শকুনি

শকুনি
জয়তী রায়

 

 

 

 

-খা। কামড়ে খা। রক্ত গরম। কচি হাড়। চুষে খা।
-না না। ও আমার ছোট ভাই। কোলের কাছের ভাই। কতদিন হাতে করে ভাত মুখে তুলে দিয়েছি। না না। পিতা …না।
উত্তরে জোড়া জোড়া অনেকগুলো কোটরাগত চোখ ফিরে তাকাল। জীবন্ত কঙ্কাল। ধকধক জ্বলছে চোখ। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল তারা। হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে গোল বৃত্ত তৈরি করল। কেউ দাঁড়িয়ে নেই। হামাগুড়ি দিচ্ছে অথবা বুকে হেঁটে এসেছে। মাঝখানে পড়ে আছে বছর দশেকের বালকের কঙ্কালসার মৃতদেহ। বৃত্ত থেকে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস আওয়াজ এলো,
-খা। তুই খা। তোকে বাঁচতে হবে। প্রতিশোধ নিতে হবে। খা। সবাই মিলে মরে যাব নাহলে।
-আমি একা বাঁচব?
-তুই সেরা বুদ্ধিমান। সেরা সাহসী। সেরা পাশা খেলুড়ে। তোকেই বাঁচতে হবে। হাঁফাতে হাঁফাতে বলে কঙ্কাল।
-খাবার নেই। আজ পনেরদিন অনাহারে। এবার একজন একজন করে মরব রে। তুই খাবি তাদের মাংস।
হা হা করে কে হেসে উঠল। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাথরের প্রাচীর ঘেরা একটা জলা জায়গা। ঘিচঘিচে কিচকিচে পোকা। দুর্গন্ধ। কিলবিল কিলবিল কি যেন বেয়ে বেয়ে ওঠে। তার মধ্যে পড়ে আছে কতগুলি মানুষের মত জীব। না না, মানুষই ছিল একসময়। আজ তারাও ওই পোকাগুলোর মত বুকে হেঁটে হেঁটে ঘাস জমি থেকে কি সব খুঁটে খুঁটে খায়। গায়ে লোম। হাতে বড় বড় নখ। চুলে জটা। চোখগুলো জ্বলে। এককোণে বসে আছে এক কিশোর। একটু যেন আলাদা। একটু যেন সুস্থ।। মৃতপ্রায় জীবগুলি আবার বলছে,
-খা। খা বলছি।
কিশোরের চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। কোনমতে বলল,
-পুরোটা?
-পুরোটা।
ক্ষুধার্ত দলটি তাকিয়ে রইল। কিশোর খেতে লাগল নিজের ছোট ভাইয়ের মাংস। রক্ত। হাড়। চুষে চুষে। চেটে চেটে। কামড়ে। কামড়ে। চোখ দিয়ে আর জল নয়। ঝলক দিচ্ছে আগুন। নিঃশব্দে উচ্চারিত হচ্ছে প্রতিজ্ঞা,
-যার জন্য এই অবস্থা, একদিন তাকে যদি অকথ্য যন্ত্রণা না দিতে পারি, আমার নাম শকুনি না।

 

 

 

 

আজ সকাল থেকে উৎসব। হস্তিনাপুর সেজে উঠেছে। ঝলমল করছে চারিধার দুর্যোধনের অভিষেক হবে। ধৃতরাষ্ট্রের নয়নমণি এই পুত্র। তিনি পারলে পুরো রাজকোষ খুলে দ্যান। হেঁকে ডেকে অস্থির হচ্ছেন! দেখতে তো পাচ্ছেন না কিছু। অন্ধ যে! তাই একবার ভীষ্ম একবার বিদুর আর একবার ওনার একমাত্র শ্যালক শ্রীমান শকুনি…এই আমি, আমাদের প্রশ্ন করে করে পাগল করে দিচ্ছেন। কত আবেগ। কত আনন্দ । নির্বোধ অন্ধ রাজা। ভাগ্যিস চোখে দেখেন না। নাহলে চমকে উঠতেন শকুনির মুখে ভেসে বেড়ানো জিঘাংসার রঙ দেখে!
আমার মুখটা এমনিতেই মৃত মানুষের মত। রক্তহীন ফ্যাকাশে। নাক বাঁকা। দুটো দাঁত ছুঁচলো। রোগা পাতলা শরীর। ঢ্যাঙা। চোখগুলো নিষ্পলক। এককালের রূপবান গান্ধার রাজকুমারকে এখন দেখলে লোক মুখ ঘুরিয়ে নেয়। বিশেষ করে ওই ভীষ্ম। সহ্য করতে পারে না । কি করে পারবে? আমাকে দেখলেই ওর মনে পড়ে যায় অতীতের কালো স্মৃতি। ভয় পায়। খিক খিক। আর কেউ না বুঝুক, ভীষ্ম বোঝে, কেন পড়ে আছি এখানে! নিজের রাজ্যের সিংহাসন খালি রেখে দুর্যোধনের পিছন পিছন ঘুরে বেড়াই। ঠিক বোঝে ওই ধূর্ত বৃদ্ধ। আমার চোখের ভিতর লুকিয়ে থাকা হত্যাকারীকে একমাত্র ওই দেখতে পায়। আগের মত ক্ষমতা থাকলে ছুঁড়ে ফেলে দিত ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে।
এখন সমস্ত ক্ষমতা দুর্যোধনের হাতে, যে নাকি অন্ধের মত বিশ্বাস করে আমাকে। অনেক সময় লেগেছে এমন পাশার ঘুঁটি তৈরি করতে। দুর্যোধনের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত ওকে কাছছাড়া করিনি। ওর সমস্ত শুভ বুদ্ধির উপর ঢেলে দিয়েছি ঈর্ষার বিষ। কুরুকুলের সকলের সম্পর্কে পুঁতে দিয়েছি সংশয়ের বীজ। কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না দুর্যোধন। কাউকে না। বিশেষ করে ভীষ্মকে প্রবল সন্দেহ করে। আর একলা হাসি আমি। ভীষ্ম! দেখো, দেখো! কেমন ঘুঁটি তৈরি করেছি, একবার দেখো। প্রতিশোধ নিতে হলে চাই এমন ঘুঁটি, যা ছুঁড়ে দিলেই ছক্কা! খিক খিক। হর হর মহাদেব।

 

 

 

 

কে যেন মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে আমাকে,
-শকুনি তোমার মন খারাপ হয় না?
-কেন হবে?
-চোদ্দ বছরের দুর্যোধনের হাত দিয়ে কালকূট বিষ খাইয়ে দিলে বারো বছরের ভীমকে! নিজের ভাগ্নেকে হত্যাকারী তৈরি করছ?
-করছি।
-দুঃশাসনের লেখাপড়া বন্ধ করে তাকে শেখালে মদ্যপান, উশৃঙ্খলতার দিকে নিয়ে গেলে! তোমার ভগ্নী গান্ধারীর সন্তান ওরা।
-না না না। ওরা কৌরব। ওরা ভীষ্মের পাঁজরের টুকরো। গান্ধারী অসহায়। জন্ম দিতে বাধ্য। ওই অন্ধ নির্বোধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্য জোর করে তুলে নিয়ে এসেছিল, আমার পুতুলের মত বোনটিকে। কারণ রটনা ছিল গান্ধার রাজকুমারী বহু প্রসবিনী।
-চুপ চুপ। দেওয়ালের কান আছে।
-আমায় বলতে দাও। আজ বলতে দাও। জন্ম অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্য গান্ধারীর মত কন্যা চাই। আর নপুংসক পান্ডুর জন্য এলো কুন্তী। যাঁর উপর দৈববলে সন্তান লাভ করার আশীর্বাদ আছে। বুঝলে হে বিবেক! প্যাঁচ বুঝলে? কুটিল প্যাঁচ। সন্তান চাই। তার জন্য বলি প্রদত্ত হোক নারী!
উফফ… জ্বলে যায় শরীর। নাহ্। মন বলে কিছু নেই আর আমার। গান্ধারী ইচ্ছা অন্ধত্ব বরণ করে জীবন নষ্ট করল। কুন্তী বরণ করল বৈধব্য। তাতে কি! কৌরব আর পাণ্ডবদের পুত্র লাভ তো হল!
-এ তো রাজনীতি গান্ধার কুমার। দোষ কিসের?
-রাজনীতি? আমাদের অমন সুন্দর রাজ্য ছারখার করে দিল অকারণে। পিতা শুদ্ধু প্রতিটি ভাই মৃত্যুবরণ করল অনাহারে। কারণ? আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। গান্ধারী হরণের প্রতিবাদ।
-জনশ্রুতি অন্য কথা বলে। বলে, গান্ধারীর বৈধব্য যোগ ছিল, যা তোমরা গোপন করেছিলে! সেই অপরাধে…!
-ইতিহাস কথা বলে শুধুমাত্র ক্ষমতাশালীদের জন্য। ভারতবর্ষ থেকে বহুদূর, কোন এক পার্বত্য অঞ্চলের রাজা সুবল আর তাঁর অসহায় সন্তানদের অনাহারে মৃত্যুর কথা, বলবে কেন ইতিহাস?
-তুমি একলা। কি করে এতবড় শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সর্বনাশ করবে?
-এই যে পাশার ঘুঁটি, মৃত পিতার পায়ের হাড় থেকে তৈরি করেছি। মিশিয়ে দিয়েছি চোখের জল। আমার ইশারায় চলে এই ঘুঁটি। এই হল অস্ত্র। সারা ভারত দেখবে এর ক্ষমতা। পুত্র লাভ করার ইচ্ছে থেকে ওরা সর্বনাশ করেছে গান্ধারীর। সেই পুত্রগুলি হবে আমার হাতিয়ার। এক ভাই হত্যা করবে অন্য ভাইকে। রক্তগঙ্গা বইবে। দেখুক ওই গঙ্গাপুত্র।
-পাশার ঘুঁটি দিয়ে সাম্রাজ্যের পতন! হে সুবলপুত্র। কোনো অতিমানুষী শক্তির অধিকারী হওনি তো তুমি?
অদৃশ্য বক্তার উদ্দেশ্যে হেসে উঠলাম আমি। ওরে মূর্খ! মানুষের মধ্যেই বাস করে অতিমানুষ। চিনতে হয়। জাগিয়ে তুলতে হয়। তবেই সাধন করা যায় অসাধ্য।

 

 

 

 

অনেকগুলি ঘটনা পর পর ঘটে গেল। যেগুলি দুর্যোধনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এবং সেই কারণে আমার কাছে সেগুলি সুঘটনা। অর্থাৎ ঘটনার কারণে দুর্যোধন ব্যাকুল হলে লাভ আমার। কারণ, শকুনি ছাড়া তখন আর গতি থাকে না।
জানতাম ডাক পড়বে মন্ত্রণাকক্ষে। এটাও জানতাম সেখানে দুর্যোধনের ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে থাকবে কর্ণ। উফফ, এই এক বেয়াড়া চালের মানুষ। আজকাল অতিষ্ঠ করে তুলেছে আমায়। দুর্যোধনকে কব্জা করার প্রতিটি চালের মধ্যে সে লাফিয়ে পড়ে বানচাল করার চেষ্টা করে। তবে, রাজনীতির ময়দানে কর্ণ হল নতুন খেলুড়ে আর শকুনি হল অভিজ্ঞ শিক্ষক। কাজেই…!
-হর হর মহাদেব। স্মরণ করেছ ভাগিনা?
-এমন ভান করছেন যেন কিছুই জানেন না!
ফুট কাটল কর্ণ।
-আহহা! দুর্যোধনের মুখে এমন দুর্যোগের ছায়া কেন?
-মাতুল। অপমান আর সহ্য হয় না। তোমরা যদি ব্যবস্থা না কর, তবে আমি আত্মঘাতী হব।
-মহাদেব! এসব কি কথা! কর্ণ। তুমিই বলো ভায়া কি হয়েছে? বলো দেখি।
-মাতুল শকুনি..
গম্ভীর গলায় বলে কর্ণ।
-আপনার চতুর ভাবটি অসহ্য । শুধু বন্ধুবর দুর্যোধনের মুখের দিকে তাকিয়ে সহ্য করি আপনাকে।
-মহাদেব মহাদেব! আহহা, উত্তেজিত মস্তিষ্ক পন্ড করে সব কাজ। আগে কিছু পান করা যাক। এ্যাই, কে আছিস… শীতল পানীয় নিয়ে আয় অঙ্গরাজের জন্য। বলো বলো। শুনি।
রাগত গলায় কর্ণ বলে,
-নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন? কোন কাজটা ঠিক করে করেছেন শুনি? ভীমকে বিষ দিলেন, সে দিব্যি নাচতে নাচতে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরে এলো। তারপর এই জতুগৃহ! পাণ্ডবদের শ্রাদ্ধ শান্তি পযর্ন্ত সম্পন্ন হয়ে গেল। দুনিয়ার লোক জেনে গেল পান্ডব আর বেঁচে নেই। জতুগৃহ-সহ পুড়ে মরেছে। এখন কি হল? শুধু বেঁচে ফিরে এলো তাই নয়, ভারতের শ্রেষ্ঠ রূপসীকে বিয়ে করে, মাথা উঁচু করে ইন্দ্রপ্রস্থ সাজিয়ে ফেলল!
-মহাদেব মহাদেব!
-থাক মাতুল। দেবাদিদেব স্মরণ এখন থাক। গতকাল ছিল যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ। ওখানকার ঘটা পটা তো নিজের চোখেই দেখলেন!
ভিতরে ভিতরে হাসির বেগ সংযত করে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছিল। ওষুধ ধরেছে। এবার এসেছে সময়। মুখে যথাসম্ভব বেদনা ফুটিয়ে বললাম,
-ঘটা বলে ঘটা! বাপরে বাপ! চোখ কপালে উঠে গেল! ময়দানব নির্মিত স্ফটিকসভা, এর আগে কোনদিন দেখেছ না কি ভায়া? আমি তো দেখিনি। পাথরের মেঝে। অথচ মনে হচ্ছে, থই থই করছে জল। পদ্ম ফুল ফুটে আছে। সন্তরণপটু মাছ যেন দেখতে পেলাম? মনে আছে তোমাদের!
রাগে গরগর করতে করতে দুর্যোধন বলল,
-হৃদয়ে গেঁথে আছে মাতুল। এমন অপমানিত জীবনে হই নি। এই সেদিন যারা বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে, আজ তারা ইন্দ্রপ্রস্থ সাজিয়ে রাজসূয় যজ্ঞ করে ফেলল!
-আর দ্রৌপদী? কেমন উপহাস করেছিল সে? মনে পড়ে?
-সে কথা আর মনে করিয়ে দিও না মাতুল। বুকের ভিতর দাবানল জ্বলছে। সভা তৈয়ারী হয়েছে দানবী মায়ায়। স্বাভাবিক কারণে ভুল হচ্ছিল অনেক কিছু। কখনো জল ভেবে কাপড় তুলছি, কখনো জলকে মর্মর ভূমি মনে করে তার উপর দিয়ে চলতে গিয়ে ….!
আমি জিভ কেটে বললাম,
-কেলেঙ্কারির একশেষ। সেই দেখে হেসে উঠল দ্রৌপদী। সে হাসি আর থামে না!
নিজের দেওয়া চালে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছি বারবার। এবার কৃতদান চাল দিতে হবে। কৃতদান মানে চার সংখ্যা। পাশাখেলার মোক্ষম দান এটাই। দেখি, কর্ণ কোন পথ দিয়ে আটকায়? মনে মনে প্রস্তুত হয়ে বললাম,
-হে অধীরথ পুত্র। শোন। কথাটা বোঝ। নষ্টের গোড়া কে? ওই দ্রৌপদী। বুঝলে না তো! বুঝিয়ে বলি। মনে করে দেখো, পাঞ্চাল রাজ্যে স্বয়ম্বরের কথা। কি অঙ্গরাজ? ভুলে গেলে?
-আপনি কেন অতীত কথা স্মরণ করাচ্ছেন মাতুল।
গনগন স্বর কর্ণের।
-সে কথা ভুলে যেতে চাই আমি।
-অতীত কথা! কিসের অতীত কথা? অতীত হল জীবনের শেকড়। অতীত না থাকলে বর্তমানের কিসের মূল্য! তোমার মত বীর সামনে থাকতে অর্জুনের ক্ষমতা ছিল দ্রৌপদীকে বিবাহ করে? বলো.. উত্তর দাও।
-মা-তু-ল। স্তব্ধ হন। ভীষণ যন্ত্রণা বুকের মাঝে। স্বয়ম্বর শর্তে কোথাও ছিল না, বর্ণভেদের কথা। সেইখানে, ভরা সভায় আমাকে শুদ্র বলে অপমান করল দ্রৌপদী.. আহ্!

সুপুরুষ সুন্দর কর্ণের মুখে যন্ত্রণার ওঠাপড়া দেখতে দেখতে গলা যথাসম্ভব করুণ করে বললাম,
-হে রাধেয়।‌ দ্রৌপদীকে ক্ষমা করা যায় না। বড্ড অহঙ্কারী ওই নারী। তুমি নিজের চোখে দেখলে দুর্যোধনের হেনস্থা! বলতে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। এতবড় বংশের মানী পুরুষ, তাঁকে দেখে হো হো করে হেসে উঠল দ্রৌপদী!
আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম আগুন ফেটে বেরোচ্ছে দুর্যোধনের চোখ দিয়ে। হাতদুটি মুষ্ঠিবদ্ধ। শরীরের পেশী শক্ত।
কেউ লক্ষ্য করিনি কখন যেন এসে দাঁড়িয়েছে দুঃশাসন। গরগর শব্দ করছে গলায়। নাতিদীর্ঘ বলিষ্ঠ লোমশ শরীর।
অস্বাভাবিক লম্বা দুটি বাহু। চোখ-মুখের চেহারা অপ্রকৃতিস্থ। দিনের বেশিরভাগ সময় আকন্ঠ সুরাপান করে থাকার ফলে, কথাগুলি জড়ানো, চক্ষুদুটি রক্তবর্ণ। পা টলমল। গান্ধারীর পুত্র ভাবতে ঘৃণা বোধ হয়। তবে, মনের অগোচরে পাপ নেই, জন্ম হতে বেচারা এমন ছিল না। ওর আজকের অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। মানুষ থেকে দানব ওকে আমিই তৈরি করেছি। খিক খিক খিক।
দু:শাসন জড়ান গলায় প্রশ্ন করল,
-কে অপমান করেছে ভ্রাতা দুর্যোধনকে? কার এত বড় সাহস?
কে যেন বলে উঠল,
-পান্ডব মহিষী দ্রৌপদী।
দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ উঠল। পাশবিক জান্তব ইঙ্গিত ভেসে উঠল বাতাসে। নারীর আস্পর্ধা অহঙ্কার দুই হাতের মুঠিতে নিষ্পেষণ করে, দলে পিষে শেষ করে দেবার অবদমিত ইচ্ছেগুলি দাপাদাপি শুরু করে দিল। শ্বাস ফেললাম।

পিতা সুবল বলতেন,
-শকুনি। তোমার উপর আমার অনেক আশা। আস্থা তোমার চতুর বুদ্ধির উপর। প্রতিশোধ নিও। যে ভাবেই হোক প্রতিশোধ নিও।
রাজার ছেলে হলেও যুদ্ধবিদ্যা তেমন শিখিনি। অস্ত্র আমার একটাই। পাশার ঘুঁটি। আজ মনে হচ্ছে, হাতের সামনে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে জীবন্ত মানব ঘুঁটি। সমগ্র ভারতবর্ষ হল, অধিদেবন বা ইরিন – দান ফেলার জায়গা। আজ আরো একটা জীবন্ত ঘুঁটি তৈরি হল। তাঁর নাম দ্রৌপদী। খিক খিক খিক। ওহে গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম! কোথায় গেলে গো! এসো। দান ফেলো। প্রতিরোধ করো আগামী সর্বনাশের প্লাবন। এই আমি শকুনি, আহ্বান করছি তোমায়, এসো। ক্ষমতা থাকলে পরাজিত করো আমাকে। খিক খিক খিক!

 

 

 

 

সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। মহাকাল মন্দিরের ঘণ্টা বেজে উঠল গম্ভীর স্বরে। প্রাসাদ শীর্ষের ওপারে টুপ করে ডুবে গেল সূর্য। একলা বসে আকাশ পাতাল ভাবছিলাম। অস্থির অস্থির লাগছে। আজকাল এমন লাগে। আকাশের দূরতম সীমায় ক্ষুদ্র নক্ষত্রর মত অধরা মনে হচ্ছে আমার লক্ষ্য। অনেকগুলি সূত্র সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ছে। চাইলাম আর পাশা খেলা শুরু হল, কাজ অত সহজ হবে না। ভীষ্ম আর বিদুর যত পারবেন বাধা দেবেন। আপাতত আমার কাজ খুব কঠিন। যেভাবেই হোক, ধৃতরাষ্ট্র আর দুর্যোধনকে দিয়ে পাশা খেলার আমন্ত্রণ পাঠিয়ে দিতে হবে ইন্দ্রপ্রস্থ। দেরি করলে কিছুতেই চলবে না। গুপ্তচর খবর এনেছে, এই মুহূর্তে প্রবল উত্তেজনা চলছে দ্বারকা সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশ কিছুদিনের জন্য কৃষ্ণ আসতে পারবেন না ইন্দ্রপ্রস্থ। উনি যদি ফিরে আসেন, এক লহমায় ধরে ফেলবেন আমার অভিসন্ধি। কৃষ্ণের দুই চোখে জ্বলে জ্ঞানের প্রদীপ। শুদ্ধ শক্তি। গভীর দুটি চোখ মেলে মাঝে মাঝে আমাকে দেখেন। যেন বলতে চান, আমি জানি। আমি দেখতে পাই। আমি অন্তর্যামী।
আবার অনুভব করি দৃষ্টি জুড়ে করুণার আশীর্বাদ। ঠিক আমার পিতার মত। শিহরিত হই। মৃত হৃদয়ের খলতা কপটতার আবরণ ভেদ করে উৎসারিত হতে চায় অতীতের শকুনি। মনে পড়ে, এককালে বাঁশি বাজাতে খুব ভালো লাগত। রাজার ছেলে হলেও, রাজকার্যে মন ছিল না কোনোদিন। পিতার গুরুদেব ছিলেন তন্ত্রাচার্য শিবশঙ্কর শাস্ত্রী। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। ঘোর রক্তবর্ণ চক্ষু মেলে বলেছিলেন,
-বৎস সুবল। তোমার সন্তান পৃথিবীখ্যাত অক্ষক্রীড়াবিদ হবে। কিন্তু রাজা কোনোদিন হবে না। রাজসিংহাসনের প্রতি কোনো আকর্ষণ জন্মাবে না।
-সে কি! রাজবংশের সন্তান খ্যাত হবে অক্ষবিদ্যায়? তার উপর কি না সন্ন্যাসী?
অট্টহাস্য করেছিলেন প্রবীণ তান্ত্রিক। যেন এমন পরিহাসের কথা কোনোদিন শোনেন নি!
-সন্ন্যাসী! কে? শকুনি? তবে হ্যাঁ! মন্দ বলিসনি কথাটা। এক প্রকার সন্ন্যাসীর মতই। নিজের জন্য এককড়ি অর্থ অর্জন করবে না। নিজের জন্য কিছুই চাইবে না। ধন সম্পদ রমণী… কিছুই না। সন্ন্যাসী তো বটেই।
ছোট ছোট পাহাড় আর নদীতে ঘেরা সুন্দর রাজ্য গান্ধার। শকুনি পার্বতীয় বলে সম্বোধন করে কেউ কেউ। এই পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ দেখা পেলাম তাঁর। যিনি আমার অক্ষবিদ্যার গুরু। বিচিত্র পোশাক। বিচিত্র ভাষা। সোনালী চুলে ঢাকা শিশুর মত মুখটি। অভিজ্ঞতার হাজার বলিরেখা সেখানে। তিনি ডাকলেন “আয়।”
খেলার কৌশল একটার পর একটা আয়ত্ব করছি, গুরু তবু খুশি নন। বলেন,
-তুই কী শিখলি? কতগুলি নিয়ম কানুন শিখে কোনো লাভ আছে?
-তবে?
-তোকে মায়াজাল শিখতে হবে!
-মায়াজাল?
-মায়ার বশ করে ফেলতে হবে প্রতিপক্ষকে। দ্যাখ, চক্ষু হল শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয়। প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে জাল সৃষ্টি করতে হবে। ইন্দ্রজাল। মায়াজাল। শিখতে হবে।
শিখলাম। পাশা খেলা হল ভুজবাজি, সেটাও জানলাম। ভুজ অর্থাৎ হাত। এতদিন হাতদুটি শরীরের দুই দিকে থাকত বটে কিন্তু তাদের আলাদা করে কোনো গুরুত্ব আছে, এই প্রথম জানলাম। গুরুদেব যত্ন করে শেখালেন হস্তলাঘবের খেলা। হাতের কৌশলে মুহূর্তে পরিবর্তিত হবে প্রতিপক্ষের দান। কত কষ্ট করেছি। পাহাড়ের গুহায় দিনের পর দিন পড়ে থেকে শিখেছি খেলার কৌশল। তার সঙ্গে, শরীর আর মনের উপর নিয়ন্ত্রণ।
যাক, অতীতচারণ অনেক হল। এবার শ্রীকৃষ্ণের কথা বলি। বিশালবুদ্ধি কৃষ্ণ। তিনি উপস্থিত হবার পূর্বে, ব্যবস্থা করতেই হবে। পাশা খেলা উপলক্ষ্যে যে গভীর গোপন চক্রান্তের কথা আমি ভেবে রেখেছি, যে ঘটনা সংঘটিত হলে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে কৌরব অহঙ্কার। সে সব মিথ্যা হয়ে যাবে, যদি শ্রীকৃষ্ণ এসে উপস্থিত হন! নাহ্! এ হতে দেওয়া যায় না!

আজ অমাবস্যার রাত। কৃষ্ণপক্ষ। পিতা সুবল, দীক্ষিত ছিলেন তন্ত্র বিদ্যায়। আমি ছিলাম তাঁর একমাত্র সহযোগী। শিব উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা চলত রাজপরিবারে।
যদিও ভীষ্মের প্রবল অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি কোনো শক্তি। রক্ষা করতে পারেনি সেটাই বা বলছি কেন? আমি জীবিত রইলাম কী করে! অমাবস্যার রাতে শিব-শক্তির পুজো একসঙ্গে করে এসেছি আজীবন। এখনো করে থাকি। পিতা সুবলের অস্থি-নির্মিত ঘুঁটি হোমের আসনের পাশে রাখা থাকে। আগুনে আহুতি দিতে হয় মানবদেহের তাজা রক্ত। নিজের শরীর হতে বিন্দু বিন্দু রক্ত আগুনে পড়া মাত্র অক্ষদুটির মধ্যে কাঁপন শুরু হয়। রাত গভীর হয়। মন্ত্র উচ্চারণ তীব্র হয়। অক্ষদুটির মধ্যে জাগে জিঘাংসা। খিক খিক খিক। তখন সে অপরাজেয়।
পরের কৃষ্ণপক্ষ তিথি আসবে তিরিশদিন পরে। তার আগেই করতে হবে… যা করার। সময় নাই। সময় নাই। শ্রীকৃষ্ণ ফিরে আসবেন। সময় নাই। সময় নাই।

 

 

 

 

পাশা খেলার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে, হস্তিনাপুর চলে এসেছেন যুধিষ্ঠির। সঙ্গে চার ভাই এবং মহারানী দ্রৌপদী। বহুদিন পরে সসম্মানে নিজের পিতৃভূমি আগমন! স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন ধর্মপুত্র। খিক খিক খিক। বাঘের গুহায় ঢুকে পড়েছেন! আনন্দে থাকুন কিছুক্ষণ। থাবা এসে পড়ল বলে! বেচারা পান্ডব! কিচ্ছু টের পাচ্ছে না। যাঁদের ভালোবেসে আলিঙ্গন করছে, তাঁরাই হল গুপ্তঘাতক।
বিশাল সভাঘর। স্বর্ণমন্ডিত একহাজার স্তম্ভ চারিদিক ঘিরে রেখেছে। প্রতিটি স্তম্ভ বিশেষ কৌশলে নির্মিত। সভার যে প্রান্তে যাই ঘটুক না কেন, উপস্থিত প্রতিটি ব্যক্তির কর্ণ গোচর হতে বাধা থাকবে না।
রাজসিংহাসনের ঠিক সামনে সামান্য উঁচু সুগোল বেদী। আয়তনে যথেষ্ট বড়। এখানেও এক অভূতপূর্ব যন্ত্রের সাহায্যে বেদী ইচ্ছামত ঘূর্ণিত হতে পারে। আজ এখানেই পাশা খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এই বেদীর উপর। যুধিষ্ঠির পাঁচ ভাই। আমাদের সঙ্গে দুর্যোধন। কর্ণ। বাকি সমস্ত লোক বেদী ঘিরে আরামদায়ক আসনে বসে থাকবেন। দাস দাসী, উৎকৃষ্ট সুরা, ভোজ্য পদার্থ … অপর্যাপ্ত বিতরণ করা হবে। সম্রাটের সিংহাসনের সঙ্গেই আছে ভীষ্ম বিদুর দ্রোণাচার্যের স্বর্ণ এবং মখমল মন্ডিত আসন।
আজ পূর্ণ বিশ্রামের দিন। খেলা শুরু হবে আগামীকাল মধ্যাহ্ন আহারের পরে।
দুর্যোধন-কর্ণ আদির উত্তেজনা চরমে।

গান্ধারীকে নিয়েই ভয় ছিল বেশি। সে না জানি কি করে বসে! কিন্তু, এক্ষেত্রে দুর্যোধন সুন্দর করে বুঝিয়ে এসেছে। ভাই-ভাই মিলে একটা পুনর্মিলন অনুষ্ঠান মাত্র। গান্ধারী বরং খুশিই হয়েছে। বহুদিন পরে রাজঅন্তঃপুর উৎসবে মেতে উঠেছে। শুনেছি, প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে এসেছে দ্রৌপদী। রাজরানী, রাজকন্যা সকলে মিলে সাজ সজ্জা করছে। মহল সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। দ্রৌপদী হল এঁদের সকলের থেকে বুদ্ধিমতী। বিদুষী। আধুনিকা। হীরের ঝলকের মত বিদগ্ধতা ঝিলিক দিচ্ছে। আকর্ষণীয়া সুন্দরী। তাঁর সম্পর্কে নারী-পুরুষ দু’পক্ষের সমান কৌতূহল। হস্তিনাপুর রাজঅন্তঃপুরের মহিলারা অনুভব করছিল এই রমণী একেবারে ব্যতিক্রমী। তাঁদের সাজ পোশাক সব যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে পাঞ্চাল কন্যার স্বল্প অথচ বিশিষ্ট সাজের কাছে। ভানুমতী দুর্যোধন মহিষী। রূপসী। গরবে মাটিতে পা পড়ে না। দ্রৌপদী চলছে সহজ ভঙ্গিমায়। যেন সিংহিনী আপন গরিমায় কোনমতে অলস চক্ষু মেলে চারিদিক দেখছে!
সব খবর আসছে আমার কাছে। নারী মহলের অসন্তোষের খবর কানে আসছে। একটা চিন্তা দূর হল। অপছন্দের রমণী অপমানিত হলে ভানুমতি প্রতিবাদ করবে না। স্থির নিশ্চিত। মহাদেব মহাদেব! কত দিকে নজর দিতে হয়! পাকা জুয়াড়ী শুধু আসনে বসে খেলেনা। আশেপাশের সমস্ত খবর নখদর্পণে রাখে। প্রতিদ্বন্দ্বীর মন অলিগলি বুঝে নিলে হাতের চাল অনুমান করা সহজ হয়।
মাঝখানে একটা মাত্র রাত। সফলতা আর আমার মাঝে ব্যবধান কেবল একটি রাতের।

 

 

শেষ পর্ব

 

 

সভায় টানটান উত্তেজনা। লোক থই থই করছে কক্ষে। চার ভাই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করলেন ধর্মরাজ। সদ্য স্নাত। স্নিগ্ধ মুখশ্রী। কোমল সুন্দর। পীত বস্ত্র পরিহিত। চন্দন তিলক কপালে। পাঁচ ভাই একই সঙ্গে গুরুজনদের চরণ বন্দনা করলেন। করুণ মুখে বসে থাকা ভীষ্ম দ্রোণ প্রমুখ তাঁদের মস্তক চুম্বন করে আশীর্বাদ করলেন।
আমি হাত ধরে আদর করে যুধিষ্ঠিরকে নিয়ে চললাম বেদীর উপর।
-এসো এসো। জ্যেষ্ঠ পান্ডব। এসো। সভা প্রস্তুত। ওই দেখো সাজানো আছে ক্রীড়া সরঞ্জাম। তাহলে শুরু করা যাক?
-মাতুল।
শঙ্কা মিশ্রিত গলায় যুধিষ্ঠির ডাকলেন,
-বলো বৎস।
-আমাকে বলা হয়েছিল দুই ভাই মিলে খেলব। আনন্দ করে। কিন্তু এখন তো দেখছি চিত্র বিপরীত।
-পাশা খেলার আসর যেমন হয় তেমনই আছে পুত্র।
-মাতুল। খেলতে যখন এসেছি, ফিরে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। শুধু অনুরোধ, শঠতা করো না।
-শঠতা! সে আবার কি বস্তু? শোনো বাবা, সব কিছুতেই কৌশল প্রয়োগ করতে হয়, শুধু জুয়ার দোষ দিলে চলবে?
তাকিয়ে দেখলাম বেচারার মুখ পাংশু হয়ে গেছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বিপদ সঙ্কেত শুনতে পাচ্ছে মনে হয়! খেলতে চাইছে না। ঘাড় নেড়ে বলে যাচ্ছে,
-দেখো মাতুল। কোনরকম ছল কপটের খেলা আমি খেলব না!
-নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
চওড়া হাসলাম। বুকে জড়িয়ে তুলে দিলাম খেলার মঞ্চে। সেখানে আবার আর এক বিপত্তি। রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছে দুর্যোধন। হাত নাড়িয়ে বলে উঠল,
-ওহে ধর্মপুত্র। তোমার সঙ্গে আমি কিন্তু খেলব না বাপু। খেলবে মাতুল। তবে ওই যে কি সব, পণ-টন ওইসব আমিই দেব।
যুধিষ্ঠির থমকে গেল। তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
-তার মানে! তোমার হয়ে মাতুল খেলবেন! এরকম হয় নাকি!
আমি আবার শঙ্কিত হলাম। কপাল ভালো তক্ষুনি মহাসমারোহে হাজির হলেন ধৃতরাষ্ট্র। মৃদুভাষী যুধিষ্ঠিরের আপত্তি কাড়া-নাকাড়া বাদ্যের মাঝে হারিয়ে গেল। খেলা আরম্ভ হল।

ইতিহাস বলবে, খেলা চলেছিল শকুনি আর যুধিষ্ঠিরের মধ্যে। আপাতদৃষ্টিতে সেটাই সত্যি। তবে, জলের উপরিস্তর দেখে যেমন ভিতরের গভীরতা আন্দাজ করা কঠিন তেমনই সত্যের মধ্যেও আরও একটা সত্য থাকে। অন্তর্ভেদী দৃষ্টির কাজ হল সেই লুকোনো সত্যের কাছে পৌঁছে যাওয়া।
শকুনির সামনে যুধিষ্ঠির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। জ্যেষ্ঠ পান্ডব জানেই না, কি করে খেলতে হয় পাশা! তাহলে? আসল কথা হল, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী গোটা কৌরব সমাজ। কাজেই, দান ফেললাম আর জিতলাম… সেটা উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল, পান্ডবপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া।
অপমানের ঘোর অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া। যার ফলে জেগে উঠবে পান্ডব। শুরু হবে সংঘাত। এই গোটা চক্রান্তে সেনাপতি আমি। সৈন্য হল ঘুঁটি। সামান্য মাত্র ভুল ছিটকে ফেলে দেবে আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত। পালিয়ে চলে যেতে হবে অথবা দুর্যোধনের ক্রোধের আগুনে পুড়ে মরতে হবে। আনন্দে করতালি দেবে ভীষ্ম,
-কেমন রে শকুনি। পারলি তুই? পারলি?
চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলাম ঘুঁটি। খর চোখ নিবদ্ধ যুধিষ্ঠিরের দিকে। জুয়া যখন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, তখন জয়ের মন্ত্র জানা থাকতেই হয়। খিক খিক খিক। মহাদেব মহাদেব!

 

 

********

 

 

হুর হুর হুর হুর হুররা। হুর হুররা হুর… সেই যে সেই লোক, যিনি কিনা হুট বলতে শিখিয়ে দিয়ে গেল নানান কলাকৌশল। সেই মানুষটা, আমার গুরু, মুখে শব্দ করতেন এমন। মনে হত, নির্জন দুপুরে কবুতর ডাকছে। গুরু বলতেন,
-পাশা খেলে তিনজন। শরীর, বাক্য আর মন। তিনটে নিখুঁত হলে সে জিতবেই।
হুর হুর হুররা… হাল্কা চালে খেলা শুরু হল। দুদিকে দুটি অক্ষিপাবন অর্থাৎ ঘুঁটি রাখার পাত্র। অনেকগুলি ঘুঁটি রাখা আছে দুই পাত্রেই। সামনে বিছিয়ে রাখা অধিদেবন… দান ফেলার জায়গা। স্বর্ণ পাত্রে সুরা বিতরণ হচ্ছে। তাম্বুল রাখা আছে। উত্তেজনার সময় তাম্বুল চর্বণ করার ইচ্ছা জাগে। সে তো উত্তেজনার সময় কতরকম ইচ্ছেই জাগে।
আসল ক্ষমতা জোড়-বিজোড়ের ডাক। দান দেওয়ার পরে, ঘুঁটি গুণে ফেলতে হবে দ্রুত। জোড়ে জিত। বিজোড়ে হার। দান ফেলার আগের মুহূর্ত থেকে কথা বলে যাই, প্রতিপক্ষ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। দুটো হাত থাকে অস্ত্রের মত, দান ফেলেই পলকে গুণে নেয় মন, যদি বিজোড় দেখে কথার মায়ার চাদর বিছিয়ে পাশের অক্ষিপাবন থেকে ঘুঁটি দিয়ে সেটা জোড় প্রমাণ করে, প্রতিপক্ষের জোড় ঘুঁটি থেকে একটা সরিয়ে চেঁচিয়ে উঠতে হয়… হুর হুর হুররা… এই জিতে নিলাম। পুরো কাজটা করতে হবে, বিদ্যুতের গতিতে।
পাশা অনেক ভাবেই খেলা যায় কিন্তু আজ আমরা চার দানের খেলা খেলব। চার যুগের নামে চার দানের নাম। যেমন – সত্য( কৃতা), ত্রেতা, দ্বাপর, কলি। কৃতাদান হল চার। ত্রেতা তিন। দ্বাপর দুই। কলিযুগ এক।
যদি কৃতাদান পড়ে, তবে জয় হবে। ত্রেতা আর দ্বাপরে মাঝামাঝি অবস্থা। আর কলিতে জয় কখনো হয় না।
খিক খিক খিক… আরে আমি দান ফেললেই কৃতাদান। কলি পড়লেও আমি ঘুরিয়ে দেব।
প্রথম পণ : মণি আর ধনরত্ন।
যুধিষ্ঠির চার ফেলেছে। আমি তিন। মুহূর্তে ঘুঁটি বদলে গেল। আমি চার। যুধিষ্ঠির তিন। এই-ইইই জিতে গেলাম। হুর হুর হুররা।
বহু সংখ্যক ঘুঁটি নিয়ে খেলার অভিজ্ঞতায় আমার সঙ্গে পেরে উঠবে না কেউ। ঘুঁটি সরিয়ে নেবার বা জুড়ে দেবার ক্ষিপ্রতা… আমার এতই বেশি যে, সামনে হাজার লোক বসে থাকলেও ধরতে পারবে না। শরীরে রক্ত টগবগ করে ফুটছে। এবার পণ রাখা হল, কোষাগারের সমস্ত ধনরত্ন। দান ফেললাম। জিতে গেলাম।
তৃতীয় পণ: রথ, অশ্ব।
যুধিষ্ঠির সন্দেহ করছে। এটা কি হচ্ছে! কিছু গন্ডগোল হচ্ছে। সে বলল,
-মাতুল আপনি শঠতার আশ্রয় নিচ্ছেন!
চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে বললাম,
-এমন কোনো কাজ বলো তো, যেখানে শঠতা নেই? সেখানে শুধু পাশা খেলায় ছলনা আছে, এ কথা সত্য না। পাশা খেলতে এসে এত অভিযোগ করলে তোমায় আর খেলতে হবে না।
রক্তবর্ণ হয়ে উঠল যুধিষ্ঠিরের মুখ। ওদিক থেকে বিদুর চিৎকার করে উঠল,
-এই কপট ব্যক্তিকে গান্ধার দেশে পাঠিয়ে দাও।
শুনেই, লাফিয়ে উঠল দুঃশাসন। সভায় একটা হট্টগোল সৃষ্টি হতেই আমি উদার হেসে বললাম,
-ধর্মরাজ। মৎস শিকারির মত ধৈর্য ধরো। দেখো, জয় তোমার হবে।
নাহ্। আর দেরি করা যাবে না। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পরপর চাল দিয়ে যেতে লাগলাম। আলোর গতিতে খেলা হতে লাগল। রাজ্যপাট, ভূমি, বলশালী দাস। নাচে গানে কুশলী দাসদাসী, অতি আধুনিক অস্ত্র – সব চলে গেল একে একে। হুর হুর হুররা…
মুখ নামিয়ে এনে ফিসফিস করে বললাম,
-ধর্মরাজ। চিন্তা কিসের! তোমার পাঁচ ভাই আছে। মানব সম্পদ। চিন্তা কিসের… আহা।
-কি বলছ মাতুল? এরা আমার ভাই। প্রাণের প্রিয়।
-আহহহ। এই দুঃসময়ে ভাই যদি ভাইয়ের পাশে না থাকে, কে থাকবে! নাও নাও। পণ রাখো ভাইদের।
চোখের সামনে ঘটে গেল অসম্ভব এক দৃশ্যকল্প। চার মহারথী ভাইকে জিতে নিলাম এক লহমায়। এইবার ধর্মরাজ নিজেকে বাজি রাখল। জিতে নিলাম সঙ্গে সঙ্গে। গলা শুকিয়ে আসছে আমার। দেখতে পাচ্ছি নিজের আসনে এলিয়ে পড়েছেন ভীষ্ম। কাছে গিয়ে বলব নাকি? কেমন লাগছে? পান্ডব এখন দাস। দুর্যোধনের দাস। আর এই দাস তোমার কৌরব ধ্বংস করবে একদিন। খিক খিক খিক।
সভা জুড়ে মহা হুল্লোড় চলছে। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ধর্মরাজ। মনে মনে বললাম,
তোমার উপর কোনো রাগ নেই যুধিষ্ঠির। তুমি আমার কোন ক্ষতি করোনি। আসলে, তোমরা সবাই আমার ঘুঁটি মাত্র।
-তাহলে খেলা শেষ? মাতুল?
উত্তেজিত দুর্যোধন কাছে এসে দাঁড়াল। নাকের পাটা ফুলছে। আনন্দে কলকল করে বলল,
-ওই ভীমকে নিয়ে যাই। সেবা করাতে হবে।
-আহহহ। কি যে বলো দুর্যোধন! মহারাজ যুধিষ্ঠির এখনো পরাজিত হন নি।
-মাতুল! কি বলছ?
-ঠিকই বলছি। এখনো উনি সব ফিরে পেতে পারেন। এখনো উনি আবার জিতে যেতে পারেন।
-কিন্তু পণ? পণ কী দিয়ে রাখবেন? কিছুই তো নেই।
-আছে আছে আছে।
যুধিষ্ঠির জাগছে। চোখে ঘোর। মুখে আশা।
-মাতুল। শেষ বাজি আমি জিতব?
-জিতবে বইকি। চেষ্টা করো।
ডুবন্ত মানুষের মত শ্বাস নিয়ে যুধিষ্ঠির কাতর চোখে জিজ্ঞেস করল,
-কিন্তু পণ? কী পণ দেব? কী আছে আমার?
-তুমি এখনো ধনবান ধর্মপুত্র। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ তোমার করায়ত্ব। হারানো লক্ষ্মী ফিরিয়ে আনবে সে।
কুহক। কুহক মায়া নেমে আসছে। চক্ষু নিমীলিত যুধিষ্ঠিরের। ঠোঁট নড়ছে। উচ্চারিত হচ্ছে মহামন্ত্র।
-যিনি খর্বা নন, দীর্ঘাও নন, আর যাঁর কেশকল্যান কৃষ্ণবর্ণ এবং কুঞ্চিত সেই দ্রৌপদীর দ্বারাই আমি আপনার সঙ্গে খেলা করব।
পাশা খেলার চতুর্দশ চাল দিতে যাচ্ছি আমি। চোদ্দতম চাল। কারা যেন হাহাকার করে। এই একটিমাত্র চাল দেবার জন্য এত বছর দাসত্ব করেছি। এই একটিমাত্র চাল, কৌরব বংশের সর্বনাশ করে দেবে। এই একটি মাত্র চাল, পৃথিবী ভুলবে না কোনোদিন। পিতা, দেখো আমি পেরেছি। তোমার শকুনি শেষপর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে।

চোখের জল পড়ছে ভীষ্মের। বিদুর তাকিয়ে আছেন মাটির দিকে। ঘুরে গেল ঘুঁটি। জিতেছি। আমি জিতেছি।
মুহূর্তে সভায় দানবীয় উল্লাস। উন্মত্ত দুর্যোধন। কর্ণ। দ্রৌপদী আসছে। সভায়। নগ্ন দ্রৌপদী।
নিঃশব্দে সরে এলাম।
খেলা শেষ। যুদ্ধের বীজ পুঁতে দিলাম আজ। সম্রাট নই। মন্ত্রী নই। অসামান্য কেউ নই। আমি শকুনি। শকুনি হয়েই থাকতে চাই। ইতিহাসের ক্ষমতা নেই আমাকে অস্বীকার করে।।
                                                                 ————————————————————————————————————-
ফুটনোট : শকুনির পরিবারের উপর অত্যাচারের কথা মূল মহাভারতে নেই। তবে নানা জায়গায় এই তথ্য পাওয়া যায়। দ্রৌপদী পণ রাখা সম্পূর্ণ শকুনি মস্তিষ্ক প্রসূত। তারপর আরো খেলা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনো মূল্য নেই। ওই একটা ঘটনা থেকেই বেজে উঠল কুরুক্ষেত্রের দামামা।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

24 thoughts on “শকুনি

  1. শকুনিপড়তে পড়তে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । এ চরিত্র যেন মহাভারতের সৃষ্টিকর্তা ! প্রতিশোধ স্পৃহা এত সাংঘাতিক হতে পারে ধারনা ছিল , কিন্তু কেন ছিল তার ধারনা ছিল না । লেখিকার কলমে অবগত হলাম । অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ভাবে শকুনির দগ্ধ হৃদয়ের কথা জানিয়েছেন লেখিকা । ভীষণ ভীষণ ভাল লাগল ।

  2. চমৎকার আবহ তৈরী হয়েছে, তথ্য সহ টানটান একটি লেখা। এরকম পৌরাণিক ঘটনার বর্ণনা মনের মধ্যে তৈরী করে দৃশ্যকল্প।

  3. রূদ্ধশ্বাসে পড়লাম.. বহুশ্রুত, বহু পঠিত মহাভারতের এই অংশ।
    তোমার লেখার যাদুতে চোখের সামনে জীবন্ত দেখতে পেলাম শকুনি কে নতুন আঙ্গিকে। শকুনির অসহায়তা, শকুনির প্রতিশোধ স্পৃহা। ভগিনী গান্ধারীর আজীবন অন্ধত্ব স্বীকার করে নেওয়া কে কোনোদিনই মেনে নিতে পারেন নি তিনি।
    আগামী দিনগুলো সুস্থ ও রঙিন হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা করি।

  4. অসাধারণ লাগলো। শকুনি সম্বন্ধে এত কিছু জানতাম না। শকুনির সম্বন্ধে আরও জানার ইচ্ছা বেড়ে গেল। খুব ভাল লিখেছ দি। ♥️👏

  5. কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন যখন যুদ্ধ করতে চাইছেন না, বলছেন পার্থ আমি কাদের স ঙ্গে যুদ্ধ করব? তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেছেন তুমি নিমি ত্ত মাত্র এরা যুদ্ধে সবাই মরেই রয়েছে…ভবিতব্য নিশ্চিত । তুমি উপলক্ষ্য মাত্র…এত এব হে পার্থ ওঠ নিজের কর্তব্য কর। আজ শকুনির কথা পড়তে গিয়ে না জানি কেন এ কথাটাই বার বার মনে আসছিল।মহাভারতের খলনায়ক শকুনি…পৌরনিক মহাকাব্য যার শঠ তা ক্রূরতা নিয়েই কথা বলে সেই শকুনি কেন এমন হয়েছিল? যার প্রতিশোধের আগুনে গোটা কৌরব কুল ধ্বংস হয়ে গেল কোন অত্যাচার অবিচারের সে প্রতি শোধ নিল সত্যি বলতে কি মহা কাব্য সে কথা বলে না। জয়তীদির বিশেষত্ব হল সেই না বলা ইতিহাসকে একেবার টান টান থ্রিলারের মোড়কে সাধারণের দরবারে নিয়ে আসা। তবে আমার মতো পাঠকের এত অল্পে মন ভরে না। শকুনি চরিত্রটি কে নিয়ে আরো বড় আকারে লেখার দাবি রইল। বিশেষ ত গান্ধার রাজপুত্র শকুনির এরকম নাম করনের কারণ সম্ব ন্ধে বিশদ আলোচনা হলে ভালো হয়। ঝর ঝরে লেখা। সাবলীল গতি। এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম

  6. দুর্দান্ত ….পাশা খেলার ভিভিড ডেসক্রিপশন…পরতে পরতে সাসপেন্স….

  7. খুব সুন্দর লাগলো দিদি গল্পটা। আরো জানতে চাই শকুনি সম্পর্কে

  8. So enjoyed reading this story. A different take on Shakuni which leaves you thinking and simultaneously entertained.

  9. অসাধারণ একটি গল্প। শকুনির সম্বন্ধে জানার ইচ্ছা আরো প্রবল হলো।

  10. মহাভারত বোধহয় মানুয়ের মনের প্রতিচ্ছবির গল্প । এই লেখনীতে তার অনবদ্য বিশ্লেষণ ।

  11. অপূর্ব !!
    পটভূমি, লেখনী এবং বিশ্লেষণ , সব মিলিয়ে অসাধারন ।

  12. দারুণ দারুণ এতো সুন্দর লেখা মন ভরে গেল

  13. অসাধারণ প্রেক্ষাপট। অসাধারণ বর্ণনা। ভীষণ ভালো লাগলো…

  14. কিছু চরিত্র ইতিহাসের পাতায় থাকে যাদের পূর্বকথন খানিক আচ্ছন্ন রয়ে যায়, আমাদের যা দেখানো হয় ঠিক ততটাই আমরা দেখি, ভেবে দেখিনা তার চারিত্রিক অধঃপতনের গোড়ার কথা।

    ঠিক এই কাজটাই খুব নিপুণভাবে সম্পন্ন করেছেন লেখিকা জয়তী রায় এই কাহিনীর মাধ্যমে, যেখানে শকুনির মুখ থেকে কালো পর্দাটা সরিয়ে বারবার উঁকি মারতেই হয়েছে তার জীবনের অজানা আঁধারে, যা দিয়ে মূলত গল্প শুরু হয়েছে, এবং সেই আঁধারকে প্রতিষ্ঠা করে শকুনির চরিত্রকে একটু আলাদাভাবে পরিবেশন করার দায়িত্ব একেবারে সফলভাবে পালন করেছেন লেখিকা।

    পাশা খেলার দৃশ্যের এরূপ অসাধারণ বর্ণনা পড়ে সত্যিই বলতে দ্বিধা নেই যে মহাকাব্যকে সহজ অথচ গভীরভাবে নবরূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইনি এবং ভাবতেও অবাক লাগে এই ইনিই আবার “ত্রিশঙ্কু” উপহার দিয়েচ কিশোরদেরও জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন।

    কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে তথ্য দেওয়ার কৌশল আবারও মুগ্ধ করলো এবং সবশেষে একটাই অনুরোধ করবো, এভাবেই underrated কিছু পৌরাণিক চরিত্র, যারা নায়ক নয়, আবার খলনায়কও হয়ে ওঠেনি সেই অর্থে, তাদের নিজে এরকম আরও লেখা লিখে যান।

    দুর্দান্ত লাগলো গল্পটা ❤️❤️👏👏👏

  15. মহাভারতের মূল ভাবে অক্ষুণ্ণ রেখে এই গবেষণা লব্ধ ঘটনা পড়ে যথেষ্ট আলোকিত হলাম। কুর্নিশ জয়তী রায়।

  16. খুব সুন্দর লাগলো দিদি, সত্যিই শকুনি সম্পর্কে এতো তথ্য জানা ছিল না। দারুণ।

  17. এ লেখার তো তুলনা চলেনা, সমৃদ্ধ হওয়া যায়। অসাধারণ।

  18. চমৎকার লেখা। অভিভূত হয়েছি। লেখিকার বিষয়চয়ন ও লেখার গতি মনোমুগ্ধকর!

  19. কী অসাধারণ কলম ! একটা পৌরাণিক চরিত্র যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *