binodan-soumitra-mitra-interview

বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্রের সাথে এক সন্ধ্যায়
ইন্টারভিউ
আলাপচারিতায় চৈতালী দে


নাটক আর কবিতা নিয়ে তাঁর অসংখ্য পরীক্ষা – নিরীক্ষা, দুই এর মধ্যে কোনটা প্রথম ভালোবাসা জিজ্ঞেস করায় নির্দ্বিধায় উত্তর দেন ‘কবিতা’, অপর্যাপ্ত প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর নাট্যকার, আবৃত্তিকার, অভিনেতা, সৌমিত্র মিত্র কে প্রায় এক মাস ধরে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টাতে সৌমিত্র বাবু এক মাস টানা থেকে এখানকার কলাকুশলীদের নিয়ে ওয়ার্কশপের পর মঞ্চস্থ করলেন সত্যজিৎ রায় এর ছোট গল্প অবলম্বনে রামপ্রসাদ বণিকের লেখা নাটক ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’। নাটকটি পরিচালনার সাথে সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেন। আমার সৌভাগ্য যে আমি সেই নাটকে ‘আভা’ চরিত্রটিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

‘অপার বাংলা’র সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে আমার ওপর দায়িত্ব পড়লো সৌমিত্র বাবুর একটি সাক্ষাৎকার নিতে হবে যেটি পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যায় ছাপা হবে। লেখালেখি সামান্য করি, কিন্তু সাক্ষাৎকার নেবার পূর্ব অভিজ্ঞতা কিছুই নেই। ওনার সাথে সাক্ষাতের সেই প্রথম দিন থেকেই অনেক প্রশ্ন মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কিন্তু যে মানুষটিকে এতো সম্ভ্রম করে চলেছি তাকে কী আগডুম বাগডুম প্রশ্ন করে বসবো ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছিনা। সেই সাথে সারাদিন অফিসের কাজ, সংসার আর সন্ধে থেকে মাঝরাত পর্যন্ত নাটকের মহড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গুছিয়ে যে একটা প্রশ্নপত্র তৈরী করবো তারও সময় পাচ্ছি না। শেষে শরণাপন্ন হলাম অদিতি বসুরায় এর। অদিতি যথারীতি সুন্দর করে গুছিয়ে একটা প্রশ্নপত্র তৈরী করে দিলো। তারপর একদিন মহড়ার ফাঁকে সাহস করে জানালাম যে অপার বাংলার পূজা সংখ্যায় ওনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে চাই। উনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। নাটক শেষ হলে একদিন জমিয়ে আড্ডা দেওয়া গেলো সৌমিত্র দা আর ওনার স্ত্রী মালবিকা দির সাথে। সাথে ছিলেন আটলান্টাস্থিত নাট্যগোষ্ঠী ‘আবহ’ র নির্দেশক কল্লোল নন্দী।

কিছুটা আমতাআমতা করে প্রশ্নের তালিকা নিয়ে বসলাম। শুরুতেই জানিয়ে রাখলাম যে আমাদের অনুরোধে প্রশ্নপত্রটি অদিতি তৈরী করে দিয়েছে। তালিকা ধরে একটা-দুটো প্রশ্ন করতেই কথায়, গল্পে সব ভীতি, সংশয় কেটে গিয়ে কখন যেন এক দারুন আড্ডার পরিবেশ তৈরী হলো। আর সেই সাথে গুরুগম্ভীর মাস্টারমশাইয়ের বাইরে এক প্রাণোচ্ছ্বল মানুষকে দেখতে পেলাম। আমিও সাহস পেয়ে একে একে আমার জমানো সব প্রশ্ন গুলো করে ফেললাম।

আটলান্টায় ওয়ার্কশপ

প্রশ্ন – বাংলা নাটকের সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে আপনি আশাবাদী না নিরাশাবাদী?
সৌমিত্র মিত্র –আমি নিরাশাবাদী হলে কী আটলান্টাতে আসতাম? আমি নিরাশাবাদী হলে কী ২০০৯ এর রমাপ্রসাদ বণিকের লেখা একটি নাটক, যেই নাটকটা প্রায় বারো – তেরো বছর ধরে কলকাতাতে মঞ্চস্থ হচ্ছে সে নাটকটাকে পুনঃ নির্মাণ করে আটলান্টা শহরের অভিনয় প্রেমী মানুষদের কাছে উপস্থাপনা করতাম? আমি আশাবাদী না হলে কী এই সুদূরে যারা থিয়েটার চর্চা করে চলেছেন তাদের সাথে কাজ করতাম? আমি আশাবাদী না হলে কী কলকাতা শহরের এতগুলো থিয়েটার হলে আমাদের নাটক মঞ্চস্থ করতাম? আমি আশাবাদী না হলে কী আমার দলের ‘লোরকা লোরকা’ নাটকটা যেটি আমাকে ছাড়া আমার নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে সেটিকে আমার দলের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমি এই সুদূর আমেরিকাতে এসে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম? আমি আশাবাদী। আমি খুবই আশাবাদী যখন আমি দেখি যে ব্রাত্য বসু ব্রেস্টের জীবন বিশ্লেষণ করে একটা প্রায় অভিধানের মতন বই লিখেছেন এবং উৎসর্গ করেছেন তার পুরোনো সহযোদ্ধা গণকৃস্টি র অমিতাভ দত্তকে।

প্রশ্ন – অনেকেই বলেন নাটক দেখা বাঙ্গালি ক্রমশ কমে আসছে – আপনি কি বলবেন?
সৌমিত্র মিত্র –কলকাতা শহরে এতো গুলো থিয়েটার হল চলছে, এতো দর্শক আসছেন থিয়েটার দেখতে, কত নতুন দল গড়ে উঠেছে। থিয়েটার এমন একটা বিষয় যা সম্পর্ক গড়ে তোলে, সম্পর্ক জোড়া লাগায়। থিয়েটার বেড়ে চলেছে, দর্শক বেড়ে চলেছে। কমছে এটা সঠিক নয়। এ বছর বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের একশো পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো। সময় নাটকের পরিধি বিস্তৃত করে।

আটলান্টায় ওয়ার্কশপ

প্রশ্ন – দেখা গেছে, থিয়েটার দিয়ে কেরিয়ার শুরু করে পরে সিনেমায় চলে যাচ্ছেন। এই বিষয় নিয়ে কী বলবেন?
সৌমিত্র মিত্র –যারা থিয়েটার করতে এসে টেলিভশন, সিনেমাতে গিয়েছেন তারা কিন্তু তাদের শেকড়টাকে ছেড়ে যান নি। আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বহুদিন থিয়েটার করার পর এখন মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করছেন। কিন্তু তাকে থিয়েটার এর মঞ্চেও দেখা যায়। কৌশিক সেন, দেবশঙ্কর হালদার, এদের দুজনে ও সব মাধ্যমে অভিনয় করছেন। এছাড়াও আমি অনির্বান ভট্টাচার্যর কথা বলব যে ‘মিনার্ভা নাট্য সংস্কৃতি কেন্দ্র’ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে আমার আমার দলেও নাটক করেছেন। ‘এন্টনি সৌদামিনী’তে বিস্তৃত পরিচিতি পেয়েছেন। ‘অদ্য শেষ রজনী’ তে অভিনয় করেছেন। তারপর উনি বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনয় করছেন। কিন্তু থিয়েটার কোনোদিন ছাড়েন নি। যিনি সমাজ মনস্ক হবেন, থিয়েটার মনস্ক হবেন, তিনি কোনোদিন থিয়েটার কে বর্জন করবেন না। এটা যে তাদের প্রথম প্রেম।

প্রশ্ন – আপনি কি মনে করেন থিয়েটার শুধুমাত্র শিক্ষিত শ্রেণীর দর্শকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ?
সৌমিত্র মিত্র –থিয়েটার সবার জন্য। দর্শক তার নিজের ভাবনা অনুযায়ী নিজের মতো করে থিয়েটার কে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি বলেন যে থিয়েটার দিয়ে সমাজ পাল্টানো যাবে, সেটা কখনো সম্ভব নয়।

প্রশ্ন – পাশ থেকে অপারবাংলা র সম্পাদক মহাশয় গণনাট্যের প্রভাবের কথা উল্লেখ করলেন।
সৌমিত্র মিত্র –এক সময়ে গণনাট্য গুলো মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলো। সময়ের সাথে সাথে থিয়েটারের চরিত্রেরও পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৪৮ সালে শম্ভু মিত্র করলেন ‘উলুখাগড়া’। তারপর করলেন ‘নবান্ন’, ‘ছেঁড়া তার’। ১৯৫৪ সালে উনি আবার করলেন ‘চার অধ্যায়’। উৎপল দত্ত যিনি ‘মিনার্ভা’ থিয়েটারে ‘কল্লোল’ করার পর জেল খাটলেন, তিনি পরবর্তীরে শেক্সপীয়ার এর নাটকের বঙ্গীয়করণ, আত্মীকরণ করে করলেন ‘ওথেলো’, হ্যা’মলেট’। সেই নাটক গুলো আজও হচ্ছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তার বাহ্যিক পরিবর্তন করে করা হচ্ছে।
মালবিকা মিত্র – আমি সবাইকে বলি ভালো নাটক দেখ। যেমন ‘হ্যামলেট’। ঋদ্ধির অভিনয় দেখ। একটা বাচ্চা ছেলে পুরো শরীর দিয়ে অভিনয় করছে।

নাটক চলাকালীন স্থানীয় শিল্পীদের সাথে

প্রশ্ন – আপনি কত বড় সব নাট্য ব্যক্তিত্বদের সাথে কাজ করেছেন। সেখান থেকে প্রবাসের কিছু এমেচার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করার কথা আপনার কেন মনে হল?
সৌমিত্র মিত্র –আমি কিন্তু প্রতি বছর ওয়ার্কশপ করি। সেখান থেকে কিছু ছেলে মেয়েকে নির্বাচিত করে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, তাদের নিয়ে নাটক করি। আমার ‘লোরকা লোরকা’ নাটকের ক্ষেত্রেও তাই। এপ্রিল মাসে ওয়ার্কশপ করে তার থেকে বাছাই করে কিছু ছেলে মেয়েকে নিয়েছি নাটকে। আর আমি এখানে কেন এলাম সেটা বলতে গেলে স্বামী বিবেকানন্দকে উদ্ধৃত করে বলতে হয় ‘মন চলো নিজ নিকেতনে’। ২০১৯ সালে যখন ন্যাশভিলে অনুষ্ঠান করি তখন রক্তিম সেন আর কল্লোল নন্দীর সাথে একটা সখ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাই এবার যখন আটলান্টাতে অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ পেলাম, তখন সেই আমন্ত্রণ আমি সাদরে গ্রহণ করি। প্রবাসে ‘পটলবাবু’ করানোর একটা ইচ্ছে আমার ছিল। যখন শুনলাম আমার যতগুলো চরিত্র চাই ততগুলো পাওয়া যাবে না, তখন আমি রামপ্রসাদ বণিকের আধার বজায় রেখেই নতুন করে নাটকটা লিখতে শুরু করলাম।

প্রশ্ন – নতুন নতুন সব ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাজ করানো, তাদের শেখানো যথেষ্ট ধৈর্যের কাজ। আপনাকে কাছ থেকে দেখেছি বলে বুঝতে পেরেছি কী অপরিসীম ধৈর্য আপনার। মাথা ঠান্ডা রাখেন কী করে?
সৌমিত্র মিত্র –দেখো, আমি যদি আনকোরা ছেলে মেয়েদের দিয়ে গোলার্ধের উল্টো পাশে কাজ করতাম, তাহলে হয়তো আমার মুখ দিয়ে নানা রকম কটূ কথাবার্তা বের হতো। কিন্তু, আমেরিকাতে কাজ করতে গিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি এখানকার যারা নাটক করতে আসছেন তারা নাটকের প্রতি ভালোবাসা থেকে আসছেন। কেউ নাটককে জীবিকা করবেন বলে আসছেন না। সারাদিনের কাজের অপরিসীম স্ট্রেস নিয়ে তারা মহড়ায় আসছেন। মাথায় থাকছে পরদিন ভোর বেলা উঠে আবার কাজে ছুটতে হবে. সংসারের সব কাজ নিজে হাতে সামলাতে হবে। সেসব মাথায় রেখে আমি যতটা সম্ভব সৌহার্দ্য বজায় রেখেই এদের সাথে কাজ করি। যখন মনে হয়েছে পারছিনা, তখন দু-একটা কটূ কথা বলেছি। যার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশও করেছি।

নাটকের মহড়ার মাঝে খুদের সাথে খুনসুটি

প্রশ্ন – এবারের প্রশ্নটা মালবিকা দি আপনার জন্য। যখনি দেখেছি সৌমিত্র দার সামান্য মাথা গরম হচ্ছে, আপনি আমাদের আগলে রাখছেন। অনেক সময় আমাদের হয়ে বকাটাও আপনিই খাচ্ছেন। এই পুরো ব্যাপারটা সামলান কী করে?
মালবিকা মিত্র – আমি সবসময় এটাই করি। সেজন্য আমার একটা নামও আছে জান তো। স্টেবিলাইজার। যখনি ওর মাথা গরম হয়ে যায়, তখনি দলের সবাই বলে স্ট্যাবিলাইজার কে ডাক। নয়তো ডিরেক্টর সাহেবকে ঠান্ডা করা যাবে না।

প্রশ্ন – আপনি মাঝে মাঝে ছোটোখাটো টিপস দিয়ে থাকেন। যেগুলো কিন্তু খুব সাহায্য করে।
মালবিকা মিত্র – আমি উল্টো দিক থেকে দেখি তো, মানে দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখি। আমার চোখে কিছু বিষদৃশ্য মনে হলে আমি সেটাই বলি। আসলে সব সময় চোখের সামনে নাটক, কবিতা দেখতে দেখতে একটা চোখ তৈরী হয়ে যায়। আমি সবসময় সবাইকে উৎসাহ যোগাই ভালো নাটক দেখবার জন্য। এখন আমার ছেলেও যেমন এই ভূমিকাটা নেয়।

প্রশ্ন – নাটক নিয়ে আপনার মধ্যে এই ভালোবাসা কখন থেকে শুরু হয়? মানে, নাটক নিয়ে কিছু করতে হবে এই ইচ্ছেটা কখন তৈরী হয়েছিল?
সৌমিত্র মিত্র –আমার সিরিয়াস থিয়েটার জীবনের এটা পঞ্চাশ বছর। আর নাটকের প্রতি আমার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকে। আমার লেখা একটা বই আছে “আপন আমি”। সেই বইতেই সব লেখা আছে।

প্রশ্ন – মালবিকা দির থেকে জেনেছিলাম আপনাদের যৌথ পরিবারের কথা। সাধারণত নাটক নিয়ে মেতে থাকলে পরিবারের থেকে একটা প্রাথমিক বাধা আসে। আপনার ক্ষেত্রে কি সেরকম কিছু হয়েছিল?
সৌমিত্র মিত্র –আমি আসলে নানাবিধ কাজ করেছি, রাজনীতি করেছি। ছোট থেকেই আমার মধ্যে স্বাধীন ভাবে নিজের মতো করে কাজ করে চলার একটা প্রবণতা আছে। আমি যে চাকরি করেছি সেটাও নিজের চেষ্টাতেই করেছি। বাড়িতে একটা নাটকের পরিবেশ ছিল। বাবার তৈরী করা আমাদের লাইব্রেরিতেও আমরা ছোট বেলায় অনেক নাটক করেছি। পরবর্তীতে কেয়া চক্রবর্তী, রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমূখের সাহচর্যে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়েছে।

পাটলবাবুর মহড়ার ফাঁকে ফটোশুট

প্রশ্ন – যদি অভয় দেন তো একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
সৌমিত্র মিত্র – (হেসে) কর।

প্রশ্ন – মালবিকা দির সাথে আপনার পরিচয় কি করে হলো?
সৌমিত্র মিত্র – (জোরে হেসে গানের সুরে) পথেঘাটে, পথেঘাটে।
মালবিকা মিত্র – (পাশ থেকে লাজুক মুখে) এক পাড়াতেই থাকতাম।

প্রশ্ন – মালবিকা দি আপনি নাটকের সাথে ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। কখনো অভিনয়ের কথা ভাবেন নি?
মালবিকা মিত্র – আমি নাটক করতাম একটা সময়ে। ব্রাত্য বসুর সাথে ‘বাবলী’ করেছি। মনোজ মিত্রের সাথে করেছি। তারপর নিজেদের নাটকের দল হলো। ছেলে বড়ো হচ্ছিলো। দুদিকেই দায়িত্ব বেড়ে গেলো। আর জান তো, আমার শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়ি দুদিকেই খুব বড়ো পরিবার। পরিবারের সবার সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক রাখতে গেলে সময়ের দরকার হয়। আর তাই একজনকে একটু সমঝোতা করতে হয়। নাটকটা ওর প্যাশন। আর মাঝে যখন তোমার সৌমিত্র দার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিয়েছিলো, তখন আমার মনে হয়েছিলো নাটক ওকে সেই সময়টা অতিক্রম করতে অনেকটা সাহায্য করেছে। তার মানে কী আমার কখনো অভিমান হয় নি, মনে হয় নি যে ও সংসারে সময় দিতে পারছে না! হয়েছে। তবে সেটা হয়তো আমি সামলে উঠতে পারছিলাম না বলে।

প্রশ্ন – সৌমিত্র দা, আমার শেষ প্রশ্ন করছি এবার। প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছিলাম, দেখলাম আপনি ঘরে ঢুকেই কি দুর্দান্ত ফুর্তির সাথে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে নাটকের মহড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অথচ তার আগের দিনই আপনি কলকাতা থেকে এতটা দূর যাত্রা করে আটলান্টা এসে পৌঁছেছেন। এদিকে আমরা তখন অফিস করে ফিরে, বসে ধুঁকছি। এতো এনার্জি পান কথা থেকে?
সৌমিত্র মিত্র – দেখো, যে কোনো কাজ করতে গেলে এনার্জিটা হলো সবচেয়ে বড় জিনিস। এনার্জি ছাড়া কোনো কাজ সঠিক ভাবে করা সম্ভব নোই। নাটকের মহড়ার সময় আমি তোমাদের সবসময় বলে এসেছি show your energy। আমি বিশ্বাস করি একটা মানুষ প্রতি মুহূর্তে এনার্জি সঞ্চয় করে। আমি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের দীক্ষায় দীক্ষিত। আমি নিয়মিত সকাল বেলা জপ করি। আমার কাছে যে কোনো কাজ হলো জপ করা। যেই কাজ করবে তাতে লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *