micro-story-bichha-poka

বিছাপোকা
অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

 

হারুণ মিয়াঁ এবার পাট চাষ করেছে। ভাগচাষী সে। শুকুর আলীর অনেক জমি। তারই কিছুটা ভাগচাষ করে কোনোমতে পেট চলে তার। বউটা সেই কবে মরে গেছে আধপেটা খেয়ে ক্ষয়রোগে। রেখে গেছে হারুণের নয়নের মণি মেয়েটাকে। মেয়েটার নাম নূর। এখন এগারো বছর বয়স। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন হারুণের। নূর স্কুলে যায়, বাড়ির রান্না করে আর সারাদিনের শেষে হারুণের পাশে শুয়ে করে অনেক গল্প। নিরক্ষর হারুণ মেয়ের মুখে শোনে স্কুলে শেখা কবিতা, গল্প। আর হারুণ বলে ওর মায়ের কথা, চাষের কথা, গরীবের নিত্য লড়াইয়ের কথা। যেন দুই বন্ধু একে অন্যকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার রসদ পায়।

 

 সেই ফাগুন মাসে বীজ বপন করেছে হারুণ। ভীষণ পরিশ্রম করে সার দিয়েছে। বিছাপোকার উৎপাত ছিল এবার। বিষ ছড়িয়ে মেরেছে। এখন আষাঢ় মাসের শুরুতে বড় বড় সবুজ পাটগাছগুলো ওর মনে এক অদ্ভুত আনন্দের জানান দেয়। এবার গাছগুলো কেটে জাগ দেওয়ার সময় হয়েছে। বেশ ফলন হয়েছে এবার। প্রতিবারের মতো এবারও অল্প টাকা ও লাভ থেকে সরিয়ে জমিয়ে রাখবে নূরের জন্যে। নূর স্কুল থেকে পাস করে বেরোলে একটা ভালো ছেলে খুঁজে ওর বিয়ে দেবে। নূরই যে হারুণের জীবনের অন্ধকারে একমাত্র আলো।

 

 পাটগাছগুলো কেটে জাগ দেওয়া হয়েছে। আর কদিন পরেই হারুণ মিয়াঁ বাকল ছাড়িয়ে আঁশ বের করবে। সুন্দর সোনালী পাট হয়েছে এবার। রাতে শুয়ে হারুণ ভাবে এতদিনের পরিশ্রমের ফল ও মহাজনের হাতে তুলে দেবে। সে পাট মহাজনের গাড়িতে করে চলে যায় দূর শহরের কারখানায়। একবার সে দেখে এসেছে এই কারখানা। কত হাত ঘুরে কত কাণ্ডকারখানার পর সোনালী পাট কোথায় যেন হারিয়ে যায়। নতুন রূপে বাজারে যখন আসে, তখন তাতে কারখানার ছাপ। হারুণ হারিয়ে যায় নেপথ্যে। ভাবতে ভাবতে অঘোর ঘুমে তলিয়ে যায় হারুণ।

 

 পরের দিন সকালে উঠে নূরকে আর পাশে দেখতে পায় না হারুণ। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পায় না সে। দৌড়াদৌড়ি শুরু করে সে। লোকজন জড় হয়ে যায়। চারিদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। বাজে আশঙ্কাগুলো মাথায় ভিড় করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাটের জমিতে পাওয়া যায় নূরের ধর্ষিত নগ্ন দেহ। কারা যেন খাবলে খাবলে বাকল ছাড়িয়ে নিয়েছে। রক্তে লাল হয়ে যাওয়া নূরকে দেখে হারুণ হঠাৎ পাগলের মতো চেঁচিয়ে ওঠে – বিছাপোকা মারতে হবে, বিছাপোকা মারতে হবে।

 



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “micro-story-bichha-poka

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *