অনুভা নাথ
-দাদা, এমন আর হবে না, আসলে মায়ের শরীরটা খুব খারাপ ছিল। তাই পার্লারে আসতে পারিনি।
-কিন্তু পুজোর মুখে পরপর চারদিন কামাই, সব কাস্টমাররা তো চলেই গেল।
-দাদা, আমি এখন থেকে রোজ আসব, বয়েজ় সেকশনের ফেসিয়াল, মাসাজ, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর আগে যেমন করছিলাম, তেমনই করব।
-না রে সীমা, ওটায় ভাবছি আর তোকে রাখব না। শ্যামলকে দিয়েছি।
মুহুর্তে সীমার মুখটা ম্লান হয়ে গেল। পার্লারের কাচ পরিষ্কার করতে থাকা ওর অপুষ্টিতে ভোগা কালো হাতদুটো হঠাৎই থমকে গেল। সীমা পার্লারের ঢাউস কাচের বাইরে তাকিয়ে দেখল, আলো ঝলমলে শহরটা যেন নদীর ওপর পড়তে থাকা সূর্যের আলো। ঝিকিয়ে উঠছে, মনে হচ্ছে বুঝি এ শহরের কোথাও কোনও ক্লেশ নেই, দু:খ নেই। তারপরই, সীমা আয়নার দিকে তাকাল। নিজের কালো রঙের মুখটা দেখে সীমার নিজেরই বিরক্তি লাগল। মাথায় চুল প্রায় নেই বললেই চলে, কপালটা বিরাট বড়ো, দাঁত উঁচু, মুখটা দেখতে যেন শুকনো আমের মতো। আজকাল তো মাও বলতে শুরু করেছে, চেহারার এই ছিরি ছাঁদ নিয়ে কোন ছেলে ওর সঙ্গে প্রেম করবে আর কেই বা ওকে বিয়ে করবে। সীমার থমকে যাওয়া হাত আবার কাচ পরিষ্কারে লেগে গেল। মায়ের ওপর এখন ওর রাগ হচ্ছে। মা আচমকা অসুস্থ না হলে এমন করে ওকে হয়রান হতে হতো না। এখন ও কী করবে …
সীমা শেষ চেষ্টা করল
-দাদা, আমাকে আপনি ওই আগের কাজটাতেই বহাল করুন না। আ আমি না হয়…
এইটুকু বলে সীমা নিচের ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইল।
পার্লারের মালিক ওর দিকে তাকালেন। খানিক থেমে সীমা মৃদু গলায় আবার বলল
-আমাকে না হয় পুজোর পরের ইনক্রিমেন্টটা দেবেন না। আগের মাইনেটাই দেবেন।
দাদা টাকা গোনা থামিয়ে ওর দিকে তাকালেন। তারপরই বললেন
-ঠিক আছে, তুই যখন এত করে বলছিস্ তখন বয়েজ় সেকশনটা তোরই থাকবে। কিন্তু আরও একবার ভেবে নে সীমা, কামাই কিন্তু একেবারেই চলবে না। আর তাছাড়া, পুজোর আগে কাস্টমারদের বডি একটু বেশি সময় ধরে মাসাজ দিতে হবে। পরে যেন বলিস না বাপু।
আনন্দে সীমার চোখদুটো নিমেষে চকচক করে উঠল।
দুপরবেলা পরিচিত কাস্টমার সুভাষদার ফেসিয়াল করতে করতে আরামে ওর চোখ বুজে এল। ও জানে, পুজোর ইনক্রিমেন্টটা না পেলে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে মাসের খরচ চালাতে ওকে হিমসিম খেতে হবে। মায়ের গঞ্জনা, বাড়িওয়ালার গালাগাল এই সবকিছু সীমার কাছে তুচ্ছ বলে মনে হল। মরভূমির মতো শুকনো পঁচিশ বছরের যুবতীর জীবনের এটুকু পুরুষের ছোঁয়া ছাড়া সীমা কেমন করে বাঁচবে? শরীর বড় বালাই যে!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
অণুগল্পটি দুর্দান্ত হয়েছে।
প্রত্যেক রক্ত- মাংসের মানুষের মধ্যেই জাগতিক / জৈবিক সুখ,শারীরিক চাহিদা বর্তমান। এটা প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বিষয়। কেউ সেটা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে শারীরিক চাহিদার মাধ্যমে পূরণ করে,কেউ অন্যভাবে। এই ‘অন্যভাবে ‘ ব্যাপার টা অনেক রকম ভাবে ঘটতে পারে। তার ই একটি পদ্ধতি লেখিকা অনুভা নাথের এই গল্পে ফুটে উঠেছে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সীমার মাধ্যমে। আমাদের সমাজে অসংখ্য এই রকম সীমা উপস্থিত। যারা বিপথে না গিয়েও অতৃপ্ত বাসনার স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করে। গল্পটি বেশ ভালই লাগলো। অণুগল্প, কিন্তু একটি ছোট গল্পের বীজ কিন্তু এর মধ্যে বিদ্যমান। লেখিকা ভেবে দেখতে পারেন।
প্রচলিত ধারণা থেকে অন্যদিকে বাঁক নেওয়া, এটাই এই অনুগল্পটিকে অন্যমাত্রা দিয়েছে।
I finished reading this bengali micro-story, titled “Sporsho”, within a few minutes but couldn’t stop thinking about it even after hours…… The sheer compactness, with which the writer Anuva Nath has depicted the damsel in distress, is really very very praiseworthy…… In spite of the incredible economy of words, the writer has made a genuinely powerful impact…… And I would also like to mention about the writer’s unique style of giving here a microscopic glimpse of some of the prevailing macroscopic social problems, without the loss of any subtlety…… As a reader, very honestly I can say that this wonderfully written micro-story has not only touched my heart, it has also been able to pull my heartstrings for a long time….. Anuva Nath’s micro-story “Sporsho” is definitely a must-read for any literature-lover.