micro-story-samparko

সম্পর্ক
জয়শ্রী দাস


শ্রাবণ মাস। আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমতলী নামের গ্রামটিতে এখনো বিদ্যুতের সংযোগ আসেনি। গভীর রাতে চাঁদ সুলতানা বাড়ির পেছনে জঙ্গলের ধারে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। তার সমস্ত শরীর বৃষ্টির জলে ভিজে একাকার।

চাঁদ সুলতানা পঁচিশ বছরের তরুণী। তার রূপের সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা গ্রামজুড়ে। কোনরকম লাজশরম ছাড়াই সে সব পুরুষের সঙ্গে একটু হাসি তামসা করে বেড়ায়। তবে তার রূপের অহংকার শতভাগ। চাঁদ সুলতানাকে তার মা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন কোটিপতি অথচ আধপাগল এক লোকের সাথে। সেই থেকে চাঁদ সুলতানার গায়ে যেন রাগের আগুন জ্বলে সব সময়। সংসার চলছিল ভালই। স্বামী বেচারা তার সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করছিল। কিন্তু আব্দুল হাকিম নামের ননদের স্বামী যখন তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলো, তখনই শুরু হল বিপর্যয়।

হাকিম সুপুরুষ। কলাবতী গাছের কয়েকটি হলুদ ফুল এনে হাকিম বলল, ‘ফুল নেন ভাবি, খোপায় দেন।’

চাঁদ সুলতানা তখন ঘরের দাওয়ায় বসে উঠোনে দুটো পাখির মিলন মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। তার কণ্ঠে ছিল গুন গুন করে গান। হঠাৎ করে হাকিম মিয়ার এমন প্রস্তাবে সে হকচকিয়ে গেলো। সে তার দীর্ঘ ভ্রমর কালো চোখ দুটোতে আবেশ এনে, অপলক চোখে হাকিম মিয়ার সাথে চোখাচোখি করল। হাকিম মিয়া নিজেও মধ্যম মানের চরিত্রহীন। সে অতি দ্রুত চাঁদ সুলতানার চোখের ভাষা পড়ে ফেলল। চাঁদ সুলতানা বলল, ‘হাকিম ভাই, পাঁচ দিন হলো আপনি আসছেন। যাওয়ার নামটি নাই। শুনেছি গঞ্জে আপনার বড় দোকান। তা কিসের লোভে এখানে পড়ে আছেন?’

-ফুলের গন্ধ পেয়েছি গো ভাবি!

-মরন আমার।

মুখে ঝামটা মেরে চাঁদ সুলতানা উঠে ঘরের মধ্যে চলে গেল। এই শুরু হল পিরিত। আর থামছে না। হাকিম মিয়া বড় ব্যবসায়ী মানুষ। তার ঘরে সুন্দরী বউ আছে। কিন্তু হাকিমের মনে শুধু ওই এক চাঁদ সুলতানার মুখ। মাস যায় বছর যায় কিন্তু কাপলা গাছের আঠার মত পিরিতের আঠা আর ছোটে না।

পুনরায় হাকিম মিয়া এ বাড়িতে আসে । হাকিমের প্রতি চাঁদ সুলতানার স্বামী দিনে দিনে চরম বৈরী ভাব পোষন করে চলেছে। মুখ ফুটে কিছুই বলেনি। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভেঙে চাঁদ সুলতানার স্বামী দেখলো স্ত্রী বিছানায় নেই। স্ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে ছোট বারান্দায় হাকিম মিয়ার বিছানায় চাঁদ সুলতানাকে আবিষ্কার করল সে। চাঁদের স্বামী নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায়। এই ঝুম বৃষ্টিতে কি করে স্বামীর ঘুম ভাঙলো, সে কথা চাঁদ সুলতানার মাথায় আসলো না। আসলে অন্ধকারে আজ ঘুমের ওষুধ না খেয়ে স্বামী ভুল করে পেট খারাপের ওষুধ খেয়ে ফেলেছে।

-এই বেটি, তোর স্বামীর রাইখা, এইখানে কি করস। ওট, ওট কইতাছি।

চাঁদ সুলতানা ভয়ে চুপসে গেল। তার স্বামী দরজায় রাখা ছাতা দিয়ে চাঁদ সুলতানাকে বেধড়ক মারতে লাগলো। চারিদিকে বৃষ্টির শব্দ। ঝগড়ার শব্দ ঘরের বাইরে গেল না। হাকিম মিয়া তার পিরিতের মানুষটাকে এভাবে মারা সহ্য করতে পারলো না।

-আপনি তার গায়ে হাত তুলছেন কেন?

চাঁদ সুলতানার স্বামী হুংকার দিয়ে বলল, ‘সে আমার স্ত্রী। তুই বলার কে?’

একপর্যায়ে চাঁদ সুলতানার স্বামী ও পিরিতের লোকটার মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেল। হাকিম মিয়া এবং চাঁদ সুলতানা দুজন মিলে গলা টিপে চাঁদ সুলতানার স্বামীকে হত্যা করল এবং শোবার ঘরের মেঝে খুঁড়ে মরদেহটি মাটি চাপা দিল । এরপর চাঁদ বাড়ির পেছনে জঙ্গলের ধারে বৃষ্টির জলে স্নান করল।

স্বামী বেচারার মাঝে মধ্যে দুই এক মাসের জন্য এদিক সেদিক হারিয়ে যাওয়া রোগ ছিল। পরদিন নাকের ফুলটা শক্ত করে লাগিয়ে রূপবতী চাঁদ সুলতানা তার স্বামীর পুনরায় নিরুদ্দেশ হবার গল্পটা সকলের কাছে ফেঁদে বসল।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *