সুমন ভট্টাচার্য
বরবুদুর বা আঙ্কোরভাটের কথা অনেক আলোচনা হয় কিন্তু ক’জন জানে ভিয়েতনামের মাইসান বা ‘মিজোঁ’ হেরিটেজ সাইটের কথা? অথচ ইউনেস্কোর বিচারে মাইসান বা ‘মিজোঁ’ও কিন্তু শুধু হেরিটেজ সাইট নয়, ইতিহাসের এমন উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র, যাকে সংরক্ষণ করে রাখা সর্বদাই জরুরি। ভিয়েতনামের এই হেরিটেজ সাইটে যাওয়া অবশ্য একেবারে অন্যসূত্র ধরে। ডানাং শহর দেখতে গিয়েই পৌঁছে গেলাম হিন্দু মন্দিরের এই প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব জায়গায় ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে মাইসান বা ‘মিজোঁ’ অন্যতম উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। কারণ ইন্দো-চিনে সাবেক ভারতীয় সভ্যতা যে প্রসার ঘটেছিল এবং ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের যে অনুপম নিদর্শন বরবুদুর বা আঙ্কোরভাটে পাওয়া যায়, মাইসান বা ‘মিজোঁ’ তারই আর একটি উদাহরণ। ঐতিহাসিকদের অনুমান এই ‘মিজোঁ’-এর কাছাকাছি কোথাও ছিল চম্পা রাজত্বের সেই বিখ্যাত শহর ইন্দ্রপুর।
আসলে ডানাং ভিয়েতনামের এমন একটা শহর যেটা ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক সবদিক থেকেই আলাদা তাৎপর্য বহন করে। যেমন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এই শহর ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের শাসকদের নিয়ন্ত্রণে, তাই সেই সময় ডানাং বিমানবন্দর মূলত ব্যবহৃত হতো উত্তর-ভিয়েতনামে হো-চি-মিন-এর বাহিনীর উপর বোমাবর্ষণের জন্য। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ডানাং বিমানবন্দর থেকে দিনে ২৫৯৫ বার মার্কিন বোমারু বিমান উড়ে গিয়েছে ভিয়েতকং গেরিলাদের উপর বোমা ফেলার জন্য। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, সামরিক ইতিহাসে ডানাং ছিল আগের শতকের ছয়ের দশকের ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দুর্ভাগ্যের বিষয় মার্কিন বোমারু বিমানের এই ভিয়েতকং গেরিলাদের ঘাঁটি ধ্বংসের জন্য নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময় একবার বোমা পড়ে যায় শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে। চম্পা সভ্যতার যে অবিস্মরণীয় নির্দশনকে ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদরা অনেক কষ্টে এবং অনেক যত্নে মাটির তলা থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন, প্রায় ৭০টি মন্দিরের সেই অসাধারণ ক্ষেত্রটি অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন বোমাবর্ষণে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৭৫-এর মার্চ মাসে যখন দক্ষিণ-ভিয়েতনামের মার্কিন অনুগত সরকারের পতন হয়, তারপর অবশ্য হো-চি-মিন এর সরকার ‘মিজোঁ’-এর সংরক্ষণে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সুখের কথা, ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের জন্য বছর পনেরো আগে থেকে এই প্রত্নতাত্বিক ক্ষেত্রে মন্দির, মূর্তি এবং অন্য শিল্প সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকারও এগিয়ে এসেছে। এখন ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলোজিক্যাল সোসাইটি ‘মিজোঁ’-এর পুরাতত্ত্ব খনন এবং সংরক্ষণে চার কোটি টাকা খরচ করেছে।
ডানাং বিমানবন্দরে যখন প্রথম নেমেছিলাম তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাসকে মনে রেখে, সেদিনের সেইসব স্মৃতিকে আমিও খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজকের ডানাং বিমানবন্দর একটা অত্যন্ত আধুনিক ব্যস্ত বিমানবন্দর, যার সঙ্গে ভিয়েতনাম যুদ্ধের স্মৃতিকে কোনও ভাবেই মেলানো যাবে না। আসলে সেই সময় ডানাং ছিল একটা ছোট্ট শহর, মূলত মৎস্যজীবীদের ঘাঁটি। আর বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হতো মূলত সামরিক কাজে। কিন্তু ১৯৭৫-এর পরবর্তী সময় সেই শহর হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিয়েতনামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক কেন্দ্র, যে শহরের পুরসভা সরাসরি দেশের কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ডানাং-এর চিরকালই পরিচিতি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব চিন সাগরের বন্দর শহর হিসেবে। কিন্তু ইতিহাসের আশ্চর্য মাস্টারস্ট্রোকে আজ ভিয়েতনামের কোনও নাগরিকই আর সেই সমুদ্রকে দক্ষিণ-পূর্ব চিন সমুদ্র বলে না, বেজিংয়ের প্রতি তীব্র বীতরাগে সেটা শুধুই পূর্ব-সমুদ্র। আর সেই সমুদ্রে মার্কিন রণতরী এসে নোঙর করলে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার যুদ্ধ জাহাজের নাবিকদের সাদরে অভ্যর্থনা জানায়। ইতিহাস এবং রাজনীতির এই ‘রিভার্স সুইপ’ যদি ডানাংকে আমার জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে থাকে, তবে সেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে বাড়তি পাওনা ‘মিজোঁ’-এর মতো ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্র এবং চম্পা সভ্যতার অসাধারণ সব নিদর্শনকে দেখার ‘বোনাস’ সুযোগ। এমনিতে ডানাং শহরের সবচেয়ে কেন্দ্রস্থলে, হান নদীর ঠিক উলটো দিকে শুধুমাত্র চম্পা শিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। ভিয়েতনাম যখন ফরাসি শাসনে ছিল তখনই ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদরা এই কাজটা করে গিয়েছিলেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন শহর থেকে দূরে পাহাড় ঘেরা উপত্যকায় মাটির নীচ থেকে তাঁরা কী অমূল্য রত্ন আবিষ্কার করেছেন। এখন সেই সংগ্রহশালার থেকে অল্পদূরে হান নদীর উপরে ভিয়েতনাম সরকার চমৎকার সেতু তৈরি করেছে, যা ড্রাগন সেতু নামে পরিচিত এবং ডানাং শহরের অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি কতটা বিস্তার লাভ করেছিল, তা বুঝতে গেলে শুধুমাত্র ডানাং শহরের সংগ্রহশালায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, যেতেই হবে ‘মিজোঁ’ হেরিটেজ সাইটে।
এমনিতে ‘মিজোঁ’ দেখতে প্রতিদিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন পর্যটকরা আসেন, তেমনই ইউরোপ থেকেও উৎসুক মানুষের আসায় কোনও খামতি নেই। চম্পা সভ্যতার নিদর্শন যা প্রায় ৭০টি মন্দিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, তা দেখতে আমরা যেদিন পৌঁছেছিলাম, সেদিন অবশ্য আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিল। গাইডের নির্দেশ এবং সঙ্গকে অতিক্রম করে ইন্দো-চিন সভ্যতার এক অদ্ভুত মায়ার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম, তা আজ আর মনে নেই। পাহাড় ঘেরা উপত্যকায় আসলে মেঘ এসে টোকা মারলে বৃষ্টি এসে সবকিছু ভিজিয়ে দিয়ে যায়! আর হয়তো উপলব্ধি করতে সাহায্য করে কীভাবে সমুদ্রতীরবর্তী এই এলাকায় ভারত থেকে আসা মানুষেরা চম্পা সভ্যতার প্রসার ঘটিয়েছিল। কখন যেন মনে হবে আসলে ইন্দ্রপুরীতেই রয়েছি আর চারপাশের শিবমন্দির, অসংখ্য শিবলিঙ্গ আর মন্দিরের গায়ে অপরূপ ভাস্কর্য ভারতবর্ষের কোনও মন্দির নগরীর কথা মনে করিয়ে দেবে।
