travel-devils-tower

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ন্যাশনাল মনুমেন্ট ‘ডেভিলস টাওয়ার’: বিস্ময়ের মেলবন্ধন
রাখী নাথ কর্মকার

Devils Tower

 

শয়তানের স্তম্ভ! নামটা শুনলেই যে বুকের গভীরে অজানা আতঙ্ক ধুকপুকিয়ে উঠবে সে আর আশ্চর্য কী! যে শয়তানের অশুভ অস্তিত্বের কাছ থেকে চিরটাকাল দূরে থাকতে চেয়েছে মানুষ, সেই শয়তানের স্তম্ভকেই ‘পবিত্র’ মনে করে ঈশ্বরের উপাসনা! ‘আইরনিকাল’ নয় কি?            

আসলে, ১৯০৬ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট দ্বারা ঘোষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘ন্যাশনাল মনুমেন্ট’ এই ‘ডেভিলস টাওয়ার’ বা ‘শয়তানের স্তম্ভ’ কিন্তু প্রাথমিকভাবে এই নামে পরিচিত ছিল না। কী নামে পরিচিত ছিল? সে প্রসঙ্গে আমি একটু পরেই আসছি। তার আগে আমাদের ছবির মতো যাত্রাপথের একটু বর্ণনা দিয়ে দিই।   

সপ্তাহান্তের উচ্ছল ছুটিতে একঘেঁয়ে শহুরে বিবর্ণতা, শহরতলির উন্মাদনা, পাহাড়ি চড়াইউৎরাই এবং দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর পার হয়ে ‘ডেভিলস টাওয়ারে’র পাদদেশে এসে উপস্থিত হয়েছি আমরা। দুপুরের মেঘময়লা আকাশে চুরি হয়ে যাওয়া চঞ্চল রোদ্দু্রের খোঁজে কখন জানি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে বিকেল। ‘ডেভিলস টাওয়ারে’র পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রেখে পাহাড়ি পথ ধরে আমরা টাওয়ারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছি। টাওয়ারের ক্রমশ খাড়াই, তরঙ্গায়িত পথের ধারে ধারে পন্ডেরোজা পাইনের জঙ্গল। মাঝেই মাঝেই চোখে পড়ল কাঠের ফলকে দিকনির্দেশ দেওয়া আছে।  কোনোটাতে আবার লেখা – ‘অধিকাংশ আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের কাছে টাওয়ারটি পবিত্র, সেই ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না হেনে ট্রেলের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ’। আশেপাশে পাইনের ডালে দেখলাম ঝুলছে রঙবেরঙের কাপড়ের টুকরো… স্থানীয় উপজাতিদের ‘প্রার্থনা’র মূর্ত প্রতীক! টাওয়ারের মাত্র কয়েক মাইলের মধ্যেই লক্ষ্য করলাম তিন তিনটি ভিন্ন হ্যাবিট্যাট… পন্ডেরোজা পাইন ফরেস্ট;  উন্মুক্ত প্রেইরীঅঞ্চল ও স্পিয়ারফিশ ফরমেশনের লাল কাদামাটি, এবং বেলেপাথর অধ্যুষিত অঞ্চল। এ যেন ছেঁড়া ছেঁড়া অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যময় কোলাজ! শুনলাম, টাওয়ারসংলগ্ন অঞ্চল এককালে অগুনতি বাইসনের চারণভূমিও ছিল।   

উত্তরপূর্ব ওয়াইয়োমিংএর ক্রুক কাউন্টির ‘বেয়ার লজ রেঞ্জার ডিস্ট্রিক্ট’ (ব্ল্যাক হিলসের অংশবিশেষ) ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী আমেরিকান ইন্ডিয়ান উপজাতিদের কাছে এই টাওয়ারের এক নিজস্ব পরিচিতি আছে। স্বতন্ত্র নামও রয়েছে। ১৮৫৫ থেকে  ১৮৭৫ সালের মধ্যে আমেরিকায় ‘ব্ল্যাক হিলস’ অভিযানের সময় এই টাওয়ারটির বহুল ব্যবহৃত নামটি ছিল ‘বেয়ার লজ’। এছাড়াও অন্যান্য নেটিভ ইন্ডিয়ান নামের ইংরেজি অনুবাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ‘গ্রে হর্ন বিউট’, ‘বেয়ার’স তিপি’, ‘হোম অফ দ্য বেয়ার’- ইত্যাদি, ইত্যাদি। লেফটেন্যান্ট জি. কে. ওয়ারেনের ১৮৫৭ সালের অভিযানের একটি মানচিত্রে ‘বেয়ার লজ’ নামটিই নজরে পড়ে, যা আসলে লাকোটা ভাষায় ‘মাদো তিপিলা’র আক্ষরিক অনুবাদ। শোনা যায়, ১৮৭৫ সালের আর্মি কমান্ডার কর্ণেল আর. আই. ডজের একটি বৈজ্ঞানিক অভিযানের সময়ে ভূতত্ত্ববিদ, মানচিত্র নির্মাতা হেনরি নিউটনসহ একটি দল ‘বেয়ার লজে’ পা রেখেছিল। খুব সম্ভবত ডজের দোভাষী একটি নেটিভ নামের ভুল ব্যাখ্যা করে জানান, স্থানীয় ইন্ডিয়ানরা ঐ বিউটটিকে ‘ব্যাড গড’স টাওয়ার’ বলে। পরে ডজ তা একটু বদলে দেন ডেভিলস’ টাওয়ারে। পরবর্তীকালে পারিপার্শ্বিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যঅনুসারে বিউটটির নাম ‘বেয়ার লজে’ পরিবর্তন করার জন্যে স্থানীয় আদিবাসী উপজাতিদের কাছ থেকে বহু প্রস্তাবও এসেছে। তবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি।                                        

ওয়াইয়োমিংএর পূর্বভাগের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, ঢেউখেলানো প্রেইরী ও বেল ফুশ রিভারের সমতল থেকে হঠাৎই প্রায় নাটকীয়ভাবে ১২৬৭ ফুট উচ্চতায় খাড়া উঠে দাঁড়ানো এই ‘ডেভিলস টাওয়ার’ সম্ভবত আগ্নেয় শিলা দিয়ে গঠিত একটি ল্যাকোলিথিক বিউট (বিচ্ছিন্ন উল্লম্ব পাহাড় যার শীর্ষভাগ তুলনামূলকভাবে সমতল ও ক্ষুদ্রাকায়)। টাওয়ারের সন্নিকটস্থ ভূপ্রকৃতি পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। জিওলজিস্টদের মতে, এটি ‘মনোলিথ অফ আনকমন ইগ্নিয়াস রক’ যা গঠিত হয়েছিল একটি ‘ইগ্নেশিয়াস ইনট্রুশনের’ মাধ্যমে। কিন্তু সেটা ঠিক কীভাবে ঘটেছিল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এমনও মনে করেন – এই টাওয়ার আসলে কোনও এক বিস্ফোরক আগ্নেয়গিরির অবশিষ্টাংশ যাকে ‘ওয়ান অফ অ্যা কাইন্ড ন্যাচারাল ওয়ান্ডার’ও বলা যায়। ১৯০৭ সালে বিজ্ঞানী ডার্টন জানান, এই বিউটটি একটি ক্ষয়প্রাপ্ত ল্যাকোলিথ। পাললিক শিলার দুটি স্তরের মধ্যে বলপূর্বক ম্যাগমার অনুপ্রবেশ ঘটার পরে তা বাইরে বেরোনর সুযোগ না পেয়ে উপরের স্তরে অতিরিক্ত চাপ দিলে সেই পাললিক শিলাস্তরের মধ্যেই এক গোলাকার (মাশুরুম বা গম্বুজের মতো) স্ফীত আকারের জন্ম হয়। পরে উপরিভাগের পাললিক শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে সেই লেন্সআকৃতির আগ্নেয় শিলার উত্তোলিত স্তর (টাওয়ার) দৃশ্যমান হয়। হাজার হাজার বছর ধরে বৃষ্টি এবং বরফের ক্ষয়কার্যও এই অঞ্চলের ভূমিরূপে নানা পরিবর্তন ঘটিয়েছে। চোখে পড়ল, ডেভিলস টাওয়ারের পাদদেশে স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে ছোটবড় পাথরের চাঁই, কলাম, বোল্ডার। পাললিক শিলায় ‘ইগ্নেশিয়াস ইনট্রুশনের’ অনেক আগেই অবশ্য এখানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয়েছিল নানা ভিন্নধর্মী শিলাস্তরের। টাওয়ারের পূর্ব, দক্ষিণ পূর্বদিকের লাল, মেরুন টিলাগুলি আসলে ব্ল্যাক হিলসের চারপাশের সুবিস্তৃত পাললিক শিলাস্তরের অংশ যার গঠনকার্য শুরু হয়েছিল ট্রায়াসিক যুগে (২৫১ থেকে ১৯৯ মিলিয়ন বছর আগে)। অগভীর সমুদ্রের বালি, পলি, কাদামাটির মধ্যে লৌহসমৃদ্ধ খনিজপদার্থের অবস্থানের জন্যেই এই পাথরের রং উজ্জ্বল লাল। সুবিশাল ডায়নোসর থেকে ছোট্ট ঝিনুক… বহু প্রাণী তাদের অস্তিত্বের চিহ্ন রেখে গেছে এই অঞ্চলের শিলাস্তরে। বর্তমানে, ‘ডেভিলস টাওয়ারে’র আশেপাশে লাল কাদাপাথর, হলুদ বেলেপাথরের ঢালে ধূসর শেল, চুনাপাথর এবং সাদা জিপসামের অত্যাশ্চর্য সহাবস্থান ঘন সবুজ অরণ্যের ব্যাকগ্রাউন্ডে এক বহু বর্ণের ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেছে। জিওলজিস্টদের মতে, প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়ন বছর আগে টাওয়ারটি গঠিত হলেও যে ক্ষয়কার্যের ফলে ওপরের পাললিক শিলাস্তরের আড়াল সরিয়ে টাওয়ারটি অনাবৃত হয়েছিল, তা সম্ভবত ঘটেছিল পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন বছর আগে। টাওয়ারটি ‘ফোনোলাইট পরফিরি’, লালচে-বাদামী বা বেগুনি রঙের আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত যা আজ থেকে প্রায় ৪০.৫ মিলিয়ন বছর আগে পাললিক শিলাস্তরে প্রবেশ করেছিল। ‘ফোনোলাইট’ এক ধরনের শব্দ উৎপন্নকারী আগ্নেয় শিলা।  জানতে পারলাম, বেল ফুশ রিভারের ক্ষয়কার্য এখনো চলছে, তাই আমাদের হিমালয় পর্বতের গঠন প্রক্রিয়ার মতো এই টাওয়ারের উত্থান প্রক্রিয়াও এখনো অব্যাহত। বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই টাওয়ারের উচ্চতা ৫১১২ ফুট। টাওয়ারটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছিল কেটে রাখা গাছের গুঁড়ি বা দাঁড় করিয়ে রাখা একগোছা পেনসিল। ট্রেল ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপাতত আমরা টাওয়ারের পাদদেশে এসে পৌঁছেছি। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল বিশাল পাথুরে বোল্ডার।  অনেক ভ্রমণার্থীই দেখলাম সেই বোল্ডারে পেরিয়ে পেরিয়ে এগিয়ে চলেছেন টাওয়ারের দিকে, টাওয়ারটিকে ছুঁতে।  

Devils Tower

 

‘জ-ড্রপিং জিওলজিকাল ওয়ান্ডার’ এই ডেভিলস টাওয়ার বহু নেটিভ ইন্ডিয়ান কিংবদন্তীরও আকরখনি। পাহাড়ের গায়ে রহস্যময় আঁচড়ের দাগগুলি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কিংবদন্তী। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘লাকোটা’ উপজাতিদের এক বিশাল ভালুকের গল্প। এক দৈত্যাকার ভালুক একবার দুটি বোনকে তাড়া করলে তারা একটি পাহাড়ের মাথায় উঠে পড়ে। প্রাণভয়ে তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইলে ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা শোনেন। পাহাড়টি উত্থিত হতে হতে একেবারে আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কিন্তু সেই ক্ষিপ্ত ভালুকই বা ছাড়বে কেন? পাহাড়টিকে সে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকে। যদিও ভালুকের সব প্রচেষ্টায় জলাঞ্জলি দিয়ে পাহাড়টি ওপরে উঠে যায় …ভালুকের নাগালের বাইরে। ভালুকের সেই তীক্ষ্ম নখের আঁচড়ের দাগই নাকি দেখা যায় পাহাড়ের গায়ে।  

স্থানীয় লাকোটা উপজাতিদের কাছে টাওয়ারটির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য। জুন মাসে, টাওয়ারের কাছে তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যেমন- ‘পাইপ সেরিমনি’,‘সান ডান্স’ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। আর্কিওলজিস্টদের মতে, বহু প্রাচীন উপজাতি প্রায় দশহাজার বছর আগে থেকেই এই টাওয়ারের চারপাশে বসবাস করে চলেছে; তাদের আধুনিক বংশধরদের কাছেও টাওয়ারটি এক গভীর ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল। উপজাতিদের মৌখিক ইতিহাস এবং বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠান আজও এই টাওয়ারটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের আধিপত্য ধীরে ধীরে খর্ব হতে শুরু করলেও বিংশ শতকের শেষদিকে, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধের পুনর্জন্ম এখানকার নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস ও শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে।         

ডেভিলস টাওয়ার বিখ্যাত হাইকিং ট্রেইলস, ক্লাইম্বিং, নাইট স্কাই ভিউইংএর জন্যেও! এক বিশাল হেক্সাগনাল কলামের মাঝে শত শত সমান্তরাল ক্র্যাক – এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্যই ডেভিলস টাওয়ারকে উত্তর আমেরিকার ‘ফাইনেস্ট ট্র্যাডিশনাল ক্র্যাক ক্লাইম্বিং এরিয়া’ বলা হয়। তবে, স্থানীয় উপজাতিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মবিশ্বাসের কথা মাথায় রেখে ১৯৯৬ সাল থেকেই এখানে জুন মাসে ক্লাইম্বিং বন্ধ থাকে।

প্রকৃতির সঙ্গে বন্য আলাপচারিতার সুযোগ এই ডেভিলস টাওয়ারের এক অন্যতম আকর্ষণ! এপ্রিল, মে আর জুন…এই তিন মাস এখানে বুনো ফুলের মরশুম। প্রায় ষাট রকম প্রজাতির বুনো ফুল ফোটে এই অঞ্চলে! সুপ্রাচীন পন্ডেরোজা পাইন, ওক, অ্যাস্পেন, কটনউডের সমাহার আর সবুজ প্রেইরীর ঐশ্বর্যে সম্পদশালী এই পার্ক। ১,৩৪৭ একরজুড়ে বিস্তৃত এই পার্কে পাঁচশোরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। রয়েছে বন্যজীবনের  উঁকিঝুঁকি… হরিণ, ব্লুবার্ড, প্রেইরি ডগ, বুনো টার্কি তো মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছিল। ইতিমধ্যে বিকেলের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। আমাদের চারপাশে এখন শুধুই আদিগন্ত, অনলস প্রকৃতি। নাগরিক জীবনের হট্টগোল এখানে যেন অলীক কল্পনা বলে মনে হচ্ছিল! পর্যটকদের চাপা কথাবার্তা ছাপিয়ে উত্তাল হাওয়ায় ভেসে আসছিল অচেনা পাখির ডাক। মনে হচ্ছিল, টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে কখন যেন আমরা পৌঁছে গিয়েছি সুদূর অতীতে।    

সন্ধে নামছে বনাঞ্চলে। নীড়ে ফেরা পাখিদের মতোই …এবার আমাদেরও ঘরে ফেরার পালা।

 

Devils Tower Different View

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *