রেহান কৌশিক
‘স্বপ্ন আছে পথের ধুলোয়। স্বপ্ন ভাসে মেঘমুলুকে। স্বপ্ন ছলাৎছলে।
স্বপ্ন আছে বলেই জীবন বাঁচার গল্প বলে।’
“রাতে ভিডিয়ো কল করলে কেন?”
“ইচ্ছে হল।”
“আর কী কী ইচ্ছে হয়?”
“সেসব বলতে শুরু করলে তো মস্ত লিস্ট হয়ে যাবে।”
“মানে?”
“আরে, রুমের লাইট অন করো। আমি তো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।”
“ওফ্, স্যরি, স্যরি।”
দুধসাদা এলইডির নরম আলোয় ঝকমক করে উঠল শ্লোকার বেডরুম। বিছানায় স্ট্রাইপড কভার। ছোট্টো রাইটিং টেবল। বুকশেলফে গোছানো বই। খুব ছিমছাম। নিখুঁত গোছানো।
“লজ্জা করছে, জানো।”
“লজ্জা! কেন?”
“তোমার রুম কি সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছ, আর আমার রুমটা দেখছ তো…”
“স্টপ। থামো।”
“কেন?”
“ওটা রুম নয়।”
“কী?”
“গুহা। আদিম মানুষের গুহা। সারা বিছানায় বই। তারপাশে কাত হয়ে পড়ে আছে গিটার। মেঝে জুড়ে এলোমেলো রঙয়ের ছোপ। প্যাস্টেল। স্ট্যান্ডে শেষ না-হওয়া ছবি। আচ্ছা, এত অগোছালো জিনিসের ভিড়ে তোমার জায়গাটা কোথায়, গালিব!”
“সবার কাছে, সবার মাঝে। ভুবনভরা প্রাণের ভিতর প্রাণ। জগতজুড়ে এত যে প্রাণের সংকলন, আমি সেই প্রাণের ভিতর সামান্য এক প্রাণ হয়ে জেগে আছি।”
“সত্যিই, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।”
“কিন্তু ডার্লিং, তোমাকে যে পারতেই হবে। তুমি না পারলে আমার ভিতর এত যে অজস্র ভাঙা, টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, সেগুলোকে এত যত্ন করে জোড়া দেবে কে?”
“বুঝলাম। তা মশাই, এই মাঝরাতে হঠাৎ কল করলে কেন?”
“খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।”
“ওমা, এই তো সারা সন্ধ্যে চক্কর কাটলাম এক সঙ্গে!”
“জানালা দিয়ে আকাশটা দ্যাখো।”
“কেন, আকাশে কী?”
“মেঘলা। কীরকম মেঘ করেছে দ্যাখো। সেই মেঘেদের ফাঁক গলে আশ্চর্য আলো ছড়িয়ে রয়েছে শহরের মাথায়।”
“তাই তো!”
“এমন আবছায়া আলো আর রাত্রির মেঘে ভেসে উঠল তোমার মুখ। তাই তো ভিডিয়ো কল করলাম। মেলাতে চাইছিলাম – এই মেঘলা আকাশের আলো তোমাকে কতখানি আঁকতে পারল!”
“কি মিষ্টি করে বললে!”
‘স্বপ্ন যখন একলা ওড়ে, তোকেই দেখি এই শহরে
থমকে দাঁড়াস মেঘলা আকাশ, মনের বন্দরে।’
“আরে, এই লাইনগুলো আগে তো শুনিনি!”
“শুনবে কী করে? ওই মেঘলা আকাশে তোমাকে দেখেই তো মাথায় এল।”
“এই দ্যাখো, এক-দু ফোঁটা করে বৃষ্টি নেমেছে। এই দ্যাখো, জানালা দিয়ে হাত বাড়াতেই আমার হাতের পাতায় দু’ফোঁটা বৃষ্টি জল কেমন টলমল করছে।”
“কই? আরএকটু ক্যামেরার কাছে নিয়ে যাও তো, নাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি না।”
“এই দ্যাখো। এবার দেখতে পাচ্ছ?”
