short-story-sujan-mallar-golpo

সুজন মাল্লার গল্প
অজিতেশ নাগ


‘শালা!’ শব্দটা উচ্চারণ করেই মনে মনে একটা জম্পেশ গাল দেয় সুজন। মহেশ একমনে পাটাতন পরীক্ষা করছিলো। চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘হল কী মাষ্টার, গাল পাড়ো কারে?’

সুজন সে কথার জবাব দেয়না। মহেশ তার নৌকোর হাল ধরে। বছরখানেক হল সে লেগে রয়েছে তার সাথে। ছেলেটা এমনিতে ধান্দাবাজ হলে কী হবে জলের মধ্যের অদৃশ্য গলি-রাস্তা-রাজপথ চিনতে পারে খুব। জলে নামলে সে নৌকার হাল ধরে। এমনিতে কারও হাতে দাঁড় ছাড়ে না সুজন, তবে সওয়ারি না থাকলে মহেশের হাতে দাঁড় দিয়ে গলুইয়ে বসে আয়েস করে সুজন বিড়িতে সুখটান দেয়। সুজন জানে এমনিতে খুব খাটতে পারে মহেশ ছেলেটা। তবে ওর মতলবখানাও জানে সুজন। একবার নৌকা চালাতে দড় হয়ে গেলেই তাকে ছেড়ে বশিরুদ্দিনের দলে যোগ দেবে। বশিরুদ্দিন এই তল্লাটের সবচেয়ে বড় মাঝি। বসিরুদ্দিনের বজরা আছে, বাচারি আছে, আছে ছোট বড় মিলিয়ে খানসাতেক পানসি। তাতে মেলা লোক খাটে। ভটভটি আছে একখান। মহেশের লোভ সেই ভটভটিটার দিকে। যখন বশিরুদ্দিনের সাদার উপরে কালো আলকাতরা দিয়ে লেখা ‘মেহেরজান’ ভটভটিটা বগ বগ শব্দ করে বুড়িডিহির জল উথালপাথাল করতে করতে এগিয়ে যায় জল কেটে কেটে, চাতকের মত সেইদিকে তাকিয়ে থাকে মহেশ, দেখেছে সুজন। যতদূর চোখ যায়, পারলে সেই কাঁসাই নদীর মোহনা অবধি দেখে ফেলে কল্পনায়।

সুজন জানে এক দুমাসের পাকানো হাত নিয়ে এর মধ্যেই মহেশ ছোকরা গিয়েছিলো বশিরুদ্দিনের কাছে। সুজন সব খবর পায়। ফারুক তার অভিন্নহৃদয় বন্ধু, একদম ন্যাংটাকালের। ফারুক এখন বশিরুদ্দিনের বাঁ হাত কাম মেকানিক। হাতের কাজ ভালো জানে ফারুক, নৌকোর ধাত বোঝে। ফারুক নিজে নৌকা চালাতে জানে না বটে, কিন্তু খোল, পাটা, ছই, হাল, দাঁড়, বাদাম, মাস্তুল, নোঙর, খুঁটি দুড়, গলুই, বৈঠা, লগি, গুণ – মানে যা যা থাকে আর কী একটা নৌকা অথবা বজরায়, সেসবের দেখভাল করে। নৌকা হল জলের জীব। নানান রকমের জল, কোনওটা ক্ষারা, কোনওটা মিঠা, তার উপরে ঝড়-জলের সংঘাত তো আছেই। এসব সামলে আজ এটা খুলে গেলো, তো কাল ওটা ছিঁড়ে গেলো। এসবের দেখাশোনার ভার ফারুক চোঙদারের। শোনা যাচ্ছে আজকাল সে সব একা হাতে পেরে উঠছে না। ফারুক একবার বলেছিলো সুজনকে, সুজন তার পিঠে আশি সিক্কার থাপ্পড় মেরে বুঝিয়ে দিয়েছে, অন্যের গোলামি তার ধাতে নেই। পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ফিরে গিয়েছিলো ফারুক।

তো সেই ফারুকই একদিন মড়াইডাঙার হাটে দেখা হতে বললে, ‘তোর পাখি তো দুদিনেই উড়তে শিখে গেলো রে সইজনা। পায়ে গয়না দিস নাই ক্যান?’

ইশারাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিলো। তবে বুঝেছে ঠিকই। বশিরুদ্দিন নাকি হাঁকিয়ে দিয়েছে মহেশকে। দুদিন ডুব মেরে ফের ফিরে এসেছিলো সুজনের কাছেই। সুজন কিছু বলেনি, তবে তার মাথার মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন রাগ ফোঁসফোঁসায় মাঝেমধ্যেই।

মহেশ ফের জিজ্ঞেস করে, ‘ভালোই তো ব্যবসাপাতি হল, রাগ করো ক্যান মাষ্টার?’

আর যেন নিজেকে সামলাতে পারে না সুজন। হাতের বিড়ি জলে ছুঁড়ে ফেলে ফুঁসে উঠে বলে, ‘তোর বাপের কী? তুই তোর কাজ কর। আগে বাদাম গোটা, তারপর বাজার থেকে মাছ-ভাত নিয়ে আয়। এই নে।’

কোমরের কাছে থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে ছুঁড়ে দেয় সুজন। টাকা কুড়িয়ে মহেশ বেজার মুখে পাল নামাতে থাকে। পাটাতন ছেড়ে হালের কাছে উঁচু জায়গায় চড়ে বসে সুজন। ফের একটা বিড়ি ধরায়। প্রথম ধোঁয়ার কুণ্ডলীটা শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে মনে মনে ভাবে, আজ যেন শুক্কুরবারের হাট লেগেছে। সকাল থেকে এই যে একবার এ ঘাট থেকে নীলমনির ঘাট, সেখান থেকে শঙ্করপুরের ফেরিঘাট, আবার সেখান থেকে বড়মাজারের ঘাট, ফের সেখান থেকে এই ঘাট করতে হয়েছে তার সীমা সংখ্যা নেই। এর মধ্যেই একবার মণ্ডলবাড়ি থেকে জোড়ে এলো, সাথে লোকলস্কর, মায় নিতবর অবধি। তারা যাবে ফড়েপুর। ফের ফিরতে না ফিরতে দেখে ঘাটভর্তি লোক। পারা যায় এইভাবে? টাকা আসছে মন্দ নয়, তবে শরীরের ঘাম ঝরে ঝরে বোধহয় পাঁচ কড়াই হয়ে যাবে। উফ!

একেতে লগনসা’র বাজার, বিয়ের লগন, কিন্তু লগন তো নয় যেন মড়ক লেগেছে। মনে মনে গজরায় সুজন। যেন এই মাসে বিয়ে করতে না পারলি জেবনে আর পারবেনি। চার নম্বর সওয়ারের সময় তো এমন হল যে মহেশই জলে পড়ে যায় কী নৌকাখানই পালটি খায়। যত্ত মহেশ চেঁচায়, ‘আর উঠবেননি গো আর উঠবেননি।’ কে শোনে কার কথা! যেন সবার পোঁদেই জ্বলন্ত চ্যালাকাঠ! শালা! শুধু তারই একা নয়, বুড়িডিহিতে ভাসমান সব ক’টা জলযানেরই এক হাল! তার উপরে আকাশের মরণদশা! এটা নাকি বর্ষাকাল! কালো মেঘের ছিটেফোঁটার দেখা নেই। পরশু একবার আকাশের উঠোনে ঢুসঢাস হল, ব্যস। এখন সকাল থেকে খালি পশ্চিমদিক হতে এক একবার হো হো করে হাওয়া ভেসে আসে আর ফিরে ফিরে যায়। ব্যস, বাতাসের কুস্তি শেষ।

এই করতে করতে যখন সূর্য ঠিক চাঁদির উপরে আর নীলমনির ঘাট থেকে এই ঘাটের দিকে তারা রওনা দিয়েছে, তখনই সুজন ঠিক করেছিলো, নাহ, পেটে দানাপানি না দিয়ে আর না। এখন ঘাটে ফিরে প্রথমে নৌকার গলায় দড়ি দেবে, তারপরে স্নান করবে, তারপরে ঠেসে খাবে, খানিক জিরোবে, তারপর বাকি সব দেখা যাবে।

ঘাটে যাত্রী নামাতেই হুহু করে দৌড়ে এসেছিলো আরেক পঙ্গপালের দল। জানাই ছিলো সুজনের। তাই শেষ যাত্রী পাটাতন ছেড়ে দিতেই সে তড়িঘড়ি নৌকা ঘুরিয়ে অনেকটা দূরে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সুজন। পেছন থেকে যাত্রীরা চেঁচামেচি করছিলো, সুজন কান দেয়নি।

বেশ করে তেল মেখে নদীতে ঝুপুসঝুপ স্নান সেরে নৌকায় উঠতেই সামনে ভাতের সানকি হাজির। একবার মহেশের দিকে তাকিয়ে সুজন বলে, ‘সব আমাকেই ঢেলে দিলি নাকি রে শালার বাচ্চা? নিজে খাবি কী?’

মহেশ মধুর হাসে, ‘আরে না, তুমি খাও তো মাষ্টার। আমার জন্য আছে। না খেলে ঐ শরীরটা….’

সরপুঁটি মাছের এক টুকরো বেছে নিয়ে ঝোল-ভাতে মেখে এক গ্রাস তুলতে তুলতে মনে মনে হাসে সুজন। সবই তেল দেওয়া কথা। তবে হ্যাঁ। শরীর বটে সুজনের। স্রোতের উল্টোদিকে যখন দাঁড়ে টান দেয়, বুকে থাক থাক মাংসের স্তর নেচে ওঠে, হাতের পেশিগুলো বেড়ে ওঠে কয়েক ইঞ্চি আর পায়ের ডিম ফোলে যুতসই। যাত্রীরা তাকিয়ে দেখে, অবাক হয়, মেয়েরা কানাকানি করে। জব্বার মিঞা বলে, ‘সরিলখান পাইছো আল্লার দোয়ায়, ন্যাশা কইরা নষ্ট কইর না সুজনবাপ।’

খেয়ে উঠে গলুইয়ে শুয়ে বিড়িতে টান দেয় সুজন। পুরো আকাশ দেখে। একবার অভ্যেসে চোখ দুটো সরু করে পশ্চিমে তাকায়। গলা উঁচু করে ডাকে, ‘মহেশ, দ্যাখ তো, কালা মেঘ নাকি?’

মহেশ ভাত খেয়ে সামান্য ঝিমোচ্ছিল, মাষ্টারের ডাক শুনে চমকে তাকিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ গো মাষ্টার, বিস্টি আসতেছে মনে হয়।’

আরামে চোখ বোজে সুজন। আসুক। ঝমঝম করে বৃষ্টি যেন কয়েক বছর পরে আসবে। আয় আয় দৌড়ে আয়, একটু ভিজুক শরীরটা।

কিন্তু বেশীক্ষণ আরাম করবার সময় পেলোনা সুজন। চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। পাশ ফিরে বুঝতে পারলো ঘাট থেকে আসছে শব্দের উৎসটা। সে দেখতে পেলো ঘাটে কোনও নৌকা নেই। কিন্তু এক দঙ্গল মানুষ দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে চেঁচামেচি করছে। তারা দেখতে পেয়েছে তার নৌকো। জ্বালালে! সুজন ভাবলো, চেঁচাক, গাল পাড়ুক। বিয়া করবার আর মাস পেলেনা গো? ক্যান, এরপরে কি আর লগন নাই? এই আষাঢ় পেরিয়ে সামনেই তো গোটা শ্রাবণ মাস পড়ে আছে, কর না কত বিয়ে করবি।

কিন্তু বেশীক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলো না সে। মনে সামান্য মায়ার উদ্রেক হয়েছে। আহা! এই বর্ষাকালটা পেরিয়ে গেলেই তো তার নিজেরই বিয়ে। কথাবার্তা যা বলার সে বলেই রেখেছে। অবশ্য প্রাথমিক স্তরে। ইচ্ছে আছে সামনের রবিবার গিয়ে পাকা কথা বলে আসবে। পূন্নিমা। আহা! নামটা মনে আসতেই মন আনন্দে ভরে ওঠে। এক আসন্ন সুখানুভূতি ঘিরে ধরে তাকে।

পূন্নিমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল মড়াইডাঙার শুক্কুরবারের হাটে এক জিলিপির দোকানে। আহা! দেখে যেন চোখ সরাতে পারেনি গো সুজন। একদম চাঁদের পানা মুখ আর ছোট্ট কপাল। তার মধ্যে একটা লাল টিপ। পূন্নিমাও ঠারেঠোরে তাকিয়েছিলো, হেসেছিলো দাঁত দিয়ে ঠোঁট কেটে।

তারপর দিন কেটেছিলো একের পর এক। মড়াইডাঙার হাট ফের বসেছিলো। গোলা সাবানের সাথে লাল-নীল ফিতে, চারগাছা কাচের চুড়ি, মোহিনী তেলের দেখা হয়েছিলো ঈশ্বরের নির্দেশিত পথে। সেই পথেই আনন্দপুরের মেলায় ফটাস-জল, নাগরদোলা, চরকিপাক, বুড়ির চুল, ঝাল ঘুগনি – সব এসেছিলো একে একে। অনেক বার সুজন নৌকায় সওয়ারি করেছিলো তার হৃদয়ের সওয়ারকে। তারপর একদিন বেড়াচাঁপা মাঠের বুড়ো নিমগাছের গোড়ায় ঠেসে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চাপ খাওয়াতেই পূন্নিমা বলেছিল, ‘বাড়িতে আসো একদিন। বাবারে বল।’

গিয়েছিলো সুজন। গিয়েই একদম খোলাখুলি বলাটা অভদ্রতা বিবেচনা করে বুঝিয়েছিলো ঠারেঠোরে, জানিয়েছিল তার একখানা নৌকা ছাড়া আর কিছুই নেই, কেউ নেই তিন কুলে। কী বুঝেছিলো পূন্নিমার বাপ, ঝোলা গোঁফের আড়ালে ঠিক ঠাহর হয়নি। মুখে বলেছিল, ‘জলের মাসখান পেরোক, দেখতিছি।’

মেয়ের মা পুঁছ করেছিলো, ‘বাড়িঘর কিছু আছে নিকি বাপ?’

আর এইখানেই সুজনের নাক জলে ডোবে। মানসচক্ষে তার হেলে পড়া উঁইয়ে খাওয়া সবেধন নীলমণি ঘরটার কথা মনে আসে। তবে সে ঘরে পূন্নিমাকে নিয়ে সুজন তুলবে না, এটা তয়ের হয়েই আছে। এতদিন গায়ে গতরে খেটে টাকা জমেছে বেশ। তার আর খরচা কী! এক টাকার বিড়িতে এক সপ্তাহ। আর কোনও নেশা নেই। দুটো লুঙ্গি আর তিনটে জামা, তাও শেষ কিনেছিলো বছর চারেক আগে। খরচ বলতে তার আর মহেশের দুবেলার খ্যাঁটন। আর এই যে তিন রাত এক করে সে নৌকা বেয়েই চলেছে, বেয়েই চলেছে, কার জন্য? পূন্নিমার জন্যই তো। নয় কি? অনন্ত ঘরামির সাথে সে ইতিমধ্যে সব কথা বলেই রেখেছে। অনন্ত আশ্বাস দিয়েছে, এই জলের মাসটা কেটে গেলেই সুজনের পচা ঘর ভেঙে ফেলে সে নতুন দালান-কোঠা তুলে দেবে। আর মাটি-ফাটি নয়, এবার লাল সিমেন্টের মেঝে, ইটের দেওয়াল আর টিনের চাল। দুটো ঘর, একটা রান্নাঘর। ব্যস। একটা মটরমালা হার সুজন দেখেই এসেছে, দরদামও পাকা, তবে মুখ খুলে এখনও বলতে পারেনি পূন্নিমাকে। হবে, হবে, সব হবে। আর এক মাসখানেক বড়জোর।

বিশেষত পূন্নিমার মুখটা মনে আসতেই সুজন উঠে বসল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছুঁয়ে গেলো জলের হাওয়া। প্রায় মাসখানেকের উপরে হয়ে গেলো পূন্নিমার চাঁদমুখখানা দেখা হয়নি। সে সাফ নিদান দিয়েছে, ‘একেবারে পাকা কথা বলতি এলে, তবে ফের দেখা হবে নে। তার আগে ঘন ঘন সাক্ষাৎ ভালো দেখায় না। লোকে কবে কী?’

লোকের নিকুচি করেছে। সুজন নৌকা ঘাটে ভেরায়। অ মা! বর-বউ! তাদের ছাড়তে আসা মাতব্বরেরা শুধোয়, ‘সাবধানে নিয়ে যেও মাঝি।’

মহেশ জানতে চায়, ‘যাবেন কুহানে?’

-‘বেশি দূর না। রামকৃষ্ণপুর।’

রামকৃষ্ণপুর! মহেশ তাকায় সুজনের দিকে। সুজন তাকায় আকাশের দিকে। মহেশ ফিসফিস করে বলে, ‘ঠিক হবে না, মাষ্টার। রামকৃষ্ণপুর যেতে হলে…’

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সুজন বলে মাতব্বরদের উদ্দেশ্যে, ‘রামকৃষ্ণপুর যাওয়ার পথে ঘূর্ণির বিল আসে। জানেন তো ওটাকে মরণের বিলও বলে? তার উপরে বর্ষাকাল। একবার ঘূর্ণিতে পড়লে সোজা….’

কেউ কিছু বলার আগেই বরবাবাজী বলে ওঠে, ‘কুনও ব্যাপার না মাল্লা, ঝড়-জলের দেখাপত্তর নাই। জলে টান আছে দেখছনি? হাঁই হাঁই করিয়া টানো, সাঁই সাঁই করিয়া পৌছায়া যাবনে।’

মাতব্বরেরা আর কেউ কিছু বলে না। বরবাবাজী ফের মুখ খোলে, ‘টাকার জন্যি চিন্তা কোরোনি মাল্লা। যা ভাড়া বলিবে, তাই দিবো। উপরি বখশিশ।’

হ্যাঁ। টাকা চাই। আরও টাকা! তারপরে দালান-কোঠা, তারপরে পূন্নিমা, বিয়া, ফুলসজ্জে! গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সুজনের। মহেশকে বলে, ‘বাদাম চাগা, হাল ধর।’

মহেশ সামান্য আপত্তি করতে যাচ্ছিল, সুজনের আরেক ধমকে টাঙিয়ে দিলো পাল। পালের দিকে তাকিয়ে সুজন ভাবল, আরও কিছু টাকা গচ্চা যাবে, পালটা দুএক জায়গায় ছিঁড়েছে। তাপ্পিগুলোও ঢিলে হয়ে এসেছে। পরে ভাবা যাবে।

বর বউ গ্যাঁট হয়ে বসেছে ছাউনির নিচে। বরের দিকে তাকিয়ে সুজন বুঝল, মেঘে মেঘে বয়স কম হয়নি। নতুন বৌয়ের মুখ দেখা যাচ্ছে না, ঘোমটায় মুখ আচ্ছাদিত। নৌকা চলতে শুরু করতেই সুজন জিজ্ঞেস করল, ‘বিয়ার মিষ্টি কই কত্তা?’

নেহাতই মজা করে বলা। এইরকম আজাইরা কথাবার্তা নৌকা চালানোর সময় হয়। কখনও যাত্রী শুধোয়, কখনও মাল্লা। একে অন্যের হাঁড়ির খবর নেয়, চাষাবাদের খবরাখবর নেয়, গাঁয়েগঞ্জের হালহকিকত জানাজানি হয়, মেয়েরা নিজেদের মধ্যে ঘরকন্নার, ছেলেপুলের গপ্প করে। সবটাই জলযাত্রার একঘেয়েমি কাটাতে। আর এইভাবে এই গাঁয়ের খবর পৌঁছে যায় আরেক গাঁয়ে।

বরবাবাজী মজার মানুষ। হাত আড়াল করে ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে, ‘দুই নাম্বার বিয়া। বোঝই তো। এখন ভালায় ভালায় বৌ নিয়া ঘরে তুলতে পারলি… ছিগারেট খাবানি?’

আপত্তি করে না সুজন। বরবাবাজী আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে এগিয়ে দেয় সুজনের দিকে। তাতে দীর্ঘ টান দিয়ে সুজন জিজ্ঞাসা করে, ‘ভালো, ভালো, কোন ঘরের মাইয়া?’

-‘এই গাঁয়েরই। তুমার নামটা কী মাল্লাভাই?’

সুজন নিজের নাম বলে। ভদ্রলোক হাওয়ার দাপট সামলাতে ধুতির কুঁচি চেপে ধরে জোরে, ‘আমি রামপ্রসাদ। রামপ্রসাদ মজুমদার। রামকৃষ্ণপুরের থাকি। ব্যবসা আছে খান দুই। তেলকল।’

রামপ্রসাদ দাঁত বের করে হাসে। সুজন খেয়াল করে বত্রিশ পাটির মধ্যে বেশ কয়েকটা লালচে। পান খায় হয়ত। নতুন বৌয়ের দিকে আড়চোখে নজর দেয় সুজন। ঘোমটা এখনও টানা। শুধু মাজা মাজা রঙয়ের দুটো হাত বাইরে। তাতে শাঁখা-পলা-নোয়া আর খানচারেক সোনালি চুড়ি পড়ন্ত রোদের আলোয় ঝিকমিক করে ওঠে। সুজন অন্যমনস্ক হয়। পূন্নিমাকেও তাহলে দিতে হয় হাতের দুগাছা নয়ত কানের ঝুমকো। সুজন মনে মনে হিসেব করে। দালান কোঠা তুলে তারপরে কি আর টাকা বাঁচবে? কত বাঁচবে? নাহ, আরও খাটতে হবে। যদি ঝড়জল আসে তো আসুক, বুড়িডিহির ঘাট ভাসে তো ভাসুক, প্রতিদিন সে আরও বেশি নাও টানবে, ভাড়া আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দেবে, আরও টাকা চাই তার। একবার পূন্নিমা এসে গেলে ফের শান্তি। তারপরে দুজনের দুটো মুখ, ঠিক চলে যাবে।

এই সব সাতপাঁচ ভাবছে সুজন, যদিও তার হাত চলেছে জোরে। বলিষ্ঠ হাতের এক এক কোপে জল ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে বারবার আর তার নৌকা এক একবারে বিঘৎখানেক করে এগিয়ে চলেছে। সুজন আড়চোখে দেখে রামপ্রসাদ তার নতুন বৌয়ের কানে কানে কিসব বলছে আর বৌটি যেন লজ্জায় আরও জড়সড় হয়ে যাচ্ছে। মুচকি হাসে সুজন। রসের কথা! আহা। এই তো সময় বলবার, একে অন্যকে জানবার। ব্যস্ত তো হবেই রামপ্রসাদ। একবার ঘরে পৌঁছতে পারলেই কত আদর, কত সোহাগ। এইজন্যই তো মানুষ ঘর খোঁজে, ঘর বাঁধে, সঙ্গী চায়, সঙ্গিনী চায়, সন্তান আনে সংসারে। সন্তানের কথা মনে আসতেই একবার শিহরণ খেলে যায় তার গোটা শরীরে।

আচমকা মহেশের ডাক কানে আসে। মহেশ বসে আছে তার পেছনে, নৌকার উঁচু জায়গায়, শক্ত হাতে হাল ধরে। রাস্তা বুঝে হাল ঘোরাচ্ছে। সুজন পেছন না ফিরেই বলে, ‘কী বলিস?’

-মাষ্টার। পেছনে তাকাও, আসমানে।’

মহেশের ডাকে আতঙ্ক ছিলো। রামপ্রসাদ চমকে বৌকে ছেড়ে আকাশে উঁকি মারে। তাকায় সুজনও আর চমকে ওঠে। এই মেঘ চেনে সুজন। সে জলের মানুষ। শুধু কালো নয়, মিশমিশে ঘোলাটে একটা বিশাল মেঘের টুকরো ছুটে আসছে এদিকেই। রামপ্রসাদ জিজ্ঞেস করে, ‘আঁই বাপরে! আর কতদূর মাল্লাভাই?’

মহেশ উত্তর দেয়, ‘দেরী আছে কত্তা। ছইয়ের মধ্যে ঢুকে বসে থাকেন গা।’

সুজন আরও জোরে হাত চালায়। এরমধ্যেই ঢেউয়ের গতি পাল্টে গেছে টের পায় সে। জোরের চোটে তার হাতের পেশী ফুলে ফুলে ওঠে। দেখতে দেখতে চড়বড় করে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ে সুজনের মাথায়। রামপ্রসাদ কৌতূহল নিয়ে বাইরে মুখ বাড়িয়েছিলো, মাথার টুপটাপ পড়তে সে মাথা ঢুকিয়ে নিলো ছইয়ের মধ্যে। জিজ্ঞেস করলো, ‘ছালা নাই?’

সুজন উত্তর দিলো, ‘নাই। আরও ভেতরে ঢুকে বসেন বাবু, ওনাকেও বলেন।’

রামপ্রসাদ তার বৌকে নিয়ে আরও ভেতরে সেঁধিয়ে যায়। দেখতে দেখতে জল ফুলে উঠল। আর বৃষ্টিও তার পুরো দম নিয়ে হাজির হল মিনিটের মধ্যেই। তবু সুজন থামলো না। হাতের দাঁড় ফেলতে লাগলো আরও জোরে জোরে। বাপরে! জলের তোড়ে মনে হচ্ছে হাত থেকে দাঁড় ছিটকে চলে যাবে। নৌকা একবার যেন সামান্য লাফিয়ে উঠল। জলের ঢেউ। আর তখনই বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে একটা গলার আওয়াজ শুনে বুকের আড়ালে চুপটি করে বসে থাকা হৃদপিণ্ডটা যেন ঝড়াৎ লাফিয়ে উঠলো। রামপ্রসাদের নতুন বৌ তার স্বামীকে বলছে, ‘ওনাকে একটু সাহায্য করেন না, আরেকটা দাঁড় রয়েছে তো।’

তা অবশ্য ঠিক। নৌকায় আরেক দাঁড় রয়েছে। তবে টানার লোক নেই। কিন্তু ও কে! ও কার আওয়াজ! সুজনের হাতের জোর যেন নিমেষে ঢিলে হয়ে এলো। ঠিক শুনেছে তো সে? বৃষ্টির অঝোর ধারার মধ্যে দিয়েই সে চোখ চালালো ছাউনির নিচে। বৃষ্টির ঝাঁপটায় ততক্ষণে রামপ্রসাদের গিলে করা পাঞ্জাবির একদিন ভিজে ন্যাতা আর তার নতুন বৌয়ের ঘোমটা খুলে গেছে। সুজনের হাতের দাঁড় থেমে গেলো। পেছন থেকে মহেশ চেঁচালো, ‘মাষ্টার, ধনপোঁতার দিকে নৌকা ঘুরাবো?’

পূন্নিমা! সেই চেনা চোখ, সেই চেনা ছোট্ট কপাল, সেই সামান্য নামানো নাক আর সেই একজোড়া ঠোঁট। কী করে ভুলবে তাকে সুজন যতক্ষণ না কেউ এক কোপে তার কলজেখানা উপড়ে বুড়িডিহির জলে না নিক্ষেপ করে। নতুন বৌও দেখছে তাকে, রামপ্রসাদ জামা, ধুতি আর সঙ্গের তোরঙ্গ বাঁচাতে ব্যস্ত।

তারপরে একটা কথাই ভাবতে পেরেছিলো সুজন। পূন্নিমা! কেন!! পরক্ষনেই বৃষ্টির আওয়াজ, জলের আওয়াজ ছাপিয়ে তার বাঘের মত গর্জন শোনা যায়, ‘রামকৃষ্ণপুরের দিকে চালা।’

মহেশের ভয়ার্ত চিৎকার শোনা যায়, ‘কিন্তু মাষ্টার, সামনেই ঘূর্ণির বিল। এই বর্ষায় ওর মধ্যে পড়লি….’

সুজন ছইয়ের দিকে তার একটানা দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে চেঁচায়, ‘রামকৃষ্ণপুর, রামকৃষ্ণপুর, রামকৃষ্ণপুর….’ বাকি কথা বৃষ্টির তোড়ে হারিয়ে যায়।

রামপ্রসাদ কোনওমতে হাত আড়াল করে মাথা বাঁচিয়ে বলে, ‘পারবা মাল্লাভাই? পারবা? এই জলে ঘূর্ণির বিলে পড়লে যে মরণ এক্কেরে। আজ অবধি কেউ বাঁচেনি।’

সুজনের পেশি ফুলে ওঠে আরও। এক হাতে দাঁড় ধরে আরেক হাতে গায়ের পিরান খানা নিমেষে ফড়ফড় করে ছিঁড়ে জলে ফেলে দেয় সে। রামপ্রসাদের বৌ কিছু একটা বলে, শোনা যায় না। জলের ঢেউ এখনও ক্রমশ বাড়ছে। তার সাথে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে উন্মত্ত বাতাস। দুইয়ের ধাক্কায় মাঝে মধ্যেই কলার ডোঙার মত শূন্যে লাফিয়ে উঠছে নৌকাটা। রামপ্রসাদ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, সুজন চেঁচিয়ে ওঠে, ‘চোপ শালা, একদম চোপ।’

থতমত খেয়ে রামপ্রসাদ ভাবে, লোকটার হল কী! এখন চারদিকে ঘন অন্ধকার। নৌকা কোথায় যাচ্ছে, কোনদিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না সুজন। সে শুধু চেঁচায়, ‘কার মেয়ে বিয়া করে এনেছো কত্তা? কার মেয়ে?’

আচমকা নৌকা গোঁত্তা খেয়ে এক চরকি পাক ঘোরে। পেছন থেকে মহেশের অস্পষ্ট আওয়াজ কানে আসে, ‘ঘূর্ণির বিল, ঘূর্ণির বিল….সাবধান সাবধান….’

কোনও কথাই কানে ঢোকেনা সুজনের। সে ভূতে পাওয়া মানুষের মত চিল্লায়, ‘তুই কারে বিয়া করছস? আর মাইয়া পাইলা না? শালা দোজবরে।’

রামপ্রসাদ হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকে। তার মুখে কথা জোগায় না। কিছুক্ষণ পরে আচমকা কার চিৎকার ভেসে আসে। পেছনে তাকিয়ে সুজন দেখে মহেশ তার জায়গায় নেই। রামপ্রসাদ চেঁচায়, ‘ভেসে গেলো, ভেসে গেলো।’

সুজন এবার তার হাতের দাঁড়টা ছুঁড়ে ফেলে উন্মত্ত জলের মধ্যে। নিমেষে এক পাক দিয়ে সেটা তলিয়ে যায়। বৃষ্টি যেন আকাশ ভেঙে নামে। জল ফুলে ওঠে দুর্দমবেগে। একটা কানে তালা ধরানো শব্দের সাথে সাথে বাজের ঝলকানি চিরে দেয় আকাশের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো। নতুন বৌ কেঁদে ওঠে চিৎকার করে। রামপ্রসাদ হাহাকার করে, ‘বাঁচাও, বাঁচাও।’

সুজন নৌকার মাঝে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে দেয় শূন্যে, ‘মরবে, মরবে, সবাই মরবে।’ একবার টলে পড়ে যাচ্ছিলো, সামলে নিয়েও ফের দাঁড়িয়ে উন্মত্তের মত হাসতে লাগলো। নৌকাটা ফের এক পাক ঘুরে গেলো, একবার কাত হতে হতে সোজা হয়ে গেলো।

কতক্ষণ বৃষ্টি হয়েছিলো, কতক্ষণ জল উথালপাথাল করেছিলো তার সময়জ্ঞান যেন হারিয়ে গিয়েছিলো এই পৃথিবীর বুক থেকে। মাতালের মত টলতে টলতে বসে পড়েছিলো সুজন। আর পারছে না সে। হাত পায়ের পেশিগুলো শিথিল হয়ে আসছিল ধীরে ধীরে। মনে হল এইবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। একটা ভয়ঙ্কর শীতবোধ তাকে ঘিরে ধরতে লাগলো। তার মধ্যে সে দেখতে পেলো রামপ্রসাদ আর তার নতুন বিয়ে করা বৌ পরস্পরকে জড়িয়ে বসে আছে মুখ গুঁজে।

এবার জলের ধারা নেমে এলো সুজনের চোখ দিয়ে। এক গভীর অনুশোচনায় মনটা আচমকাই ভরে গেলো। সে কী করতে চলেছে? এক জোড়া জীবনকে এইভাবে নষ্ট করতে চলেছে, যারা কিনা এখন সবটাই তারই ভরসায়? ছিছি। আরেকবার যুগলবদ্ধ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে সে চোখ বুজল সে আর গড়িয়ে পড়ে গেল নৌকার পাটাতনের উপরে।

জ্ঞান যখন ফিরে এলো, কোনওরকমে দেখতে পেল দুটো মুখ তার উপরে ঝুঁকে। বুঝতে পারলো বৃষ্টির ছিটেফোঁটা আর নেই। নৌকা দুলছে, তবে ধীরে। সে উঠে বসল। শুনতে পায় রামপ্রসাদ শঙ্কিত মুখে তাকে জিজ্ঞেস করছে, ‘ভালা আছেন? ঝড় থেমে গেছে, কিন্তুক বুঝতে পারতিছি না কোথায় এলাম।’

সুজন চারদিকে তাকায় এবং এক লহমায় বুঝে যায় গন্তব্যের থেকে অনেকটা সরে এসে বটে, তবে জোরে দাঁড় ফেললে রামকৃষ্ণপুর পৌঁছতে আর মিনিট কুড়ির মামলা।

সুজন কোনও কথা না বলে অতিরিক্ত দাঁড়টা টেনে নেয় আর জলে ফেলে টানতে থাকে। আড়চোখে দেখতে পায় পাল নামিয়ে গুটিয়ে রাখা আছে মাস্তুলের সাথে। মহেশের জন্য দু চোখ ভরে জল আসে। ছেলেটা কখন পাল নামিয়ে দিয়েছে কে জানে। আজ পাল তোলা থাকলে এই নৌকা আর খুঁজে পাওয়া যেত না। বাকি রাস্তা কেউ কোনও কথা বলে না। বহু দূরে আকাশের রঙ হাল্কা হতে শুরু করে।

মিনিট পঁচিশ লাগে রামকৃষ্ণপুরের নৌকা ঘাটে লাগতে। দেখতে পায় অনেক কিছু লন্ডভণ্ড হয়ে গেছে কাল রাতের ঝড়ে। দু একটা নৌকা হাওয়ার অভিঘাতে উল্টে উঠে গেছে ডাঙায়।

কাদা বাঁচিয়ে রামপ্রসাদ আর তার বৌ নামে ঘাটে। বৌকে রামপ্রসাদ উঁচু জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে ফের নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে। ভেজা জামার পকেট থেকে কাক-ভেজা একটা বটুয়া বের করে। তারপরে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় সুজনের দিকে।

সুজন তাকায় নতুন বৌয়ের দিকে। দেখতে পায় ঘোমটার নিচ থেকে দু্টো কাজল কালো চোখ তার দিকেই তাকিয়ে। সে দৃষ্টি অপলক, সে দৃষ্টি ভেজা। সে দৃষ্টিতে ফটাস-জল, নাগরদোলা, চরকিপাক, লাল-নীল ফিতে, কাচের চুড়ি, মোহিনী তেল, বুড়ির চুল, ঝাল ঘুগনি, বেড়াচাঁপা মাঠের বুড়ো নিমগাছের গোড়ায় জমে থাকা শিশির – সব জমে পাথর হয়ে আছে।

সুজন দাঁড় ফেলে। সুজন নৌকা ঘোরায়। রামপ্রসাদ হাঁহাঁ করে ওঠে। সুজন তাকায় না। সামনের বিস্তীর্ণ জলের উপরে সূর্যের প্রথম আলো তখন প্রতিফলিত হয়ে চিকচিক করে উঠছে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *