aparbangla-editorial-edition-17

সম্পাদকের কলমে


এপ্রিল মানেই বাঙালির উৎসবের মাস। নানান কিসিমের মেলা, নানা পুজো, রমজান পালন, সংক্রান্তি, চড়ক, গাজন সব পেরিয়ে হৈ হৈ করে এসে পড়ে বাংলা নববর্ষ। যদিও শিব্রাম চক্কত্তি মশাইয়ের কথা ধার নিয়ে বলা যায় যে নববর্ষ নিয়ে বেশি মাতামাতি করাটা একদমই অর্থহীন, কারণ যখনই কোনো নতুন বছর এসেছে, একবছরের বেশি টেঁকেনি।

তবে একবছরই বা কম কি! একবছরের জন্যই না হয় বছরের প্রথম দিনটার উদযাপন হোক। ট্রাডিশনাল পোশাকে রাস্তায় নামুক উৎসবপ্রিয় বাঙালি, দোকানগুলোতে যতই বছরভর হিসাবনিকাশ কম্পিউটারে হোক না কেন, এই দিনটাতে লাল শালুতে মোড়া হালখাতা আসুক, হোক মিষ্টিমুখ, মিষ্টভাষণ। বইপাড়া জমজমাট হয়ে উঠুক লেখক-প্রকাশক মিলনোৎসবে।

‘বাংলা’কে নিয়ে আনন্দ উদযাপনের প্রথম দিনটাতে বিশেষ একজন অবাঙালির নাম অবশ্য স্মরণীয়। তিনি হলেন কেরী সাহেব, উইলিয়াম কেরী। আজ বাংলা গদ্য যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাঁর কৃতিত্বের মূল অধিকারী এই বিদেশী। তৎকালীন সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতেরা মনেই করতেন না বাংলাতে গদ্য লেখা সম্ভব, সাহিত্য তো সেখানে স্পর্ধা মাত্র। কথ্য বাংলাভাষাকে মর্যাদা দান করে বাংলা গদ্যকে মেরুদন্ড দেবার কাজটি করে গেছেন কেরীসাহেব। তিনি নিজে বেশি বই লেখেননি বটে, কিন্তু লিখিয়ে নিয়েছেন যোগ্য মানুষদের দিয়ে, এভাবে নীরবে সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা গদ্য ভান্ডারকে। ‘রামরাম বসু’কে দিয়ে উইলিয়ম কেরী লিখিয়েছিলেন ‘প্রতাপাদিত্যচরিত্র’, যেটি বাংলাভাষায় লিখিত প্রথম মৌলিকগ্রন্থ। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে তিনি যখন বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন সেখানে ছাত্র সংখ্যা ছিল নগন্য, ছিল বাংলায় লেখা পাঠ্যবইয়ের অভাব। কেরী সাহেবের প্রচেষ্টায় ১৮০১ থেকে ১৮১৫ সালের মধ্যে লিখিত হল বারটি বাংলা বই, কিছুটা হলেও সেই অভাবপূরণ হল। তিরিশ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৮২৪ সালে তিনি প্রকাশ করলেন বাংলা ডিকশনারী, যাতে ছিল পঁচাশি হাজার শব্দ।

আজ আমরা যারা বাংলায় মনের আবেগ প্রকাশ করি, সারা পৃথিবীর সেই বাঙালিরা, যারা মনে করি আজো ‘বাংলাভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে ঝরে জ্যোৎস্নার চন্দন’, তাদের সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এই ভিনদেশী মানুষটির প্রতি, যিনি তাঁর গোটা জীবনটাই ব্যয় করেছেন বাংলাভাষার সেবায়।

বাংলা নববর্ষতে অপারবাংলা নিয়ে এসেছে আবার একটা দুর্দান্ত সংখ্যা। সাহিত্যিক রাতনতনু ঘাটী র উপন্যাস পড়তে ভুলবেন না। ওয়েবজিন এর জন্য উপন্যাস খুব বড় হয় না, যাতে পাঠকদের পড়তে সুবিধা হয়। বিবিধ বিভাগে রূপা মজুমদার লিখেছেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কে নিয়ে অনেক অজানা ঘটনা। ভ্রমণ এ প্রসূন বিশ্বাস চাক্ষুস নিয়ে এসেছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাঁসুলী বাক আর তাঁর ফেলে আসা দিন গুলোর বর্তমান অবস্থা। বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী হিসাবে আমাদের কর্তব্য সাহিত্য নক্ষত্রদের সবকিছু সংরক্ষণ করা এবং তা নিয়ে নিয়মিত চর্চা করা। আগামী সংখ্যা গুলো তে আমরা নিয়ে আসবো আরো এমন অনেক সুচিন্তিত বিষয়।

এবারের সংখ্যা তে আপনারা পড়তে পারবেন নয়টি গল্প, দশটি অনু গল্প, কবিতা গুচ্ছ সহ আরো নিয়মিত বিভাগ গুলো। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এর প্রবন্ধ রামায়ণকে বাঙালির হেঁশেল ঘরে নিয়ে এসেছে। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ এর প্রবন্ধ বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুণগত মান নিয়ে এক মনোজ্ঞ আলোচনা। মনিকা চক্রবর্তী আলোচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য অবদান নিয়ে। রান্নাঘরে খালি রেসিপি নয়, আছে সেই রান্নার ইতিহাস। এবারের খাওয়ার আইটেম গুলো হলো বাকর খানি আর গুড়ের জিলিপি। বিনোদন এ ষ্টুডিও পাড়ার অজানা তথ্য প্রিয়ব্রত দত্ত র নিয়মিত ধারাবাহিকে।

আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবারের সংখ্যা। আপনাদের মতামত সরাসরি জানাবেন ওয়েবসাইট এবং আমাদের ফেসবুক পেজ এ।

শুভ নববর্ষ আর আগাম ঈদ এর শুভেচ্ছা রইলো অপারবাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে।

আনন্দ হোক।

শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

4 thoughts on “aparbangla-editorial-edition-17

  1. মাননীয় শুভ নাথ,
    আমি সুতপন চট্টোপাধ্যায়। গল্প , উপন্যাস লিখি। দেশ, আনন্দবাজার, প্রতিদিন, বর্তমান, কলেজ স্ট্রিট, ও অনেক লিটিল ম্যাগাজিন নিয়মিত লিখি। আমার তিনটি গল্প গ্রন্থ, দুটি উপন্যাস ও একটি কিশোর উপন্যাস আছে। আমি আপনাদের কাগজে গল্প বা উপন্যাস লিখতে চাই। কি থিকানায় পাথাব যদি জানান।
    নমস্কার।
    সুতপন চট্টোপাধ্যায়

  2. নতুন লেখকদের লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী ও ঠিকানা জানতে চাই । লেখা পাঠিয়ে মনোনয়নের জন্য কতোদিন অপেক্ষা করতে হয় ? এসম্পর্কে কোনো বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়লো না ।

  3. মাননীয়, শ্রী শুভ নাথ বাবু, খুব ভালো বলেছেন, বাংলা ভাষা ছাড়া, মনের ভাব যেন প্রকাশ ই হয় না, , আরোও নতুন প্রজন্মযাতে লেখার সুযোগ পান, দেখবেন, আর এ ভাবেই এগিয়ে যাক , অপার বাংলা, এই শুভ কামনা রইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *