নতুন বছর এসে পড়ল হুড়মুড় করে। পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে যোগ হল নতুন একটা পাতা, ১৪৩১। বয়স বাড়ল সকলেরই, তোমার, আমার, পৃথিবীর। কিন্তু আমরা কি অভিজ্ঞতায় প্রাজ্ঞ হলাম? মানুষের জীবন যে যূথবদ্ধতার কাছে দায়বদ্ধ সেই কথা কি বুঝলাম আমরা? যদি না বুঝি তাহলে আমাদের নতুন বছরের আবাহন সার্থক হবে না, পয়লা বৈশাখ থেকে যাবে ১লা হয়ে, আঁধার ঘরে একলা যাপনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকব আমরা।
বাঙালির নববর্ষ উদযাপন হয় সৃজনশীলতার উৎসবের মধ্যে দিয়ে। বৈশাখ সে অর্থে বাঙালির কাছে বই-শাখ। শাঁখ বাজিয়ে পুজা অর্চনার মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন হয় হালখাতার, বইপাড়ার প্রকাশকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন লেখক এবং পাঠকদের নিয়ে উদযাপনে, প্রকাশিত হয় নতুন বই। যারা বইপোকা, তারা এদিন ঝোলা কাঁধে বের হন নতুন বইয়ের সন্ধানে, কেনাকাটা সেরে, মনে ফুর্তি নিয়ে ফেরেন বই-বাহিক হয়ে। শাঁখ বাজিয়ে এসব বইপোকাদের হয়তো ঘরে আবাহন জানানো হয় না, তবে তাঁদের বৈশাখ কিন্তু বই সহযোগেই কাটে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলা পত্রিকাগুলোও সেজে ওঠে। সূচিপত্রে পরিবর্তন হয়, আসে অনেক নতুন কলম, বিশেষ নববর্ষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ বাঙালির বৈশাখী অনুষ্ঠানের অনেকটা জুড়ে এখনও বই।
বই থেকে চোখ তুলে এবার একটু বহির্বিশ্বের দিকে তাকানো যাক। ইউক্রেন-রাশিয়া, ইস্রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ থামার কোনো নাম নেই, এতে আবার যুক্ত হতে চলেছে ইরানের নাম, চোখ রাঙাচ্ছে পরমাণু যুদ্ধের আশংকা। পৃথিবী পুড়ছে, ঘরবাড়িসহ ইহজাগতিক সঞ্চয় জ্বলছে, মৃত্যু হচ্ছে নিরীহ মানুষের। এখানেই প্রশ্ন জাগে, পৃথিবীটা কি কেবল মানুষের? সবল মানুষের? তাহলে কোন অধিকারে নানারকমের জীববৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদের বাসস্থান এই বসুন্ধরাকে বিষিয়ে তুলছে কয়েকটি দাঙ্গাবাজ দেশ? প্রশ্ন কারা তুলবে আর উত্তরই বা দেবে কে?
যদি সারা পৃথিবীর শুভচিন্তক মানুষেরা এখনো একজোট না হয়, নিজের নিজের স্বার্থের ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরিয়ে না আসে তবে এমন অনেক নববর্ষ আসবে আর যাবে, ‘শুভ’ কিছুই জুটবে না কারো বরাতে। তখন প্রতিটা পয়লা বৈশাখ থেকে যাবে ১লা হয়ে, একলা মানুষ ফেলবে অসহায়ত্বের দীর্ঘশ্বাস।
এবারে আসি ‘অপারবাংলা’র নববর্ষ সংখ্যার পরিচয় পর্বে। সুস্মিতা নাথের উপন্যাসিকা “ফিরে ফিরে আসে” দিয়ে শুরু হলো অপারাবাংলার নববর্ষ আর ঈদ এর যাত্রা। আট খানা গল্প নিয়ে আছেন বীথি চট্ট্যোপাধ্যায়, বিপুল দাস, ভাস্বর চ্যাটার্জী সহ নবীন, প্রবীণ প্রজন্মের প্রমুখ। তেরো জন কবি কলম ধরেছেন এই সংখ্যা তে। এক গুচ্ছ অণুগল্প সবসময়ই পাঠকদের মনোরঞ্জন করে। চুমকি চট্ট্যোপাধ্যায় এর রম্যরচনা আবারো এক দারুন হাসির গল্প, এবার সেটা সত্যি ও বটে! রাখী নাথ কর্মকার অনুবাদ করেছেন লোক-কথা নিয়ে। এলিজা বিনতে এলাহী এর ভ্রমণ কাহিনী এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। জয়তী রায় এর “কবি কৃত্তিবাস” প্রবন্ধ ভিন্ন চোখে বিশ্লেষণ, আপনাদের ভালো লাগবে। বিনোদন বিভাগে ধারাবাহিক ভাবে প্রিয়ব্রত দত্ত লিখে যাচ্ছেন “স্মৃতির স্টুডিওপাড়া” নিয়ে। এবারেও পাবেন আরো সব দারুন তথ্য সমসাময়িক পরিচালকদের নিয়ে। আরো আছে অনেক লেখা নিয়মিত বিভাগে।
ভীষণ ভালো নতুন সংখ্যার উপহার দিতে পেরেছি নববর্ষ আর ঈদ এর খুশিতে। আপনাদের ভালো লাগবে, এই আশা থাকলো।
আনন্দ হোক।
শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
যে কোনো পত্রিকা সম্পাদকীয় দিয়েই পড়তে শুরু করি। মন ভরে গেল পড়ে।