“হুম।”
“যেন মুক্তোদানা।”
“বৃষ্টি ফোঁটার নির্জনতা, লিখছে নতুন কী রূপকথা…”
“থামলে কেন? তারপর?”
“ভাবছি।”
“এমন কী হয় – বৃষ্টি ফোঁটার নির্জনতা, লিখছে নতুন কী রূপকথা
উঠছে ভেসে চোখের তারায় অচিনদেশের নীরবতা?”
“স্বরবৃত্তের চালে ছন্দটা ঠিক রেখেছ, কিন্তু মিলটা দিতে হবে দ্বিতীয় লাইনের শেষ শব্দের সঙ্গে। অর্থাৎ বন্দরে-এর সঙ্গে। শুধু মিল দিলেই হবে না। গানের প্রথম লাইনের যে একাকিত্ব, কাছের মানুষকে কল্পনায়, স্বপ্নে উপলব্ধির যে আবেশ তৈরি হয়েছে, সেই টিউনটাকে কনটিনিউ করতে হবে। ভাবনাটাকে প্রসারিত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
“সেটা কীরকম?”
“ইয়েস। গট ইট। লিসিন-
‘স্বপ্ন যখন একলা ওড়ে, তোকেই দেখি এই শহরে
থমকে দাঁড়াস মেঘলা আকাশ, মনের বন্দরে।
বৃষ্টি ফোঁটার নির্জনতা, লিখছে নতুন কী রূপকথা
উড়ছে দেখি – তোরই গল্প, বুকের পিঞ্জরে।’”
“এক্সেলেন্ট, গালিব!”
“শ্লোকা, তোমার মনে আছে সেদিনের কথা?”
“কোনদিন বলতো?”
“সেই যে গলফগ্রিনের রাস্তা। হঠাৎ মৃদু বৃষ্টি নামল। কয়েক মুহূর্তে রাস্তাঘাট শুনশান। ভিজে রাস্তায় তখন ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িগুলো নিঃশব্দে জল মাখছে। এমন সময় বাড়ি থেকে তোমার জরুরি ফোন এল, তুমি চলে গেলে।”
“হ্যাঁ। মনে পড়ছে। মামা বিদেশ যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাই ডাক পড়েছিল।”
“জানো, তখন অব্দি আমাদের মধ্যে কেবল একটা ভালোলাগা জন্মেছিল। কিন্তু তোমার ওই চলে যাওয়ার মুহূর্ত আমাকে ভিতরে-ভিতরে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। হাওয়ায় উড়ছিল শাড়ির আঁচল। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বামহাত তুলে আড়াল করার চেষ্টা করছিলে।”
“হ্যাঁ, সেদিন সঙ্গে ছাতা ছিল না।”
“খানিক হেঁটে গিয়ে তুমি ভিজে রাস্তার নির্জন বাঁকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলে।”
“হ্যাঁ, তুমি আগে বলেছ, সেদিন সেই মুহূর্তে তুমি আমার প্রেমে পড়েছিলে। যদিও প্রপোজ করেছ তারও অনেক পরে।”
“ঘটনাটা তোমাকে বলেছি ঠিকই, কিন্তু সেদিন ঠিক কী মনে হয়েছিল, তা বলা হয়নি।”
“রিয়েলি? বল, বল, প্লিজ বল…”
“বলব?”
“প্লি-ই-ই-জ…”
‘থি এক খোয়াইশ – বারিশ কো ছুঁনে কী
থি এক খোয়াইশ – বারিশ কো ছুঁনে কী…
যব ইস শহর মে তুমকো প্যাহেলিবার চলতে হুয়ে দেখা –
মুঝে এ্যহেসাস হুয়া – তুমহি মেরেসপনো কী নুর হো
আসমান সে গিরতে হুয়ে ও বারিশ ভি তুম হো…’
“ক্যয়া বাত! এতদিন বলোনি কেন?”
‘‘জাস্ট, বলা হয়ে ওঠেনি। এই আর কী।”
“এ তো হিন্দি শায়েরি।”
“ইয়েস, ম্যাম।”
“কিন্তু ওই দিন তো আমাকে প্রথম হাঁটতে দেখোনি! ওই যে বললে – প্যাহেলিবার…”
“আরে বাবা, ওই দিনই তো গভীর ফিলিংটা এসেছিল। আই মিন আমার প্রেমের জন্মদিন। সো… প্রথমবারই তো আমার অন্তর দিয়ে তোমাকে সেদিন হেঁটে যেতে দেখেছিলাম, তাই না?”
“বুঝলাম।”
“জানো, তোমার এই বুঝলাম বলে হেসে ঘাড় নাড়ার সঙ্গে একজনের ভীষণ মিল আছে।”
“কার?”
“নুসরাত ইমরোজ তিশা।”
“সে আবার কে?”
“সে নয়, তিনি। শুধু মিল কেন, হুবহু মিল। আমি বিস্মিত হয়ে গেছি।”
“কত কথাই যে চেপে রাখো! এনিওয়ে, তিনি কে?”
“বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রী। এত ন্যাচারাল অভিনয়, জাস্ট, য়ু কান্ট ইমাজিন।”
“আমাকে দেখিয়ো তো।”
“ইউটিউবে ওঁর টেলিফিল্মের অনেক লিংক আছে, আমি পাঠিয়ে দেব। জানো, আমি ওঁর অভিনয়ে মুগ্ধ। ওঁর অভিনীত ফিল্মগুলোর সব কনটেন্ট যে আমার পছন্দ হয়েছে তা নয়। কিন্তু যে কোনো চরিত্রেই ওঁর অভিনয় দক্ষতা প্রশ্নাতীত।”
“তাই নাকি?”
“একদম। ইংরেজিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, এ-বাংলায় সুচিত্রা এবং ও-বাংলায় নুসরাত ইমরোজ তিশা। এঁদের অভিনয়ের জন্য আমি খুব রেসপেক্ট করি।”
“কী হল, তুমি চোখ বন্ধ করে গিটার নিয়ে মাথা দোলাচ্ছ কেন?”
‘ছায়াছায়া মেঘ, গোপন আবেগ, উড়ন্ত জোনাকির
ছোটোছোটো আলো, ঠিকানা হারাল নিশ্চুপ রাত্রির।
একা নির্জন ছুঁতে চায় মন, রহস্যময় সুর
এ-শহর জানে স্বপ্নের মানে – আলোকবর্ষ দূর…’
“এই মাঝরাতে তুমি কী শুরু করলে! তুমি তো পাগল করে দেবে, দেখছি!”
“সেই অর্থে আমরা কোনদিন কাছে আসতে পারব, শ্লোকা?”
“মানে! আমরা কি পরস্পরের কাছে নেই?”
“না, তা নয়। আসলে…”
“বিয়ের কথা বলছ? সে তো করতেই পারি।”
“না। পারি না।”
“হোয়াই নট?”
“আমি এস্টাবলিশ নই।”
“ইকোনমিক্যাল এসস্টাবলিশমেন্টটাই কি একমাত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাপকাঠি, গালিব।”
“সমাজ সংসার তো এই প্যারামিটারেই আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছে, শ্লোকা।”
“আই ডোন্ট বিলিভ উইথ দিস। আমি কী স্বপ্ন দেখি তুমি জানো?”
“কী?”
“তিরতিরে একটা নদী বয়ে যাবে। তীর থেকে একটা প্রকাণ্ড গাছ নদীর জলের ওপর ছড়িয়ে রাখবে তার ডালপালা। আমরা সেই গাছে বাসা বানাব পাখিদের মতো।”
“আহ্, দুর্দান্ত। আমাদের সেই গাছবাড়ির নীচ দিয়ে অহর্নিশি বয়ে যাবে জল। চিরনতুন জল।”
“এগজাক্টলি। ওই যে বলে না – নদী কখনো পুরনো হয় না। নদী সবসময় নতুন। চিরবহমান ব’লে সবাই বলে – এক নদীতে দুবার স্নান করা যায় না।”
“আর আমরা সেই নির্জন বাসায় থাকব? শ্লোকা, অনেকটা গল্পের গরুকে গাছে তোলার মতো হয়ে গেল না!”
“ধুর। দিলে তো স্বপ্নটায় বুলডোজার চালিয়ে?”
“আমি বুলডোজার চালানোর কে? বুলডোজার তো চালায় সময়। সময়ের বুকে পরজীবী ছত্রাকের মতো এই সমাজ। যারাই স্বপ্ন দ্যাখে, তাদের স্বপ্নগুলোকে এই সমাজ ছুরি চালিয়ে খুন করে।”
“মিথ্যে দোষ দিয়ো না। বরং মানব – যদি তুমি বল – বৃহৎ পুঁজিপোষিত সমাজ। পুঁজিবাদই এই সমাজ, এই সভ্যতার মূল সঙ্কট।”
“আমি ওটাই মিন করতে চাইছিলাম।”
“গালিব, এত বিষাদ ভালো না। এত নেতিবাচক দৃষ্টি দিয়ে জীবনকে দেখো না। আমাদের এই সোশ্যাল-সিস্টেমের ভিতর দিয়েই মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। এগিয়ে চলার সন্ধান করতে হবে। দেখো, একদিন তোমার ক্যানভাস, তোমার গান তোমাকে সেই মুক্তির পথ বলে দেবে। তোমাকে শুধু সাফল্য নয়, প্রকৃত সার্থকতায় পৌঁছে দেবে। দেবেই। এ আমার প্রগাঢ় বিশ্বাস। মিলিয়ে নিয়ো।”
“কিন্তু আমার তো মনে হয়, এ-শহর…”
“জানি। একারণেই বললে এ-শহর জানে স্বপ্নের মানে আলোকবর্ষ দূর। না, আলোকবর্ষ দূর নয়। খুব কাছে। খুব নিকটে, আসলে আমারই ভুল, জানো। আমি কেন আরও নিবিড়ভাবে তোমার পাশে দাঁড়াইনি? কেন আরও যত্ন নিয়ে তোমার শিল্পীসত্তাকে এনডোর্স করার চেষ্টা করিনি?”
“মাঝেমাঝে খুব ভয় করে, জানো! হারানোর ভয়। তখন এক আজব ভাবনা মাথায় ভর করে।”
“আজব ভাবনা!”
“হুম। আজবই তো!
‘আজিবসা এক খেয়াল আয়া মন মে
আজিবসা এক খেয়াল আয়া মন মে…
রব কে পাস হমনে ভেজ দিয়া হমারি গুজারিশ –
জিসকে পাস জি চাহে, উসে খুশি সে যানে দো
লেকিন কভি মৎ তোড়ো হমারি ও খোয়াইশ…’”
“‘জিস কে পাস জি চাহে, উসে খুশি সে যানে দো।’ এখানে এই ও-টা কে? কী হল চুপ করে আছ কেন, উত্তর দাও। শোনো, তুমি নাৎসিদের ফায়ারিং স্কোয়াডের ছবি দেখেছ? সেই ইতিহাস, জানো? সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড-ওয়ারের অন্তিম মুহূর্তে হিটলার বার্লিনের গোপন বাংকারে বসে বিদ্রোহী নাতসি অফিসারদের কীভাবে গুলি করে খুন করার নির্দেশ দিয়েছিল, জানো?”
“এই মাঝরাতে এত খুনখারাবির কথা আসছে কেন?”
“ওই যে আমাকে কিছুক্ষণ আগে নুসরাত ইমরোজ তিশার মতো বলছিলে, মনে আছে?”
“তো?”
“আমি তিশা নই। আমি হিটলার। ফ্যাসিস্ট প্রেমিকা। তোমার দেবদাস টাইপের প্রেমিকার মতো আত্মত্যাগের বাসনা জন্মালে, পার্বতীর মতো চলে যাব না। ফায়ারিং স্কোয়াডে তোমাকে গুলি করে মারব। আহ্! কী স্যাক্রিফাইস – ‘রব কে পাস হমনে ভেজ দিয়া হমারি গুজারিশ!’ তোমার গুজারিশ, তোমার পকেটে রাখো। আমি আছি। সবসময় থাকব তোমার সঙ্গে।”
“ওয়েট। লেকচার থামাও।
‘স্বপ্ন যখন খুঁজছে তোকে, রাত্রিজাগা ধূসর চোখে
লুকোয় শহর আমার এ-ঘর, বিষণ্ণ-পালকে।
ভাঙছে যত সময় দ্রুত, জাগছে তোকে দেখার ছুতো
নাছোড়বান্দা স্বপ্ন ওড়ে, তোরই জন্য রে…’”
“হ্যাঁ, আমার জন্য তোমার স্বপ্নটা যেন এমন নাছোড়বান্দা হয়। ওয়েট ওয়েট ওয়েট, গালিব, এটা তো একটা পুরো গান হয়ে গেল!”
“তাই তো!”
“প্রথম থেকে একবার গিটারে তোলো তো।“
“প্রথম অংশটা ফোক স্টাইলে। মাঝেরটাতে ওয়েস্টার্ন ধাঁচ। ও মাই গড!”
“দুরন্ত একটা ফিউশন ট্রাই করা যেতে পারে।”
“রাইট। লিসিন, মাঝের শায়েরি দুটো বাদ দেওয়া যাবে না। মনে করো – ওই অংশ দুটো কেউ ব্যারিটোন ভয়েসে আবৃত্তি করবে।”
“ব্যারিটোন ভয়েস? অমিতাভ বচ্চন?”
“ধুর। ইয়ার্কি মেরো না। মীর এই অংশটার জন্য বেস্ট চয়েস। এনিওয়ে, তুমি পুরোটা গাও তো। দাঁড়াও, কোমরে ওড়নাটা জড়িয়ে নিই।”
“নাচবে নাকি?”
“অফকোর্স। তুমি স্টার্ট করো। এই দ্যাখো…”
“টোয়ের ওপর ভর দিয়ে এই যে তুমি চক্কর দিলে, মেঘলা রাতে হাওয়ায় তোমার চুড়িদারের নীচের অংশটা রঙিন ছাতার মতো গোল করে উড়ল। দারুণ!”
“নো বকবক। স্টার্ট, নাউ…”
“স্বপ্ন যখন একলা ওড়ে, তোকেই দেখি এই শহরে
থমকে দাঁড়াস মেঘলা আকাশ, মনের বন্দরে।
বৃষ্টি ফোঁটার নির্জনতা, লিখছে নতুন কী রূপকথা
উড়ছে দেখি – তোরই গল্প, বুকের পিঞ্জরে।
থি এক খোয়াইশ – বারিশ কো ছুঁনে কী
থি এক খোয়াইশ – বারিশ কো ছুঁনে কী…
যব ইস শহর মে তুমকো প্যাহেলিবার চলতে হুয়ে দেখা –
মুঝে এ্যহেসাস হুয়া – তুমহি মেরেসপনোকিনূর হো
আসমান সে গিরতে হুয়ে ও বারিশ ভি তুম হো…”
ছায়াছায়া মেঘ, গোপন আবেগ, উড়ন্ত জোনাকির
ছোটোছোটো আলো, ঠিকানা হারাল নিশ্চুপ রাত্রির।
একা নির্জন ছুঁতে চায় মন, রহস্যময় সুর
এ-শহর জানে স্বপ্নের মানে – আলোকবর্ষ দূর…।
আজিবসা এক খেয়াল আয়া মন মে
আজিবসা এক খেয়াল আয়া মন মে…
রব কে পাস হমনে ভেজ দিয়া হমারি গুজারিশ –
জিস কে পাস জি চাহে, উসে খুশি সে যানে দো
লেকিন কভি মৎ তোড়ো হমারি ও খোয়াইশ…’
স্বপ্ন যখন খুঁজছে তোকে, রাত্রিজাগা ধূসর চোখে
লুকোয় শহর আমার এ-ঘর, বিষণ্ণ-পালকে।
ভাঙছে যত সময় দ্রুত, জাগছে তোকে দেখার ছুতো
নাছোড়বান্দা স্বপ্ন ওড়ে, তোরই জন্য রে…”
“কী, কেমন দেখলে?”
“আমার গানের চেয়েও তোমার নাচ সুন্দর।”
“ইয়ার্কি মেরো না। তোমার গানটা দুর্দান্ত। দেখবে কত মানুষ একদিন ভালোবেসে এই গানটা শুনবে।”
“ধুস।”
“আবার নেগেটিভ হচ্ছ?”
“সরি। শোনো, মেসেজ এল, নেট প্রায় শেষ। যেকোনো মুহূর্তে কলডাউন হয়ে যাবে।”
“রাতও প্রায় শেষ হয়ে এল, গালিব। এবার ঘুমিয়ে পড়ো।”
“এই স্বপ্নময় কনসার্টের পরে কি আর ঘুম আসবে, শ্লোকা?”
“তাই তো। চলো, বাকি রাতটুকু জেগে থাকি।”
“কিন্তু নেট?”
“নো প্রবলেম। ফোন অফ করো। তারপর আমার মতো তুমিও ওই আকাশময় উড়ন্ত মেঘেদের আলোছায়ার দিকে তাকাও। তিনটে বিন্দু তৈরি হবে।”
“মানে। তুমি একটা বিন্দু, আকাশ দ্বিতীয় বিন্দু। আর আমি তৃতীয় বিন্দু। এবার তিনটে বিন্দুকে তিনটে সরলরেখা দিয়ে মনে মনে যুক্ত করে নাও।”
“এ তো ত্রিভুজ তৈরি হল।”
“হলই তো। তুমি-আমি আর রাত্রির মেঘময় নির্জন আকাশ। ভালোবাসার নিজস্ব ত্রিভুজ।”
“যাহ্! কলডাউন হয়ে গেল!”
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
শ্লোকা আর গালিবের এক রাত…
পারমিতার এক দিন মুভি টা দেখছিলাম আজ। ঠিক সেই সময়েই আপনার লেখা এই ছোট্ট মিষ্টি প্রেমের গল্প টা পড়লাম। কি মনে হলো জানেন… হঠাৎ মনে হলো আমিও শ্লোকা হয়ে যাই, কারণ, আমি চাই আমারও একজন গালিব থাকুক। well… alas! সব স্বপ্ন সত্যি হয়না। বোধহয় আমরা যা চাই, exactly সেটাই ঈশ্বর আমাদের দেন না, হয়তো স্বপ্নের সাথে বাস্তব টাও মিলে গেলে একঘেঁয়ে হয়ে যেতে পারে ভেবেই… Afterall ঈশ্বর ও twist পছন্দ করেন।
খুউউউব সুন্দর…স্বপ্নের মতো একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প। খুব ইচ্ছে করছিলো, এটা পাঠ করে শোনার। তবে নিজেই যদি male female both voice করতে যাই… ব্যাপারটা ভীষণ হাস্যকর হয়ে যেতে পারে বলে মনের মধ্যেই ইচ্ছে টাকে দমন করলাম। শুভেচ্ছা রইলো আমার প্রিয় কবি, লেখকের জন্য…❤️
ধন্যবাদ, অর্পিতা। 🍁🌹🍁
অসামান্য এক লিরিক তো গল্পটা পুরোটা নিজেই। এই স্যুরিয়েলিজম’কে আত্মস্থ করেও তাকে অতিক্রম করে যেতে না পারলে কবি হওয়া যায়? হওয়া যায় লেখক?
ভালোবাসা নেবেন .. অনেক।
আবারও পড়তে হবে গল্পটা। বেশ কয়েকবার।… কেন জানি না। হয়তো বা জানি …
ধন্যবাদ, সৌমেনদা।
কী ভীষন ভালো লাগার অনুভূতি টা মনের মধ্যে জেগে উঠলো।হয়তো কিছু না পাওয়া ইচ্ছে বা মনের মধ্যে জমে থাকা ইচ্ছে যেনো চোখের সামনে আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে ভেসে উঠলো। হঠাৎ আপন খেয়ালে বলতে শুরু করে দিলাম দুটো character র মধ্যেই ঢুকে পড়ে।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনাকে।কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই আমার কিন্তু যে লেখা মন কে ছুঁয়ে যায় সেটা বলতে চেষ্টা করি নিজের মত করে।তাই আবারও আপনার এই অসামান্য লেখাটি পাঠ করার চেষ্টা করবো।