প্রাচীন চম্পা সভ্যতার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে এই যে মিজোঁ তৈরি হল, তার প্রথম নিদর্শন পাওয়া যেতে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দী থেকে। মনে করা হয় চতুর্থ শতাব্দীতে চম্পা সভ্যতার রাজা ভদ্র বর্মণ এই মিজোঁকে প্রথম তৈরি করতে শুরু করেন। তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতা ভদ্রেশ্বরের নামে অনেক মন্দির তৈরি করেন। ভদ্রেশ্বর মানে শিব। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি ভদ্রেশ্বর নামে যে মন্দির তৈরি করেছিলেন তার নিদর্শন আজও খুঁজে পাওয়া যায়। এর পরবর্তীকালে মিজোঁর অনেক মন্দিরই পুড়ে যায় ৫২৭ থেকে ৫৭২ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় চম্পা সভ্যতায় শাসন করছিলেন রাজা রুদ্র বর্মণ। পরবর্তীকালে রুদ্র বর্মণের ছেলে সমুদ্র বর্মণ আবার সপ্তম শতাব্দীতে মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সেইসময় চম্পা সভ্যতার সবচেয়ে প্রতাপশালী রাজা হিসেবে এইখানে যেসব মন্দির তিনি তৈরি করেছিলেন তার নাম হয় শম্ভু ভদ্রেশ্বর, কারণ তাঁর নিজের নাম ছিল শম্ভু বর্মণ। কিন্তু ইতিহাসের পরিহাসে শম্ভু বর্মণের সময়ই চিনা সেনাবাহিনী চম্পা রাজত্বকে আক্রমণ করে। এবং চম্পা রাজধানী লুণ্ঠন করে সমস্ত সম্পদ নিয়ে যায়। সেই সময় থেকেই চম্পা সভ্যতার সংকটের শুরু হয়। কিন্তু শম্ভু বর্মণ তাও নিজের রাজত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হন চিন রাজবংশকে নিয়মিত উপঢৌকন পাঠিয়ে। শম্ভু বর্মণ এই মিজোঁতে যে স্থাপত্য কীর্তি তৈরি করেছিলেন তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন বোমা আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়।
চম্পা রাজত্বের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজার নাম বিক্রান্ত বর্মা। তিনি শিব এবং বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন। বিক্রান্ত বর্মা নিজের ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া ভারতীয় রাজাদের সঙ্গে নিজেদের যোগসূত্রের ঐতিহাসিক ভিত্তিকে খুঁজে বার করেছিলেন। যেমন তাঁর বিভিন্ন শিলালিপিতে লেখা আছে তিনি দক্ষিণ ভারতের কাকাতীয় রাজাদের উত্তরাধিকারী ছিলেন। আবার কম্বোডিয়ার হিন্দু রাজা ঈশান বর্মণ একের সঙ্গেও তিনি আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিক্রান্ত বর্মার পরের অনেক শতাব্দীতেও মিজোঁতে মন্দির নির্মাণ চলতে থাকে। কারণ মিজোঁই ছিল চম্পা সভ্যতার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পাহাড়ে ঘেরা বিশাল এই উপত্যকা আসলে চম্পা সভ্যতার সংস্কৃতি, তাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং অনেক কিছুকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু দশম শতাব্দীর পরে আস্তে আস্তে মিজোঁর গুরুত্ব কমতে থাকে। কারণ চম্পা রাজাদের সঙ্গে ভিয়েত রাজাদের অর্থাৎ ভিয়েতনামের উত্তর দিকের চিনা বংশোদ্ভূত রাজাদের সংঘর্ষ চলতে থাকে। এবং ভিয়েতদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধেই চম্পা রাজারা পরাজিত হতে থাকে। তাই তারা নিজেদের রাজধানী মিজোঁর পাশেই অমরাবতী থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু তবুও মিজোঁতে মন্দির নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজ চলছিলই।
চম্পা রাজত্বের অবসানের পরে সবাই মিজোঁর কথা ভুলে যায়। এরকম যে একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল তার অস্তিত্বই ক্রমশ ইতিহাস থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। চম্পা রাজত্ব বা রাজধানীতে আস্তে আস্তে ভিয়েতরা এসে বসবাস শুরু করে, তারা গ্রাম তৈরি করে, নতুন নগর বা জনপদ তৈরি হয়। আর চম্পা রাজত্বের এই অবিস্মরণীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিজোঁ চাপা পড়ে যায়। ১৮৯৮ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্যামিলে মিশেল প্যারিস আবার এই মিজোঁকে আবিষ্কার করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, সেই সময় ভিয়েতনাম ফরাসি শাসনে ছিল। ১৯০৪ সাল থেকে বিভিন্ন ফরাসি ইতিহাস বিষয়ক পত্রিকায় মিজোঁকে নিয়ে লেখা শুরু হয়ে যায়। এবং আস্তে আস্তে ফরাসিরাই গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয় যে, প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হিসেবে কীভাবে এই মিজোঁ ঐতিহাসিক ভূমিকা নিতে পারে। ১৯৩৭ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই মিজোঁর সংস্কার এবং পুনরাবিষ্কারের কাজ জোর কদমে শুরু করে। কিন্তু ইতিহাসের অদ্ভুত সমাপতনে এরপর যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমেরিকার ক্রমাগত বোমাবর্ষণে মিজোঁর অনেক কীর্তি লোপ পেয়ে যায়, অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে যাকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেছিলেন প্রথম শিলালিপি বা প্রথম মন্দিরের নিদর্শন, যাকে প্রত্নতত্ত্বের ভাষায় অনেকদিন এ-ওয়ান বলা হতো, সেই মিজোঁর প্রধান শিলালিপিটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অবশ্য ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদরাই এই মিজোঁ থেকে অধিকাংশ বড় স্থাপত্য বা মূর্তি তুলে এনে ডানাং শহরে তৈরি করেছে চম্পা সভ্যতার ওপর তৈরি সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালাটি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতির যে প্রভাব একসময় ছড়িয়ে পড়েছিল, যার নিদর্শন হিসেবে আজও আমরা আঙ্কোরভাট বা বরবুদুরের স্তূপকে দেখতে পাই, তারই আর একটি অন্যতম নিদর্শন এই ভিয়েতনামের মিজোঁ। মিজোঁ আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে ইউনেস্কোর অন্যতম হেরিটেজ সাইট হিসেবে। সুখের বিষয় গত দুই দশক ধরে ভারতের তরফেও মিজোঁর সংস্কার এবং বিভিন্ন মন্দির পুনর্নিমাণের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতায় এখানে সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার এবং ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইটকে ঠিকভাবে গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। যাঁরা ভিয়েতনাম ঘুরতে যান, তাঁরা অনেকেই এই মিজোঁর কথা জানেন না। যতটা পরিচিতি আঙ্কোরভাট বা ইন্দোনেশিয়ার বরবুদুরের স্তূপের, ততটা পরিচিতি নেই এই মিজোঁর। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, চম্পা সভ্যতার যে বিকাশ এবং তার যে বিস্তৃতি ঘটেছিল তাও কম নয়। সেইজন্যই চিনা সেনাবাহিনী বারবার চম্পা সভ্যতাকে আক্রমণ করেছে, এখান থেকে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ নিয়ে গিয়েছে। চিনের সবথেকে বিখ্যাত আক্রমণের সময় অর্থাৎ রাজা রুদ্র বর্মণের আক্রমণের সময় বা যখন শম্ভু বর্মণ আবার মিজোঁকে নতুনভাবে তৈরি করছেন, তখন চিনা সেনাবাহিনী যে হামলা চালিয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মিজোঁ থেকে বৌদ্ধদের মূল ধর্মগ্রন্থ নিয়ে যাওয়া। তাই আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে একসময় মিজোঁর কতটা প্রসার ঘটেছিল বা চম্পা সভ্যতার কী গুরুত্ব ছিল!
এইসব ঘটনা জানার পর তাই নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আজকের ডানাং যদি হয় আধুনিক ভিয়েতনামের প্রতীক এবং তার পশ্চিমের সঙ্গে আলাপের অন্যতম কেন্দ্র, তাহলে শহর থেকে একটু দূরে ‘মিজোঁ’ এক প্রাচীন এবং গৌরবময় সভ্যতা এবং মিজোঁ আজও অতীতের অনেক কথা বলে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন