ইন্টারভিউ
অদিতি বসুরায়
শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রেম, গান বাজনা নিয়ে অকপটে জানালেন নিজের মনোভাব অদিতির সাথে এক আড্ডা তে–
প্রশ্ন – কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার শ্রীজাতের পালকে এবার পরিচালকের মুকুট! কেমন লাগছে এই নতুন জার্নি?
শ্রীজাত – ছবি তৈরির তাগিদ অনুভব করেছি অনেকদিন আগে থেকেই। শিল্পের একটা নতুন মাধ্যমে কাজ শুরু করা খুবী আনন্দের। দীর্ঘদিনের ইচ্ছে এতোদিনে সার্থক হল।
প্রশ্ন – অনেকেই জানেন না যে তুমি খুব ভাল গান গাও। গান নিয়ে সিরিয়াস কোনও চিন্তা ভাবনা আছে?
শ্রীজাত – দেখো, নানা অনুষ্টানে আমি একটা –দুটো গান প্রায়ই গাই। সে খুব একটা সিরিয়াস কিছু নয়। কিন্তু গানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা সেভাবে কখনও ভাবিনি। কারণ পেশাদার গায়ক হতে হলে যে রকম চর্চার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে – তার সময় আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন – তোমার নিজের ছবি আসছে, মানে তোমার পরিচালিত যে ছবি মুক্তি পেতে চলেছে সেই ছবির নাম মানবজমিন। গল্প কার?
শ্রীজাত – গল্প আমার নিজের। এই নামটি রামপ্রসাদ সেনের গান থেকে নেওয়া।
প্রশ্ন – ‘মানবজমিন’ ছবিতে গান কি তুমিও লিখেছো?
শ্রীজাত – আমি দুটো গান লিখেছি। সেগুলোতে সুর দিয়েছেন জয় সরকার। বাকি দুটো গান রামপ্রসাদ সেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। গানগুলি গাইছেন সোমলতা, ইন্দ্রনীল সেন – শ্রীকান্তদাকে দিয়ে একটা গান গাওয়ানোর চেষ্টা করছি। দেখা যাক!
প্রশ্ন – তোমার ছবির বিষয় কী? গল্পের আবর্তনের কেন্দ্রে কী আছে?
শ্রীজাত – আমার ছবি মূলত ভালবাসার কথা বলেছে। সেই সঙ্গে মানুষের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এবং ‘মানবজমিন’ উত্তরণের কাহিনি। আশাবাদ এবং মানুষের যুদ্ধের কথাই বলতে চেয়েছি।
প্রশ্ন – একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি! এই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল মানুষ সারাক্ষণ আক্রমণ শানাচ্ছেন শিল্পীদের বিরুদ্ধে, যাঁদের ক্রোধানল থেকে তুমিও রেহাই পাও না – এর প্রভাব তোমার কাজে বা জীবনে কিভাবে পড়ে?
শ্রীজাত – প্রথম দিকে এসব ব্যাপারে বেদনা হতো। কষ্ট হতো – কিন্ত এখন এই ব্যাপার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন ধরেই নিয়েছি কোন না কোন ক্ষেত্র হতে আক্রমণ আসবেই – যে কাজই করি, কেউ না কেউ তাকে তিরস্কার করবেনই –
ফলে সেভাবে একে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রশ্ন – ট্রোলিং-র কারণে কখনও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছো?
শ্রীজাত – একেবারেই না। এই সময়ের একটি অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া। এখানে বহু ভালো কাজও হয়। ফলে কতিপয় লোকের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সেখান থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার থাকেন তাঁরা সব এই দুনিয়ারই মানুষ – অন্য গ্রহের কেউ নন। এঁরা সর্বত্রই আছেন।
প্রশ্ন – আজ যখন তোমার সঙ্গে কথা হচ্ছে, তার মাত্র একদিন আগেই সলমন রুশদি আমেরিকায় প্রকাশ্য সভায় আক্রান্ত হয়েছেন – এই ঘটনা নিয়ে তোমার বক্তব্য জানতে চাই
শ্রীজাত – আমি আজকাল অবাক হই না এই ধরনের ঘটনায়। এই আক্রমণে বিস্মিত না হলেও আমি অত্যন্ত ব্যথিত। মুক্তচিন্তার লেখক ও শিল্পীদের ওপর এই আক্রমণ – নতুন তো নয়। সভ্যতার ইতিহাস অনুসরণ করলে দেখা যাবে, এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে।
প্রশ্ন – লেখার কথায় ফিরি। আগামী উপন্যাস নিয়ে কিছু ভাবছো?
শ্রীজাত – এই বছর কেটে গেলো, আমার ছবির কাজ নিয়ে। উপন্যাস লেখা হয়নি – সময়ের অভাব ছিল খুব। তবে খসড়া করে রেখেছি নতুন উপন্যাসের। ছবির কাজ শেষ হলেই লেখার টেবিলে বসে যাবো। উপন্যাস শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন – তোমার চলচ্চিত্রের মূল বিষয় প্রেম। ব্যক্তিগত জীবনে এই মুহুর্তে প্রেম মানে কী মনে করো?
শ্রীজাত – প্রেম বলতে এখন শুধু মানুষে মানুষে প্রেম তো নয় – গান বাজনার প্রতি, ছবির প্রতি ভালবাসাও এখন আমার কাছে প্রেম। গান ছাড়া আমার একটা দিনও কাটে না। ছবি আঁকার প্রতি টান থেকে দেশে-বিদেশে নানা আর্ট গ্যালারিতে শিল্প-চর্চা দেখতে ছুটে যাই। এখন এই সব ভালবাসার মধ্যে দিয়েই দিন যায়।
প্রশ্ন – আগামী প্রজন্ম তোমাকে কিভাবে মনে রাখুক – তুমি চাও।
শ্রীজাত – আমি কাজ থেকে কাজে যেতে চাই। বারবার নতুন শিল্প মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। এই চর্চা যেন আমাকে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায় – এটাই চাইবো।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন