নিষেধ। এতদূর এত কষ্ট করে এসে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ভাবেনি উপল। কত অনুনয় বিনয় লক্ষ্মণকে। কিছুতেই রাজি নয় সে। মজুরি কাটা যাবে তার, চাকরিটাও যেতে পারে। রোজ কত? ১০০ টাকা। ১০০ দিয়েই শুরু। গলানো যায় না তাকে। ২০০-৩০০-৪০০। ৫০০ তে নরম হয়ে যায় লক্ষ্মণ। ইতস্তত করে। প্রাগৈতিহাসিক এক বট গাছের নিচে ওদের অপেক্ষা করতে বলে হাতের লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে এদিক সেদিক হাঁটে। প্রিয়তমার সাথে প্রথম রাত কাটানোর অপেক্ষা। কিন্তু কিছুতেই এ অপেক্ষাকে প্রতীক্ষা বলা যায় না। উর্মির বিরক্ত ক্লান্ত মুখের দিকে সে মূহুর্তে তাকানোর চেষ্টা করেনা উপল।

রাত একটু গভীর হলে চাঁদের আলোর তীব্রতা বাড়তে থাকে প্রেমিকার কাছে যাবার প্রত্যাশার মতো। কড়কড়ে পাঁচশ টাকার নোটটা নিয়ে লক্ষ্মণ ওদের ইশারা দেয় উপরে ওঠায়। বিড়বিড় করে, লোভ করলাম রে বাবু, ঠিক নাহি হইল। কিচ্ছু হবেনা লক্ষ্মণ। আমরা সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে যাবো। উপল লক্ষ্মণকে আশ্বস্ত করে।

মানবেন্দ্র:
পরের সপ্তাহে আদালত চত্বরে মানবেন্দ্রর সাথে আমি আবার দেখি উর্মিকে। আশ্চর্য, উর্মি মানবেন্দ্রকেও চেনে? মানবেন্দ্র হাতের হাতকড়া নিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে উর্মির পায়ে, আমাকে ক্ষমা করিয়া দে মাই….আমি আর এরকম করবেক লাইরে…। উর্মি হাসে। কি মিষ্টি নিষ্পাপ হাসি। গালে এক অঞ্জলি জল রাখার মতো টোল পড়ে। আমি তুর শরীলে হাত দিতে নাহি চাইরে মাই, নাহি চাই। রাক্ষস গতরটা হঠাৎ গরম হইয়া গেল, আমি বেঁহুশ হইয়ে গেলাম।

হ্যাঁ রে মানবেন্দ্র, নারীর শরীর রাস্তার পাশে বিক্রি করা কলার কাঁদি। খাবার জন্য তুইও হাত দিতে পারিস, তোদের বাবুও। আঙুল তুলে কি আমাকেই দেখায় উর্মি?

আমি অদূরে দাঁড়িয়ে ডাকি, উর্মি….উর্মি……। না শোনার ভান করে উর্মি আবার রাজেন্দ্রাণীর মতো হেঁটে যায় গাড়ি অভিমুখে। মানবেন্দ্র আমার সামনে এসে থেমে যায়, তুই উপল বাবু আছিস? আমি হ্যাঁ কিংবা না বলার সুযোগ পাই না। মানবেন্দ্র ঝরঝর করে কাঁদে। আমার চাকরিটা খুব দরকার ছিলো রে বাবু, খুব দরকার ছিলো। কিন্তু ব্যাটাছেলে যে, গতরের ডাক ভুলতে পারলাম লাই, কিন্তু মেয়েটাকে ক্যান যে গলা টিপে মারিয়া ফেললাম রে বাবু নিজেই জানিনা। কোমরের দড়ি নিয়ে মাটিতে আছাড়ি পিছাড়ি গড়াগড়ি খায় মানবেন্দ্র। মারিয়া ফেললাম মানে, আমি মানবেন্দ্রর কথার আগামাথা কিছুই বুঝিনা। উর্মিকে কি হত্যা করেছে সে? আমি তবে আমার সামনে, লক্ষ্মণের সাথে, মানবেন্দ্রর সাথে এতদিন কাকে দেখলাম? আমার কাপুরুষতা, লক্ষ্মণের লোভ, মানবেন্দ্রের রিপুকাতরতা সবকিছুকে তবে কে অপরাধে চিহ্নিত করে দিয়ে গেল? আমি সেই ভোরের মতো আবার ধন্ধে পড়ে যাই।

একটা গাড়ি ঠিক তখন আবার স্যাট করে সামনে দিয়ে চলে যায়, চলতি গাড়ির জানালা দিয়ে কি উর্মির মুখটা দেখি আমি? সেই মায়াবী দৃষ্টি, গালের টোল…। ভালো করে দেখতে পারি না। পুলিশ আমাকে টানতে টানতে সামনে নিয়ে চলে। তখনই আরেকটা গাড়ি, ভেতরে কে? এওতো একদম উর্মির মতো। পৃথিবীর সব মেয়ের চেহারা কি তবে উর্মির মতো হয়ে গেছে? আমি নিশ্চিত হতে চাই। আমি গলার সমস্ত জোর একত্র করে ডাকতে চাই উর্মি…উর্মি…কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয়না।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “সেই ভোর

  1. এই সময়ের প্রাসঙ্গিক গল্প। খুব ভালো লেগেছে।

  2. চলমান সময়, লোভ, মানবিকতার পতন, উঠে এসেছে। গল্প ভালো লাগল কিন্তু এই মানুষের হিংস্রতাকে যেন তাতেও আঁটানো গেল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *