অনুভা নাথ
-অ কানাই,বলি একটা দুগ্গা পেতিমা বানাতি এতদিন নিলে কেমন করে প্যাট চলবে?
কথাগুলো যাকে উদ্দেশ্য করে বলা, সেই কানাই তন্ময় হয়ে দুর্গা মূর্তির ওপর মাটি লেপে চলেছে। আজ কানাই বড় বিরক্ত, এতবছরের মৃৎশিল্পে এমন তো কখনও হয় না, কিছুতেই মূর্তির দেহসৌষ্ঠব আনতে পারছে না। কী যেন একটা নেই… কানাই মাটি হাতেই বিড়ি ধরায়,তারপর ভ্রূ কুঁচকে মূর্তির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে।
-আরে বাবু, এত উতলা হলে চলবেক লাই। এটা পুরো কচি, এ মাল মার্কেটে একদম ফেরেশ আছে।
পান চিবুতে চিবুতে চোখ মটকে কানাইকে লীলা মাসি কথাগুলো বলল।
কানাই অর্ধৈয্য হয়ে উত্তর দিল
-রাকোতো তোমার ফেরেশ, একরাতের জন্যি শোবো তার আবার কত কতা। জলদি এই ট্যাকায় রফা করো, নেশাটা আমার চটকেই দিলে তুমি।
তারপর একটু থেমে মুখ বিকৃত করে বলল
-ওই কতাটা শোনোনি? খেঁদি পেঁচি নূরজাহান, বিছানায় পড়লে সব সমান।
মাসী মুখে পান নিয়ে কানাইয়ের কাছ থেকে টাকাগুলো হাত পেতে নিল তারপর সম্মতিসূচক ভাবে মাথা নাড়ল।
কানাই নেশায় টলতে টলতে উঠে প্রায়অন্ধকার একটা ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল।
ঘরের মধ্যে টিমটিমে আলোর নিচে নড়বড়ে চৌকি পাতা, তেলচিটচিটে চাদরের ওপর গুটিয়ে বসে রয়েছে বছর চোদ্দর একটি মেয়ে। মেয়েটির ভয়ার্ত চোখের দৃষ্টিকে ছাপিয়েও যেন মুখ চোখে ফুটে উঠছে বাঁচবার আর্তি।
অচিরেই কানাইয়ের নেশাতুর চোখ ও লোভার্ত হাত মেয়েটির শরীরের গোপন, গভীর চড়াই উৎরাইয়ের হিসাব করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
একটানে ওর জামা খুলে দিয়ে কানাই তাকিয়ে রইল মেয়েটির সদ্য নারী হয়ে উঠতে চাওয়া দুটো উপত্যকার দিকে।
মেয়েটি নিজের কিশোরী হাতদুটো দিয়ে নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ প্রয়াস করতে করতে আকুল কণ্ঠে অনুনয় করে উঠল
-আমাকে ছেড়ে দিন,আমার মা মরে গেছে,এরা এখানে এনেছিল কাজ দেবে বলে। আ আ আমার কেউ নেই।
শেষের কথাগুলো কান্নার শব্দে চাপা পড়ে গেল।
কানাই মেয়েটির নিরাবরণ শরীরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
কিন্তু একি! মায়ের মূর্তি বানানোর সময় শরীরের অংশগুলো কানাই কিছুতেই বানাতে পারছিল না। হঠাৎই সেই কথা মনে পড়ে গেল। সে অদ্ভুতভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়েই রইল।
তারপর একছুটে বেরিয়ে গেল,পৌঁছাল কুমোর চালায়। সেখানে তার অর্ধসমাপ্ত মায়ের মূর্তি রাখা রয়েছে।
সারারাত ধরে তন্ময় হয়ে কানাই মায়ের মূর্তি তৈরি করল,তার দক্ষ হাত এবার একবারের জন্যও থামলো না।
পরের দিন সকালে সে লীলামাসির ডেরায় গিয়ে শুনল,খদ্দেরকে খুশি করতে পারেনি বলে মাসি গতকাল রাতে মেয়েটিকে খুব পিটিয়েছে।
কানাই মাসির সঙ্গে প্রয়োজনীয় কিছু কথা বলে মেয়েটির ঘরে ঢুকল, জ্বরের ঘোরে কিশোরীটি তখন বিছানায় শুয়ে প্রলাপ বকছে।
-মা,মাগো আমায় তোমার কাছে নিয়ে চলো মা।
কানাই মেয়েটির মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত রাখল, সেই স্পর্শে কী ছিল জানি না, মেয়েটি চোখ খুলে ওর দিকে তাকাল
কানাই অশ্রু আর্দ্র কণ্ঠে বলে উঠল
-মৃন্ময়ী মা, কাল রাতে বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। মা রে, তোরে নিতে এয়েছি, এই পাপী বাপটারে ক্ষমা করতি পারবি না মা?
আর ঠিক তখনই অনেক দূরে খুঁটি পুজোর ঢাকের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল চারিদিকের পরিবেশ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
ভীষণ ভালো লাগল। শুভ চেতনার জয় হোক
মাতৃবন্দনার সুন্দর রূপ। খুব ভালো লাগল